You dont have javascript enabled! Please enable it! "কয়েকশত জনমেও একটা মুক্তিযুদ্ধ পাওয়া যায়না" - বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব) দোস্ত মোহাম্মদ শিকদার - সংগ্রামের নোটবুক

“কয়েকশত জনমেও একটা মুক্তিযুদ্ধ পাওয়া যায়না” – বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব) দোস্ত মোহাম্মদ শিকদার

আমার নাম দোস্ত মোহাম্মদ শিকদার। প্রাক্তন মেজর। আমার পিতা আবদুল বারিক শিকদার। মাতা মোসাম্মৎ হালিমা খাতুন। আমি তার ছয় সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। ছেলে সন্তানের মধ্যে আমি তার সবচেয়ে বড় সন্তান। আমার বোন বড়। আমরা পাঁচ ভাই। আমি খুব ছোট বেলায় আমাদের বাড়ি ছিল মাদারীপুরের ফরিদপুরের ভেদরগঞ্জ থানার লাকার্তা শিকদার বাড়ি। আমি আমার হাতে খড়ি হয় বাড়ির ঘাঁটা বলি আমরা সেই গ্রামের স্কুলে। এখন মানচিত্র বদলে গেছে। অনেক কিছু নূতন এসেছে। অনেক কিছু পুরনো জিনিস বিলীন হয়ে গেছে। পড়াশোনা করি আমি দুই বছর, এরপর বাবা ঢাকা নিয়ে আসেন। অসুস্থ অবস্থায় পড়ালেখা শুরু হয়ে যায় ক্যান্ট মডার্ণ স্কুল যেটা এখন নাম শহীদ আনোয়ার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। সেখানে আমি কিছুকাল পড়াশোনা করি। আমি ফার্দার পড়াশোনা করি – যেহেতু এটা কোএড। মেয়েদের স্কুল প্রায়োরিটি। আর ছেলেরা ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়ালেখা করত। তো ক্লাস ফোরে I had to migrate some other place. তখন নূতন শাহিন স্কুল তৈরি হয়েছে। আমি সেখানে ঢুকি। এক বছর ছিলাম। সেখান থেকে আমি কম্পিটিটিভ পরীক্ষায় পাশ হয়ে লোয়ার টোপা যেটা মারীতে রাওয়ালপিণ্ডি ডিস্ট্রিক্টে অবস্থিত যেখানে প্রায় বছরে ৩ হতে ৪ মাস বরফ পড়ে – শৈলশহর। সুন্দর পরিবেশ। আমি কখনো কোন রাজনীতি করি নাই। আমার পড়াশোনা যা করেছি সেখানে। আমার টিচাররাও সব অনেক বিশাল হৃদয়ের লোক ছিলো। সেখানে পড়ানোর স্টাইলটা ছিলো আলাদা। 1967 এর শেষের দিকে আমি সারগোদাতে যাই। সারগোদা থেকে আমি 53rd GDP এ জয়েন করি PAF Academy’র Initial Training নেই। Again in লোয়ারটোপা রিসালপুরের একটা অঙ্গ। সেখানে আমি আমার দেড় বছর যখন শেষ হয়ে যায়। তখন একাত্তরের জানুয়ারি। ক্র্যাকডাউনের পর আমাদের সমস্ত ফ্লাইয়ার্স, আমাদের সবাইকে আমি জিডিপিতে ছিলাম। গ্রাউন্ডেড করে দিল। এবং বলল আর্মিতে কমিশন নেয়ার জন্য। আমি বলেছি আমি বন্ড সাইন করেছি for become a flyer and তারা তো রিস্ক নিতে পারেনা। বাঙ্গালিদের বিশ্বাস করতে পারেনা আমি সেটাও জানি। এটা ছিল আমার একটা psychological war ওদের সাথে। Interrogation সব পার হয়ে আমি ১৯ শে জুলাই যতটুকু আমার মনে পড়ে আমি করাচী হয়ে ঢাকা এসে নামি। তাদের প্ল্যান ছিলো হয়ত আমাদেরকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে গিয়ে হয়ত আরও কিছু খারাপ অবস্থা হবে। কিন্তু ভাগ্যবশত সেখানে ডিউটি অফিসার ছিলো বাঙ্গালি, পরবর্তী পর্যায়ে সেও মুক্তিযুদ্ধে জয়েন করেছে আমাদের সিনিয়র flyer, flying officer জামাল। ও বলল যে, পথে থেকেই যেখানে নামব সেখানে না নামিয়ে বলল তুমি যেখানেই পারো চলে যাও। নেমে গেলাম। ঢাকা ফাঁকা। ১৯ শে জুলাই দিনের বেলা এসে পৌঁছেছি। ওয়ারীতে গেলাম। 11th Lower street এ যেখানে আমার চাচতো ভাই, তার বাসায় উঠলাম। রাতে শুনলাম আর্মির পেট্রোল ঘুরছে, আমাকে হয়ত তুলে নিয়ে যাবে। তো আমাকে বলল তুমি গ্রামে চলে যাও। আমি ২/১ দিনের ভেতরেই গ্রামের পথে পাড়ি দিলাম। লঞ্চে করে। বর্তমান শরিয়তপুর তখন ফরিদপুর ভেদরগঞ্জ থানা সেখানে হয়ে আমি গ্রামে গেলাম। গ্রামে গিয়ে আমার বাপমা তাদের যোগ্য সন্তান ফিরে পেয়ে খুশি হল। বললাম, মা আমি কয়টা দিন শুধু আপনাদের সাথে কাটাবো। তারপরেই চলে যাবো। তখন দেখলাম গ্রামে দুই একজন যারা ট্রেইন্ড হয়ে আসছে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে। মনে হল ill organized. তখন আমি অর্গানাইজ করলাম গ্রামে আমার বয়স্ক যাদেরকে বড়ভাই ডাকতাম এদেরকে সহ নিয়ে আমি শর্টলি পদ্মা পাড়ি দিয়ে মোহনপুর হয়ে এই গ্রুপটা নিয়ে যেদিন আমি কোনাবন বর্ডারের কাছে আসলাম একটা এম্বুশের ভেতর পড়ে গিয়েছিলাম। skrimish চলতেছিল। খুব সম্ভবত তখন ক্যাপ্টেন গাফফার বা লেফটেনেন্ট গাফফার পরবর্তী পর্যায়ে মন্ত্রী হয়েছেন (কর্নেল গাফফার হাওলাদার)। উনার একটা এম্বুশ চলতে ছিল পাকিস্তানিদের উপরে। ওরা বোটে করে মেশিনগান নিয়ে ফায়ার করতেছিল, আমরা সাতার কেটে পার হচ্ছিলাম, নিচে ধান ক্ষেত আর পানি, অথৈ পানি। সেখান থেকে আমরা আমাদের সর্বশ্ব হারিয়ে। এমনকি শুধু আন্ডাওইয়্যার ছিলো, কোন লুঙ্গি রাখি নাই। গেঞ্জিও খুলে ফেলেছি। ঐ পাড়ে পৌছালাম। তখনও গোলাগুলি চলছে। জিজ্ঞাসা করলে ঐখানে সিনিয়র যারাই ছিলো যে আপনাদের ভেতর কেউ আছেন কি? আমি তখন আমার আর্মস ফোর্সেসএর পরিচয় দিলাম। বললাম আমি অমুক, আমি ফ্লাইট ক্যাডেট। ঐখানে খণ্ডযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলাম, ব্যাটেল কী জিনিস, যুদ্ধ কী জিনিস, দামামা কী জিনিস, কত হাজার গুলী চলে সেই বীভৎস আর্টিলারি শেল আসতেছে, আমাদেরকে আর্টিলারি শেল মারতেছে, এবং আমরা যেখান দিয়েই যাচ্ছি, ওপিরা আমাদের লোকেট করতেছে, সেটাও বুঝতে পারলাম। আমি একটা ঘরে ঢুকলাম। সেখানে আমাদের একটা আহত লোক ছিলো। আমি এলএমজি, আমি অন্তত বুলেটগুলী ম্যাগাজিনে ঢুকাই দেই। তখন বলল যে স্যার আপনি যদি চালাতে পারেন যেহেতু ঐ আহত লোকটা এলএমজি চালাচ্ছিল। সুতরাং আমিও এলএমজি কক করেই চালাচ্ছিলাম। যেহেতু আমার যুদ্ধক্ষেত্র না, আমি মাত্র যাচ্ছি, তো জাস্ট ঐখান থেকেই আমার অভিষেক মুক্তিযুদ্ধে। 

তারপরে সেই খণ্ডযুদ্ধটা শেষ হল। পাকিস্তানীরা হতাহত পানির ভিতর কত আমরা বলতে পারবো না। আমাদের ভিতর একজন সিরিয়াসলি injured হয়েছিল, bleeding হচ্ছিলো, তাকে নিয়ে গেল। এবং আমার দুর্ভাগ্য যে এই লোকটাও নাকি আমাদেরই থানার রামভদ্রপুর নামে একটা যায়গা, সেই গ্রামের। নায়েক বা হাবিলদার ছিলো। যুদ্ধ থেমে গেল আমাতত। আমরা quickly ঐখান থেকে এক্সটিগেট করলাম। এবং কোনাবোন বর্ডারে গেলাম। দেখলাম বি এস এফ এর লোকরা দাঁড়াইয়া আছে। আমি তখন কোনাবন চিনিনা। পরে আমি জানতে পারলাম, কোনাবন হল কসবা যে যায়গাটা তারই ইন্ডিয়ান সাইডটা হচ্ছে কোনাবন। সেখান থেকে গাড়িতে উঠলাম। In short আমি মেলাঘর পৌঁছে গেলাম। আমি আমার সাথের ছেলেদেরকে রেখে একটা লোকাল গাড়িতে করে আগরতলা আসলাম। সেখানে এসে কংগ্রেস ভবনে। পরেরদিন শালবাগানে যেখানে বিডিএফ হেডকোয়ার্টার সেখানে গেলাম। সেখানে আমাকে ট্রানজিটে থাকতে হবে, যেহেতু আমি এয়ার ফোর্সের। আর এয়ার ফোর্সের সবাই ছিলো তখন কোলকাতায়, সম্ভবত আমি যা শুনলাম। একদিন দুদিন পরে আমি ক্লান্ত হয়ে গেলাম যে আমি কি তাহলে এখানে বসে বসে যুদ্ধের শেষ দেখে যাব? সে অবস্থায় আমি বিডিএফ কোয়ার্টারে আমাদের সিএএস ছিলো মেজর রব, যে পরে জেনারেল রব হয়েছিলেন। ফাত্তাহ চৌধুরী যে আমার বন্ধুর বাপ, ক্যাপ্টেন ফাত্তাহ চৌধুরী। উনি এডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার ছিলেন। আমি সোজা কাউকে তোয়াক্কা না করে ভিতরে গিয়ে বললাম “স্যার আমার কিছু প্রশ্ন আছে।” বলল, “ইয়েস, হু আর ইউ?” আমি বললাম, “স্যার আমার নাম অমুক। আমি ফ্লাইট ক্যাডেট দোস্ত মোহাম্মদ শিকদার।” তো বলল, “কি বলো, প্লিজ সিট ডাউন।” আমি বললাম, “স্যার সিট ডাউনের আগে আমি একটা জিনিস জানতে চাচ্ছি, “আমাকে কি এখানেই থাকতে হবে, কী কারণ?” বলল, “না তোমারা যারা এয়ার ফোর্সে আছো তারা কোলকাতা যাবা।” আমি বললাম, “কোলকাতায় কি কোন যুদ্ধ চলছে স্যার?”  উত্তর দিল, “না।” আমি বললাম, “স্যার, আমি তো যুদ্ধ করতে আসছি, কোলকাতায় যদি যুদ্ধ হয় স্যার, আমি অবশ্যই যাব। তা না হলে I defied sir. এখানে যেখানেই যুদ্ধ আছে সেখানে আমাকে পাঠান।” তখন সে ডাকলো, তার নাম্বার টু যে ফাত্তাহ চৌধুরীকে “কালকে তো খালেদ আসতেছে আর শফিউল্লাহ আসতেছে, ওদের কাছেই আমি জিজ্ঞাসা করব কে চায়।” ঠিক তাই। পরের দিন প্রথমবারের মত দেখলাম তৎকালীন মেজর খালেদ মোশাররফ বা কর্নেল খালেদ মোশাররফ আর কর্নেল শফিউল্লাহকে দেখলাম। তখন খালেদ মোশাররফ বললেন, “স্যার, আমার তো এরকম অফিসার হলে ভালো হয়। আমার বেশ কিছু আছে এরকম। এরকম ক্যাডেট তাদেরকে আমি লেফটেনেন্ট করে রেখেছি। তো ওকে দিয়ে দেন।” তখন শফিউল্লাহ বলল, “I want Dost Mohammad.” 

সেখান থেকে আমাকে বিকালের দিকে আমার জন্য একটা গাড়ি detail করে দিল। আমি এবং আমাদের admiinistrative officer যে আছে তার সাথে আমি চলে গেলাম হেজামারা, সেটা আমাদের সেক্টর হেডকোয়ার্টার। এক রাত্র থাকলাম। পরেরদিন আমাকে পোস্টিং দিল আলফা কোম্পানি যেটা জেনারেল নাসিম, তখন ক্যাপ্টেন নাসিম, তার ইউনিটে। সেই ইউনিটটাই পরবর্তীতে আমি এবং নাসিম ভাই মিলে পুরো একটা নতুন ব্যাটেলিয়ন দাড়া করালাম, সেটার নাম “ইলেভেন বেঙ্গল”। যদিও রোস্টারে কোথাও আমার নাম আছে কি নাই আমি আর জানিনা। এখন আমার নাম ইতিহাসের কোথাও থাকবেনা যে আমি ওটার ফাউন্ডিং এডজুটেন্ট ছিলাম। একেবারে প্রান্তরে গিয়ে ট্রুপ্স যোগাড় করেছিলাম। আমি এবং তৎকালীন মেজর নাসিম। আমার সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য যাদের সাথে আমি যুদ্ধ করেছি তারা অনেকেই বই লিখেছে ঐখানের কোন পাতায় আমার নাম নেই, মুক্তিযোদ্ধাদের নাম থাকলেও এখন তো ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে গেছে আমার নাম। এবার আমি শুধু যুদ্ধেরই বর্ননা দেবো। 

এটা হল ধর্মনগর অপারেশন। যেটা হল এয়ারপোর্ট থেকে উত্তর দিকে এবং যেটা মনতলা চা-বাগানের নিচে একটা এনক্লেইভ। সেখানে একটা প্লাটুন ফর্মেশনে Strong Hold ছিলো পাকিস্তানীদের – ঐটা ছিলো ব্যাটেলিয়ন ফর্মেশনের ট্রায়াল এটায়ার। আমাদের সাথে ছিলো a company of 10 Bihar আর ছিলো 18 Rajput. এটা battle inacculation operation. আর আমাদের জন্য ছিলো এটা জীবন মরণ অপারেশন। তো আমরা গিয়ে ব্লকিং পজিশনে পড়লাম। H hour আছে যেটা হল battle terminilogy – এতোটা থেকে এতোটা bombing হবেনা, এতোটার পরে bombing হবে। আমিও আর্মির এতোগুলি টেকনিক তখনও বুঝতাম না। তখন যেহেতু গেছি by that time জানতে পেরেছি। তখন আমার আশা যাওয়া ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারে। আমি জেনারেল গাঞ্জালভ্যালস-কেও দেখেছিলাম, আর ব্রিগাডিয়ার পান্ডেকে  ও দেখেছি। এবং যেহেতু আমি একটু ফ্ল্যাম্বয়েড ছিলাম, যেহেতু আমার লোয়ার টোপা ব্যাকগ্রাউন্ডটা ছিল এফ্লুয়েন্ট ছিলাম ইংলিশে তাই সবাই আমাকে ভালোবাসতো। সেই অপারেশনে রাতভর গোলাগুলি চলল আমাদের। আমাদের যে forward যারা assult করার কথা সেখানে ছিলো সুবেদ আলী ভুঁইয়া সাহেব, হেলাল মোরশেদ ছিল, আমাদের দায়িত্ব আমরা যতটুকু পালন করেছি। সেই অপারেশনের ফলাফল ছিলো যেটা আমরা ঐটাকে heavy bombing করা হইছে, তখন আমাদেরই এক কোম্পানি বেকার দখল, হেলাল মোরশেদ যেটা মুক্ত অঞ্চল করে রেখেছিল। যে আমাদেরি মাঝে অফিসাদের অন্যান্য সেক্টর থেকে ডাক পড়তো , যে আমি অমক-কে  চাই। হেলাল মোরশেদ কে নিয়ে ছিলো বেলুনিয়া অপারেশনে। যদিও সে, সেই এলাকার না। সে ছিলো আমাদের নাম্বার-থ্রি সেক্টরের। আমাদেরই ছিল তৎকালীন ক্যাপ্টেন আজিজ পরে যে জেনারেল আজিজ হয়েছেন। উনি সুরমা ব্রিজ ডেমোলিশন অপারেশন এবং ঐ অপারেশনটাতে উনি ছিলেন। তারা বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেছেন। আমি এদিন জিজ্ঞেস করলাম জেনারেল নাসিমকে যে, “স্যার, একটা অপারেশনে আপনি একটা সৈনিককে বাঁচানোর জন্য গেলেন আর কাঁধে তুলে নিয়ে আসলেন।” সে কিন্তু এখন বিস্মৃত বয়স হয়ে গেছে বলতেও পারলো না, “দোস্ত মোহাম্মদ, আমি তো ভুলে গেছি।” আজকে আমাকে যখন প্রশ্ন করেছেন বা আমার কাছ থেকে, আমারও অনেক কিছু বিস্মসৃত হয়ে গেছে। তো সেই অপারেশন শেষ হওয়ার পর আসলাম, তারপর প্রথম এস এস (SS) এর ছেলেগুলি আসলো। আমি তো এই ব্যাটেলিয়ন অলরেডি raise করেছি। নূতন ব্যাটেলিয়নের যায়গাটার নামা আমার ঠিক মনে পরতেছেনা। একটা চা বাগান ছিলো। যদিও লোকেরা বলে হেজামারা। তবে হেজামারা থেকেও ৩/৪ কিলোমিটার দূরে। সেকেন্ড বেঙ্গল আর ইলেভেন বেঙ্গল, দুইটা ক্যাম্প আমরা করেছিলাম। নূতন অফিসাররা আসলো মুর্তি থেকে। তাদেরকে আমি রিসিভ করলাম। আর তার দু-চারদিন পরে আমাকে চলে যেতে হল এখান থেকে মূর্তিতে। সুতরাং final assult এর সময় আমি ছিলাম না। দূর্ভাগ্য আমার সাথে করা হয়েছিল। প্রথম to arrive Dhaka regular infantry battalion এই 2nd East Bengal, 11 East Bengal জেনারেল নাসিম যেহেতু injured হলেন, প্রায় মারা যাচ্ছিলেন, বড় রকমের আঘাতে খুঁড়িয়ে চলতে হচ্ছে সারাজীবন। যখন তারা বর্তমান খিলখেত এলাকা পর্যন্ত পৌঁছে তখন অলরেডি ১৪ ডিসেম্বরের শেষ। তখন ১৫ ডিসেম্বর। ১৬ ডিসেম্বর সকাল বেলা Eastern Command কোলকাতা থেকে একটা সিগন্যাল আসে আমাদের সেক্টর হেডকোয়ার্টারে। আমাদের তৎকালীন এস ফোর্সেস কমান্ডার কর্নেল শফিউল্লাহ পরে যিনি জেনারেল শফিউল্লাহ Chief of Staff হন, সিগনালটা তার কাছে এসেছে যে, because তারা বলছে যে, “Niazi has submitted his willingness to surrender”. Psy-warfare চলতেছিলো, লিফলেটিংও চলতেছিলো। এদেরকে বলা হচ্ছিলো যে, “তোমাদের বাড়িতে অযথা তোমার স্ত্রী হবে বিধবা, তোমার মা হবে সন্তানহারা, তোমার সন্তান হবে এতিম। তুমি কি চাও?” ঐ মোমেন্টে নিয়াজি দেখলো যে আমরা তো পৌঁছে গেছি, ঐ মোমেন্টে নিয়াজিও দেখলো তার লোকেরাই তার বিরুদ্ধে চলে গেছে। আজকে হয়ত অনেকে বলে যে আমরা লাস্ট বুলেট পর্যন্ত যুদ্ধ করব, তো আপনাকে একটা সামান্য উদাহরণ দিচ্ছি। যখনই মেজেসটা আসলো যে কোলকাতা থেকে একটা হেলিকপ্টার আসতেছে, কারণ এয়ারপোর্টটা তো bombing করে শেষ করে দেয়া হয়েছে। জেনারেল জাগজিত সিং অরোরা আসতেছেন। ইদানীং আমি জানতে পেরেছি যে কী ঘটনা ঘটেছে সারেন্ডারের আগে। সম্ভবত ১৩/১৪ তারিখে নিয়াজিকে নেওয়ার জন্য একটা প্লেন আসতেছিলো মিয়ানমার থেকে, তৎকালীন বার্মা থেকে। ঢাকার আকাশ পর্যন্ত এসেছে। তখন আমাদের মিত্র বাহিনী এসে heavy bombing করল ঢাকা এয়ারপোর্টে যাতে কোন প্লেন নামতে না পারে। এই সত্য ঘটনা অনেকে জানতোনা। আজকে প্রায় ৪৬ বছর হয়ে গেছে। ঐদিন বন্ধুরা যারা ভারত থেকে আসলো (ভারতীয় আর্মি অফিসাররা) তারা বলল তোমরা কি জানো যদিনা আমরা যারাই bombing করেছিলো ঐ সময়ে তারাই বলেছে।  সত্যি নিয়াজি পালাতে চেয়েছিল ওদেরকে রেখে যাতে করে আরও ধ্বংস হয়। এরপর যখন নিয়াজি যেতে পারলোনা তারপরে তার ডিসিশন বদলালো যে এখন সারেন্ডার ছাড়া আর কোন উপায় নাই। হেলিকপ্টার করে আসছে এই মেসেজটা – এসেছিলো আমাদের সেক্টর হেডকোয়ার্টারে। এবং অর্ডার এসেছে যে Col Shafiullah has to go to the airport, escort (কারণ তারা জানতে চাইল fredom fighters তাদের কমান্ডে কে আছে এখানে। পাকিস্তানীদের মধ্যে দিয়ে আসতে হবে, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এখনো গিজগিজ করতেছে সমস্ত চারিদিক থেকে troops আসছে) তখন জেনারেল শফিউল্লাহ লোকটা খুব লম্বা না – আমারই মত বেঁটে – সে বলল যে make a passage – তারা তার জন্য করিডোর করে দিল troops আমার এখন নামগুলি বলতে পারবোনা। তারা আসলো, প্ল্যাটফর্মটা তৈরি করে দিলো সারেন্ডারের জন্য, আমাদের মইনুল ইসলাম চৌধুরী। মেজর মইনুল ইসলাম চৌধুরী। ক্যাপ্টেন হায়দার তো তখন ছিলেন। সাথে খোন্দকার সাহেব ছিলেন আমাদের তরফ থেকে Higher officer. তিনি জেনারেল শফিউল্লাহ থেকে সিনিয়র। কিন্তু operationally তারা জেনারেল শফিউল্লাহকেই দায়িত্ব দিয়েছিলো arrange করার জন্য। তার জন্য উনিই ছিলেন ঐখানে, total arrange করেছলেন surrender ceremony পর্যন্ত এবং ফেরত নেওয়ার। escort এর দায়িত্ব ছিলো আমাদের 2nd Bengal এর। তারজন্য আমি নিজেকে অনেক গর্ববোধ করি যে এই surrender ceremony তেও আমাদের অনেক অবদান আছে। যুদ্ধ যদিও পাকিস্তানীরা আমাদের নিরস্ত্র মা-বোনদের উপর অত্যাচার করে, কিন্তু আমরা ওদের নিরস্ত্র মা-বোনের উপর অত্যাচার করিনি। আমাদের অপারেশন ছিলো গেরিলা অপারেশন, কিন্তু আমরা ফলো করেছি রেগুলার আর্মি রুলস। গেরিলাদের তো কোন দায়দায়িত্ব থাকেনা। ধরলাম, মেরে ফেললাম। গেরিলা কখনো কাউকে prisoner নেয়না। কিন্তু আমরা নিয়েছি। এটা আমাদের বিশাল মনের পরিচয় দেয় যে আমরা কত বড়। দুনিয়ার ইতিহাসে এরকম যুদ্ধ কোথাও হয়নি যে গেরিলারা রেগুলার আর্মির রুলস ফলো করে তাদেরকে বন্দী করে নিয়ে গেছে। কারণ তা আমাদের জন্য ঝামেলা। কেউ আহত হইছে, তাকে নেওয়া যায়না। কিন্তু তাও আমরা নিয়েছি, আমরা treatment দিয়েছি। গরিলা warfare এ Vietnam ২০/২৫ বছরে যেটা করেছে তা আমরা নয় মাসেই ওদেরকে এত ঘায়েল করা হয়েছে, এত বড় সৈন্যবাহিনীকে, যে ওদের প্রতিটা গিরায় গিরায় ব্যাথা ছিলো। ওরা নড়তে পারতো না কোথাও। জনগণ আমাদেরকে অবশ্যই অনেক সমর্থন দিয়েছেন, তাদের sacrifice টা সবচেয়ে বড় যা অনেকেই বলেনা। হয়ত তারা যুদ্ধ করে নাই, ঐ সাহস নাই। কিন্তু তারা কাপুরুষ নয়, তারা তো মরতে পেরেছে। কারণ আমরা চলে আসার পর কিন্তু ঐ গ্রামটা জ্বালায় দিছে। গ্রাম থেকে মেয়ে তুলে নিয়ে গেছে। গ্রাম থেকে ছেলেদেরকে তুলে যাকে পাইছে – ঐ রিস্ক তো তারা নিয়েছে আমাদের জন্য। আমাদেরকে ভয় পেয়ে তারা আমাদেরকে আশ্রয় দেয় নাই। হয়ত অল্প কিছু ছিলো আমাদের দেশ বিরোধী, ঐটা একটা ক্রান্তিলগ্ন যেটা oparational war সম্বন্ধে একটা কথা বলি, যে তোমার total mass যেখানে আমি যুদ্ধ করেছি mass যদি তোমার পক্ষে আসে, তুমি যুদ্ধে যতোই স্বপ্ল থাকো অস্ত্রে, শক্তি কম থাকুক, তুমি জিতবাই। একাত্তরের যুদ্ধে এই প্রেক্ষাপট গড়েছে বঙ্গবন্ধু – পরবর্তী পর্যায়ে যখন আমরা এগিয়ে গেছি, আমাদের অভিজ্ঞতাটা ছিলো প্রতিটা গ্রাম-গঞ্জে যখনই আমরা গেছি, তখন জনগণ ছিলো আমাদের পক্ষে। কেউ হয়ত হাতে গোনা কিছু লোক আমাদের বিরুদ্ধে ছিলো। কিন্তু মানুষ কিন্তু লুকিয়ে লুকিয়ে হলেও- এমনকি মুসলিম লীগ করত যারা, তারাও লুকিয়ে লুকিয়ে চরমপত্র শুনত কবে এটা কোন অবস্থায় আসে, কবে আমরা মুক্তি পাই এদের কাছ থেকে। তারপর আমার জীবনে তো যবনিকা পতন শুরু হল। পঁচাত্তরে খুনিরা যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করল, আমাকে task দেয়া হল বঙ্গভবনে খুনিদেরকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার। 

ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ চেয়েছিলেন যে দেশে সুশৃঙ্খলতা আসে, আর খোন্দকার punishment পায়। আর politics যেটা ঘটেছে, সেটা তার ব্যাপার। আমি বা আমাকে জিয়া হত্যার সাথে পুরো দশ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। পরে এটা কমিউট করেছে। চেয়েছিল আমাকে ফাঁসি দিতে। আমাদের মার্শাল ল কোর্টের প্রেসিডেন্ট যে, সে আমার ফাঁসি চেয়েছিল। পরবর্তী পর্যায়ে international pressure এর উপরে তারা আমাকে ছেড়ে দিয়েছে। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি, খুব অল্প সময়ের জন্যই ছিলাম, তাও আমি পেয়েছি, হাজার বছরে বারবার যদি জন্মাই, যেটা আমাদের ধর্মে নাই, কয়েকশত জনমেও একটা মুক্তিযুদ্ধ পাওয়া যায়না। আমি একটা কথা বলতে চাই, আমাদের যারা যোদ্ধা তারা কিন্তু ছিলো, যারা সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেছিলো সেদিন, দুর্ভাগ্যবশত তারা খুব অনেক শিক্ষিত ছিলোনা। তাদের কিছু লেখার বা প্রকাশ করার অতো ভালো জ্ঞ্যান ছিলোনা। সুতরাং ওটা অব্যাক্ত, অজানাই রয়ে যাচ্ছে। আমরা কিন্তু তাদেরকে মনে রাখিনা। আমি ইন্ডিয়াতে দেখেছি, তারা তাদের বীরদেরকে যে সন্মান দেয়, আমাদের যে সন্মান দেয়, আমার ওয়াইফের চোখ দিয়ে পানি – যখন দাঁড়াইয়া লাস্ট পোস্ট বাজাচ্ছিল ওরা, দুই হেলিকপ্টার বোঝাই ফুলের পাপড়ি আমাদের উপর দিয়ে ছড়াচ্ছিল, তখন আমার ওয়াইফ আমার পাশে ছিলো। যেটা ফোর্ট উইলিয়ামে ২০১১ তে, আমি ভাবলাম যে হয়ত তার চোখে ময়লা পড়েছে, সে বলল, “না গো, আজকে ৪০ বছর প্রায় তোমার সাথে আমি সংসার করছি, তুমি একজন যোদ্ধা, আমি তোমার কৃতিত্ব সম্বন্ধে এখানে এসে শুনলাম। বাংলাদেশে কেউ কোনোদিন বলেই নাই, তুমি কে লোকটা।” 

মুন্সি আব্দুর রউফ বা মোখলেস মনে হয়, সালদা নদীতে যেটা হয়েছিলো, এরা unparallel hero, এগুলি নিয়ে তো কল্পকাহিনী নয়, বাস্তবেই। আমি appeal করছি Battle of Bulge, Heroes of Telemark, The great escape, Bridge on the river Kawai, Balad of a soldier, Cranes are flying, Midway glory, কত কত গল্প তারা বাস্তবের উপর ভিত্তি করে লিখেছে, আমাদের এত বাস্তব ঘটনা থাকার পরেও আমাদের কোন লেখক এগিয়ে আসল না যে বাস্তবতাটা একটু সামনে আনি, তুলে ধরি, কোন একটা বীরত্বগাঁথা নিয়ে লেখা হয়নি। 

জানি আমি একজন মেজর হয়ে বের হয়ে আসছি, রিটায়ার করছি, যাই বলেন। এখন আমার পরের লোকরা এম এস (MS) পি এইচ ডি (PhD) করছে আর্মড ফোর্সেসএ, তারাও জানেনা আমাদের যুদ্ধটা কীভাবে হয়েছিলো। সারেন্ডার সম্বন্ধে তো অনেক কিছু লেখা যায়। শুধু ঢাকার সারেন্ডার না, প্রতি অঞ্চলে অঞ্চলের সারেন্ডার। আজও এটা সম্বন্ধে কেউ কিছু লেখেনাই। কারণ আমাদের পঁচাত্তরের পরের সরকারগুলী ছিলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের সরকার। এরাই আমাদের ইতিহাস বিকৃত করেছে। 

যুদ্ধের সাফল্য কিন্তু দু-চার বছরে হয়না। আপনি যদি দেখেন, ‘American war of independence’ যেটা world এ  আমাদের সাথে তুলনা করা হয়। War of Independence-এর প্রায় নিরান্নবুই বছর পর্যন্ত তাদের মিলিশিয়া এবং তাদের নিজের দেশের অন্তর্দ্বন্দ। যেটা north-south, east-west এ ঘটেছে, George Washington থেকে শুরু করে আঠারোশ শতাব্দী পর্যন্ত সিভিল ওয়ার ছিলো, এটা সব দেশেই হয়। আজকে যদি দেখেন আমাদের সফলতা, আমি জানি অবৈধ বা অসৎ ব্যবসায়ী আছে, অসৎ ব্যুরোক্রেসী আছে, এটা প্রতিটা দেশেই হয়। এর ক্লিন আপেরও একটা সময় হয়। আপনাকে সময় দিতে হবে আগে। আমাদের ভাণ্ডার ছিলো শূন্য, অনেকেই জানেনা যে আমাদের কোন ডলার ছিলোনা, আমাদের কোন গোল্ড ছিলো না। আমি কোন economist না। কিন্তু ডলার আর গোল্ড না হলে আপনি এল সি খুলবেন কী দিয়ে? আপনি মাল আনবেন বিদেশ থেকে কী দিয়ে? আমাদের ইন্ডাস্ট্রি সবগুলির যখন spare parts না থাকে তখন গাড়ি চলেনা, spare parts না থাকলে ইন্ডাস্ট্রি চলেনা, সব আনতে হবে। আজকের এই ডিজিটাল যুগে এসে তারা চিন্তা করতে পারবেনা কতোটুকু handicapped ছিলাম। একটা tent এর জন্য একটা lantern (হারিকেনের) জন্য হা-পিত্যেশ করেছি। সেখান থেকে শুরু করে যে অর্থনিতির কথা বললাম, সেটা শূন্য থেকে শুরু করল আমাদের সরকার, আপনি যদি দেখেন আমাদের অর্থনিতির প্রবৃদ্ধি। 

নূতন প্রজন্মের জন্য মাদককে যেমন আপনারা বলেন, না বলতে, শুধু একটা বছর করাপশনকে না বলেন, দেখেন superflex টাকা বাংলাদেশে হয়। একটা বছরে আমার পদ্মা ব্রিজ -এই ব্রিজ – সেই ব্রিজ- যত টাকায় হয়, তার চেয়ে অনেক বেশী টাকা ঘুষখোরেরা এক বছরে খায়, স্মাগলাররা স্মাগ্লিং করে। এদেরকে বলেন যে তুমি বাবা পরে কইর, আগে বাংলাদেশকে গড়ি। আরপর যে বলেনা, যে চল্লিশ দিন ভালো থাকলে মানুষ আর খারাপ হতে পারেনা। একটা বছর বা একটা সময়কাল এইদিন হইতে ঐ দিন পর্যন্ত কেউ ঘুষ খাবানা, সবচেয়ে বড় খারাপ জিনিস হচ্ছে এখন যেটা আমি administration এ দেখেছি যে procrastination – biggest crime in the world. যেটাকে বলে দীর্ঘসূত্রিতা। আপনি decision দিবেন না। সংসদে একটা বিল পাশ করতে পারে যে একটা ফাইল যাবে অমুকের কাছে, সে যদি decision দিতে না পারে তো he has to tell the reason. আর উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে not satifactory জানাইলে he loses the job, simple. লাইনে বহু কেস চলে আসতেছে, তারপর দেখা গেল টাকার বিনিময়ে কাউকে দিল কাউকে দিলনা। Strong আইন কিছু কালের জন্য করা দরকার। আমি আশাবাদী দেশ নিয়ে একদিন কিন্তু আসবো আমরা ভালো যায়গায়। 

সাক্ষাৎকার – রাজিয়া সুলতানা দীপা 

সাহিদ এমরান 

তারিখ – ২৯/১২/২০১৬ 

 

Reference:

বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র ট্রাস্ট, চট্টগ্রাম, ডা. মাহফুজুর রহমান কর্তৃক

বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব) দোস্ত মোহাম্মদ শিকদার-এর সাক্ষাৎকার

ছবি: ২০১১ সালে ভারতীয় ইস্টার্ণ কমান্ডের সিনিয়র অফিসারদের সাথে আলাপরত মেজর (অব) দোস্ত মোহাম্মদ শিকদার

Interview Transcripted by সংগ্রামের নোটবুক