You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.30 | প্রতিবিপ্লবীরাও গলাবাজি করছে কেন- শ্যামল ঘােষ | দর্পণ - সংগ্রামের নোটবুক

প্রতিবিপ্লবীরাও গলাবাজি করছে কেন
শ্যামল ঘােষ

পূর্ববাংলা বা বাংলাদেশে আজ যে সংগ্রাম চলেছে তা নিঃসন্দেহে ন্যায়সঙ্গত। শােষণের বিরুদ্ধেই পরিচালিত হচ্ছে এ লড়াই। এ জন্য স্বাভাবিক কারণেই ভারতবর্ষের মেহনতি জনগণ এই লড়াইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন ও সাহায্য করার জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছেন এবং এভাবেই তারা তাদের আন্তর্জাতিকতাবাদী দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু একটা ব্যাপার লক্ষ করলে দেখা যাবে যে, ভারতবর্ষের ঘৃণ্যতম প্রতিবিপ্লবীরাও পর্যন্ত এ ব্যাপারে গলাবাজি করছে এবং এমনভাব দেখাচ্ছে যেন বাংলাদেশের জনগণের জয় হলে তারা খুব খুশি হয়।
কিন্তু এ কথা মনে রাখা দরকার যে, ভারতের শাষকরা কেবলমাত্র ভারতীয় জনগণের লড়াইকেই নয় পৃথিবীর যে কোনাে দেশের জনগণের লড়াইকেই প্রচণ্ড ভয় পায়। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের জনগণের লড়াইকে তাে বটেই। কারণ অন্য দেশের জনগণের জয় এ দেশের জনগণকে অস্ত্র ধরতে প্রেরণা জোগাবে। তবে বাংলাদেশের লড়াইয়ের প্রতি ভারতীয় শােষকদের এ রকম আচরণের অর্থ কী? ভারত সরকার ও ভারতীয় শােষকরা মােটেই বাংলাদেশের জনগণের জয় চায় না। তবে তারা মুখে এ লড়াইকে সমর্থন জানাচ্ছে প্রধানত তিনটি কারণে। কারণগুলাে হলাে :
(এক) ভারতীয় জনগণের কাছ থেকে নিজেদের আসল চেহারাটাকে আড়াল করা।
(দুই) পাকিস্তান রাষ্ট্রকে দুর্বল করা। পাকিস্তান রাষ্ট্র দুর্বল হলে ভারতীয় শােষকরা নিঝঞাটে কাশ্মীরকে ভােগ করতে পারবে এবং নিজেদের সম্প্রসারণবাদী নীতির একজন প্রতিদ্বন্দ্বীকে কোণঠাসা করে রাখতে পারবে।
(তিন) সাহায্য করার নাম করে বন্ধুবেশে এ লড়াই-এর ওপর খবরদারি করা, বাংলাদেশে প্রকৃত জনগণের শাসন যাতে কায়েম না হতে পারে তার জন্য ওখানকার জনবিরােধী, আপাত প্রগতিশীল শক্তিগুলােকে মদদ দেয়া এবং বাংলাদেশকে নিজেদের প্রভাবাধীন অঞ্চলে পরিণত করা। ভারত সরকারের এই সমস্ত অভিসন্ধিগুলাে ইতিমধ্যেই প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। পূর্ববাংলার ব্যাপারে ভারত নীরব দর্শক হয়ে থাকতে পারে না’-ইন্দিরা গান্ধীরা এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ উক্তি এবং বাংলাদেশে সশস্ত্র হস্তক্ষেপের স্বপক্ষে যুগান্তর, আনন্দবাজার প্রভৃতি পত্র-পত্রিকাগুলাের ক্রমাগত প্রচারই তার প্রমাণ।
ইন্দিরা সরকারের প্রগতিশীলতার স্বরূপ পশ্চিমবাংলার প্রত্যেকটি লােকেরই জানা আছে। যে প্রতিক্রিয়াশীল সরকার আমাদের বিপ্লবী জনগণের ওপর পুলিশ, সি আর পি, মিলিটারির সাহায্যে অকথ্য অত্যাচার ও দমন-পীড়ন চালাচ্ছে, যে সরকার বিভিন্ন সংস্থায় শ্রমিক শ্রেণীর ধর্মঘট করার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, যে সরকার এখনও পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন স্থানে একশাে চুয়াল্লিশ ধারা ও কারফিউ বলবৎ করে সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে এবং যে সরকার বারাসাত ও বেলেঘাটার মতাে গণহত্যা সংগঠিত করেছে সেই জনবিরােধী সরকার যখন বাংলাদেশের ব্যাপারে নীরব দর্শক হয়ে থাকতে চায় না বা সেই লড়াই-এ সশস্ত্র হস্তক্ষেপ করতে চায় তখন বুঝতে হবে যে, তারা এটা করতে চায় বিপ্লবের আগুনকে নিভিয়ে ফেলার জন্যই।
তাই বাংলাদেশের জনগণের লড়াইকে সাহায্য করতে হলে আমাদের অতি অবশ্যই ভারত সরকারের মুখােশকে ছিড়ে ফেলতে হবে। এটা আমাদের পবিত্র কর্তব্য। এ ব্যাপারে যেন আমরা ভণ্ডদের কুম্ভীরাশ্রু দেখে বিভ্রান্ত না হই এবং উগ্র জাতীয়তাবাদের শিকার না হই।

সূত্র: দর্পণ
৩০.০৪.৭১