খুলনা-যশাের রণাঙ্গন মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা সাতক্ষীরা শহর আক্রমণ করেছে।
(সংবাদদাতা)
হাকিমপুর, ১৪ অক্টোবর সীমান্তের ওপার থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ সংবাদে জানা গেল, মুক্তিবাহিনীর দুর্ধর্ষ গেরিলারা খুলনা জেলার সাতক্ষীরা মহকুমার বিভিন্ন অঞ্চলে দুর্বার আক্রমণ হেনে বিস্তীর্ণ এলাকা মুক্ত করার পর এখন খােদ সাতক্ষীরা শহর আক্রমণ করেছেন। প্রকাশ, পাক-অধিকৃত ঐ শহরটি নাকি পতনােম্মুখ।
গত ১১ অক্টোবর একদল মুক্তিযােদ্ধা সাতক্ষীরা শহর আক্রমণ করে শহরের পেট্রোল ডিপােটি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলেন। উল্লেখযােগ্য, এ ডিপাে থেকে সামরিক বাহিনীর সকল যানবাহন পেট্রোল নিত।
এরপর ঐ একই মুক্তিযােদ্ধাদের গেরিলা দলটি সাতক্ষীরা যশাের রােডে মাইন পুঁতে রাখেন। ঐ দিনই উক্ত রাস্তা দিয়ে যাবার সময় মাইন বিস্ফোরণে পাকসামরিক বাহিনীর একটি জীপ বিধ্বস্ত হয় এবং জীপের আরােহী জনৈক মেজর সহ ৬ জন পাকসৈন্য নিহত এবং ৫ জন আহত হয়।
গত কয়েকদিন আগে পর্যন্ত যুদ্ধের পর সাতক্ষীরা মহকুমার কলারােয়া থানার কাকডাঙা সীমান্ত চৌকি থেকে পাকফৌজকে পুরােপুরি হটিয়ে দিয়ে মুক্তিবাহিনী সেখানে পূর্ণ কর্তৃত্ব স্থাপন করেছে। কাকডাঙায় এখন সগৌরবে উড়ছে স্বাধীন বাঙলার জাতীয় পতাকা।
কাকডাঙা ছাড়া কলারােয়া থানার বােয়ালিয়া, হিজলতি, বেলেডাঙা গ্রামগুলি এখন মুক্তিবাহিনীর দখলে। সাতক্ষীরা থানার বাঁশদা, রেউই, কুনাখালি, সাতআনি গ্রামগুলিতেও মুক্তিবাহিনীর শাসন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সাতক্ষীরা থানার ভােমরা সীমান্ত চৌকি চারদিন আগে মুক্তিবাহিনীর হাতে চলে আসে। ভােমরা দখলের যুদ্ধে ৩ জন পাক সৈন্য নিহত হয়। এখন ভােমরা থেকে বাকাল গ্রাম পর্যন্ত সমগ্র এলাকা মুক্ত।
৭ অক্টোবর তারিখে মুক্তিবাহিনীর গেরিলার সাতক্ষীরা মহকুমার কলারােয়া থানার পটুনী গ্রাম আক্রমণ করলে ৪ জন রাজাকার ধরা পড়ে এবং তাদের কাছ থেকে তিনটি রাইফেল গেরিলাদের হস্তগত হয়।
পাঁচদিন আগে যশাের জেলার সার্সা থানার গয়ড়া বাজারে দেয়ায়ৎ আলী নামক স্থানীয় শান্তি কমিটির জনৈক চেয়ারম্যান মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন এবং মুক্তিবাহিনীর হয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। ঐ স্থানেই আরও ৪ জন রাজাকার স্বেচ্ছায় মুক্তিবাহিনীর হাতে আত্মসমর্পণ করে। এখন নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে একত্রে হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।
যশাের জেলার সার্সা থানার অন্তর্গত কায়বা গ্রামও কায়বা ইউনিয়ন, গয়ড়া বাজার ও ছাতলাবাড়ী গ্রাম থেকে মুক্তিবাহিনীর দখলে।
সূত্র: কালান্তর, ১৫.১০.১৯৭১