You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.29 | মুক্তিফৌজ পাকসেনাদের কাছ থেকে ২০০টি চীনা রাইফেল ছিনিয়ে নিয়েছে | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিফৌজ পাকসেনাদের কাছ থেকে ২০০টি চীনা রাইফেল ছিনিয়ে নিয়েছে
(স্টাফ রিপাের্টার)

কলকাতা, ২৮ অক্টোবর বিলম্বে প্রাপ্ত এক সংবাদে জানা গেল যে, অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাঙলাদেশের গেরিলারা বিভিন্ন রণাঙ্গন থেকে ২৫০টি রাইফেল শত্রুদের কাছ থেকে দখল করেছেন। এর মধ্যে ২০০টি রাইফেল চীনা তৈরি।
এছাড়া মুক্তিফৌজের গেরিলারা পাক-বাহিনীকে বিভিন্ন রণাঙ্গনে নাজেহাল করে দিচ্ছেন বলে সীমান্ত পার থেকে বিভিন্ন সূত্রে সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। আজ বাঙলাদেশ মুক্তিযোেদ্ধাদের এক যুদ্ধ বুলেটিনে বলা হয়েছে যে গত ২৪ অক্টোবর গেরিলারা রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী রণাঙ্গনে ভবানীপুরে একটি রেলওয়ে কালভার্ট ধ্বংস করে দিয়েছে। ২৩ অক্টোবর গেরিলারা বৈদ্যনাথপুরে একদল টহলদার পাকসেনার উপর আক্রমণ চালিয়ে ৩ জন শত্রুসেনাকে খতম করেছেন।
গত ২৬ অক্টোবর খুলনা জেলার সাতক্ষীরা মহকুমার ভাটশালায় গেরিলা আক্রমণে ৮ জন পাকসেনা নিহত এবং বহু আহত হয়েছে। একজন মুক্তিযােদ্ধা ঐ সংঘর্ষে শহীদ হয়েছেন। ঐ জেলার শ্যামনগর থানায় গত ২৪ অক্টোবর আক্রমণ চালিয়ে গেরিলারা ৩ জন শত্রুসেনাকে খতম করেছেন। ২৩ অক্টোবর পাটাকেল ঘাটায় তৎপরতা চালিয়ে গেরিলারা ১৫ জন শত্রুকে নিহত করেছেন। অক্টোবরের ২য় সপ্তাহে খুলনা জেলার আগাশনিতে পাক দালাল রাজাকারদের একটি ক্যাম্পে আক্রমণ চালিয়ে গেরিলারা ৬৪ জনকে আহত করেছেন। ঐ সপ্তাহে ফরিদপুর জেলার ভেদরগঞ্জে এক উল্লেখযােগ্য তৎপরতা চালিয়ে মুক্তিবাহিনীর দেড় শতাধিক শত্রুকে খতম করেছেন।
ঐ সংঘর্ষে গেরিলারা ২ শত চীনা রাইফেলের ২টি হালকা মেশিনগান সহ বহু অস্ত্রশস্ত্র দখল করেছেন।
বিলম্বে প্রাপ্ত এক সংবাদে জানা গেল যে, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে বরিশাল জেলার ঝালকাঠি ও কাউখলি এলাকায় মুক্তিবাহিনীর শিবিরের দিকে অগ্রসরমান একদল পাকসেনাকে গেরিলারা প্রচন্ড বিক্রমে প্রতিরােধ করেন। সংঘর্ষে ৩৫ জন পাকসেনা নিহত ও ৩ জন বন্দী হয় এবং বাকীরা পালিয়ে যায়। ঐ সংঘর্ষ বহু অস্ত্র-শস্ত্র গেরিলাদের দখলে এসেছে।
কুমিল্লা জেলার সালদা নদী এলাকায় পাকসেনাদের উপর আক্রমণ চালিয়ে গেরিলারা গত ২১ অক্টোবর ৩৭ জন দখলদার সেনাকে নিহত এবং ৩০ জনকে গুরুতরভাবে জখম করেছেন। ঐদিন শালগড় ও শ্রীপুরে মুক্তিবাহিনীর হাতে ৫০ জন শত্রুসেনা নিহত এবং বহু আহত হয়েছে। ২০ অক্টোবর কুমিল্লা জেলার আমজাদের বাজার ও জগন্নাথ দীঘি এলাকায় ২৮ জন শত্রুসেনা নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছে। ২২ অক্টোবর নােয়াখালি জেলার ফেনী মহকুমার মুন্সীরহাটে গেরিলাদের হাতে ১৫ জন রাজাকার ধরা পড়েছে। ৪টি রাইফেলও মুক্তিবাহিনীর দখলে এসেছে। একই জেলার ফুলগাজী এলাকায় গেরিলা আক্রমণে গত ২১ অক্টোবর ২ জন শত্ৰু নিহত এবং ৩ জন আহত হয়েছে। নােয়াপুর ১৮ অক্টোবর ৫ জন পাকসেনা নিহত এবং ৯ জন আহত হয়েছে। ঐদিন সাল ধরে ১ জন পাকসেনা নিহত ও ২ জন আহত হয়েছে। পূর্বাহ্নে ১৭ অক্টোবর নােয়াখালি জেলার নতুন বাজারে মাইন বিস্ফোরণে একটি পাকসৈন্যবাহী ট্রাক উল্টে গেছে। ঐদিন একই জেলার বদরপুরে একজন শত্রুসেনা নিহত এবং ২ জন আহত হয়েছে।
২১ অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলার আমেদনগর ও রাঙ্গাতিয়ার মধ্যে মাইন বিস্ফোরণে ১ জন পাকসেনা নিহত হয়েছে।
২৫ অক্টোবর মুক্তিসেনারা শ্রীহট্ট জেলার গােয়াসরিমিট সেতুটি ধ্বংস করে দিয়েছেন। অনেক পাকসেনাকে গত কয়েকদিনে মুক্তিবাহিনী নিহত করেছেন।
দু’শতাধিক রাজাকারের আত্মসমর্পণ
মুজিবনগর ইউএনআই জানাচ্ছে গত কুড়ি দিনে ২০০-এরও বেশি রাজাকার অস্ত্রশস্ত্র আত্মসমর্পণ করেছে বলে মুক্তিবাহিনীর জনৈক মুখপাত্র জানিয়েছেন।
ঐ সময়ে মুক্তিযােদ্ধাদের সঙ্গে বিভিন্ন সংঘর্ষে তিনশ-এর বেশি পাকসৈন্য মারা গেছে।
আলমডাঙ্গা দর্শনা ও ঈশ্বরদি রাজশাহী সেক্সনে সৈন্য ও অস্ত্রবাহী তিনটি বিশেষ ট্রেন ও ২টি সামরিক ট্রাক গেরিলাদের আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে ঐ মুখপাত্র জানান। গেরিলারা চারটি রাস্তা ও পাঁচটি সেতু উড়িয়ে দিয়েছে।

সূত্র: কালান্তর, ২৯.১০.১৯৭১