You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.09 | পূর্ববঙ্গ সম্পর্কে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে সর্বসম্মতিক্রমেগৃহীত প্রস্তাবের সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য | সপ্তাহ - সংগ্রামের নোটবুক

সম্পর্কে গৃহীত প্রস্তাবের সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য

পূর্ববঙ্গ সম্পর্কে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত প্রস্তাবটি পাকিস্তানের সঙ্গে এদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী নীতিগত তাৎপর্য বহন করে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য, লােকসভার স্প্রিকার পূর্ববঙ্গ না বলে বলেছেন বাংলাদেশ।
সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়টি হলাে সশস্ত্র পশ্চিম পাকিস্তানি হামলার বিরুদ্ধে পূর্ববঙ্গের সংগ্রামে সমর্থন দানের জন্য সরকার ও পার্লামেন্টের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি। শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার ও নতুন ‘বাঙলাদেশ রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি বটে, কিন্তু প্রস্তাবে তাদের আদর্শের প্রতি সমর্থন দানের সুস্পষ্টতম ভাষা প্রকাশ করা হয়েছে।
পার্লামেন্টের প্রস্তাবের গুরুত্বপূর্ণ অংশে বলা হয়েছে : “এই সভা তার এই প্রগাঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে যে পূর্বেবঙ্গের সাড়ে সাত কোটি মানুষের এই ঐতিহাসিক অভ্যুত্থান জয়যুক্ত হবেই। এই সভা তাঁদের এই আশ্বাস দিতে চায় যে তাদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ ভারতের জনগণের আন্তরিক সহানুভূতি ও সমর্থন লাভ করবে।”
বাঙলাদেশের গণআন্দোলনের জন্য ভারতের সমর্থন সম্পর্কে প্রস্তাবের ভাষায় কোনাে দ্ব্যর্থতার অবকাশ নেই। কতকগুলাে শব্দ ব্যবহার সম্পর্কেও সুবিবেচিত চিন্তার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। “পূর্ব পাকিস্তান” শব্দটির জায়গায় সর্বত্র ব্যবহার করা হয়েছে “পূর্ববঙ্গ”। প্রস্তাবটি উপস্থিত করার সময়ে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকাটি ছিল আরাে হিসেব করা, তার পরিচয় পাওয়া যায় যখন তিনি বলেন “আমাদের পূর্ববঙ্গের বীর প্রতিবেশীরা।”
আন্তরিক হস্তক্ষেপের আগে যে ঘটনা ঘটেছে প্রস্তাবে সে-সম্পর্কে ইতিবাচক একটা বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে। ঘটনা এই যে “পাকিস্তান সরকার জনগণের রায়কে উপেক্ষা করাই শ্রেয় মনে করেছে এবং “জাতীয় পরিষদকে তার ন্যায্য ও সার্বভৌম ভূমিকা গ্রহণে বাধা দিয়েছে। তার পরিবর্তে “পূর্ববঙ্গের জনগণকে দমন দমন করার চেষ্টা হচ্ছে নগ্নভাবে বরপ্রয়ােগ করে, বেয়নেট, মেশিনগান, ট্যাঙ্ক কামান ও বিমানের সাহায্যে।”
অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষরা মনে করেন যে প্রস্তাবে পাকিস্তান সম্পর্কে ভারতের নীতির আমূল পুনর্বিন্যাসের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। যদিও মনে হয় যে সে সম্পর্ক নবােদ্ভিন্ন বাঙলাদেশ রাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার উপরেই প্রতিষ্ঠিত হবে, তবু পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের সঙ্গেও সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চেষ্টা তাতে করা হবে।
এ বিষয়েও অবশ্য যথেষ্ট লক্ষ রাখা হয়েছে যে, অবস্থা প্রশমিত হবার পর পশ্চিম পাকিস্তানে কী ধরনের সরকার আত্মপ্রকাশ করবে, তার দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে, ভবিষ্যতের সম্পর্কটা যাতে তারই উপর নির্ভর করে। প্রস্তাবটির কোথাও এমন কোনাে ইঙ্গিত নেই যে দুটি অংশ নিয়ে এ যাবৎ পাকিস্তান গঠিত ছিল, সে দুটি ভেঙে পড়ায় কোনাে পরােক্ষ আনন্দ ভারত লাভ করেছে। এই প্রসঙ্গে প্রস্তাবে বলা হয়েছে : “ভারতের সরকার ও জনগণ সর্বদাই পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ, স্বাভাবিক ও সৌভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক কামনা করেছেন এবং সেজন্য কাজ করেছেন। ভরতের অবস্থিতি হেতু এবং এই উপ-মহাদেশের জনগণ যেহেতু ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের শতাব্দীকালের যােগসূত্রে বাঁধা, সেই হেতু এই সভা আমাদের সীমান্তের এত কাছে সংঘটিত ভয়াবহ মর্মান্তিক ঘটনার প্রতি উদাসীন থাকতে পারে না।”
বর্তমান সংকটে পূর্ববঙ্গের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের প্রতি সমর্থন দানকেই প্রথম অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। বটে, কিন্তু একটা দীর্ঘমেয়াদী নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে বৈরিতার পন্থাকে তুলে ধরা হয়নি। রবঞ্চ সমগ্র উপ-মহাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যগত যােগসুত্রের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
[আই-পি-এ]

সূত্র: সপ্তাহ, ৯ এপ্রিল ১৯৭১