You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.05.03 | বাংলার বাণী সম্পাদকীয় | পরিত্যক্ত সম্পত্তি হস্তান্তরের প্রশ্নে | গোদের উপর বিষ ফোঁড়া | সময়োচিত সিদ্ধান্ত | শেখ মণি - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলার বাণী
৩রা মে, বৃহস্পতিবার, ১৯৭৩, ২০শে বৈশাখ, ১৩৮০ বঙ্গাব্দ

পরিত্যক্ত সম্পত্তি হস্তান্তরের প্রশ্নে—

পুঁজি প্রত্যাহার বোর্ডের বৈঠক বসবার কথা ছিলো গতকাল। বৈঠকের কোন খবর জানা না গেলেও চারদিকের আলামত দেখে অবস্থাটা তেমন সুখপ্রদ মনে হচ্ছে না। এই বৈঠকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি হস্তান্তরের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে এক প্রতিবেদনে প্রকাশ। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেয়ার আগেই কারচুপি আর ষড়যন্ত্রের যে সকল নমুনা জনসাধারণের গোচরীভূত হয়েছে তা থেকে অন্ততঃ এতটুকু আঁচ করা যেতে পারে যে, পরিত্যক্ত সম্পত্তি হস্তান্তরের ব্যাপারে সরকারী নীতি ও সিদ্ধান্তমালা লংঘনের একটা উদ্দেশ্যমূলক প্রচেষ্টা মহল বিশেষ থেকে বেশ জোরেশোরে এগিয়ে চলেছে। আমরা জানিনা অতঃপর সরকারী সিদ্ধান্তই কার্যকারী হবে না একশ্রেণীর উঠতি পুঁজিপতির অমানবিক খায়েশ।
শিল্প-সম্পত্তির মূল্য কমিয়ে দেখানো এবং কল-কব্জা, যন্ত্রপাতি সরিয়ে ফেলার যুগ শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়েছে পরিত্যক্ত সম্পত্তিগুলো ব্যক্তিগত মালিকানায় হস্তান্তরের চক্রান্তমূল অপচেষ্টা। যদিও শ্রমিক সমবায়ের কাছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মালিকানা হস্তান্তরের সুষ্পষ্ট নির্দেশ সরকার থেকে ঘোষণা করা হয়েছে তবুও অভিযোগ পাওয়া গেছে যে, শ্রমিক সমবায় সংস্থাসমূহ সমবায় দফতরের নিকট থেকে আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছেনা। ক্ষেত্র বিশেষে এই সমবায় সংস্থাগুলোকে ডিঙ্গিয়ে ব্যক্তি মালিকানায় শিল্পকারখানা হস্তান্তরের পাকাপোক্ত ব্যবস্থাও গৃহীত হয়েছে।
স্বাধীনতা উত্তরকাল থেকেই সরকারের প্রগতিশীল কর্মসূচীসহ বানচাল করার জন্য একশ্রেণীর লোক অত্যন্ত সংঘবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা চালায়। সুদৃঢ় প্রতিরোধের অভাবে বহুক্ষেত্রে তারা ইতিমধ্যেই সফলতা অর্জন করেছে। ফলে দুর্ভোগ বেড়েছে জনসাধারণের। একই সঙ্গে একটা ‘নয়া অভিজাত’ শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে চলেছে বাংলাদেশে যে দেশ সমাজতন্ত্রকে তার মূল লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে। আজকের এই অভিজাত শ্রেণীই একদিন সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সবচাইতে চরম শত্রুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে যদি সময় থাকতেই সমাজদেহ থেকে এই দৃষ্টক্ষতদের আমরা অপসারণ করতে না পারি।

গোদের উপর বিষ ফোঁড়া

এমনিতে মাছ নেই। সারা দেশের চাহিদা পূরণের পক্ষে মাছ যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে না। মাছের চাষ করার প্রতি তেমন কোন গুরুত্ব আরোপ এখনো পর্যন্ত করা হয়নি। ভাতে মাছে বাঙালীর জীবন মাছের অভাবে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এমনি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আবার গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো আরেক নতুন উৎপাতের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে স্থানীয় একটি পত্রিকায়।
প্রকাশ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানি দূষিত হয়ে শত শত মণ মাছ নষ্ট হচ্ছে। পচা দুর্গন্ধময় মাছের জন্য উল্লেখিত নদীর দু’পাড়ের কয়েকটি থানার অধিবাসীদের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
গত শুক্রবার থেকে এই নদী দু’টিতে পানির রং নীলাভ ও ময়লাযুক্ত হতে থাকে। এই অবস্থার ফলে রূপগঞ্জ থানার তারাবো, কায়েতপাড়া, সরাপাড়া ও রূপগঞ্জ এই চারটি ইউনিয়ন, তেজগাঁ থানার ডেমরা, মাতুয়াইল ও বেরাইদ এই তিনটি ইউনিয়ন এবং নারায়ণগঞ্জ থানার কয়েকটি ইউনিয়নের দু’লক্ষাধিক অধিবাসীর প্রায় সবাই গত কয়েকদিনে মাছ খেতে পায়নি। শুধু তাই নয়, উক্ত ইউনিয়নগুলিতে প্রায় সহস্রাধিক জেলে পরিবার যারা নদীতে মাছ ধরে তারা আজ বেকার। তারা মাছ ধরতে পারেনি। যা মাছ পেয়েছে তাও মরা। পানি দূষিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানা যায় যে, বিপুল পরিমাণ বিষাক্ত পদার্থ পানিতে ছড়িয়ে পড়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে মৎস্য বিভাগের জনৈক কর্মকর্তা বলেছেন যে, ঘোড়াশাল সার কারখানা থেকে সম্প্রতি বিপুল পরিমাণ এমুনিয়া, সালফিউরিক এসিড ও ইউরিয়া সহ কয়েকটি রাসায়নিক পদার্থ পানিতে নিক্ষিপ্ত করার জন্যই পানি দূষিত হয়েছে। এদিকে ঘোড়াশাল সার কারখানার চীফ ম্যানেজার উল্লেখিত পদার্থ পানিতে ফেলার জন্য দূষিত হয়ে মাছ মরেছে একথা স্বীকার করেননি।
সার কারখানার প্রধান কর্মকর্তা স্বীকার করুন আর নাই করুন পানি দূষিত হয়ে মাছ মরেছে এটা বাস্তব সত্য। মাছের দুষ্প্রাপ্যতার দিনে শত শত মণ মাছ নদীতে ভাসতে থাকবে এমন কেউ কল্পনাও করতে পারেন না। এমন একটি মারাত্মক দুর্ঘটনাকে সহজে এড়িয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। কে-বা কারা এ জন্যে দায়ী সে সম্পর্কে যেমন সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন তেমনি এ সমস্যার আশু প্রতিকারের জন্যও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। গোদের উপর বিষ ফোঁড়া সৃষ্টি যারা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করবেন এ আশাই আমরা করছি।

সময়োচিত সিদ্ধান্ত

পরের মুখে ঝাল খাওয়াটা খুবই খারাপ। এ অভ্যাস যাকে পেয়ে বসে তার স্বকীয় সত্তা বিকাশের কোন সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশ বিমান যে অবশেষে এ সত্যটিকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন সে জন্যে আমরা আনন্দিত। আমরা চাই বাংলাদেশ বিমান নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে ঘরে-বাইরে সুনাম অর্জন করুক।
বাংলাদেশ বিমান টেলিভিশনে বি.ও.এ.সি’র তিয়াত্তর সালের ক্যালেন্ডারের ছবি দিয়ে যে বিজ্ঞাপন প্রচার করেছিলেন তা বাংলার বাণীতে জনৈক পাঠকের চিঠি প্রকাশিত হবার পরই বন্ধ করে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। সময়োচিত সিদ্ধান্ত সব সময়েই অভিনন্দনযোগ্য। তবে এ প্রসঙ্গে বলা যায় যে, এমন একটি মারাত্মক ভুলের জন্য দায়ী কে? কে বা কার জন্য অযথা কয়েক হাজার টাকা গচ্চা দিতে হলো বাংলাদেশ বিমানকে সে বিষয়ে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তদন্ত করে দেখতে হবে।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, স্বাধীনতা লাভের পর প্রায় দেড় বছর অতিবাহিত হতে চললো এ সময়ের মধ্যে নানান প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে বাংলাদেশ বিমানকে। একথা যেমন সত্য তেমনি সত্য বাংলাদেশ বিমানই হলো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সহায়ক শক্তি। বর্তমানে বাংলাদেশ-লন্ডন বিমান পথে বাংলাদেশ বিমানকে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে বি.ও.এ.সি. বিমানের সঙ্গে। ভবিষ্যতে অন্যান্য এয়ার লাইনসের সঙ্গেও প্রতিযোগিতা করতে হবে। এমতাবস্থায় আমরা মনে করি যে, বাংলাদেশ বিমানকে পরিপূর্ণভাবে সক্রিয় করে তুলতে হলে বাংলাদেশ বিমানের জন্যে একজন সার্বক্ষণিক ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রয়োজন। যিনি নিজের কর্মদক্ষতার গুণে বাংলাদেশ বিমানকে ঢেলে সাজিয়ে সম্পূর্ণ সক্রিয় করে তুলতে সক্ষম হবেন। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে গভীরভাবে ভাবনা-চিন্তা করে বাংলাদেশ বিমানের স্বার্থেই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন