শরণার্থী ত্রাণ-কার্য কয়েক বছর ধরে চালাতে হবে
বিদেশী সমাজ-সেবীর মন্তব্য
নয়াদিল্লি, ১৩ই জুলাই (ইউ, এন, আই)-খৃস্টান এজেন্সী ফরসােশ এ্যাকসন (কাসা)-এর একজন বিশিষ্ট সমাজসেবী মি: এফ এ জোন্স-এর মতে বাংলাদেশের শরণার্থীদের ত্রাণকার্য একটি দীর্ঘস্থায়ী ব্যাপার। কয়েক মাস বছর ধরে এই ত্রাণকার্য চালাতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চল সফর করে এসে তিনি কাসা’-র মুখপত্র ‘এ্যাকশন’-এ প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বলেছেন, ‘আমি শরণার্থীদের অবস্থা খুব ঘনিষ্ঠভাবে লক্ষ্য করেছি। এঁদের অধিকাংশই হিন্দু এবং কৃষক ও খেটে-খাওয়া শ্রেণীর মানুষ। এঁদের চলে আসার প্রধান কারণ, বাংলাদেশে এই সম্প্রদায়ের ওপর কঠোর ধর্মীয় অত্যাচার। এই অত্যাচারের ফলে তারা এমন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন যে, বর্তমান অবস্থায় দেশে ফিরে যাওয়ার কথা চিন্তা করাটাই একটা ঘৃণার ব্যাপার। ফিরে গিয়ে দেশে বসবাস করার সকল আশাআকাক্ষা তাঁরা ত্যাগ করেছেন। কারণ, সেখানে না আছে জীবনের নিরাপত্তা, না আছে জীবিকার সংস্থান। প্রিয়জন হত্যা এবং পাশবিক অত্যাচারের ঘটনার কথা তারা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। এছাড়া ঘরদোর লুটতরাজ ও অগ্নিসংযােগের ব্যাপার তাে আছেই।কাজেই নতুন করে সবকিছু ভাবতে তাদের সময় লাগবে। অতএব এই মুহূর্তে শরণার্থীদের জন্য যা প্রয়ােজন, তা হলাে সহানুভূতি ও সমবেদনাপূর্ণ ব্যবহার।
শরণার্থীদের দুর্দশায় অভিভূত বহরমপুর (মুর্শিদাবাদ) ১২ই জুলাই-নিউইয়র্কের আন্তর্জাতিক ত্রাণ ও উদ্ধার কমিটির প্রতিনিধি মিসেস লী থ পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন এবং অধিবাসীদের দুর্দশা দেখে দুঃখে অভিভুত হন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরের ডাইরেকটার জেনারেল ডা. টি হােসেন।ডা. হােসেন বলেন, মিসেস লী এই ধরনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জনের পর আরও ডাক্তার ও আধাডাক্তার কর্মচারী পাঠাবার সিদ্ধান্ত নেন।
তাঁরা নদীয়ার শিকারপুর, কেচুয়াডাঙ্গা, করিমপুর, বেতাই, কৃষ্ণনগর, বাহাদুরপুর, রাণাঘাট, চাকদহ ও কল্যাণী এবং মুর্শিদাবাদের কাশিম বাজার, বহরমপুর, জলঙ্গী, লালবাগ ও মুর্শিদাবাদ প্রভৃতি স্থানের শিবিরগুলি পরিদর্শন করেন।
বৃটেনের দান। ত্রাণকার্যের জন্য বৃটেন ২ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা নগদ বা জিনিসপত্র দেবে।
১৪ জুলাই ‘৭১
Reference: ১৪ জুলাই ১৯৭১, দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা