আক্রমণের পরিকল্পনা ইয়াহিয়া আগেই করেছিল
তিন বাঙালী মেজরের চমকপ্রদ বিবরণ
আগরতলা, ৮ এপ্রিল (ইউএনআই) পাকিস্তানের জঙ্গী শাসক ইয়াহিয়া খান বাঙলাদেশ এর উপর সামরিক আঘাত হানবার আগে বাঙালী সৈনিকদের হাত থেকে হাতিয়ার কেড়ে নেবার জন্য কেমন চক্রান্ত জাল বিস্তার করেছিলেন তার একটি চমকপ্রদ বিবরণ পাওয়া গেছে জন উচ্চপদস্থ পাক সামরিক বিভাগের মেজরের কাছে। বর্তমানে এই ৩ জন মেজর পাক সামরিকচক্রের সঙ্গে সমস্ত সমপর্ক ছিন্ন করে বাঙলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে যােগ দিয়েছেন। গত সপ্তাহের শেষের দিকে এই ৩ জন এক বৈঠকে প্রথম মিলিত হন বলে বাঙলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত ঘনিষ্ট মহল থেকে বলা হয়েছে।
সামরিক শক্তি নিয়ে বাঙলাদেশ এর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ার ঠিক ২ দিন আগে ২২ তারিখে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মােসারফকে ঢাকা থেকে ত্রিপুরা পাঠানাে হয় এই ছুতােয় যে, সীমান্তে ভারতীয় সৈন্যর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২৪ তারিখে তিনি বেতারে কর্তৃপক্ষকে জানান, সীমান্তে কোনাে চাপ বা উত্তেজনা নাই এবং তিনি ঢাকায় ফিরে আসার অনুমতি চান। কিন্তু তাকে ত্রিপুরায় থাকবার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
মেজরের অধীনে ছিল বাঙলা রেজিমেন্টের ও ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের এক কোম্পানি করে সৈন্য। এই সময় মেজর মােসারেফ জঙ্গী ইয়াহিয়ার মতলব বুঝতে পারেন। তার সন্দেহ রইল না, তার অবর্তমানে তার অধীনস্থ সৈন্যদের হাতিয়ার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হবে। তিনি কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে ঢাকায় দৌড়ান এবং ২৭ তারিখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৌঁছে দেখেন সৈন্যদের হাতিয়ার কেড়ে নেবার চেষ্টা চলছে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের স্বেচ্চাসেবকদের সঙ্গে যােগাযােগ স্থাপন করেন এবং তার রেজিমেন্টের ৩ জন পাকিস্তানি অফিসারকে পর্যুদস্ত করতে সক্ষম হন। এই লড়াইয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের ৭ জন সৈনিক ঘায়েল হয় এবং ১৩ জনকে আটক করা হয়।
অপর আর এক মেজর সফিউল্লা তার বিবরণে জানান, ২২ মার্চ তারিখে তিনি খবর পান পাকিস্তানী সৈন্যরা ঢাকা থেকে জয়দেবপুরের দিকে আসছে তার অধীনস্থ সেনাবাহিনীর হাত থেকে হাতিয়ার কেড়ে নেবার জন্য। তিনি তার লােকজন নিয়ে রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং-এর কাছে পাকসৈন্যদের পথ আটকান। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে স্থানীয় জনসাধারণ তাদেরকে আরাে মদত দেন। প্রবল লড়াইয়ের পর পাকবাহিনী পিছু হঠতে বাধ্য হয়।
উল্লেখ্য, এই জয়দেবপুরে পাকসেনারা বেপরােয়া তাণ্ডব করে তার ফলে শেখ মুজিবর রহমান প্রবল প্রতিবাদ জ্ঞাপন করেন।
অন্য আর একজন মেজর রহমান ইয়াহিয়ার এই মতলবটির আঁচ পান চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে মাল খালাস করার ব্যাপারে।
সৈন্যরা জাহাজ থেকে সমর সম্ভার খালাস করতে অস্বীকার করলে তাদের উপর গুলি চালানাে হয়, তার অধীনস্থ একজন হিন্দু অফিসারকে কয়েদ করা হয়। শ্রীরহমান তখনই ইয়াহিয়ার খেলাটি বুঝতে পারেন। তিনি তার দল লােকজনকে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে দাঁড়ান এবং বন্দুকের জোরে বন্দর অংশ অচল করে দেন এবং চট্টগ্রাম বেতারটি দখল করে নেন।
সূত্র: কালান্তর, ২৩.১১.১৯৭১