You dont have javascript enabled! Please enable it! বাঙালী শরনার্থীদের জন্য ১০ মিলিয়নের দাবীতে অস্ট্রেলিয়ান যুবকের অনশন। - সংগ্রামের নোটবুক

বাঙালী শরনার্থীদের জন্য ১০ মিলিয়নের দাবীতে অস্ট্রেলিয়ান যুবকের অনশন। সে আগুন ছড়িয়ে গেল সারা দেশে।
===============
এ ঘটনা বাঙালির অজানা যে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় পালিত হয়েছিল এক অনশন। মেলবাের্নে এর শুরু, পরে তা ছড়িয়ে পড়ে ক্যানবেরা এবং সিডনিতে। উদ্দেশ্য ছিল, বাংলাদেশের উদ্বাস্তুদের জন্য অস্ট্রেলিয় সরকারকে বাধ্য করা ১০ মিলিয়ন ডলার সাহায্য দিতে এবং বাংলাদেশের পক্ষে অস্ট্রেলিয়দের বিবেক জাগ্রত করা। সব সময়।
এই অনশন শুরু করেন পল পােয়েরনমাে নামে একজন কবি। তিনি ফ্রিডম ফ্রম হাঙ্গার নামে একটি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আরও যুক্ত ছিলেন মেহের বাবা নামে ভারতীয় এক গুরু। তার জন্ম ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের মাদিয়ুনে ১৯৩৫ সালে। খুব সম্ভব কলম্বাে পরিকল্পনার অধীনে ১৯৫৬ সালে প্রকৌশলী ছাত্র হিসেবে আসেন অস্ট্রেলিয়ায়। ১৯৬৩ সালে এক অস্ট্রেলিয় নারীকে বিয়ে করেন, বিবাহ বিচ্ছেদ হয় দু’বছর পর ১৯৬৫ সালে। অস্ট্রেলিয় নাগরিকত্ব পান ১৯৬৭ সালে। ১৯৭১ সালে কোনাে একটি সংস্থায় কেরানি হিসেবে কাজ করতেন। মেলবাের্ন, ক্যানবেরা, সিডনি-এ কটি শহরে পলের সঙ্গে আরও অনেকে বিভিন্ন সময় অনশনে অংশ নিয়েছেন। কেউ এক সপ্তাহ কেউ দু’সপ্তাহ বা কেউ তিন সপ্তাহ। পলই শুধু প্রায় তিন মাস অনশন করেছেন। পলের সঙ্গে যারা অনশন করেছেন তাদের সবার নাম জানা যায়নি। পত্রিকার বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে পল ছাড়া আরও ১১ জনের নাম পাওয়া গেছে। এরা হলেন ওয়েন হ্যামিলটন (১৯), এ্যাশলে বার্নেট (১৮), স্টিভ রুনি (১৯), জিওফ ইভান্স (২২), জন হামফ্রে, মার্গারেট সােয়ান, পিটার স্ট্যান্ডবরাে (১৯), ব্রায়ান গ্রিফিন (১৭), ব্রুস ব্রিডয়েস্টার (৬১), কেরি বাবা, এবং ক্রিশিয়ানা ফক্স (২৮)। দেখা যাচ্ছে এদের অধিকাংশের বয়স ছিল পঁচিশের নিচে। পলের বয়স তখন ৩৬ আর ব্রিডয়েস্টারের ৬১। এদের কেউ কেউ ছিলেন ফ্রিডম ফ্রম হাঙ্গারের সঙ্গে যুক্ত। কেউ ছিলেন মেহের বাবার ভক্ত। অধিকাংশই ছিলেন ছাত্র। মানব দুর্দশায় সমব্যথী হয়ে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের এই বন্ধুরা বাঙালিদের পক্ষে দাঁড়িয়ে অস্ট্রেলিয়ায়। হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে বাংলাদেশে গণহত্যার চেয়ে দেশান্তরী মানুষ বা বাস্তুত্যাগী মানুষদের খবর বেশি প্রচারিত হয়েছিল। বাস্তুত্যাগীদের মর্মান্তিক অবস্থা বিদেশে অনেককে বাংলাদেশের পক্ষ নিতে আবেগতাড়িত করেছে। পল ও তাঁর বন্ধুরা ছিলেন সে রকম কয়েকজন।
বাস্তুত্যাগীদের মর্মন্তুদ অবস্থা দেখে পল ও তাঁর বন্ধুরা কিছু একটা করার কথা ভাবছিলেন। হঠাৎ তারা সিদ্ধান্ত নিলেন, অনশন করে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। জনমত তৈরি হলে সরকারকে চাপ দেওয়া সম্ভব হবে দুর্গত মানুষদের সাহায্যের পরিমাণ বাড়াতে। যতটুকু তথ্য পেয়েছি তা থেকে অনুমান করছি, অনশন প্রথম শুরু করেছিলেন পল। তারপর তাঁর সঙ্গে যােগ দিয়েছিলেন ওয়েন হ্যামিলটন (১৯), এ্যাশলে বারনেট (১৮), স্টিভ রুনি (১৯), জিওফ ইভানস (২২) এবং জন হামফ্রে । এর মধ্যে রুনি ছিলেন ট্রাক ড্রাইভার । অন্যরা সম্ভবত ছাত্র।
১৩ সেপ্টেম্বর থেকে মেলবাের্ন জিপিওর সামনে পল অনশন শুরু করেন। একেবারে নিরমু উপবাস নয়। সামান্য কিছু খেতেন। ২১ সেপ্টেম্বর। মেলবাের্নের দৈনিক দি এজের প্রতিবেদক জন লুই প্রতিবেদন তৈরির জন্য দেখা করলেন পলের সঙ্গে। সেখানে লুই উল্লেখ করেননি কয়জন উপবাস করছিলেন। তিনি শুধু পলের কথাই উল্লেখ করেছেন। কিন্তু, অন্যান্য সূত্র অনুসারে, পল অনশন শুরু করার পর বাকি পাঁচজনের কয়েকজন তাঁর সঙ্গে যােগ দিয়েছিলেন। পল লুইকে জানালেন, “আজ সামান্য খেয়েছি। অনশন ভাঙব ঠিক করেছিলাম। কিন্তু না, অনশন চালিয়ে যাব রবিবার পর্যন্ত।
নয় দিন ধরে মাঝে মাঝে এক চুমুক পানি পান করেছেন পল। এর আগের রবিবারে সামান্য যব আর মধু খেয়েছিলেন। এর আগের ছয় দিন। রাতে শুধু রুটি আর জ্যাম খেয়েছেন।
তাঁরা দু’জন কথা বলছেন। এমন সময় এক সন্ন্যাসিনী থামলেন পলের সামনে। তাঁর টিনের কৌটায় এক ডলার ষাট সেন্ট ফেলে জানালেন, “আজ দুপুরে আমার দ্বিতীয় শ্রেণীর ছেলেমেয়েরা লাঞ্চ না খেয়ে এই পয়সা জমিয়েছে। তােমাদের দেওয়ার জন্য।
পল হেসে লুইকে বললেন, “গতরাতে এত উত্তেজিত ছিলাম যে, রাত একটা পর্যন্ত ঘুমুতে পারিনি। লুই লিখেছেন, পলকে দেখে মনে হচ্ছিল তার চেষ্টা বৃথা যাবে না। পথচারীরা মাঝে মাঝে পলকে দেখে থামছে। মৃদু হেসে তাঁর সামনে টিনের কৌটায় পয়সা ফেলে যাচ্ছে। ইতােমধ্যে পল ও তার সঙ্গীরা ৬০০ ডলারেরও বেশি টাকা সংগ্রহ করেছেন। এক ভদ্রলােক একগুচ্ছ। ভায়ােলেট ফুল পলকে দিয়ে বললেন, এই অনশনে কাজ হবে না। কিন্তু হয়েছিল, সে প্রসঙ্গ পরে।
পল পপায়েরনমাে বলেছিলেন, অনশনের মাধ্যমে আমরা অনুধাবন করতে পারব ভারতে বাস্তুহারা এবং বিশ্বের অন্যান্য জায়গা উপবাসীরা কী যন্ত্রণায় ভুগছে। শিশুরা ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছে এবং একজন দু’জন নয়, হাজারে হাজারে। তার মতে ‘This fast will end in life. For them it ends in death.’

মেলবাের্নের সােয়ানস্টন স্ট্রিটের সেন্ট পল ক্যাথেড্রেলের সামনে সিঁড়িতে শুয়ে অনশন করছিলেন ওয়েন হ্যামিল্টন। তিনি সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখ থেকে অনশন শুরু করেছিলেন। তাঁর অবস্থা খারাপ হলে তাঁকে সেন্ট ভিনসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি আরও পাঁচজনের সঙ্গে অনশন করছিলেন। চার্চ কর্তৃপক্ষ তাঁদের চত্বরে এরপর একটি তাঁবুর ব্যবস্থা করে দেয়। আরেকজন অনশনকারী বারনেট জানিয়েছিলেন, গত পাঁচ দিন। হ্যামিল্টন মাঝে মাঝে শুধু পানি খেয়েছেন।
পত্র-পত্রিকায় অনশনকারীদের প্রতিবেদন ছাপা হতেই তা নিয়ে আলােচনা শুরু হলাে । দি এজে একজন প্রস্তাব করলেন, অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক যদি এক ডলার করে দান করেন তাহলে ১২ মিলিয়ন ডলার বাস্তুহারাদের সাহায্য দেওয়া যাবে। কার্নেগি থেকে এফ.ই.সি নামে এক ভদ্রলােক জানালেন, এক ডলারের বেশি যদি কেউ দিতে চায় তবে যেন আপত্তি না করা হয়। তিনি নিজে ১০০ ডলার পাঠাচ্ছেন। সম্পাদক সেই ১০০ ডলার পাঠিয়ে দেন ফ্রিডম ফ্রম হাঙ্গার ফান্ডে।
ইতােমধ্যে ফ্রিডম ফ্রম হাঙ্গার অ্যাসােসিয়েশন অনশনকারীদের আহ্বান জানান, অনশন ভঙ্গ করার জন্য। অনশনকারীরা রাজি হননি। তখন রাজ্য সরকার অনশনকারীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরওয়ানা জারি করে। গুজব রটে যে ফ্রিডম ফ্রম হাঙ্গার আর অনশনকারীদের সমর্থন করছে না কারণ তাঁরা তাদের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। তখন সংস্থার সভাপতি মিসেস জিএন ফ্রস্ট (৪.১০.৭১) জানালেন, যা রটছে তা গুজব। ‘গত রাতেও আমরা তাদের থেকে টিনের কৌটা (অর্থাৎ দানবাক্স) সংগ্রহ করেছি। আমরা কেন তাদের পরিত্যাগ করব? দে আর আওয়ার পিন আপ বয়েজ।’ তিনি আরও জানান, সরকার বলছে, তারা জিপিওতে গমনাগমনে বাধা সৃষ্টি করছে, কিন্তু জিপিও কর্তৃপক্ষ বা কোনাে ব্যক্তিও এ বিষয়ে অভিযােগ তােলে নি।
সরকার গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি করলে প্রতিক্রিয়া হয়। ফেডারেল এ্যাটর্নি জেনারেল সিনেটর গ্রিনউড তখন ঘােষণা করেন, গ্রেফতারী পরওয়ানা প্রত্যাহার করা হলাে। ভিক্টোরিয়া রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী মি. হ্যামারও ঘােষণা করেন তাদের গ্রেফতার করা হবে না।
আগের দিন অর্থাৎ ৩ অক্টোবর স্টিভ রুনি বলেন, এক পুলিশ তার পেটে ঘুষি মেরেছে। রুনিকে গ্রেফতার করতে গিয়ে তাঁর নাম জিজ্ঞেস করে সেই পুলিশ। রুনি নাম জানতে অস্বীকার করলে তাঁকে ঘুষি মারা হয়। রুনি তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, বাস্তুহারাদের জন্য কি তাঁর মন একটুও খারাপ হয় না? জগতের সব পুলিশ ম্যানের মতাে অস্ট্রেলিয়ান সে পুলিশ উত্তর দেন, আমার কিছু আসে যায় না।
ভিক্টোরিয়া সরকার গ্রেফতারি পরওয়ানা প্রত্যাহার করলেও ফেডারেল সরকার বিব্রত হয় বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী ম্যাকমােহন। রাজ্য সরকারের কারণে ফেডারেল সরকারও গ্রেফতারি পরােয়ানা প্রত্যাহার করে, তবে সিনেটার গ্রিনউড একট বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে এ সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য জানা যায়।
সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখে ফ্রিডম ফ্রম হাঙ্গারের সমর্থকরা জিপিওর সামনে সমাবেশ শুরু করে। দিনরাত সমাবেশ চলছিল। রাতে তাঁরা বারান্দায় ঘুমাতেন। সকালে মানুষজনের জিপিওতে ঢুকতে অসুবিধা হতাে। সেখানে রাত ১০টার পর টয়লেটের সুবিধা ছিল না, অনেকে অভিযােগ করছিলেন। ১৯০১ সালের পােস্ট গ্র্যান্ড টেলিগ্রাফ এ্যাক্ট ভঙ্গের জন্য ঐ ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছিল।
অনুমান করছি ১১ তারিখ থেকে ফ্রিডমের বেশ কিছু সমর্থক সমাবেশ করলেও উল্লিখিত ছয়জনই রাতে জিপিওতে থেকে যেতেন। সেপ্টেম্বরের ১৩ তারিখ থেকে পল অনশন শুরু করেন। বাকি ছয়জন তারপর একে একে তার সঙ্গে যােগ দেন।

নিউ এজের মতে, সরকার গ্রেফতারি পরওয়ানা প্রত্যাহার করেছে একটি কারণে। তাদের মনে হয়েছে, ঐ ছয়জন যে কারণে অনশন করছেন সে কারণটি মহৎ। তাঁদের আরও মনে হয়েছিল, গ্রেফতার আবেদন প্রত্যাহার না করলে জিপিওর সামনে মিছিল মিটিং শুরু হতে পারে।
৩ তারিখ তাঁদের গ্রেফতারের আদেশ প্রত্যাহার করলে ছয়জন অনশনকারী রওয়ানা হন ক্যানবেরার পথে । উদ্দেশ্য, পার্লামেন্টের সামনে ধর্ণা দেওয়া।

3

সিডনি মর্নিং হেরাল্ড অক্টোবরের ৬ তারিখ (মঙ্গলবার) এক প্রতিবেদনে জানায়, বিমানে করে মেলবাের্ন থেকে ক্যানবেরা পৌঁছেছেন পল পােয়েরনমাে,
স্টিভ রুনি এবং জিওফ ইভানস। বাকি ৩ জন গাড়ি করে পরদিন পৌছবেন। যতদিন তারা বাস্তুহারাদের জন্য ১০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করতে না পারবেন ততদিন তারা অনশন অব্যাহত রাখবেন। ৬ তারিখ সকাল ১০টা থেকে তাঁরা অনশন শুরু করবেন। এর আগে রাতে তারা তিনজন ভারতীয় খাবার খাবেন। ঐ তিনজন প্রধানমন্ত্রী ম্যাকমােহন, এ্যাটর্নি জেনারেল গ্রিনউড, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বােওয়েন ও পুলিশ কমিশনার ডেভিসকে পার্লামেন্ট ভবনের সামনে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন যাতে তাঁরা ‘স্টারভেশন মিল গ্রহণ করতে পারেন।
সিডনি হেরাল্ডের ৭ তারিখের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়। স্টিভ রুনি [যাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল] বার্নেট আর হ্যামিলটন ঠিক করেন তাঁরা সিডনি চলে যাবেন এবং সিডনি টাউন হলের। সামনে ৭ অক্টোবর বেলা দশটা থেকে অনশন শুরু করবেন। পল ইভানস আর হােমার অনশন করবেন ক্যানবেরায় পার্লামেন্ট হাউসের সামনে।
এই অনশন সরকারের মনােভঙ্গি পরিবর্তনেও সাহায্য করতে থাকে। মেলবাের্নে ১৮ দিন অনশনের পর ৭ অক্টোবর পােয়েরনমাে, ইভানস ও রুনি। পার্লামেন্ট ভবনের সামনে অনশন শুরু করেন। সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রী। ম্যাকমােহনকে ফোন করেন ঘটনাটি জানতে। ম্যাকমােহন জানান, তাঁরা ভালাে একটি কাজের জন্য অনশন করছেন। তিনি জানান, গত শনিবার সকালে সাংবাদিকরা ফোন করে তাকে জানান মেলবাের্নে এই তিনজনের গ্রেফতারের খবর তিনি জানেন কিনা। তিনি পােস্টমাস্টার জেনারেল ও এ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে কথা বলে গ্রেফতারি পরওয়ানা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। পােস্টমাস্টার জেনারেল এ্যালান হুলস সাংবাদিকদের জানান, মেলবাের্ন জিপিওর সিঁড়িতে ওঠার সময় তালাবদ্ধ একটি দানবাক্স রাখা হয়েছে। যে কেউ সেখানে দান রেখে যেতে পারেন।
অন্যদিকে সাধারণ মানুষের ক্ষোভও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে। মাইকেল নেইল জানান, বাংলাদেশে যা ঘটছে অস্ট্রেলিয়া সরকার তাতে মনােযােগ দেয়নি। কিন্তু মানুষ যে তাদের জন্য অনুভব করে অনশনকারীরা হলাে তার প্রতীক। এরা আমাদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দিয়েছে আর এদের ওপরই পুলিশের হামলা! মাইকেল লিখেছিলেন
I was indeed angered by our governments miserly response to the Pakistani refugee problem in India, but I am enraged to think that this police action has destroyed the only significant symbol of caring that has spontaneously to good our conscience into action on behalf of hungry people.
রস হ্যামিলটন নামে আরেকজন ঠাট্টা করে লিখলেন, সরকার লম্বা চুলাে কিছু লােককে শায়েস্তা করতে পেরে খুব খুশি। যা তা কথা, এরা জিপিওতে যেতে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। তাদের ধারণা কি, জায়গাটা তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি! হে অস্ট্রেলিয়াবাসী নির্বিঘ্নে ঘুমাও। পাকিস্তানে কোটি মানুষ অভুক্ত তাতে কি-তারা তাে অস্ট্রেলিয়ান নয়-এমনকি শ্বেতাঙ্গও নয়- I hope you all sleep well to night. Try not to worry to much about these millions starving in Pakistan-after all, they are not Austrialiansthey are not even white!
১৮ অক্টোবরের সংবাদে জানা যাচ্ছে পােয়েরনমাের অনশনের ১৪ দিন হয়েছে। শুধু পানিতে চুমুক দেওয়া ছাড়া আর কিছু খাননি। ডাক্তাররা তাঁকে পরীক্ষা করেছেন এবং বলেছেন, তিনি পানিশূন্যতা ও অপুষ্টিতে ভুগছেন। কিন্তু পােয়েরনমাে তাঁর দাবি থেকে নড়েননি। অস্ট্রেলিয়া সরকারকে ৭ থেকে ১০ মিলিয়ন ডলার সাহায্য দিতে হবে। তিনি জানিয়েছেন, ২৮ তারিখের পর অনশন ভঙ্গ করবেন। তারপর একটানা মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে। “আমি মরব না কারণ ঈশ্বর বেঁচে আছেন এবং আমার সঙ্গেই আছেন। তিনি যখন মনে করবেন আমার সময় হয়েছে তখনই আমি যাব।” পার্লামেন্টের সামনে পেভমেন্টে একটি স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে পল অনশন করছেন।
১৮ তারিখের সংবাদে বাকি দু’জন অনশনকারী সম্পর্কে জানা যায়নি। ৩শে নতুন আরেকজনের নাম পাওয়া যায় । তার নাম মার্গারেট সােয়ান। তিনি আগে মেলবাের্নে অনশন করেছেন। এখন ক্যানবেরায় অনশনে যােগ দেবেন বলে জানিয়েছেন। ২৯ তারিখেই পােয়েরনমাে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পানি আর সিগারেট খেতেন। শেষের দিকে অধিকাংশ সময় ঘুমিয়ে থাকতেন। একজন ডাক্তার এসে তাকে পরীক্ষা করে বলেছিলেন অনশন ভাঙতে। পােয়েরনমাে রাজি হননি। দ্বিতীয় আরেকজন ডাক্তার তাঁকে পরীক্ষা করতে এলেন। কারণ, খবর দেওয়া হয়েছিল ১৭ ঘণ্টা ধরে তিনি ঘুমােচ্ছেন। ডাক্তার তখনি অ্যাম্বুলেন্স আনতে পাঠালেন, পােয়েরনমােকে পাঠানাে হলাে ক্যানবেরা হাসপাতালে। তখন প্রধানমন্ত্রী ঘােষণা করলেন সরকার চিন্তাভাবনা করছে সাহায্য বাড়ানাের । ব্রিটেন ইতােমধ্যে তার সাহায্য দ্বিগুণ করেছে [৩২ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার] অস্ট্রেলিয়া দিয়েছে ৩ মিলিয়ন। অন্যদিকে, অনশনকারীদের সমর্থন বৃদ্ধি পচ্ছিল। খবরে জানা গেছে, আরও পাঁচজন অনশন করছিলেন। মনে হয় এরা স্থানীয়। এদের মধ্যে এক তরুণীর নাম জানা গেছে-অ্যাঞ্জেলা। তিনি বলছিলেন, “পল কখনও অভিযােগ করেননি। অন্যদের ব্যাপারে খোঁজ রেখেছেন, নিজের দিকে নয়। এ রকম মানুষের দেখা আগে আর আমি পাইনি।” এ পলের বন্ধু পিটার সােয়ের্নো বলেছেন, পল সুস্থ হলে যদি মধ্য জাভার মাদুনে যেখানে তার বাবা-মা থাকেন যেতে চান তাহলে অস্ট্রেলিয়ইন্দোনেশিয় মৈত্রী সমিতি সহায়তা করবে। আসা-যাওয়ার ভাড়া হবে ৫০০/৬০০ ডলার। পল হাসপাতালে, তাঁর সঙ্গীরা একটি প্ল্যাকার্ড রেখে দিয়েছেন তাঁর অনশনের জায়গায়। সেখানে লেখা- ‘পল পেয়েরনমাে ফিরবেন। তিনি আছেন আমাদের আত্মার সঙ্গে। আমরা এখনও আছি।’
বাঙালি বাস্তুহারাদের সমর্থনে সেদিন মেলবাের্ন টাউন হলের সামনে এক সমাবেশের আয়ােজন করা হয়। এর উদ্যোক্তা ছিল বিভিন্ন গির্জা, ফ্রিডম ফ্রম হাঙার ক্যাম্পেন, বিভিন্ন ছাত্রদল ও মেলবাের্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ডিয়ান স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের ছাত্ররা।

পল দু’দিন ছিলেন হাসপাতালে। ২৪ অক্টোবরের খবরে জানা গেছে, ২৩ তারিখ তিনি আবার নিজ জায়গায় ফিরে এসে উপবাস শুরু করেছেন। তার আশপাশে তাঁকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য তরুণদের সংখ্যা বাড়ছে। সিডনি হেরাল্ডের মতে, ‘পল এখন একজন থেকে হিরাে।
পোয়েরনমাের কর্মকাণ্ডে অনুপ্রাণিত হয়ে ঐ দিন ৬১ বছরের এক হাইস্কুল শিক্ষক ঘােষণা করলেন, পার্লামেন্টের সামনে তিনিও অনশন করবেন। তাঁর নাম ব্রুস ব্রিওয়েস্টার। পল যেখানে অনশন করছিলেন [পল তখন হাসপাতালে] সেখানে এক প্লাস্টিক চেয়ারে বসে ব্রুস ঘােষণা করলেন, তিনি তিন সপ্তাহ অনশন করবেন এবং এ সময় শুধু পানি এবং ভিটামিন মিনারেল পিল গ্রহণ করবেন। দিনের বেলা তিনি পার্লামেন্টের সামনে থাকবেন। রাতের বেলা ক্যানবেরার উপকণ্ঠে হিউয়েসে তাঁর কন্যা ও জামাতার বাসায় ঘুমােবেন।
২৫ অক্টোবরের খবরে জানা যাচ্ছে, পলের দুই সহযােগী অনশন ত্যাগ করেছেন। তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এদের একজন স্ট্যান্ডবােরাে। তাঁর কিডনির সমস্যা হচ্ছিল। তিনি প্রথমে হাসপাতালে যান। সেখান থেকে বাড়ি ফিরে যান। অন্যজন ব্রায়ান গ্রিফিন। তার পেটে ব্যথা হচ্ছিল। তিনিও বাড়ি চলে যান।
ঐ দিন ভিক্টোরিয়ার একজন সংসদ সদস্য এল.এস রিড সরকারের কাছে প্রস্তাব করেন সাহায্যের পরিমাণ ৬ মিলিয়ন থেকে বাড়িয়ে ৭ মিলিয়ন করতে। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, না হলে তিনি বিরােধী পক্ষের হয়ে সরকারের বিপক্ষে ভােট দেবেন। তিনি বলেন, তিনি বুঝতে অক্ষম কেন সরকার ১০ মিলিয়ন ডলার সাহায্য দিতে পারবে না? ব্রিটেন, সুইডেন, যুক্তরাষ্ট্র সাহায্যের পরিমাণ বাড়িয়েছে এবং এতে অস্ট্রেলিয়ার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।
তার মা ফরী চিসিম। অন্যদিকে মেলবাের্নের রােমান ক্যাথলিকরা ঘােষণা করেন, রবিবার তারা বাস্তুহারাদের জন্য অনশন করবেন। ভাইকার জেনারেল মসিয়ে এল,এম ক্লার্ক ক্যাথলিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন- ‘to make it a day of prayer penance and giving for the suffering people of east Pakistan.’
পলের সঙ্গে সেদিনও কিন্তু আটজন অনশন করছিলেন।
২৫ অক্টোবরের মধ্যে অবস্থার নাটকীয় পরিবর্তন হলাে। একজন রােমান ক্যাথলিক আর্চবিশপ, একজন এ্যাংলিকান বিশপ, দাতাসংস্থা এবং পার্লামেন্টের বেশ কিছু সংসদ সদস্য ঠিক করলেন ২৬ তারিখ তারা পল পােয়েরনমাের সঙ্গে একাত্মতা ঘােষণা করবেন। আশা করা হয়েছিল, ৩০০০ মানুষ তাতে যােগ দেবেন।
অষ্টকেয়ারের [একটি সংস্থা] তরফ থেকে ঘােষণা করা হল, ২৭ তারিখ অনশন দিবস পালন করা হবে এবং অস্ট্রেলিয়দের আহ্বান জানানাে হল তারা যেন দুপুরের খাবার পয়সাটা বাস্তুহারাদের দান করেন।
সিডনি সিটি কাউন্সিলের লেবার দলীয় অল্ডারম্যান প্রস্তাব করলেন, তাদের বাৎসরিক দুপুরের খাবারের এ্যালাউন্সটা বাস্তুহারাদের জন্য দান করা সমীচীন । তার প্রস্তাব অবশ্য মেয়র ম্যাকডরমেট মানতে রাজি হলেন না।
বিরােধীদলীয় বৈদেশিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডব্লিউ এল মরিসন বললেন, সামান্য এই টাকা দিয়ে অস্ট্রেলিয় সরকার একটি আন্তর্জাতিক তামাশায়-এ পরিণত হয়েছে । অস্ট্রেলিয়ান কাউন্সিল ফর ওভারসিজ এইডের মুখপাত্র ব্রেন্ডান ও’ডয়ের বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও বৈদেশিক মন্ত্রীর কাছে ৩০,০০০-এরও বেশি চিঠি এসেছে । অস্ট্রেলিয়া যে তিন মিলিয়ন ডলার সাহায্য দিতে চেয়েছে। তার নিন্দা জানিয়েছে সবাই। পার্লামেন্টের সব কক্ষের সদস্যদের কাছেও চিঠি পাঠানাে হয়েছে। ডয়ার জানান, সরকারকে এখনই নগদ সাহায্য দিতে হবে এবং পরবর্তী ১২ মাসের জন্য আরও ৫০ মিলিয়ন ডলার সাহায্যের বন্দোবস্ত করতে হবে।
পার্লামেন্ট সদস্য রিড আবারও দাবি করেন সরকারকে কমপক্ষে ২০ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, নয়তাে তিনি সরকারের বিপক্ষে ভােট দেবেন। লেবার পার্টির জি.এম. ব্রায়ান্ট ঘােষণা করেছেন তিনি এ বিষয়ে বিতর্কের জন্য নােটিশ দিয়েছেন।
মেলবাের্নে জাতিসংঘ সমিতির এক সভায় এক বক্তা বলেন, সরকার হৃষ্টপুষ্ট প্রিংবক ফুটবল টিমকে সারা অস্ট্রেলিয়া ঘােরাবার ব্যবস্থা করতে পারে, ইরানে ফিজান্ট ও শ্যাম্পেন ডিনারের জন্য গবর্নর জেনারেলকে পাঠাতে পারে কিন্তু বাস্তুহারাদের চাল পাঠাবার জন্য টাকা দিতে পারে না। তিনি বলেন, যে সরকার ১৯৬৫ সাল থেকে এশিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য প্রতিবছর ১০০ মিলিয়ন ডলারের ওপর খরচ করেছে সেই সরকার ৯০ লাখ লােক বাঁচাবার জন্য মাত্র তিন মিলিয়ন খরচ করতে চায়। আসলে এরা যদি কমিউনিস্টদের শিকার হতাে তাহলে হয়ত সরকার এগিয়ে আসত।
অন্যদিকে ওয়াল্টার জেরার্ড নামে এক উদ্যোক্তা ঘােষণা করেন আগামী সােমবার (নভেম্বর হতে) মেলবাের্ন টাউন হলে এক সমাবেশ হবে। মেলবাের্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কুইন্স কলেজের ২০০ ছাত্র তাদের খাবারের পয়সা দান করেছে অস্টকেয়ারকে বাস্তুহারাদের সাহায্যের জন্য। পার্লামেন্টে বিরােধী দল বিতর্ক শুরুর যে প্রস্তাব দিয়েছিল সরকারি দলের কারণে বিতর্ক হয়নি তবে। পার্লামেন্ট সদস্য রিড যােগ দিয়েছিলেন পার্লামেন্টের বাইরে সমাবেশে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যে ১০০ মানুষ বাস্তুহারাদের জন্য সাহায্যের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য বিক্ষোভ করেছিলেন। পােয়েরনমােকে তাঁর সঙ্গীরা নিয়ে গিয়েছিলেন পার্লামেন্টে বিতর্ক শােনার জন্য। বিতর্কের পর বাইরে এসে তিনি বলেন, অনশন তিনি চালিয়ে যাবেন। ইতােমধ্যে তাকে আরেকবার হাসপাতালে নিয়ে। যাওয়া হয়। বিদেশ মন্ত্রী ঘােষণা করেন সাহায্যের পরিমাণ তারা ৫.৫ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত করবেন।
পলের সঙ্গে অনশন করছিলেন ২৮ বছরের ক্রিশ্চিয়ানা ফক্স। ২৯ অক্টোবর তিনি ঘােষণা করেন, তাঁরা ক্যানবেরা থেকে এখন সিডনি চলে যাবেন। সেখানে তারা অনশন চালিয়ে যাবেন যতদিন না বিশ্ব বাস্তুহারাদের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার সাহায্য দেয় এবং অস্ট্রেলিয়া ৬০ মিলিয়ন । fafasantat ca, ‘I was a student but this is my work now.’
১০ দিন ধরে তিনি অনশন করছিলেন। ফ্রিডম ফ্রম হাঙ্গার ইতােমধ্যে মেলবাের্নে ৩৫,৯১৮ ডলার সংগ্রহ করেছিল। সংস্থার সদস্যরা ঘােষণা করেছিল এখন তারা স্কটিস চার্চ ও ইন্ডেপেনডেন্ট চার্চের সামনে অনশন করবেন।
৩৪

বইয়ের দোকান ছিল। স্মিথের মাধ্যমেই পল এই অনশন আন্দোলন ও মেহের। বাবার সঙ্গে যুক্ত হন। এ্যাড্রিয়ান গ্যাভিনকে জানান, পল হচ্ছেন জন লেননের মত। “Some body has to do it if people are to be jerked out of their apathy.”
রওলিনস গ্যাভিনকে একটি বই খুলে দেখালেন। মেহের বাবার ওপর বইটি লিখেছেন তাঁর এক শিষ্য উইলিয়াম ডনকিন । বইয়ের নাম দি ওয়েকেয়ার্স। একটি অনুচ্ছেদ রওলিনস পড়ে শােনালেন।
‘সেলফ ক্রিয়েটেড প্যাটার্নস’ নামের এই অধ্যায়ের অনুচ্ছেদটি ছিল“But if the experimentation proceeds without the help of available guidance, it said, and loses all mooring’s the person may, in his own right and with his own understanding. take to unconventional patterns of life. The result is that the person often leads himself into confusing side-tracks and by-paths, and sometimes into regressive channels of life.”
১৫ নভেম্বর সিডনি হেরাল্ডে অনশন নিয়ে আরেকটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ঐ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাঙালি বাস্তুহারাদের জন্য অনশনকারীদের পুলিশ বাধা দিচ্ছে। গত তিন দিনে তিনবার তাঁদের স্থান বদল করতে হয়েছে। প্রথমে জিপিও থেকে তাঁদের পােস্টার আর স্লিপিং ব্যাগ গােটাতে বলা হয়। অনশনকারীরা চলে আসেন পিট স্ট্রিটের কংগ্রেশনাল চার্চের সিঁড়িতে। সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে টাউন হলে। এই অনশনকারীদের দলে আছেন মেহের বাবার ভক্ত, মেলবাের্নের তরুণী কেরি বাবা । আগে তিনি ছিলেন রােমান ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী। তিনি জানালেন, “এর শেষ কোথায় আমরা জানি না। তবে অনশন চলবে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত | যতদিন লক্ষ্য পূরণ না হবে। প্রয়ােজনে আমরা ব্রিসবেন বা অন্য কোথাও চলে যাব।”
অনশনকারীদের নেতা পােয়েরনমাে জানাচ্ছেন সরকারি সাহায্য ১০০ মিলিয়ন ডলারে না পৌছা পর্যন্ত তিনি অনশন চালিয়ে যাবেন। প্রথমে দাবি ছিল ১০ মিলিয়ন ডলার।
পিট স্ট্রিটের চার্চের প্রধান রেভারেন্ড জন ব্রায়ান্ট বলেন, পােয়েরনমাে বা কেরি বাবা অনশন করতে চান করেন তাতে আপত্তি নেই। আপত্তি তাদের সঙ্গী সাথীদের নিয়ে যারা এখানে একটা বাজারে পরিবেশ সৃষ্টি করেন।
টাউন হল থেকে বিতাড়িত হবার পর পল আর কেরি সেন্ট আগস্ত।
৩৬
ক্যাথেড্রালের চত্বরে গিয়ে ওঠেন। সেখানে দেখা গেছে চত্বরে কয়েকজন। অনশনকারী স্লিপিং ব্যাগে বসে আছেন। কয়েকজন ট্রানজিস্টর শুনছেন, কয়েকজন সিগারেট টানছেন। অনশনকারীরা ইতােমধ্যে মেলবার্নে তুলেছেন। ৪৬,০০০ ডলার আর সিডনিতে প্রায় ২,০০০ ডলার। এ কাহিনীর শেষটুকু জানতে পারেনি কাগজ কর্তনির অভাবে বা তথ্যের অভাবে। তবে অনুমান করে নিতে পারি।
পল ও তার বন্ধুরা আরও কিছুদিন অনশন চালিয়েছেন। তারপর যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। তিন সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায়। পল ও তাঁর বন্ধুরাও অনশন ত্যাগ করেন। 2018 পল ও তার বন্ধুদের কারণে অস্ট্রেলিয়ার সহায়তার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছিল ৫১,৫৫,০৭২ ডলারে। যে আটটি দেশ বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি সহায়তা দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া ছিল তার মধ্যে অষ্টম।
১৯৭১ সালে সারাবিশ্বে বাঙালিদের এরকম বন্ধু অনেক ছিল। বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তিও ছিল। ১৯৭৫ সালে তা বিনষ্ট হয়ে যায়।

====
রেফারেন্স – ভিনদেশিদের মুক্তিযুদ্ধ – মুনতাসির মামুন
Unicoded by সংগ্রামের নোটবুক