You dont have javascript enabled! Please enable it! 1953.04.13 | রাষ্ট্রভাষা ও ভাষানী | ঢাকা প্রকাশ - সংগ্রামের নোটবুক

রাষ্ট্রভাষা ও ভাষানী

গত রবিবার ঢাকার কোন একখানি বাংলা দৈনিক আজাদে নহে পাসবনের স্টাফ রিপাের্টারের সহিত মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাষানীর সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গে সে বিবরণ প্রকাশিত হইয়াছে তাহার প্রতিবাদ পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের জনাব আতাউর রহমান খান ও জনাব শেখ মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন যে, রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে মওলানা ভাষানীর অভিমত অত্যন্ত সুপরিচিত এবং তৎসম্পর্কে কোনরূপ অপপ্রচারের অবকাশ নেই। | মওলানা ভাষানী এবং আমরা সব সময়ই উর্দুর সহিত বাংলাকেও পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করা হউক বলিয়া দাবী করিয়া আসিয়াছি। মওলানা ভাষানীর বক্তৃতা বিবরণের মধ্যে এমন একটি ছত্র নাই যেখানে তিনি বলিয়াছেন যে, উর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হইবে।
পাসবানে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারের বিবরণ শত মাইল ব্যবধানের বিষয় আলােচনা করিতে যাইয়া তিনি (মওলানা ভাষানী) বলেন যে, পূৰ্ব্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের উভয় অংশের ঐক্য বন্ধন অটুট রাখিতে হইলে যে সম্পর্কের প্রয়ােজন, তাহা হইতেছে এছলাম উর্দু ভাষা। পাকিস্তানের এই অংশকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য পাকিস্তানের দুশমনের সবচাইতে বড় কাজ হইবে উক্ত দুইটা সম্পর্কের বিনাশ সাধন করা।
তিনি আরও বলেন, উর্দু ভাষাকে আমি পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা বলিয়া মনে করি এবং আমি কখনই ইহার বিরােধিতা করিতে পারি না। কেননা পাকিস্তানের এক প্রদেশের সহিত কেবল এই একমাত্র ভাষাতেই কথা বলা সম্ভব এবং এই কারণেই আমি উর্দু ভাষাকে পাকিস্তানের লীঙ্কোয়াফ্রাঙ্কা বলি। কিন্তু যখন সরকারী ভাষার প্রশ্ন উঠে তখন আমার অভিমত এই যে, বাংলা ভাষাকেও সরকারী ভাষারূপে স্বীকৃতিদান করা হউক। তাহা হইলে এই অংশের মুসলমানদের মনে তাহাদের ভাষাকে ধ্বংস করিয়া দেওয়া হইবে বলিয়া যে আশঙ্কা জন্মিয়াছে তাহা দূর হইয়া যাইবে। তিনি এই বিষয়ের উপর জোর দিয়া বলেন, দেশের অধিবাসীদের একজাতি ও একভাষী হওয়ার জন্য উর্দু ভাষা খুব তাড়াতাড়ি শিক্ষা করা প্রয়ােজন। কেননা এই ভাষা ছাড়া জাতি বােঝা হইয়া থাকিবে।

সূত্র: ঢাকা প্রকাশ, ৩১ এপ্রিল ১৯৫৩, পৃ. ২
ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিব কতিপয় দলিল -ড. এম আবদুল আলীম