ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ
-আব্দুল গাফফার চৌধুরী
ভারত ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক কি রূপ নেবে, তা নিয়ে কেউ কেউ ইতিমধ্যেই চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন। ভাবাবেগের আতিশয্য যখন কমবে এবং কম-বেশি দু’ পক্ষই বাস্তব দৃষ্টি নিয়ে পারস্পরিক সম্পর্ক পুনর্বিচার ও পুনর্বিবেচনা করতে চাইবেন, তখন যাতে কোন জটিলতা সৃষ্টি না হয়, সেদিকে ভারত ও বাংলাদেশ উভয় সরকারই সতর্ক দৃষ্টি রেখেছেন। তবু কেউ কেউ ব্যক্তিগত ও ঘরােয়া আলােচনায় সংশয় প্রকাশ করছেন। চেকোশ্লোভাকিয়ার উদাহরণ দেখিয়ে বলছেন, এক দেশে অপর দেশের লিবারেশন আরমি খুব বেশি দিন সমাদৃত হয় না। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় যে সােভিয়েট লাল ফৌজ চেকোশ্লোভাকিয়ার মাটিতে মুক্তিদূত হিসাবে বিপুল অভ্যর্থনা লাভ করেছেন, দু যুগ না যেতে প্রবল গণ-বিক্ষোভের মুখে অস্ত্রধারণ করে সেই একই দেশের মাটিতে তাদের থাকতে হয়েছে। সুতরাং আজ যে জেনারেল অরােরা এবং তার অফিসার ও জওয়ানেরা বাংলাদেশের বুকে বীরমাল্য লাভ করছেন, দু’ দিন না যেতে সেই মালার ফুল শুকিয়ে যদি কর্কশ ও শুকনাে রজ্জ্বই কেবল বেরিয়ে আসে তাহলে কি হবে?
এই ধরনের প্রশ্ন যারা তুলছেন, তারা ইতিহাসের সমান্তরালবাদী ধারণার প্রতি সম্ভবত অতিবিশ্বাস পােষণ করেন। ইতিহাসে অনেক সমান্তরাল ঘটনা রয়েছে। কিন্তু তার প্রকৃতি ও পরিণতি এক নয়। জেনারেল ইয়াহিয়ার বর্বর সামরিক অভিযানের মুখে যারা ভেবেছিলেন বাংলাদেশে আরেকটি বায়াফ্রা ঘটতে যাচ্ছে, তাঁদের ধারণা ঠিক হয়নি। টনকিং উপসাগরে গানবােট ডিপলােমেসি আর বঙ্গোপসাগরে সেভেন্থ ফ্লিট ডিপলােমেসি দ্বারা যে একই লক্ষ্য অর্জিত হয় না এবার তাও প্রমাণিত হয়েছে। ইরানে প্রধানমন্ত্রী ডা. মােসাদ্দেক বিদেশী তৈল কোমপানি রাষ্ট্রায়ত্ত করার সময় তদানীন্তন ব্রিটিশ শ্রমিক সরকার পারস্য উপসাগরে নৌবহর পাঠিয়ে যে ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন, বাংলাদেশ সমস্যায় বঙ্গোপসাগরে সেভেন্থ ফ্লিট পাঠিয়ে নিকসন অ্যাডমিনিসট্রেশন সেই একই ভূমিকা নিয়েছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশ যুদ্ধ-জাহাজের হুমকিতে মােসাদ্দেক যেমন তেল কোম্পানি রাষ্ট্রায়ত্ত করা থেকে নিবৃত্ত হননি, তেমনি ভারতের শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীও নিবৃত্ত হননি বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে সামরিক সাহায্য যােগাতে। সে যুগে কুদ্ধ ব্রিটিশ সরকার মােসাদ্দেক সরকারের পতন ঘটাতে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছিলেন। কিন্তু এ-যুগে অস্ত্র কিংবা অর্থসাহায্যের কূটনীতি কোনটা দ্বারাই ভারতে কোন গােপন অভিসন্ধি পূরণ আমেরিকার পক্ষে সম্ভব নয়। ১৯৫৩ সালেও ফুড ডিপলােমেসি দ্বারা কোন কোন বৈদেশিক শক্তির পক্ষে পাকিস্তানে সরকার-পরিবর্তন (নাজিমউদ্দিন মন্ত্রিসভার পদচ্যুতি) সম্ভব হয়েছে। ১৯৭২ সালে ভারত সরকার নিজ থেকেই পি এল ৪৮০-র অবশিষ্ট মারকিনী গম আমদানি বাতিল করে দিয়েছেন। অর্থাৎ এশিয়ার শক্তির নতুন ভারসাম্য সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের রাজনৈতিক প্রভাব বেড়েছে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা বাড়ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এশিয়ায় বাইরের হস্তক্ষেপের পরিসর ও সুযােগ আরাে সংকুচিত করবে। শক্তির নতুন ভারসাম্যের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা স্থিতিশীলতা লাভ করবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার অর্থ ভারত ও বাংলা উভয় দেশের মঙ্গল। এশিয়ায় অশান্তি ও উত্তেজনা হ্রাস।
তাই নিজেদের স্বার্থে এবং গােটা এশিয়ার স্বার্থে ভারত ও বাংলাদেশের মৈত্রী দৃঢ়মূল ও স্থায়ী হওয়া প্রয়ােজন। উভয় দেশের সরকারই এই প্রয়ােজন সম্পর্কে অবহিত এবং সতর্ক। সুতরাং আশা করা যায়, সােভিয়েট ও চেকোশ্লোভাকিয়ার ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, ভারত ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা ঘটবে না। কেন ঘটবে না সে প্রশ্ন নিয়ে আলােচনা করার আগে আরেকটি কথা বলা দরকার। শুরু সামরিক সাহায্যদাতা দেশ নয়, অর্থনৈতিক সাহায্যদাতা দেশও সাহায্য গ্রহণকারী দেশে নিন্দিত হয়েছে এমন নজিরের সংখ্যাই বেশি। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইউরােপের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন যে মারশাল প্লনের ডলার সাহায্যের ফল, সেই সাহায্যের বিরুদ্ধে ফ্রানস ও পশ্চিম জারমানীতেও জনসাধারণের একটা বামপন্থী অংশ কম ধূমায়িত ছিল না। কম্যুনিস্ট চীনে কলকারখানা নির্মাণ ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে সােভিয়েট সাহায্য কয়েক বছরের মধ্যে নিন্দিত ও পরিত্যক্ত হয়েছে। হালে ড. কিসিঙ্গারের পিকিং সফরের সময় খবর রটেছিল যে, সােভিয়েট অর্থসাহায্য পরিত্যক্ত এবং সােভিয়েট বিশেষজ্ঞেরা চীন ছেড়ে চলে যাওয়ায় নয়া চীনের যে সব কলকারখানা অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় রয়েছে, তারনির্মাণ শেষ করার কাজে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিশেষজ্ঞ ও উপদেষ্টা সাহায্য চাওয়া হতে পারে।
বাংলাদেশে ভারতের ভূমিকা দ্বিবিধ সাহায্যদাতার। প্রথমত, বাংলাদেশের লিবারেশনে তাকে সেনাবাহিনী পাঠিয়ে প্রত্যক্ষ সাহায্যদাতা হতে হয়েছে, অন্য দিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির অর্থনৈতিক পুনর্গঠনেও তাকে প্রত্যক্ষ সাহায্যদাতার ভূমিকায় নামতে হয়েছে। আশঙ্কাটি এখানে তাই অত্যন্ত প্রকট। অর্থাৎ বাংলাদেশে ভারতের সংশ্রব যত বাড়বে, ততই সেখানে তার জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে পারে। এমনকি তার প্রতি বিরূপতাও দেখা দিতে পারে। সম্ভবত এই ধরনের আশঙ্কা মনে রেখেই কেউ কেউ ভাবছেন যে, দূর অথবা অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ভারতকে সােভিয়েট রাশিয়ার মত একই সঙ্গে চেকোশ্লোভাকিয়া ও নয়াচীন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে না হয়। এই ধরনের আশঙ্কা যে একেবারে নেই তা নয়। ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক যাতে খারাপ হয়, তজ্জন্য যে সব শক্তি ভবিষ্যতে এককভাবে অথবা যৌথভাবে মাথা তােলার চেষ্টা করতে পারে তারা হল, (ক) ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা, (খ) চীনাপন্থী বিশেষ রাজনীতি, (গ) করাচী ও লাহােরের অর্থানুকূল্যে গঠিত কয়েকটি সাম্প্রদায়িক দল ও বিশেষ ব্যবসায়ী শ্ৰেণী। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তার প্রবল, সামরিক বিজয়ে এই শক্তিগুলাের হতাবশিষ্ট অংশ এখন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আত্মগােপন করেছে। কেউ কেউ বা অতি বাঙালিপনা ও বঙ্গবন্ধুর প্রতি অতি আনুগত্যের আড়ালে গা ঢাকা দিয়েছে। কিন্তু সময় ও সুযােগ বুঝে এরা আবার মাথা চাড়া দেবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। পিকিং পিন্ডি আঁতাত- এই একটি সুবর্ণ সুযােগের অপেক্ষায় ওৎ পেতে রয়েছে এবং পুরনাে স্ট্রাটেজি বদলে ফেলে প্রেসিডেন্ট ভুট্টো নতুনভাবে চাল চালতে শুরু করেছেন।
জনাব ভুট্টোর কণ্ঠেও এখন নতুন সূর। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দিয়ে তার অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে নিঃশর্ত সাহায্যদানের প্রস্তাব নিশ্চয়ই তাৎপর্যপূর্ণ। আরাে তাৎপর্যপূর্ণ প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর একটি সাম্প্রতিক উক্তি। পাকিস্তানী প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বাংলাদেশের নেতা এখন মুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন। তথাপি বাংলাদেশ থেকে কেন ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করা হচ্ছে না তা তিনি বুঝতে পারছেন না। আসলে প্রেসিডেন্ট ভুট্টো বুঝতে পারছেন সবই, কেবল স্বীকার করতে চাইছেন না। এখন তিনি নতুন খেলা খেলতে চাইছেন। গলা চড়িয়ে এমন কথাও বলেছেন, পাকিস্তানের অখণ্ডতার জন্য তিনি শেখ মুজিবকে তার দেশের প্রেসিডেন্ট অথবা প্রধানমন্ত্রীও করে দিতে রাজি আছেন। দশ মাস আগে শেখ মুজিবকে কোন রাজনৈতিক পদ ছেড়ে দেয়া নয়, তিনি যে পাকিস্তানের সংখ্যা গরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের নেতা জনাব ভুট্টো এই সত্যটুকু মেনে নিলেই ত্রিশ লাখ বাঙালিকে আত্মাহুতি দিতে হত না বিশ হাজার সধবা, বিধবা ও কুমারী বাঙালি নারীর সম্ভ্রম নষ্ট হত না এবং পাকিস্তানকেও এত শীঘ্র দু’ টুকরাে হওয়ার পরিণতি বরণ করতে হত না। এখন যা ঘটে গেছে তাকে পাল্টানাের উন্মাদ প্রচেষ্টার চাইতে দশ মাস আগে এই ঘটনাকে বর্তমান পরিণতিতে পৌছতে না দেয়ার রাজনৈতিক প্রচেষ্টাই ছিল সব চাইতে বুদ্ধিমানের কাজ।
কিন্তু জনাব ভুট্টো সেই রাজনৈতিক ভূমিকা গ্রহণের প্রজ্ঞা দেখাননি। বরং পাকিস্তানের সাময়িক জুনটার প্রত্যেকটি অদূরদশী কাজে সহায়তা যুগিয়েছেন এবং সামরিক জুনটার কাজে বিদেশের মদত সংগ্রহের কাজে পিকিং পর্যন্ত ছুটে গেছেন। আজ স্বাধীন বাংলাদেশ যখন বাস্তব সত্য এবং গঙ্গা ও সিন্ধুর জল অনেক দূর গড়িয়ে গেছে, তখন জনগণের ইচ্ছায় নয়, পাকিস্তানের সামরিক জুনটার প্রভাবশালী ইয়ং টারকদের সমর্থনে প্রেসিডেনটের গদীতে বসে তিনি সেই পদ শেখ মুজিবকে ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব ঘােষণা করে নিজের রাজনৈতিক উদারতা প্রমাণের চেষ্টা করছেন এবং সেই সঙ্গে চাচ্ছেন এই উদারতা দেখে পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে তার প্রতি সমর্থন ও সহানুভূতি বৃদ্ধি পাক। এটা এক ঢিলে দু’ পাখি মারার চেষ্টা। জনাব ভুট্টো জানেন, তার দল সিন্ধু ও পানজাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ পারলামেন্টারি দল হলেও বেলুচিস্তান ও সীমান্ত প্রদেশে এই দলের কোন প্রতিনিধিত্বমূলক চরিত্র নেই। অন্য দিকে বেলুচিস্তান ও সীমান্তপ্রদেশ ও পশ্চিম পানজাবের মিলিটারি শাসনে অতিষ্ঠ। তিনি এও জানেন, পাকিস্তানের বর্তমান সামরিক বিপর্যয় এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণার জন্য পাকিস্তানের জনগণের একটা প্রভাবশালী অংশ জেনারেল ইয়াহিয়ার সঙ্গে তাকেও দায়ী মনে করে। গত মার্চ মাসে জনাব ভুট্টো চরম-মুজিববিরােধী ভূমিকা এবং জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশনে যােগদান না করার আপসহীন মনােভাব গ্রহণ না করলে পাকিস্তানের ইতিহাস এত বড় মর্মান্তিক ট্রাজেডি সৃষ্টি হত কিনা সন্দেহ। আজ হােক কাল হােক, পাকিস্তানের সমর নায়কদের সঙ্গে জনাব ভুট্টোর নামও এই ট্রাজেডি সৃষ্টির অন্যতম হােতা রূপে উচ্চারিত হবে।
জনাব ভুট্টো তাই বিক্ষুব্ধ বেলুচিস্তান ও সীমান্ত-প্রদেশকে ঠাণ্ডা করার জন্য এক মুখে পাকিস্তানের গণতন্ত্র পুনঃ প্রবর্তনের ঘনঘন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, অন্য মুখে শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পদ ছেড়ে দিয়ে নিজের অতীত কলঙ্ক ঢাকবার চেষ্টায় মেতেছেন। এই পদ ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব জানাতে এখন জনাব ভুট্টোর কোন অসুবিধা নেই। কারণ, সত্যি সত্যি তাঁকে পদ ছেড়ে দিতে হবে না। কারণ, স্বাধীন বাংলাদেশ এখন বাস্তব সত্য এবং এই স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণমন অধিনায়ক শেখ মুজিব সেই রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পুরােধা হয়েছেন। চরম মূল্য দিয়ে বাংলাদেশ যে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, ভুট্টোর কপট উদারতার ফাদে পা দেবার জন্য সেই স্বাধীনতা তারা বিসর্জন দেবে না।
সুতরাং যে পদ বা ক্ষমতা আদৌ শেখ মুজিবকে ছেড়ে দিতে হবে না তা ছেড়ে দেবার প্রস্তাব জানিয়ে নিজের রাজনৈতিক ঔদার্যও দেশপ্রেমের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনে আপত্তি কী? এইভাবে পূর্বাপর সঙ্গতিবিহীন ও অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে প্রেসিডেন্ট ভুট্টো আসলে চান ক্ষমতার গদীতে তার আসনটি পাকা করতে। পাকিস্তানে তিনি প্রেসিডেন্টের বহু আকাক্ষিত পদটি পেয়েছেন বটে, কিন্তু তার অবস্থা বড় বেসামাল। বাংলাদেশ হাতছাড়া হয়ে গেছে। বেলুচিস্তান ও সীমান্তপ্রদেশের অবস্থা অনিশ্চিত। পাকিস্তানের সামরিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় চরমে পৌঁছেছে। তার উপর জনগণের সমর্থন বা শাসনতান্ত্রিক বিধান অনুযায়ী তিনি ক্ষমতায় যাননি বা ক্ষমতা পরিচালনা করছেন না। জেনারেল ইয়াহিয়ার হাত থেকে জনাব ভুট্টোর হাতে ক্ষমতা আসার অর্থ সামরিক জনটার প্রধানের পদে সামরিক ব্যক্তির পরিবর্তে একজন অসামরিক ব্যক্তির নিয়ােগ। জেনারেল ইয়াহিয়ার মতই জনাব ভুট্টোর ক্ষমতার উৎস সামরিক বাহিনী ও সামরিক আইন এবং পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে জেনারেল ইয়াহিয়ার মতই জনাব ভুট্টোকেও গণ-বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে।
তাই ভারতের বিরুদ্ধে হাজার বছর ধরে যুদ্ধ বা কনটেসনের সস্তা ভাবাবেগ সৃষ্টির চেষ্টার বদলে জনাব ভুট্টোর কণ্ঠে এখন গণতন্ত্র পুনঃ প্রবর্তনের প্রতিশ্রুতি, শেখ মুজিবকে প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেয়ার হাস্যকর প্রস্তাব এবং অত্যন্ত চাতুর্যের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারত-বিরােধী প্রচ্ছন্ন প্রচারঅভিযান। জনাব ভুট্টো হয়ত আশা করেন, বাংলাদেশে ভারতীয় সৈন্যের অবস্থানের প্রশ্নটিকে তিনি অনবরত খোচাতে থাকলে যদি এই সৈন্য অবিলম্বে সরিয়ে নেয়ার পক্ষে বাংলাদেশের ভিতরে বা বাইরে জনমত তৈরি হয়, তাহলে এই জনমতকে তিনি অথবা তার মিত্রশক্তিগুলাে ভবিষ্যতে কাজে লাগিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মৈত্রীসম্পর্কের মধ্যে সংশয়ের ফাটল সৃষ্টি করতে পারবেন। বাংলাদেশের ভিতরে সংখ্যায় যতই ক্ষুদ্র হােক, এই মিত্রশক্তি কারা তার তালিকা আলােচনার শুরুতেই দিয়েছি জনাব ভুট্টোর প্রকাশ্য ও গােপন বিদেশী মিত্রেরও অভাব নেই। এখন প্রশ্ন, তাঁর এই দিবাস্বপ্ন সফল হবে কি না?
আনন্দবাজার : (নির্দিষ্ট তারিখ পাওয়া যায় নি।
Reference:
গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – মুনতাসীর মামুন