ইয়াহিয়ার রণসাধ মিটাইতে
ভারত-বাংলাদেশ বাহিনী একে একে নিভাইছে শেষ দেউটি
আগরতলা ৮ ডিসেম্বর। বড় সাধ করিয়া মাননীয় পাক প্রেসিডেন্ট জনাব ইয়াহিয়া খাঁ ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করেন গত ৪ ডিসেম্বর। ভারত এর প্রতি উত্তরে সংগ্রাম ঘােষণা না দিয়া জরুরি অবস্থা ঘােষণা করেন এবং বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীকে সর্বপ্রকার মদদ দিতে শুরু করেন। ভারতীয় স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনী এবং মুক্তিবাহিনীর যুক্ত আক্রমণে মাত্র চারিদিনে, অর্থাৎ গতকাল পর্যন্ত পাকবাহিনী বাংলাদেশের প্রত্যেকটি রণাঙ্গনে পরাজয় বরণ করিতে বাধ্য হয়। যুক্ত বাহিনীর প্রথম চপেটাঘাতে আখাউড়া ঘাটির পতন, অস্ত্রশস্ত্রসহ প্রায় তিন শত হানাদারের আত্মসমর্পণ ঘটে ৫ ডিসেম্বর; সঙ্গে সঙ্গেই পদানত হয় লাকসাম জংশন। তারপর পতন ঘটে ফেনী মহকুমার এবং শ্রীহট্টের সুনামগঞ্জ, খাস ঢাকার কয়েকটি মহকুমা, ময়মনসিংহের ও টাঙ্গাইল জেলার প্রায় গােটা অঞ্চলের। রংপুর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল প্রভৃতিতে কোনাে পাক ঘাঁটিরই অস্তিত্ব ছিল না গতকাল। তারপর! তারপরই ভয়েস অব আমেরিকা হইতে ইয়াহিয়া খাকে চরম ও পরম দুঃসংবাদ পরিবেশন করা হয় গতকাল পূর্ব পাকিস্তানের বৃহত্তম ঘাঁটি যশােহরের পতন। এই খানেই শেষ হয় নাই, চারিদিনের সংগ্রামের খতিয়ানে দেখা যায় শ্রীহট্ট শহরেও ভারত-বাংলা যুক্ত বাহিনীর অধিকার কর্তৃত্ব, চট্টগ্রাম বিচ্ছিন্ন ও বিধ্বস্ত; কুমিল্লা শহর পাক কবল মুক্ত, ক্যান্টনমেন্ট অবরুদ্ধ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া শহরে ও আশেপাশের গ্রাম, নদীতে ও খালবিলে পলায়মান দুর্ধর্ষ খান সেনারা গ্রামবাসীদের লাঠি, দা, বল্লম প্রভৃতি গৃহপালিত অস্ত্রে নৃশংসভাবে নিহত হইতেছে। সর্বোপরি যাহা দেখা গেল তাহা অতি করুণ। ইয়াহিয়ার রণসাধ মিটাইতে খান সেনারা বাংলাদেশে (পূর্ব বাংলায়) ভারত-বাংলাদেশ যুক্ত বাহিনীর খাঁচায় আটক। পলায়নের স্থল, নৌ ও বিমান- সমস্ত পথই রুদ্ধ।
সূত্র: ত্রিপুরা
৮ জুলাই, ১৯৭১