You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.27 | বাগদা, বনগা ও গাহঘাটায় কার্ফু বসন্তপুর দখল | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

বাগদা, বনগা ও গাহঘাটায় কার্ফু
বসন্তপুর দখল

কালান্তর, ২৭ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী গতকাল খুলনা জেলার বসন্তপুর দখল করেছে এবং সাতক্ষীরার দিকে এগিয়ে চলেছে। রাজশাহী জেলার মিরাজগঞ্জে এবং রামপুরার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রও এখন মুক্তিবাহিনীর দখলে। জলপথেও মুক্তিবাহিনী কয়েকটি উল্লেখযােগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। মেঘনা নদীর উপরে একটি অস্ত্রবাহী পাক জাহাজ মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা ডুবিয়ে দিয়েছে। তালাসে একটি যুদ্ধ জাহাজ দখল করে তারা প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র পেয়েছে। আগরতলা থেকে ইউ এন আই জানাচ্ছে যে, এই সপ্তাহের গােড়ার দিকে আখাউড়া রণাঙ্গনে মুকুন্দপুর রেলস্টেশন ও প্রায় ১২ বর্গ কিলােমিটার এলাকা মুক্তিবাহিনী পাক ফৌজের কবল থেকে উদ্ধার করেছে। ৫ জন পাকিস্তানী সৈন্য ৮ জন রাজাকার ও ৮ জন পাকিস্তানী রেঞ্জার এখানে মুক্তিবাহিনীর হাতে বন্দী হয়। মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তর থেকে জানানাে হয়েছে, এই এলাকায় ১৫ জন পাকিস্তানী রাজাকারের মৃত দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এখান থেকে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ও প্রচুর গােলা বারুদ মুক্তিবাহিনীর দখলে এসেছে। আজ সকাল থেকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাদের ঘাঁটি রাজারপুর, দৌলতগঞ্জ এবং জীবননগর থেকে ভারতীয় এলাকা গেদে অঞ্চলের বিষ্ণুপুর, গােবিন্দপুর, গেদে, বানপুর মতিয়ার, চুঙ্গি এবং নােনাগঞ্জ গ্রামগুলিতে অবিরাম গােলাবর্ষণ করতে শুরু করেছে। গতকাল সারারাত ধরে পাক-সেনারা তাদের নাটুদা এবং কাপাসডাঙ্গা থেকে ভারতীয় এলাকা ছাপরা এলাকার গংরা ও হৃদয়পুর গ্রামে গােলাবর্ষণ করতে থাকে। ভারত সীমান্ত রক্ষীবাহিনী পাকসেনাদের এই হামলার যােগ্য প্রত্যুত্তর দেয়। গতকাল বিকেলে পাকিস্তানী বুলেট মাতিয়ারি গ্রামের বিনয় দত্তের বাড়ি বিধ্বস্ত করে। ভারত সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর এই আক্রমণে দত্তনগর খামারের কাছে পাকসেনাবাহিনীর ঘাটি সম্পূর্ণভাবে ধবংস হয়। সম্প্রতি এই ঘাঁটি নির্মাণ করা হয়েছিল। আজ এখানে রামগঞ্জ থানা এলাকায় ভারত সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও পাক হানাদারদের মধ্যে গুলি বিনিময়ে কমপক্ষে ১০ জন পাকসেনা নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। আজ সকালে রাজগঞ্জ থানার অধীন বিভিন্ন ভারতীয় গ্রামে পাকসেনারা প্রচন্ডভাবে গােলাবর্ষণ করতে থাকে। গত রাত থেকে আজ বেলা ২ টা পর্যন্ত পাক হানাদারদের গােলাবর্ষণ চলতে থাকে। গােলা বিধ্বস্ত গ্রামগুলাের মধ্যে রয়েছে…, বরুয়াপাড়া, মাজাবাড়ি এবং চালহাটি এলাকার তালকাপুর। ইতিমধ্যে সীমান্তের ওপার থেকে বিশ্বস্ত সূত্রে প্রাপ্ত রিপোের্ট থেকে জানা যায় যে পঞ্চগড়ে ২ ব্যাটালিয়ান পাকসেনা মােতায়েন করা হয়েছে। এখানে ভারত পূর্ববঙ্গ সীমান্তের ৮ কিঃ মিঃ এর মধ্যে অবস্থিত সমস্ত এলাকা থেকে গ্রামবাসীদের অপসারণ করা হয়েছে। সংবাদে আরও জানা যায় যে, পাকসেনারা সীমান্তবর্তী সমস্ত এলাকা থেকে গ্রামবাসীদের স্থান ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে। যখন গ্রামবাসীর সামরিক নির্দেশ অমান্য করে তখন পাক সেনারা নামাইপাড়া, হিনাইজোত, বােডাপাড়াবাদ প্রভৃতি গ্রামের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়।
করিমগঞ্জে পাকস্তানী গােলা বর্ষণ- কার্ফু জারি
বাঙলাদেশের পূর্ব সিলেটে মুক্তি বাহিনীর সাফল্যে বেসামাল পাকসেনারা দক্ষিণ আসামের ভারতীয় সীমান্ত শহর করিমগঞ্জের উপর আজ সকাল থেকে কামান ও মর্টার থেকে গােলাবর্ষণ করতে শুরু করে। এই গােলাগুলির ফলে ৫ জন ভারতীয় নাগরিক নিহত ও ৬ জন আহত হয়। এখানে প্রাপ্ত এক সরকারী রিপাের্টে বলা হয়েছে যে, করিমগঞ্জের ঠিক বিপরীত দিকে জাকিগঞ্জ ও আটগাঁওতে অবস্থিত পাকসেনাদের ঘাঁটিতে মুক্তিবাহিনী প্রচন্ড আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণের ফলে পাকসেনারা পশ্চাদপসরণ করে এবং ভাের রাত ৩ টা থেকে ব্যাপকভাবে গুলি- গােলা বর্ষণ করতে থাকে। প্রত্যক্ষদশীর বিবরণে জানা যায় যে, করিমগঞ্জ শহরের মধ্যস্থলে বাজার এলাকায় পাকসেনাদের গােলা এসে পড়ে এবং গুলি বর্ষণে উপরােক্ত ৫ ব্যক্তি নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে ৩ জন স্ত্রীলােক। মহকুমা কর্তৃপক্ষ প্রথমে দুপুরে ১২ টা পর্যন্ত কার্য জারি করে। বে-সামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য পুনরায় বিকাল ৪ টা থেকে রাত্রি ৮ টা পর্যন্ত কার্টু বলবৎ করা হয়। আগরতলা থেকে প্রাপ্ত এক রিপাের্টে জানা যায় যে গতকাল সিধাই থানার নয় গ্রামে পাক হানাদারদের গােলাবর্ষণে বিমলদাস ও লালচক্রবর্তী নামে ২ জন ভারতীয় নাগরিক আহত হয়। গতকাল সিধাই থানার বামুটিয়া গ্রামেও পাক সেনাদের গােলা এসে পড়ে।

সূত্র: কালান্তর, ২৭.১১.১৯৭১