মেয়েদের দুনিয়া
মুক্তিসেনানী-শিরিনা [শিরিন]বানু
খুব ছােট করে চুল ছাঁটা, নম্র, শান্ত, স্বল্পবাক, মিষ্টি মিষ্টি অতি সাধারণ চেহারার একটি বাঙালী মেয়ে। নাম শিরিনা বানু [শিরিন], ডাক নাম মিতিল-পাবনা এডােয়ার্ড কলেজের ছাত্রী। বয়স বললাে ২০ বছর। মনে হল আরও কম। বাঙলাদেশের যে মুক্তিফৌজ ২৮ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত পাবনা শহর মুক্ত করে তার ট্রেজারী, টেলিফোন এক্সচেঞ্চ ও কনট্রোল রুম দখলে রেখেছিল শুনলাম এই সাধারণ মেয়েটি নাকি সেই মুক্তি সেনাদের অন্যতম।
পাবনা এডােয়ার্ড কলেজের বাংলা অনার্সের দ্বিতীয় বার্ষিক শ্রেণির ছাত্রী হিসাবে ২৬ শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্তও যে মেয়েটি ক্লাশ করেছে মাত্র এক মাস পরে ২৮ মার্চ থেকে ইউনিফর্ম পরা, রাইফেল হাতে পাবনার কনট্রোল রুম আর পলিশ লাইন আর ট্রেজারীতে কর্তব্য রত তরুণ সৈনিকটি যে সেই মেয়েটিই একথা কেউ ভাবতেও পারে নি। এমন কি পরবর্তী কালেও শিরিনের খুব ঘনিষ্ট দুই একজন সহযােদ্ধা ছাড়া আর কেউ তার পরিচয় জানতে পারে নি। “প্রশ্ন করেছিলাম তােমরা কি আগেই মিলিটারী ট্রেনিং নিয়েছিলাে?” শান্ত কণ্ঠে উত্তর এলাে, “না, ২৮ মার্চ ট্রেজারী দখলে এলে যখন জনতার হাতে বন্ধুক দেওয়া হয় তখন আমিও একটা বন্দুক পাই। আমাকে দুই বার মাত্র বন্দুক চালাতে কি করে হয় তা দেখিয়ে দেওয়া হয় এবং আমিও দুইবার যখন চালাতে পারলাম তখনই আমার বন্দুক চালান শেখা হয়ে গেল। আধ ঘন্টা সময় লেগেছিল।
শিরিন পাবনা জেলা ছাত্র ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট। তাই তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে এই মুক্তি আন্দোলনে তারা কিভাবে ছাত্র বিশেষ করে ছাত্রীদের জমায়েত ও সংঘবদ্ধ করছে।
শিরিন বললাে, “আমাদের ওখানে ছাত্রদের ৪টি গণসংগঠন। আমরা ঐক্যবদ্ধ ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন গড়ে তােলার জন্য ক্লাশ এইট পর্যন্ত ফ্রী, সিলেবাসের বােঝা কামান, বাঙলাভাষায় সরকারি কাজ কর্ম চালান, স্বল্পমূল্যে বই সরবরাহ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি ১১ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন চালাই। আমাদের মটোই ছিল ঐক্য, শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি। ম্যাট্রিকুলেশন স্টাণ্ডার্ড পর্যন্ত না করে ক্লাস এইট পর্যন্ত কেন অবৈতনিক শিক্ষা তারা দাবি করে প্রশ্ন করলে শিরিন জানান যে কৃষক শ্রমিক ও দরিদ্র ঘরের বাপ মায়েরা তাদের ছেলেদের দশ বারাে বছর বয়স হতে না হতেই রােজগার করতে পাঠাতে বাধ্য হন। শিক্ষা অবৈতনিক হলেও তাই তারা তাদের সন্তানদের জন্য সে সুযােগ নিতে পারেন না আজকের দিনে।”
বর্তমান সংগ্রামের কথায় আবার ফিরে এসে শিরিন বলল, ইয়াহিয়া খান গণ-পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘােষণা করার সঙ্গে সঙ্গে ইয়াহিয়ার দুরভিসন্ধি সম্বন্ধে আমরা জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক প্রচার করেছি। আমাদের গণ সঙ্গীতের স্কোয়াড শহরে এবং গ্রামাঞ্চলে গিয়েও গানের মাধ্যমে প্রচার শুরু করে। অবশ্য এই কাজে ছাত্রীরা যােগ দিয়েছেন খুব কম। ছাত্রীদের মধ্যে বাড়ির বাইরে না বেরােনাের একটা রেওয়াজ আছে।
আওয়ামী লীগপন্থী ছাত্রলীগ ছাত্রদের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করে লাঠি চালান শিক্ষা শুরু করে দেয়। তখন তাতে কোন মেয়ে ছিল না। শেষের দিকে ৪০ জন মেয়েকে নিয়ে একটা স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী গড়ে তােলার চেষ্টা হয়। সাহিত্যিক সুফিয়া কামালের সভা নেত্রীত্বে পূর্ব পাকিস্তান মহিলা পরিষদ নামে যে মহিলা সমিতি এবং যার আহবায়িকা হলেন মালেকা বেগম আমরা ছাত্রীরা সেই সমিতির মধ্যে ঢুকেও কাজ শুরু করেছিলাম, এমনি করে নানা দিক থেকে আমরা মেয়েদের প্রস্তুত করার চেষ্টা করছিলাম।
২৫ মার্চ রাত্রি দেড়টার সময় এক কোম্পানি (১৫৬ জন) পাক মিলিটারী পাবনা শহরে আচমকা এসে হাজির হয়। কাফু জারি করার কথা কেউ শশানে নি। কিন্তু ২৬ মার্চ ভােরে ঘুম থেকে উঠে মানুষ শােনে শহরে কার্ফু। লােকজন যারা কাজেকর্মে বেরিয়েছিল তাদের উপর শুরু হল নির্বিচার অত্যাচার ও গুলিবর্ষণ। মানুষ তখন বিহ্বল প্রতিরােধের কথা চিন্তা করার মত অবস্থা নয়। ২৬ শে সারা দিনরাত ও ২৭ শে সারাদিন এইভাবে চললাে। ২৭ শে রাত্রে পুলিশ লাইনে পুলিশরা যখন নামাজ পড়ছিল তখন তাদের উপর মিলিটারি অতর্কিতে এসে গুলি চালাতে শুরু করে। অস্ত্রগারের চাবি চাইলে পুলিশ লাইনের ইন-চার্জ তা দিতে অস্বীকার করেছিলেন তাই এই আক্রমণ। পুলিশ আগইে খবর পেয়ে গিয়েছিল বলে আড়াতাড়ি পজিশন নিয়ে পাল্টা গুলি চালাতে শুরু করে। রাত্রি সাড়ে ৯টা পর্যন্ত গুলির আওয়াজ শােনা যায়।
এদিকে আমরা প্রতিটি বাড়িতে অ্যাসিড বালব, গরম জল ও সােডা বােতলে পুরে, বটি, দা, গরম লােহার শিক ইত্যাদি নিয়ে প্রস্তুত হতে শুরু করি। মরতে হলে মেরে মরবাে।
ভােরে ৫টায় আবার গুলি চলা শুরু হলাে। পুলিশের সঙ্গে তখন জনতা যােগ দিয়েছেন। জনতার মধে, কারাে কারাে হাতে শিকারের বন্দুক ছিল। এই বন্দুক জমা দেওয়ার নির্দেশ কেউ মানে নি। ভয়ে বাড়ি বাড়ি এসে এই বন্দুক কেড়ে নেওয়ার চেষ্টাও করা হয় নি।
আমিও কিছুতেই বাড়িতে চুপ করে বসে থাকতে পারলাম না। পাড়ায় শহরে আর কোন মেয়েকে না পেয়ে আমি আমার নিজের বাড়িতে একটি ছােট-খাটো নারী বাহিনী গড়ে ফেললাম। আমার খালাতাে ও নিজের বােনদের নিয়ে। ক্লাশ এইটের ছাত্রী ১৪ বছরের লুনা, ক্লাশ সেভেনের ছাত্রী ১২ বছরের চায়না ফাস্ট ইয়ায়ের ছাত্রী ১৭ বছরের শীলা এবং ক্লাশ ফাইবের ছাত্রী ১০ বছরের কুহুকে নিয়ে আমাদের কাজ শুরু হল। কখনও আমরা গােলা থেকে ধান বার করে পাড় দিয়ে চাল কুটে পুলিশের জন্য খাবার তৈরি করে দিয়ে এসেছি। কখনও বা বড় বড় কাঠ রাস্তা দিয়ে গড়িয়ে নিয়ে গিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করেছি, কখনও বা গরম জলের বােতন, দা, বটি, গরম লােহার শিক জনতাকে এগিয়ে দিয়েছিল। ছােট কুহু ছিল চাল কোটা চাল ঝাড়ার কাজে অপরিহার্য।
২৮ মার্চ পুলিশ ও জনতা মিলিটারীকে পুলিশ লাইনের পাশে টেলিফোন এক্সচেঞ্জের কাছে ঘিরে ফেরে। বেলা ১০টা পর্যন্ত গুলি বিনিময় চলে। ২৮ জন মিলিটারীই নিহত হয়। আমাদের ২ জন। ট্রেজারীর কাছেও আর এক জায়গায় মিলিটারীক:জনতা ঘিরে ফেলে: ৭ জন মিলিটারী নিহত হয় ময়লা গাড়ি এলাকায়ও মিলিটারী ঘেরাও হয়। ৫ জন নিহত হয়। ট্রেজারীর সমস্ত বন্দুক লড়াইরত জনতার হাতে তুলে দেওয়া হয়। আঙ্গুৱাখানামে এক রিক্সাচালকের বন্দুকের লক্ষ এমন চমৎকার;য়ে সে::এক এক:একটি গুলিতে একটি করে ৫জন মিলিটারীকে খতম করে।”
২৮:বেলা ১০টার মধ্যে যে এক্সচেঞ্জের লড়াই শেষ হয়। মিলিটারীর-৩৬ জন:আমাদের ৫ জন নিহত হয় এখানে জানিয়ে রাখতে চাই যেপাবনায় ইপিআর-এর কোন লােক ছিল না। জনতা এবং পুলিশই। পাবনা শহর মুক্ত করে কনট্রোল রুম দখল করে।
২৮ শে বিকেল থেকে ১০/১২ মাইল দূরের বিশেষ কষ্টে চর অঞ্চল থেকে রামদা, দা, বর্শা, মাছ ধরার চোক, তীর ধনুক নিয়ে এসে মিলিটারীর প্রধান ক্যাম্প ঘেরাও করা হয়। ২৯ শে সকাল পাক-ফৌজ বিমান থেকৈ-শেল, বোমা মেশিন গাম চালাতে শুরু করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য।
দাপুনিয়া ও মাধপুরের চাকে পলায়মান মিলিটারীর সঙ্গে জনতার খণ্ড যুদ্ধ হয়। শেষ পর্যন্ত তারা রাজশাহীতে পৌঁছতে পারে নি। পলায়মান শেষ যে দুই জন মিলিটারী ডিসি ডাক বাংলাের রান্নাঘরে লুকিয়ে ছিল তারা বাংলোর বাবুর্চির হাতে নিহত হয়।
পাবনা স্বাধীন হল ৩০ মার্চ। ৩১ শে সংগ্রাম পরিষদ ১০টি শাখা নিয়ে কাজ শুরু করে। কন্ট্রোল রুম দখলে রেখেই কাজ চলতে থাকে। শহরে বাইরে ৪/৫ মাইল পর্যন্ত নদীর ঘাট, চর অঞ্চল, বড় সড়ক গুলির মুখে মুক্তিফৌজের প্রহরা বসে। ৯ এপ্রিল পর্যন্ত শহর আমাদের দখলে ছিল।
১৯ এপ্রিল পর্যন্ত আমি কনট্রোল রুমের কাজে নিযুক্ত ছিলাম। ৯ এপ্রিল পাকফৌজ শহর দখল করে। আমাদের বাঁহিনী নিয়ে পিছিয়ে আসতে হয়েছে। ৯ এপ্রিল আমাদের মূল কেন্দ্রের সঙ্গে যােগাযােগের জন্য জহির, আমি ও আশিকুল ইসলাম কুষ্টিয়ার দিকে রওনা হই এবং পরবর্তী ধাপের লড়াইয়ের প্রস্তুতির জন্য চুয়াডাঙ্গায় আসি।
২৮ মার্চ থেকে সমগ্র, জনতার সাথে.মেয়েদেরও মুড বদলে যায়:
আমাদের পাঁচজনের-নারীবাহিনীতে আরও মেয়েরা যােগ দেওয়ার জন্য তখন:.উন্মুখ। আরও মেয়ে, তখন কাজে নেমে পড়েছে। ভাইদের সার্ট-প্যান্ট সেলাই করে ছােট্ট করে তারা নিজেদের ইউনিফর্ম তৈরি করে ফেলেছে।
সবাই বন্দুক নিয়ে লড়াইয়ের জন্য প্রত। কিন্তু তখনি ভাল করে ট্রেনিং দিয়ে মেয়েদের হাতে অস্ত্র দেওয়ার মত অবস্থায় কিরণ বন্দুকের স্বল্পতা।
শিরিনের বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করে জানা গেল সে পাবনার ছাত্র আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় দুই কর্মী মেলিনা বেগম ও শাজাহান মহম্মদের প্রথম সন্তান।
‘শিরিনের মা বাবা কুমিল্লা। কুমিল্লা স্কুলের হেডমিস্ট্রেস, বাবা অফিসের কাজে ঢাকা গিয়েছিলেন। ২৫ মার্চ ঢাকায় তার কি হল; মা ও ভাইবােনের কি অবস্থায় আছে সেজানে না। ২১.৪. ‘১৯৭১
‘মুক্তির দুত ্মুক্তিফৌজ
বাঙলাদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ শরণার্থী ভারতে এসেছেন, আজও আসছেন। তাঁরা পীড়িত, আর্ত, অসহায়ক, আশ্রয়প্রার্থী। অতিশয় স্পষ্ট, ও অত্যন্ত প্রকাশ্য, এই ঘটনা। ফলে সাদা চোখেই মানুষ তা দেখেন। কিন্তু সুধারণের দৃষ্টির অগােচরে বাঙলাদেশের যৌবন বিভিন্ন শিক্ষা শিবিরে স্বদেশের পীড়া, দুঃসময়ও অসহায়তার সঙ্গে মােকাবিলার জন্য যে মুক্তিফৌজের অঙ্কুরের মধ্যে জমেছে এবং ইয়াহিয়ার ফৌজের সঙ্গে লড়াই করে ঐ অঙ্কুর যে চারাগাছ হয়ে উঠেছে, তা কজনে দেখছেন? এই পত্রিকার বুধবারের সংখ্যায় কমিউনিস্ট নেতা শ্রীবর্ধনের দেখা ঐরূপ কয়েকটি শিবিরের বর্ণনা রয়েছে : হিন্দু ও মুসলমান ছেলেরা একত্রে হাতেনাতে লড়াই-এর শিক্ষা নিচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে ১৩ বছরের কিশাের। শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন ফৌজী ক্রিয়াকর্মে অভিজ্ঞ ৫০ বছরের প্রৌঢ়। শত্রুকে ঘায়েল করার বহু সাফল্যে মুক্তিফৌজের রেকর্ডও তাৎপর্যপূর্ণ।
এই মুক্তিফৌজেই হল বাঙলাদেশের ভবিষ্যৎ ভারতে আগত অসহায় শরণার্থী এবং বাঙলাদেশের ভিতরেও অসহায় কোটি কোটি মানুষের মধ্যে যােগসূত্র হল এই মুক্তিফৌজ। ভারতে আগত ছিন্নমূল যারা শুধু তারাই ছিন্নমূল নন; বাঙলাদেশের ভিতরে যারা আছেন তারাও ছিন্নমূল। বাঙলাদেশের ভিতরে কোন একটি কল কিংবা কারখানায় আজ ধোয়া ওড়ে না। ৪০ লক্ষ শ্রমিক একটানা ধর্মঘটে লিপ্ত। সেখানেও সমাজের ঢাকাও স্তব্ধ। বাঙলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের, তারা ভারতে রয়েছেন কিংবা বাঙলাদেশে আছেন, সকলেরই পুনর্বাসন চাই। বাঙলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের সমাজ ও সভ্যতাকেই ইয়াহিয়া খ চুরমার করেছে। তাদের এক সপ্তামাংশ দি ভারতে উৎক্ষিপ্ত, তবে ছয়-সপ্তমাংশ বাঙলাদেশেই আছেন। মুক্তিফৌজ হর কারিগর, যারা এই ভাঙা মানুষকে জোড়া দেবে, ভাঙা দেশকে পুনরায় গড়বে।
বাঙলাদেশের মুক্তিবাহিনীর এই খবরই বিশ্বের বিবেককে চাঙ্গা করে তুলেছ এবং তুলবে। পাঁচটি আরব রাজ্যের যুবসংস্থাগুলির একটি যৌথ ঘােষনা হল তারই চিহ্ন। ইস্রায়েলের দস্যু আক্রমণে প্যালেটাইনের ছিন্নমূল শরণার্থীদের জন্য বিশ্ব সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের সাহায্যের মানে যারা বােঝেন, কতদিন তারা বাঙলাদেশের ছিন্নমূলদের প্রতি নিজেদের আন্তর্জাতিক দায়িত্বের কথা ভুলে থাকতে পারেন? বয়ােবৃদ্ধ রাজনীতিকও রাষ্ট্রনীতিকদের দৃষ্টির ঘাের কাটার জন্য কিছু বেশি সময় লাগতে পারে, কিন্তু আরব দেশগুলির যুবসংস্থাগুলির যৌথ ঘােষণাই হল প্রমাণ যে, অঙ্কুর ওখানেও ডালপালা মেলতে শুরু করেছে।
ভারতে আগম্ভক শরণার্থীদের কাছে, বিশেষ করে শরণার্থী শিবিরের যুবকদের কাছে আজ মাত্র একটি ডাক—তােমরা মুক্তিফৌজে যােগ দাও। স্বদেশের মুক্তির জন্য তােমাদের সংগ্রাম বিশ্ব-মানবতাকে তােমার পাশে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে এবং দেবে। তােমাদের সগ্রামই বাঙলাদেশ থেকে ভারতে আগমনকারী ছিন্নমূলদের যেমন একমাত্র ভরসা, তেমনই বাঙলাদেশের ভিতরে অবস্থানকারী ছিন্নমূলদেরও পুনর্বাসন ও পুনজাগরণের একমাত্র সহায়। বাঙলাদেশের মুক্তি অর্জন এবং স্বাধীনতাই হল একমাত্র ধ্রুব লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করার জন্য এ দেশেরও কোন কোন দল ও ব্যক্তি যারা ভারতেই শরণার্থীদের পুনর্বাসান চাই বলে প্রচার করছে, তারা জ্ঞাতসারে কিংবা অজ্ঞাতসারে ইয়াহিয়ারই চর।
সূত্র: কালান্তর, ১৭.৬.১৯৭১