You dont have javascript enabled! Please enable it! প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ত্রাণ কমিটি | একজন সুরেশচন্দ্র দেব - সংগ্রামের নোটবুক

প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ত্রাণ কমিটি

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেশে-বিদেশে সব জায়গায়ই ত্রাণ কমিটি হয়েছে । বিশেষ করে ভারতের প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই ত্রাণ কমিটি গঠিত হয়েছিল । এখন বিষয়টিকে তেমন অসাধারণ কিছু মনে না হলেও সে সময়কার তুলনায় তা ছিল অসাধারণ।

এ অঞ্চলের শাসকরা সবসময় ভারতকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করেছে। মানুষদের মধ্যেও ছিল এ সম্পর্কে মিশ্র ধারণা। কিন্তু, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দু’পক্ষই আবেগে উদ্বেলিত হয়ে উঠেছিল, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকায়।

আসামের করিমগঞ্জ সিলেট থেকে কাছে হলেও ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে তা ছিল প্রত্যন্ত অচেনা এক অঞ্চল। সিলেটের মানুষের সঙ্গে অবশ্য করিমগঞ্জের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সিলেট সীমান্ত থেকে উদ্বাস্তুরা আসতে শুরু করলে করিমগঞ্জের মানুষজন তখনই তাদের সাহায্যে নেমে পত্রিকায় প্রতিদিন দুর্গতদের সাহায্যের জন্য আবেদন জানাতে থাকে। করিমগঞ্জ বাংলাদেশ ত্রাণ কমিটির সভাপতি ছিলেন সুরেশচন্দ্র দেব । তিনি ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী। তার যে আবেদন ছাপা হয়েছিল তাতে তিনি তার অভিজ্ঞতাও বিবৃত করেছিলেন। বাংলাদেশে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম অত্যাচারের কথা জানিয়ে তিনি লেখেন- “এই পরিস্থিতিতে পূর্ব বাঙলার জনগণ পাকিস্তান। হইতে পৃথক স্বাধীন বাঙলা ঘােষণা করিয়া লড়াইয়ে অবতীর্ণ হইয়াছেন ও অসীম সাহসের সহিত আত্মাহুতি দিতেছেন। আত্মাহুতির মাধ্যমে আত্মনিয়ন্ত্রণের এই স্বীকৃতিকে আমাদের আন্তরিক শ্রদ্ধা নিবেদন ও আকুল শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করিতেছি। স্বাধীন দেশের নাগরিক বিশেষ করিয়া বাঙালি হিসেবে আমরা নীরব দর্শকের ভূমিকা নিতে পারি না।।

আমাদের নিশ্চিত কর্তব্য হইয়া পড়িয়াছে তাদের এই অপরিসীম বিপদে যথাসাধ্য দান করা।”

এরপর তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বাংলাদেশের স্বীকৃতি দাবি করেন ও ত্রাণ কমিটিতে যথাসাধ্য সাহায্যের আবেদন জানান। সবশেষে বলেন“ব্যক্তিগতভাবে একটি নিবেদন জানাইতেছি। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের। সময় একজন একনিষ্ঠ সৈনিক হিসাবে আত্মনিয়ােগ করিবার আমার সুযােগ ঘটিয়াছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামে যে আত্মসংশয়, একাগ্রতা, দৃঢ় সঞ্চলতা, শৃঙ্খলাবােধ প্রদর্শন করা প্রয়ােজন হয় তাহার প্রগাঢ় উপলদ্ধি করিতে সক্ষম হইয়াছিলাম । পূৰ্ব্ব বাঙলার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে এই গুণপনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আমাদের কাৰ্য্যে অগ্রসর হইবার আশা রাখি।” 

সূত্র : দৃষ্টিপাত, করিমগঞ্জ, ২৪ চৈত্র, ১৩৭৭

ভিনদেশিদের মুক্তিযুদ্ধ – মুনতাসির মামুন