You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.07 | পূর্ব রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় ফৌজের যৌথ অভিযান | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

পূর্ব রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় ফৌজের যৌথ অভিযান
ফেনী পাক কবল মুক্ত আরাে একটি স্যাবার জেট ও দুটি গানবােট বিধ্বস্তঃ অগ্রগতি অব্যাহত
(স্টাফ রিপাের্টার)

কলকাতা ৬, ডিসেম্বর-ভারতীয় সেনাবাহিনী মুক্তিবাহিনীর সহায়তায় ব্যাপক ও সর্বাত্মক অভিযান চালিয়ে আজ নােয়াখালি জেলার গুরুত্বপূর্ণ শহর ফেনী এবং শ্রীহট্ট সেক্টরে লাতু, কুলাউড়াম জুরি ও মৌলভীবাজার এর উপরে পূর্ণ কর্তৃত্ব স্থাপন করেছে। মুক্তিবাহিনীর বিমান শাখার সঙ্গে পূর্ণ সহযােগিতায় ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিমান আজ ঢাকার তেজগাওস্থিত বিমান বন্দরে প্রচন্ড আঘাত হেনে তাকে অকেজো করে দিয়েছে। এবং কুমিল্লা সেক্টরে আরাে একটি পাকিস্তানী স্যাবার জেট ধ্বংস করেছে। আর ভারতের নৌবাহিনীর বিমান বহর গতরাতে পুসার নদীতে দুটি পাকিস্তানী গানবােটকে বিধ্বস্ত করেছে। আজ এখানে ইস্টার্ণ কমান্ডের জনৈক মুখপাত্র আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রণাঙ্গনের অবস্থা জানিয়ে বলেন, গতসন্ধ্যার কোর্টচাদপুর দখল করার পর চিত্রা নদী পার হয়ে কালিগঞ্জ দখল করেছে এবং ঝিনাইদহ ও যশােরের সংযােগ সড়ক বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ভারতীয় বাহিনী ঝিনাইদহের দিকে এগিয়ে চলেছে। খালিশপুর সেতুটিও ভারতীয় বাহিনী দখল করেছে। মেহেরপুর এলাকায় মুক্তিফৌজের সহযােগিতায় ভারতীয় বাহিনী কাজীপুর দখল করেছে। ঠাকুরগাঁও এলাকায়-ঠাকুরগাঁও দখল করার পর ভারতীয় ফৌজ আত্রাই, বীরগঞ্জ পাক কবল মুক্ত করে আত্রাই নদীর তীরে পৌঁছেছে। ভারতের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী এই অগ্রবাহিনী এই অগ্রগতি পথের পশ্চিমাদিক শত্রুমুক্ত করে রুইয়া দখল করেছে। নবাবগঞ্জ রণাঙ্গনে চরখাই দখল করার পর এগিয়ে চলেছে ও ভারতীয় বাহিনীর একাংশ করতােয়া নদীর অপর পারে গিয়ে পৌঁছেছে এবং হাটভাঙ্গা ফেরী দখল করেছে। ইতিমধ্যে পাকিস্তানী ফৌজ লালমনিরহাট ছেড়ে পালিয়েছে বলে খবর এসেছে। এই রণাঙ্গনে আজ হাতিবান্ধা থেকে ভারতীয় বাহিনী এখন লালমনিরহাটের দিকে এগিয়ে চলেছে। ময়মনসিংহ সেক্টরে কমলপুর এর পর বক্সাগঞ্জও ভারতীয় বাহিনীর করায়ত্ত হয়েছে এবং বহ্মপুত্র নদের পূর্ব দিকের জামালপুরের পশ্চিম দিকে, জামালপুরের উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ভারতীয় বাহিনী হাতিবান্ধা দখল করে। মেঘালয়ের দক্ষিণে জয়ন্তিয়াপুর এবং গােয়াইঘাটও ভারতীয় বাহিনীর দখলে এসেছে। তিতাস নদীর উপরে উজানসির সেতু অক্ষতভাবে দখল করার পর ভারতীয় বাহিনী ব্রাক্ষণবাড়িয়ার উপকণ্ঠে গিয়ে পৌছেছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী কসবা ও কুটি দখল করেছে। ফলে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার নিরাপত্তা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কুমিল্লা সেক্টরে ভারতীয় বাহিনী বুড়িচাদ দখল করার পর গােমতী নদী পার হয়ে একতাবপুর দখল করেছে। ভারতের জওয়ানরা লাকসাম দখল করার পর মুফদ্দরগঞ্জের অগ্রবর্তী হাজিগঞ্জের দিকে এগিয়ে চলেছে। এই সমস্ত ফ্রন্টে ভারতীয় বাহিনীর অগ্রগতির পথে পাকিস্তানীদের প্রচন্ড ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-শস্ত্র হস্তগত হওয়া ছাড়াও, পাকিস্তানী বাহিনীর একাধিক অফিসারসহ ৪২৬ জন ভারতীয় বাহিনীর হাতে বন্দী হয়েছে। উক্ত সামরিক অফিসার আরও জানান, ভারতীয় বিমান বাহিনীর কাছ থেকে স্থলবাহিনীর অত্যন্ত মূল্যবান সহায়তা পাচ্ছে। ইস্টার্ণ এয়ার কমান্ডের প্রধান এয়ার মার্শাল এইচ সি দেওয়ান আজ শিলংয়ের সাংবাদিকদের জানান, আজ মােট ১৮৬ বার বিমান হানা দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে ৩২ বার বিমান হানা দেওয়া হয়েছে পাল্টা অভিযান হিসেবে এবং শত্রুর ভবিষ্যত বিমান হানার শক্তি খর্ব করে দেওয়া হয়েছে। ইউ এন আই প্রেরিত এই খবরে আরাে বলা হয়েছে, ভারতীয় বিমান বাহিনী ১২ টি বিমান হানায় তেঁজগাও বিমান ঘাঁটির উপরে ২৪ টন ও ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কুর্মিটোলা বিমানক্ষেত্রে ৮টন বােমা ফেলেছে। ঢাকা বিমানবন্দরে ১৬ টন বােমা সফলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে এবং রানওয়েতে কমপক্ষে ১৬ টি বড় গর্ত হয়ে গিয়েছে। আর এক দফার হানায় বিমানবাহিনী ঢাকার বিমান বন্দরের রানওয়ের দুপাশের ব্লাষ্টপেন বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। এছাড়া বিমান বাহিনী যশােরের সামরিক লক্ষ্যবস্তুর উপরে গােলাবর্ষণ করে এবং ঝিনাইদহ বিমানক্ষেত্রে গুলিবর্ষণ করে। কলােরিয়া থেকে ২০০ পাকিস্তানী পাল্টা আক্রমণ করার জন্য এগুচ্ছিল, বিমান বাহিনী তাদের উপরেও আক্রমণ চালায়। কুমিল্লা সেক্টরে ভবনডাঙ্গা ও রাকসামে পেট্রোল ও পাকসৈন্যবাহী ট্রেনের উপরে হানা দিয়ে সেগুলিকে প্রচন্ডভাবে ক্ষগ্রিস্ত করা হয়েছে।

সূত্র: কালান্তর, ৭.১২.১৯৭১