বাংলা ভাষার আন্দোলন১
নাইমউদ্দীন আহমদ
[নাইমউদ্দীন আহমদ ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’-এর প্রথম সাংগঠনিক কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বলা চলে প্রথম পর্বের ভাষা-আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন তিনি।]
প্রাক-পাকিস্তান যুগ বাংলা ভাষার আন্দোলনকে বাঙালি মুসলিম ছাত্রদের আন্দোলন বললে অত্যুক্তি হয় না। পাকিস্তান হাসেলের পূর্বে বাঙালি ছাত্ররাই সামগ্রিকভাবে পাকিস্তান আন্দোলনকে বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে পৌছাইয়া দেয়। এই যুগে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে আমাদের কোনাে বিশেষ
———————-
১. মােরশেদ শফিউল হাসানের ভাষাসংগ্রামী নাইমউদ্দীন আহমদ গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত।
———————
ধারণা ছিল না। এবং পাকিস্তান অর্জনের পর যে উর্দু ভাষাকে এমনভাবে আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা হবে এ বিষয়ে আমাদের সঠিক একটা ধারণা ছিল না। তবে একথাটা ঠিক যে পাকিস্তান অর্জনের আগে। উর্দু ভাষাকে পাকিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত করা হয়েছিল এবং এর কারণ ছিল যে কংগ্রেস ইউপির এই ভাষাটিকে চিপে পিষে মারবার ষড়যন্ত্র করছিল। এই সময়ে বাংলার রাজধানী কলকাতা কেন্দ্রিক ছাত্র নেতৃবৃন্দ মুসলিম লীগের নেতৃত্বের একটা না একটা অংশের ভাড়াটিয়া বলেই পরিচিত ছিলেন অন্তত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক ছাত্র নেতৃবৃন্দের নজরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রেরা কিন্তু কোনাে দিনই মুসলিম লীগের কোনাে একটা দলের খপ্পরে পড়তে রাজি হননি এবং এটাকে তারা আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেই চলতেন। তাঁদের সামনে ছিল। পাকিস্তান আন্দোলন-দলীয় কোন্দল নয়।
পাকিস্তান অর্জনের পর
পাকিস্তান অর্জনের পর পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়। এবং ছাত্রদের বিভিন্ন সমস্যা ভীষণ আকারে দেখা দেয়। মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ তখন দলীয় কোন্দলে মেতে উঠেছেন চরম আকারে। সমস্যা সমাধানের কোনাে চেষ্টাই তারা করছেন না। পক্ষান্তরে দলীয় কোন্দলের জন্য তারা সমস্যা আরাে বাড়িয়ে চলেছেন। তদানীন্তন বঙ্গীয় মুসলিম ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দও দেশ বিভাগের সঙ্গে সঙ্গেই তাদের কলকাতা কেন্দ্রিক দলীয় কোন্দল নিয়ে ঢাকায় আসেন এবং তাদের প্রধান দাবি মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দের তল্পিবাহক হিসেবে ঢাকায় ঘুরাফিরা করতে থাকেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে এদের কোনাে নাড়ির সম্পর্ক ছিল না এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রেরা এদের দলীয় কোন্দলকে অন্তরের সঙ্গে ঘৃণা করতেন। আর একটা কথা বলা দরকার, জনাব মরহুম সােহরাওয়ার্দী সাহেবের কলিকাতায় থেকে যাওয়াতে তার দলীয় ছাত্র নেতৃবৃন্দ ঢাকায় এসে এতিমের মতাে ঘুরতে থাকেন। ঢাকার ছাত্র নেতৃবৃন্দ এদেরকে বিশেষ চিনত না পক্ষান্তরে ঘৃণা করত। অবস্থাটা এই রূপ।
পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ গঠন
ছাত্রদের তখন ভীষণ সমস্যা। কাজেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃস্থানীয় ছাত্রবৃন্দ ফজলুল হক হল মিলনায়তনে মিলিত হলেন, কি করা যায় তাহা। নির্ধারণের জন্য। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠিত হলাে আমাকেই কনভেনর করে। একটা কথা বলা দরকার। সেটা এই, আমি ছিলাম নিষ্ঠাবান কর্মী, রাজনীতিবিদ ছিলাম না; নইলে এই সময়েই কলকাতার মুসলিম রাজনীতির কোন্দলে জড়িত ২/৪ জন ছাত্রকে দূরে রাখলেই পারতাম। এদের ২/৪ জন ঢুকে পড়ল ছাত্রলীগে।
তমদুন মজলিসের প্রতিষ্ঠা
পাকিস্তান পেয়েছি। তার তমদুনকে গড়তে হবে ইসলামিক বুনিয়াদের উপর। কাজেই একদিন বসে পড়লাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র ও শিক্ষক যারা কয়েকদিন আগেই এখানকার ছাত্র ছিলেন। স্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্বের রশিদ বিল্ডিং-এর ছােট্ট ভাঙা কামরা। কাজ চলতে থাকল পুরাদমে। নেতৃত্ব দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নব্য শিক্ষক মি. কাসেম।
উর্দুকে আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র ১৯৪৮ সালেল ফেব্রুয়ারি মাস। আগেই বলেছি আমরা সমস্যাজর্জরিত। এমন সময় লক্ষ করলাম বিভিন্ন রকমের নােট, স্ট্যাম্প ইত্যাদিতে উর্দুর তকমা। রেলগাড়ীর বগি ও সিটে উর্দু ভাষায় লেখা হচ্ছে। কেবল উর্দু আর উর্দু। পাকিস্তানের শতকরা ৫৬ জন লােকের ভাষার কোনাে নমিনেশন নেই কোনােখানেই। অন্যদিকে ফতুয়া এলাে বিভিন্ন মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দের যে। উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। আরও ফতুয়া এলাে বাঙালি মুসলিমদের প্রায় সব লােকই উর্দু লিখেতে পড়তে বা বলতে পারেন। তখন আমরা তলিয়ে দেখলাম যে ব্যাপারটা ষড়যন্ত্র প্রস্তুত। আলােচনা করলাম অনেক, বিশ্ববিদ্যালয়ে, হলে হলে, এবং ক্লাসে এবং শেষে উপরােক্ত রশিদ বিল্ডিংএর ভাঙা দোতলার ঘরে। নির্ধারিত হল এই ষড়যন্ত্রকে রুখে দাঁড়াতে হবে। কর্মপরিষদ গঠন করা হলাে। ঠিক হলাে ছাত্রলীগ ও তমদুন মজলিস যুক্তভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। হলােও তাই। কর্মী সবাই ছাত্রলীগের, দু-একজন আন্দোলন বাদে। আন্দোলন শুরু হলাে, মার্চ মাসের একটা বিশেষ দিন পূর্ণোদ্যমে হরতাল চালিয়ে যেতে হবে।
সারা পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, ষড়যন্ত্রকে রুখতেই হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছােট্ট ছােট্ট ছাত্র ছড়িয়ে পড়ল জেলায় জেলায়। মহকুমায় মহকুমায়, গ্রামে গ্রামে। বিপক্ষে ফতুয়া বেরােল অনেক। রেডিও প্রােপাগাণ্ডা চলল এ আন্দোলন কমিউনিস্টদের ও এটা ভারতের কারসাজি, পাকিস্তানকে বানচাল করবার প্রচেষ্টা। এদিকে মন্ত্রীদের কলকাতা হতে আগত ভাড়াটিয়া ছাত্র নেতৃবৃন্দ গুণ্ডামি করল অনেক জায়গাতেই, কিন্তু আন্দোলন গড়ে উঠল ভীষণ আকারে। আমরা কিন্তু বার বারই মন্ত্রীদের বলে এসেছি, তােমাদের সঙ্গে আমাদের কোনাে দ্বন্দ্ব নেই, দয়া করে ছাত্রদের দাবিগুলাে মেনে নাও, তাদের সমস্যাগুলাে সমাধান করাে, আমাদের উপর উর্দুকে চাপিয়ে দিয়ে বাংলা ভাষার কণ্ঠরােধ করাে না। উর্দু পাকিস্তানের কোনাে অংশেরই ভাষা নেই, আমাদের কোনাে রাজনীতি নেই। কর্মপরিষদের আমরা সবাই মুসলিম লীগের full time worker ছিলাম ইত্যাদি ইত্যাদি।
জনাব নুরুল আমীন ও হামিদুল হক চৌধুরী সমীপে
আমরা দলে দলে গিয়ে প্রায় সব মন্ত্রীকেই বললাম তােমরা ভুল বুঝ না আমরা। মুসলিম ছাত্রলীগের কর্মী, আমাদের সমস্যার দিকে নজর দাও। আমাদের কোনাে দলীয় রাজনীতি নেই। জনাব নূরুল আমীন সাহেব ঠাণ্ডা লােক, বললাম বিললেন] তিনি ব্যাপারটা চিন্তা করে দেখবেন। ছাত্রলীগে ১০০ টাকা চান্দাও দিলেন। কিন্তু জনাব হামিদুল হক সাহেব বললেন, “আমরা একদল ছাত্রকে (শাহ আজিজ দল) খরচ দিয়ে পরিচালিত করি। কাজেই আমাদের আর কিছুই বলার নেই। বেশি গােলমাল করলে তিনি আমাদের গুঁড়া করে ফেলবেন তার ভয়ও দেখালেন। তাঁকে শ্রদ্ধা করি কেননা তিনি সেই সময়ের মুসলিম লীগ মন্ত্রীদের মনের কথাটাই স্পষ্ট করে বলে দিলেন।
জনাব সােহরাওয়ার্দী সাহেব ও দলীয় ছাত্র নেতৃত্ব
আন্দোলন চলছে পুরাদমে। আন্দোলনের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃস্থানীয় ছাত্র নেতৃবৃন্দ। পেছনে কিন্তু কোলকাতা থেকে আগত সােহরাওয়ার্দী সাহেবের দলীয় জনকয়েক ছাত্র। আমরা চাই ছাত্রদের সমস্যার সমাধান এবং মুসলিম লীগ সরকার যেন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা বলে স্বীকার করে নেন। আমাদের মনে রাজনীতির কোনাে ছায়াও ছিল না। এরা কিন্তু আঁতাত করছেন অতীতের সােহরাওয়ার্দী মন্ত্রিসভার কয়েকজনের। সঙ্গে। সােহরাওয়ার্দী সাহেব তখন ভারতে। রসিদ বই ইস্যু করা হয়েছে। ( হঠাৎ একদিন ৭০০ টাকা চাঁদাও পেয়ে গেলাম। অবশ্য ভিন্ন রশিদে। একসঙ্গে এত টাকা পেয়ে মনে কোনাে সন্দেহই ওঠেনি। মার্চ মাস, হরতাল শুরু হয়েছে খুব জোরেশােরে। এরা কিন্তু ভেতরে ভেতরে চেষ্টা করছেন মন্ত্রিসভা পতন ঘটাবার জন্য। জনাব ফজলুল হক সাহেবও। সেক্রেটারিয়েটের নিকট আমার সাথে অযথা গিয়ে একটা বেয়নেটও নাকি খেয়ে আসলেন। আমাদের পেছনের এই কতিপয় ছাত্র ঘােরাফিরা করছিল জনাব টি. আলীর বাসায়। শুনলাম মন্ত্রিসভার দফারফা প্রায় শেষ-১২৯ জন সই করেছেন। এই সমস্ত খবর পাই আন্দোলনের পরে এবং যখন জনৈক কলিকাতা লীগ মন্ত্রী এই কতিপয় ছাত্রনেতার সম্মুখে আমাকে চার্জ করে বলেন যে, ৭০০ টাকা দিয়েছিলাম মন্ত্রিসভা ফেল করাবার জন্য। কিন্তু নাজিমুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে চুক্তির সময় তাদের নিয়ে যাওয়া হলাে কেন?
মরহুম জনাব নাজিমুদ্দীন সাহেব সমীপে
নাজিমুদ্দীন সাহেব তখন বুঝে উঠেছেন যে ভাঁওতা দিয়ে চলবে না এবং রেডিও ও খবরের কাগজ মারফত তাদের কতিপয় প্রােপাগাণ্ডা পূর্ব পাকিস্তানের জনমনে কোনাে দাগই কাটতে পারেনি। কাজেই তিনি আমাদের দাওয়াত দিলেন এক বৈঠকে মিলিত হওয়ার জন্য।
সেদিন মনে হয় ১১ই মার্চ। তিনি আমাদের দাবিই মেনে নিলেন। কিন্তু একটি মানতে চান না। তিনি স্বীকার করতে চান না যে আমরা কমিউনিস্ট নই এবং আমরাই ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের জেলায় জেলায় কর্ণধার ছিলাম। তিনি কিন্তু জানতেন যে আমরাই পাকিস্তান আন্দোলনের সামনের কাতারের সৈনিক ছিলাম। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তিনি এই শর্তটা লিখতে রাজি হলেন না। কারণ আমাদের বিরুদ্ধে একমাস রেডিও ও খবরের কাগজ মারফত তারা প্রােপাগাণ্ডা করেছেন এবং তা মাঠে মারা যাবে এবং এই শর্তে এখন স্বীকার করে নিলে ভবিষ্যতে জনগণের কোনাে আন্দোলনকে তারা ভাঁওতা দিয়ে রুখতে পারবে না। এটাই ছিল তাদের মনের কথা। তিনিও এই শর্ত মানবেন না, আমরাও উঠে পড়েছি, এমন সময় প্রধানমন্ত্রীর পি. এ. এসে বললেন অবস্থা সুবিধার নয়, গদি টলমল, টলটলায়মান। ওদিকে মেডিকেল কলেজের নিকট গােলাগুলি চলছে ছাত্রদের লক্ষ করে। কাজেই চুক্তিতে সই করে দিয়ে নাজিমুদ্দীন সাহেব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।
বৈঠকে মি. মােহাম্মদ আলী সাহেবের আবির্ভাব
বৈঠকে নাজিমুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে দেখা করবার জন্য প্রবেশ করছি। সামনে মি. কাসেম ও পেছনে আমি। ঢুকেই দেখি মি. মােহাম্মদ আলী। আমরা তাঁর উপস্থিতিকে সন্দেহের চোখেই দেখলাম। কাসেম সাহেব জিজ্ঞাসা করে বসলেন, ‘মি. মােহাম্মদ আলী এখানে কাকে Report করছেন? মােহাম্মদ আলী সাহেবের আরাে আরাে পিছুটান ভাব এবং নাজিমুদ্দীন সাহেবের টানা টানা উত্তর পেলাম যে তিনি নাজিমুদ্দীন সাহেবকেই Report করছেন। শুনে মনে হয় আর কোনাে দ্বিধা রইল না যে তিনি এবং সােহরাওয়ার্দী মন্ত্রিসভার তদানীন্তন গ্রুপ নাজিমুদ্দীন সাহেবকে এই কথাটাই বুঝাতে চেয়েছেন যে তারাই এই আন্দোলনের পুরােভাগে এবং তাদের সঙ্গেই চুক্তি হবে নাজিমুদ্দীন সাহেবের। তিনি চুক্তির একটি পার্টি হিসাবেই সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু কাসেম সাহেব লােকটা নীরস। ব্যাপারটা একেবারেই ফাস করে দিলেন। তারপর শুরু হলাে চাকুরির পালা। এরা একে একে কয়েকজনই মােটা চাকুরি পেয়ে গেলেন। অথচ এদের সঙ্গে আমার বা। কাসেম সাহেবের কোনােদিন মােলাকাতও হয়নি।
চুক্তির পর
আমরা চুক্তি করে ফিরে আসলাম। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ঢাকা জেল হতে সঙ্গে সঙ্গেই সবাইকে বাহির করে আনলাম। এখন চুক্তির শর্ত ধর্মঘটি ও হরতালরত ছাত্রদের বুঝাবার পালা। চুক্তির পর্বগুলাে নিরপেক্ষভাবে পড়ে সে, যেখানে দেখা যাচ্ছে যে আন্দোলন সম্পূর্ণভাবে এই চুক্তিতে জয়যুক্ত হয়েছিল। বাকি থাকল নাজিমুদ্দীন মন্ত্রিসভা কেমনভাবে চুক্তির শর্তগুলাে। পালন করেন। কিন্তু সােহরাওয়ার্দী সমর্থক সেই কতিপয় ছাত্রনেতা দেখলেন মন্ত্রিত্ব ভাঙা তাে দূরের কথা তাদের আন্দোলনের পুরােভাগে আসার আগেই চুক্তিটা হয়ে গেল। হাজির হলাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ মাঠে ধর্মঘটি ছাত্রদের শর্তগুলাে বুঝাবার জন্য। জনাব কাসেম সাহেবকে নিয়ে ছিলাম আগের দিকে। যাওয়া উচিত ছিল কিন্তু আমার। একটাই খুব ভুল।
বর্তমান টাউন হতে ঢাকা জেল হয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ মাঠে আসে-এই সময়টুকুর মধ্যেই উক্ত কতিপয় তথাকথিত ছাত্রনেতা ঠিক করে ফেলেছেন চুক্তি বানচাল করতে হবে। কাসেম সাহেব মুখ খুলেছেন, ধ্বনি হলাে দালাল! দালাল!! তাঁরা ছাত্রদের নিয়ে চললেন এসেম্বলি হলের দিকে। আমরাও চললাম এবং আমি দাঁড়ালাম ঠিক ছাত্রদের সামনে। হক সাহেব বেরিয়ে আসলেন এবং উক্ত কতিপয় ছাত্রের সঙ্গে কি কথাও হলাে জানি না । দীর্ঘ তিনঘণ্টা ছাত্রদের বুঝিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসলাম হলে হলে। উক্ত কতিপয় ছাত্রনেতা প্রমাদ গুনলেন। অথচ আমার মতের বাইরে যাবার বা বিরুদ্ধাচরণ করবার মতাে শক্তি তখনও এরা সঞ্চার করতে পারেনি।
আন্দোলনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা
আমরা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেছি। আমি গিয়েছি দেবীদাস ঘাটে চকের নিকট আমার আস্তানায়। খবর পেলাম একদল ছাত্র এসেম্বলি হলের সামনে ভীষণ জোরেশােরে বিক্ষোভ করছে। ছুটলাম সেদিকে, পৌছলাম ফজলুল হক হলে। খবর পেলাম উক্ত কতিপয় কলিকাতা হতে আগত ছাত্রনেতা বেশ কিছুসংখ্যক ছাত্র নিয়ে এসেম্বলির সামনে বিক্ষোভ করছিল এবং সুযােগ বুঝে সরকার ছাত্রদের উপর পুলিশ লেলিয়ে দিয়েছে। জখমি ছাত্রও অনেক দেখলাম। দেখলাম তাঁরা এই ভাঁওতায় পড়াতে অনুতপ্ত। কিন্তু এ তাে হলাে সরকারের পূর্ণ বিজয়। কেননা ছাত্রদের এই পরাজয় ও গ্লানির ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে আমাদের বেশ সময় লাগে এবং সরকারও সুবিধা বুঝে পেছপা হবার সুযােগ পায়। বিজয়ের পর আমরা যখন আন্দোলনের ধারাকে অন্য লয়ে চালাবার কথা চিন্তা করছিলাম ঠিক এমনি সময়ে জন কয়েক স্বার্থান্বেষী তথাকথিত বিরােধী দলীয় নেতার চক্রান্তে পড়ে এই যে ছাত্রেরা অনর্থক মার খেলাে তার ইতিহাস কবে লেখা হবে তা এখনও বলতে পারি না, তবে এই সব নেতাদের অনেকেই এবডাের কবলে পতিত হয়েছেন। আর এইসব ভাড়াটিয়া ছাত্রনেতাদের অনেকেই জেলে থাকলেও বা বেরিয়ে আসলেও তারা এখনও সমাজের গণ্যমান্য বলে কথিত। তবে এদের দিনও ফুরিয়ে এসেছে।
কায়েদে আজমের ঢাকায় আগমন
নূতনভাবে অন্দোলন শুরু হয়েছে। বিশ্বাসঘাতকেরা এটাই চেয়েছিল। সামনেই কায়েদে আজম ঢাকায় আসছেন প্রথম গভর্নর জেনারেল হিসাবে। রেসকোর্সে তিনি প্রাণভরে অর্থাৎ যারা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে চান তাঁদের গালিগালাজ করলেন। আমরা প্রমাদ গুনলাম। আমাদের নেতা জাতির পিতা পাকিস্তান আন্দোলনের প্রথম কাতারের বীর সেনানীদের গালাগালি করছেন অকথ্য ভাষায়। বুঝলাম যে তিনি এখানকার তথাকথিত মুসলিম লীগের ধ্বজাধারীদের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়েছেন। চাইলাম তার সঙ্গে দেখা করতে। নাজিমুদ্দীন দেখা করতে দিতে নারাজ। কায়েদে আজম। আসছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কনভেনশনে। সৌভাগ্য আমরা অনেকেই সেবার ডিগ্রি নিতে যাচ্ছিলাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভােকেশন
বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি হল মিলে ঠিক করে ফেলেছে ছাত্ররা কনভােকেশন বয়কট করবেন এবং পিকেটিং করবেন। খবর পেলাম দেবীদাস ঘাট থেকে। ছুটিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। বললাম এই সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি। কায়েদে আজমকে সরাসরিভাবে অপমান করা ঠিক হবে না। নতুন রাষ্ট্র, খবর বহির্জগতে ছড়িয়ে পড়বে। সবাইকে ডেকে বললাম এই সিদ্ধান্ত ভুল।
কাজেই কার্যকর করা সম্ভব হবে না। আমার কথাই থাকল। কথা উঠল কায়েদে আজম যদি ভাষা নিয়ে আবার হদিস দেন তবে কি হবে। এমতাবস্থায় কি করা হবে তাও ঠিক করেই গেলাম অর্থাৎ আমরা সজাগ হয়েই গেলাম কনভােকেশনে।
কায়েদে আজম উঠলেন বক্তৃতা দিতে। তিনিও এসে পড়লেন রাষ্ট্রভাষার খচখচানিতে। পূর্বের যুক্তিমত হিন্দু ছেলেদের এক সেকেন্ডে ডানদিকে সরে যেয়ে হলের ডানার্ধ্বে বসতে বললাম। তাঁরা তাই করলেন চোখের পলকে। মুসলিম ছাত্রেরা মুসলিম লীগ ন্যাশনাল গার্ডের ক্যাপ পরে ফেললাম। দাঁড়িয়ে গিয়ে বললাম, কায়েদে আজম আমরা মাস্টার্স ডিগ্রি পেয়েছি, কাজেই ভাষার সবক নিতে আর রাজি নই। আমরা বাঙালি মুসলিম ছেলেরাই বাংলা ভাষার আন্দোলন করেছি ও করছি এবং আমরাও পাকিস্তান আন্দোলনের পুরােধায় ছিলাম। চেয়ে দেখুন ডান দিকে হিন্দু ছাত্র।’
কায়েদে আজমের বক্তৃতা বন্ধ হয়ে গেল। দেখলেন আমাদের মুসলিম ছাত্রদের সবারই মাথায় মুসলিম ন্যাশনাল গার্ড টুপি। নাজিমউদ্দীন সাহেব ছিলেন আমাদের সামনেই-প্রমাদ গুনলেন। সব ফাঁস হয়ে গেল। নিকটেই ছিলেন আতাউর রহমান সাহেব; তিনিও সংকুচিত হয়ে উঠলেন।
কায়েদে আজমের আহ্বান
পরে কায়েদে আজম আন্দোলনকারীদের দু’জনকে ডেকে পাঠালেন। বার্তাবাহক স্বয়ং মােহাম্মদ আলী সাহেব। তিনি কষ্ট করে আমাদের পচাগলিতে এসে হাজির হয়েছেন তিন তিনবার। আমরাও যেতে নারাজ। আবার যেতে হয় মাত্র দু’জন। শেষ পর্যন্ত ঠিক হলাে গােটা কর্মপরিষদকে যেতে দেওয়া হলে যাওয়ার কথা বিবেচনা করা হবে। কায়েদে আজম রাজি হয়েছিল বলে খবর পাওয়া গেল। যাওয়া ঠিক হল-সবাই গেলেন, আমি কিন্তু গেলাম না। যখন সবাই কায়েদে আজমের সঙ্গে এক মিনিট কথা বলবার এবং একটু তােষামােদ করবার জন্য ব্যস্ত তখন আমি কেন গেলাম না? কারণ আমি বিশ্বাস করতাম আমি একজন ছাত্র মাত্র এবং রাজনীতির সঙ্গে আমার কোনাে সম্পর্ক নেই এবং কায়েদে আজম রাজনৈতিক নেতা। বিশেষ করে আমি বরাবর চেয়েছিলাম ছাত্রলীগকে ও ছাত্রদের সক্রিয় রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতাদের আওতার বাইরে রাখতে। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ছাত্রদের রাজনীতিবিদদের আওতার বাইরে এনে ভবিষ্যতের সুষ্ঠু নেতৃত্ব গড়ে তােলা। ছাত্রলীগের প্রথম কয়েক বর্ষ ঠিক এই আদর্শের ভিত্তিটা চলছিল। আমাদের সফলতার ভাগও কম।
নয়। কিন্তু এই আদর্শচ্যুতির একটা বিরাট ইতিহাস আছে যা এখনও ছাত্রসমাজের অগােচরে। আমাদের যখন ছাত্রজীবন শেষ হয়েছে এখনই সময় আদর্শের পরিবর্তে ছাত্রদের দেওয়া হলাে আফিং এবং আফিং মােহে বেশ কিছু দিন চলল এর দ্বারা দলীয় রাজনীতি। যাক আসল কথায় ফিরে আসা যাক। কায়েদে আজম করাচি ফিরে গেলেন। তারপর পাকিস্তানের ভীষণ দুর্যোগের সময়ই জাতির পিতা আমাদের থেকে বিদায় নিলেন। এর মধ্যেই নাজিমুদ্দীন সাহেব শর্ত মােতাবেক কিছু কিছু কাজও করে ফেলেছেন। কিন্তু মধ্যে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় স্থান পায়নি। ছাত্রলীগ কিন্তু এগিয়ে গেছে পূর্ণোদ্যমে। আমাদের পেছনের কাতারের অন্য দলীয় খয়ের খারাও এখনও বিশেষ পাত্তা পায়নি, অন্তত ছাত্রলীগ বা। আন্দোলনের সামনের কাতারে আসতে পারেনি। তারা সরকারের সিকট খােসামুদ করত । ফটো পাঠাত পেপারে পেপারে, ছাপানাের জন্য আরও অনুরােধ করত। জেলায় জেলায় সফর করত নেতা বনবার জন্য। আমি কিন্তু এ সমস্তই প্রত্যাখ্যান করে এসেছিলাম এবং রাজশাহী ছাড়া ঢাকার বাইরে কোনাে দিনই কোনাে স্থানেই যাইনি। কারণ একটাই আমি ছাত্র, রাজনীতিবিদ নই। বছরের পর বছর ছাত্র হিসেবে চালিয়ে দেবার পুরাতন ব্যবস্থা।
সামনে আমার পরীক্ষা শুরু দু-দুটো। এম-এ এবং ল। আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে যেতে হবে এক চান্সেই এবং জীবনক্ষেত্রে নামতে হবে। কলকাতা উভয় দলীয় ছাত্রনেতাদের মতাে আজীবন ছাত্রনেতা থাকা চলবে না। দু’মাস ছাত্রলীগের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে পড়তে বসলাম। এবং পরীক্ষা দিয়ে পাসও করলাম। এর ভেতর ছাত্রলীগের পতন হয়েছে, প্রতিষ্ঠান এখন উক্ত ছাত্র কতিপয়ের কুক্ষিগত। মুজিবুর রহমান সাহেব উপদেশ দিলেন এখনও আমাদের ছাত্র থাকতে হবে। কিন্তু তা কখনােই হতে পারে না। এ যে আমার আদর্শের বাইরে। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে এই কোটারিটা ভাঙাই ছিল আমার আদর্শ। আদর্শগত এই সংঘাতের জন্যই আমাকে ছাত্রলীগ থেকে ছিটকে পড়তে হলাে।
নাজিমুদ্দীনের হঠকারিতা
এর পর এলেন নাজিমুদ্দীন সাহেব ফতুয়া নিয়ে যে উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। তখন আমরা আর ছাত্র নই। যে আগুন ধিম ধিম করে জ্বলছিল তা আবার জ্বলে উঠল। পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র ও যুব সম্প্রদায় ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি বুকের তাজা রক্ত দিয়ে প্রমাণ করল জাতি হিসেবে বেঁচে থাকতে গেলে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতেই হবে। নাজিমুদ্দীন সাহেবের দল মনে করেছিলেন ১১ মার্চ ৪৮ সালের মতাে একটা মার দিলেই এই। আন্দোলন নস্যাৎ হয়ে যাবে। বাংলা ভাষা নিজের জায়গা করে নিল, রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পেল।
বাংলা ভাষা কমিটি
কিন্তু আন্দোলনের সৈনিকদের আত্মা তৃপ্ত হয়নি। এর পর থেকে বাংলা। ভাষা আন্দোলনের পদটি একটি বিশেষ পক্ষের কুক্ষিগত হয় এবং এতে সব অছাত্র রাজনীতিবিদ ঢুকে পড়েন এবং নিজেদের সুবিধা মতােন একে। হরদম ব্যবহার করে চলেছেন। নিজেদের উদ্দেশ্য সিদ্ধির আখড়া হিসাবে। দরদ নিয়ে যারা আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন এবং সফলকামও হয়েছেন এদের এই পরিষদে স্থান নেই। কাজেই বছরের পর বছর তারা এই পরিষদকে আঁকড়িয়ে ধরে রেখেছেন। অবশ্য ২১শে ফেব্রুয়ারি তারিখকে নিছক উৎসব হিসাবে পালন করা হচ্ছে। কিন্তু এতে কি শহীদের আত্মা তৃপ্ত হতে পেরেছে? কখনােই নয়। এরা এই সবকিছুকে ব্যবহার করছেন। নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির অস্ত্র হিসাবে। এর মাধ্যমে অনেকে পাকিস্তানি নেতা হিসাবেও জায়গা পেয়ে গেছেন। কিন্তু বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পেলেও তার স্থান এখন কোথায়? বাংলা ভাষা পরিষদ, বাংলা একাডেমি, এগুলােতে দলাদলি ও রেশারেশি কথাটাই বেশি শুনি, আসলে কি কোনাে কাজ হচ্ছে? বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পেয়েছে সত্যিই কিন্তু আসলে আমরা এক ধাপও এগােতে পারিনি বলেই আমাদের বিশ্বাস।
ভাষা আন্দোলনের শিক্ষা
দেশের জনগণ যা চায় তাকে রুদ্ধ করা যায় না। তবে দেরি করে দেওয়া যায়। পাকিস্তান একটি দেশ এবং পাকিস্তানিরা একটি জাতি। একটা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ লােক যা চায় তাকে বল প্রয়ােগ, কূটবুদ্ধি বা ছলচাতুরি দ্বারা নস্যাৎ করা যায় না। সমস্যার সমাধান না করে তাকে জিইয়ে রাখলে সমস্যার সংখ্যা বেড়ে যায় মাত্র। বাংলা ভাষার দাবিকে ঠিক এইভাবে নেওয়া উচিত ছিল। কংগ্রেস ভারতীয় মুসলমানদের দাবিকে নস্যাৎ করতে যেয়েই পাকিস্তান কায়েম করেছে। চিত্তরঞ্জন দাশের মতাে উদারনৈতিক নেতাকে গান্ধীজি যদি কংগ্রেস। থেকে বহিষ্কার করে না দিতেন তবে হয়ত পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রয়ােজনীয়তাই উপলব্ধি করা যেত না। স্বাধীনতা অর্জনের পর ভারত যতই আমাদের কণ্ঠরােধ করে পিষে মারবার ষড়যন্ত্র করেছে পাকিস্তান আল্লাহর ফজলে ততই শক্তিশালী হয়েছে। কাজেই পশ্চিম পাকিস্তানি নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে সেখানকার উচ্চপদস্থ সম্মুখীন হয়েছে। এমতাবস্থায় সমস্ত শিক্ষিত সম্প্রদায় অশিক্ষিত বলে পরিগণিত হলে পূর্ব পাকিস্তানের গােটা শিক্ষা ব্যবস্থাই অচল হয়ে যাবে।
কাজেই তােগলকি’ প্লানের উদ্যোক্তাদের আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই যে আরবি বর্ণমালার ধুয়া তুলে গত বছরের ভাষা। প্রস্তাবকে নাটক করবার ষড়যন্ত্রকে আমরা কোন অবস্থাতেই সহ্য করে নেব না। শিক্ষা সম্বন্ধীয় আসল সমস্যাকে চাপা দিবে কতকগুলাে বাজে প্রশ্ন। নব অবতারণা করে এবং জনমতকে যেভাবে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছেন তাতে জাতি এদের কোনদিনই ক্ষমা করবে না। পূর্ব পাকিস্তানের যুবক, ছাত্র ও জনসাধারণ এ ব্যাপারে জনমত গঠনের জন্য এগিয়ে আসবেন এবং এর প্রতিবাদ জানাবেন এ বিশ্বাস আমাদের আছে।
সূত্র: ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিব কতিপয় দলিল -ড. এম আবদুল আলীম