বাংলার বাণী
ঢাকাঃ ১৩ই মে, সোমবার, ২৯ই বৈশাখ, ১৩৮১
বাংলাদেশ ও উগান্ডার বন্ধুত্ব ঘনিষ্ঠতর হোক
বাংলাদেশে কিঞ্চিদধিক সপ্তাহব্যাপী সফর শেষে উগাণ্ডার তথ্যমন্ত্রী মেজর জুমা ওরিস আবদুল্লাহ সম্পতি দেশে ফিরে গেছেন। তিনি ৩রা মে শুক্রবার ১৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের প্রধান হিসেবে বাংলাদেশে গমন করেছিলেন। উগাণ্ডার জন্য বাংলাদেশকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষাবিদ আইনবিদদের নিয়ে তাদের জনগণকে সাহায্য সহযোগিতা দানের ব্যাপারে আলাপলোচনা করাই এই প্রতিনিধিদলের উদ্দেশ্য ছিল।
বাংলাদেশে অবস্থানকালে উগাণ্ডার তথ্য মেজর আবদুল্লাহ ও তার প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রাকৃতিক সম্পদ বিষয়ক মন্ত্রী ডঃ মফিজ চৌধুরী ও তথ্য ও বেতার প্রতিমন্ত্রী জনাব তাহের উদ্দিন ঠাকুরের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে লিত হন। পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে তারা নানাবিধ দেশীয় সমস্যাবলী সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা করেন। পারস্পরিক বন্ধুত্বের ভিত্তির প্রশ্নে মেজর আবদুল্লাহ বাংলাদেশের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন যে, উভয় দেশের জনগণই্ ভ্রাতৃভাবাপন্ন। উভয় দেশের প্রকৃতিগত মিলও রয়েছে। পররাষ্ট্র নীতির প্রশ্নেও বাংলাদেশ ও উগাণ্ডা উভয়েই বিশ্বশান্তি ও সকলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী। উভয় দেশই প্রেসিডেন্ট ইদি আমিন ও বঙ্গবন্ধু শখ মজিবুর রহমানের মত প্রগতিপন্থী নেতার নেতৃত্বের জন্য গৌরবান্বিত।
আমরা জানি সদ্যজাগ্রত আফ্রিকার দেশগুলি আজ মানবাধিকারের মূল প্রশ্নে সোচ্চার হয়ে উঠছে। বাঁচবার প্রাথমিক শর্ত সম্বন্ধে অত্যন্ত সচেতন হয়ে উঠছে। দেশীয় সম্পদ এবং সম্ভাবনা সম্বন্ধেও তারা এখন পরিচ্ছন্ন ও সংগ্রামী চিন্তা রাখছে। অন্ধকারাছন্ন এই মহাদেশ আলোর মিছিলে পা রেখে। বিশ শতকের বিশ্ব রাজনীতিতে অভাবিত বিপ্লবের ইতিহাসও সৃষ্টি করেছে। উগাণ্ডা তাদেরই মধ্যে অন্যতম নেতৃস্থানীয় একটি ছোট্ট দেশ। নিজস্ব সম্পদ বলতে কফি, কাকো ও তলায় এদেশ সমৃদ্ধ।
এদিকে সংঙ্কেত করে উগাণ্ডার তথ্যমন্ত্রী বলেন যে, তার দেশ বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত দ্রব্যের উপর নির্ভরশীল। পাটমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎকালে তিনি আরও বলেন যে, আগে তৃতীয় দেশের মাধ্যমে উগাণ্ডা বাংলাদেশের পাট ক্রয় করত। ঐ মধ্যস্বত্ব ব্যবস্থার দরুন স্বভাবতঃই বেশী দাম দিয়ে তাদের পাট কিনতে হত। তিনি জানান যে, বছরে উগাণ্ডার ২৭ হাজার বেল পাট ও ৫ হাজার টন পাটজাত দ্রব্যের প্রয়োজন। মেজর আবদুল্লাহ আশা প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশ ও উগাণ্ডার মধ্যে বন্ধুত্ব স্থাপিত হওয়ার ফলে দুই দেশের এখন পারস্পরিক ভিত্তিতে সরাসরি বাণিজ্য সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে। এবং তার ফলে মধ্যস্বত্ব ব্যবস্থার বিলোপ হয়ে উভয় দেশই লাভবান হবে। এছাড়াও তিনি সকল উন্নয়নশীল দেশের সাথে সরাসরি বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার কথা জোর দিয়ে বলেন।
এই প্রসঙ্গেই উগাণ্ডায় প্রতিনিধিদলের নেতা ৮ই মে বুধবার সকালে সচিবালয়ে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রীর সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। উক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় সুত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে যে, খুব শীগগিরই বাংলাদেশ থেকে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদল উগাণ্ডা সফর করবেন। প্রতিনিধিদল দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্ভাবনা সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা করবেন।
একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উগাণ্ডার সকল প্রকার উন্নয়ন প্রচেষ্টা ও প্রকল্পে বাংলাদেশের পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা থাকা বাঞ্ছনীয়। এবং তা আছেও। বাংলাদেশ ও উগাণ্ডার সাথে এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অন্যান্য আফ্রিকান উন্নয়শীল দেশগুলোর উপরও প্রভাব বিস্তার করবে বলে আমরা মনে করি এবং পারস্পরিক ভিত্তি সহ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তা কল্যাণবাহী হবে বলেও আমাদের ধারণা।
বাংলাদেশ ও উগাণ্ডার মধ্যে, বর্তমানে বাণিজ্য সম্পর্কের সম্প্রসারণের সম্ভাবনাকে সময়োপযোগী বলে অভিজ্ঞ মহল বিশ্বাস করেছেন। কারণ এর ফলে কাঁচামাল বিনিময় সম্ভাবনা একদিকে বাড়রে এবং উন্নয়নশীল দেশ তথা তৃতীয় বিশ্বের নিরপেক্ষ জোট নীতি সহ কাচামালের ন্যায্য ও বর্ধিত মূল্য দাবীর আন্দোলন জোরদার হতে সহায়তা পাবে। তাছাড়াও এই দু’দেশের মধ্যে জনসংযোগমূলক মৈত্রী ও বন্ধুত্বের প্রশস্ত সম্ভাবনা আছে। অতএব সার্বিক দিক দিয়েই বাংলাদেশ ও উগাণ্ডার বন্ধুত্ব অক্ষয় হোক। মেজর আবদুল্লাহর এই সফরে উভয় দেশের পারস্পরিক বন্ধুত্ব মৈত্রী ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পাক । এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কের সকল প্রকার সম্ভাবনামূলক এই সম্প্রসারণ উভয় দেশের জন্যই প্রগতি ও উন্নতির সোপান নির্মাণ করুক।
কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক