You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.09 | কুমিল্লা ব্রাক্ষণবাড়িয়া মুক্ত | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

কুমিল্লা ব্রাক্ষণবাড়িয়া মুক্ত

ঝিনাইদহে গতকাল পাক সৈন্যরা পালাবার আগে ২৫ টি সামরিক গাড়ি, বিপুল অস্ত্র-শস্ত্র ও খাদ্যসম্ভার ফেলে গিয়েছে। সামরিক মুখপাত্র মেজর জেনারেল জ্যাকব আজ সকালে সাংবাদিকদের বলেন, যশাের খুলনা সেক্টরের পশ্চিমাংশ,এখন পুরােপুরি আমাদের হাতে। এখন এখানে যেসব শত্রুঘাঁটি ইতস্ততঃ ছড়িয়ে রয়েছে, সেগুলাে নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে। রংপুর, দিনাজপুর সেক্টরে গতকাল গুরুত্বপূর্ণ সংযােগকেন্দ্র পীরগঞ্জ ভারতীয় বাহিনী দখল করে। আজ সকালে সেখানে পাকিস্তানীরা পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছিল। রংপুর, বগুড়ার সংযােগ সড়ক মুক্ত করে তাদের পালাবার পথ খুলবার জন্যে। কিন্তু ভারতীয়বাহিনী তা প্রতিহত করে তাদের দখল দীর্ঘভাবে কায়েম রেখেছে। এই সংঘর্ষে শত্রুপক্ষের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শ্রীহট্ট সেক্টরে ভারতীয় বাহিনী শ্রীমঙ্গল দখল করেছে। কুমিল্লা সেক্টরে আজ ভারতীয় বাহিনী কুমিল্লার বিমান বন্দর ও লালমাই উচ্চভূমি দখল করে। ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট ঘিরে ফেলেছে। আজ সকালে ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক লেঃ জেনারেল জগজিৎ সিং অরােরা কুমিল্লা বিমানবন্দরে গিয়ে স্থানীয় সামরিক অফিসার ও জওয়ানদের পরিদর্শন করেন। তার আসবার খবর বাইরে প্রচারিত হবার সঙ্গে সঙ্গে বিপুল সংখ্যক স্থানীয় মানুষ এসে সেখানে সমবেত হয়ে তাকে অভিনন্দন জানান। এই সেক্টরে অপর গুরুত্বপূর্ণ শহর ব্রাক্ষণবাড়িয়াও ভারতীয় বাহিনীর দখলে এসেছে। ভারতীয় বাহিনীর একটি অগ্রবর্তী অংশ মেঘনা নদীর পশ্চিম তীরে দাউদকান্দিতে গিয়ে পৌঁছেছে এবং চাঁদপুরের কাছে চৌরাতে তারা শত্রুসৈন্যর সম্মুখীন হয়েছে। দাউদকান্দি থেকে ঢাকার সােজাসুজি দূরত্ব প্রায় ৩০ মাইল। এখানে ভারতীয় বাহিনী পাক বাহিনীর ১৬-ইনফ্যানট্রির জেনারেল অফিসার কমান্ডিং-এর পতাকা ও তারকাখচিত তকমারা একটি জীপ দখল করে। এই জীপটির উপস্থিতি থেকে বুঝা যায়, সেখানে পাক জেনারেল এসেছিলেন এবং ভারতীয় বাহিনীর অভিযানের মুখে জীপটি ফেলেই তাকে চটপট সরে পড়তে হয়েছে এবং কাছাকাছি কোথাও তিনি আত্মগােপন করেছেন। সাংবাদিকদের এই ঘটনার কথা জানিয়ে সামরিক মুখপাত্র বলেন, ঐ জেনারেলের হেডকোয়ার্টার সম্ভবত বগুড়ায়। কিন্তু পীরগঞ্জ দখল করার ফলে পাক বাহিনীর কাছে বগুড়াগামী সড়ক বিচ্ছিন্ন। এখানে আরও দুটি জীপ ও প্রচুর অস্ত্র ভারতীয় বাহিনীর দখলে এসেছে। কুমিল্লা জেলার এলিয়টগঞ্জ, বিদ্যাকুটচৌরা, টেম্পলহিলও হাজিগঞ্জ রেলস্টেশনও ভারতীয় বাহিনী দখল করেছে। এছাড়া এ সেক্টরে ভারতীয় বাহিনী দূর্গাপুর গ্রাম দখল করেছে। এই অভিযানে ৩টি জীপ, ১টি আর সি এন কামান ও প্রচুর গােলা বারুদ ভারতীয় বাহিনীর করায়ত্ত হয়েছে। ভারতীয় বাহিনী বাদুড়িয়া শহরও দখল করেছে। একাধিক ছােট বড় নদীতে খন্ড বিচ্ছিন্ন এখানকার ভূ-পৃষ্ঠের অগ্রগতি অবশ্য সহজ নয়। অন্যদিকে জামালপুরের দক্ষিণে ভারতীয় বাহিনী শত্রু সৈন্যের সম্মুখীন হয়েছে। হালুয়াঘাট থেকে ভারতীয় বাহিনীর একটি অংশ ময়মনসিংহের দিকে এগিয়ে চলছে। ভারতীয় নৌবাহিনীর বিমানবন্দর আরও এক দফা চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ও কক্সবাজারে বােমাবর্ষণ করে বিমানক্ষেত্রের হাঙ্গার ও রেলপথের প্রভূত ক্ষতিসাধন করে। এই সময় জেলে নৌকা ও ছােট ছােট নৌকায় শ্বেত পতাকা ওড়াতে দেখা যায়। আগরতলা থেকে ইউ এন আই জানাচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের রামগড় এলাকা মুক্তিবাহিনী, পাক ফৌজ ও রাজাকার বাহিনীর কবলমুক্ত করেছে। এই এলাকা দখল করার ফলে গত রাত সাড়ে দশটা থেকে ত্রিপুরার সাবরুমে পাক গােলাবর্ষণ স্তব্ধ হয়েছে। সাবরুম ও রামগড়ের দুরত্ব প্রায় ২ কিলােমিটার

সূত্র: কালান্তর, ৯.১২.১৯৭১