You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.17 | এই তাে ভিয়েতনাম | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

এই তাে ভিয়েতনাম

ভিয়েতনাম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের ভারতস্থিত কন্সাল জেনারেল লগুয়েন আন ভু বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি তাঁর সরকার ও দেশের জনসাধারণের সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, জাতীয় স্বাধীনতা ও উন্নততর জীবন-যাপনের জন্য বাংলাদেশের মানুষ যে সংগ্রাম করছে তা তার দেশের সরকার ও জনগণ হৃদয়ঙ্গম করেছে আর সেই কারণেই এই সংগ্রামের প্রতি তার দেশের সরকার ও জনগণের সহানুভূতি রয়েছে। এটা যে কোনাে ব্যতিক্রম নয় তাও তিনি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন, জাতীয় স্বাধীনতা ও উন্নততর জীবনের জন্য যেখানেই সংগ্রাম, সেখানেই ভিয়েতনামী জনগণের সমর্থন। একটি স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তার কূটনৈতিক প্রতিনিধির বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এই সহানুভূতি জ্ঞাপন নিশ্চয়ই তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রকারান্তরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে ভিয়েতনামের স্বাধীনতা সংগ্রামেরই সমপর্যায়ভুক্ত করেছেন। স্পষ্টতই তিনি বলেন, নিক্সনের পিকিং আসার পর চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি ভিয়েতনাম সমস্যা সমাধানের কোনাে প্রস্তাব দেয়ও, তার দ্বারা ভিয়েতনাম সমস্যার সমাধান হবে না। ভিয়েতনামীরাই ভিয়েতনামের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক এবং তাদের সমস্যার সমাধান তারা নিজেরাই করবে। গণতান্ত্রিক ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ ভিয়েতনামের অস্থায়ী বিপ্লবী সরকারের যথার্থ প্রতিনিধিদের সঙ্গে না বসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যতই চেষ্টা করুক ভিয়েতনাম সমস্যার সমাধান হবে না। এর দ্বারা তিনি এই আভাসই দিতে চেয়েছেন যে, বাইরে থেকে কোনাে সমাধান তার উপর চাপিয়ে দিতে চাইলে তা ব্যর্থ হতে বাধ্য।
কেবল গণতান্ত্রিক ভিয়েতনামই নয়, পূর্ব ইউরােপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলােরও সমর্থন যে বাংলাদেশের প্রতি, তেমন অভিজ্ঞতা নিয়েই জাতিসংঘ থেকে প্রত্যাবর্তন করেছেন ন্যাপ নেতা অধ্যাপক মােজাফফর আহমেদ। জাতিসংঘের অধিবেশনে যােগদানের জন্য সেসব দেশ থেকে যেসব প্রতিনিধি এসেছেন তারা সবাই বাংলাদেশের ন্যায়যুদ্ধের প্রতি তাদের পূর্ণ নৈতিক সমর্থন জানান এবং কার্যত সাহায্যেরও আশ্বাস দেন। অধ্যাপক আহমেদ বলেন, কী কী ভাবে এই কার্যকর সাহায্য পাওয়া যেতে পারে। তা স্থির হবে- সেসব দেশের সরকার ও বাংলাদেশের সরকারের মধ্যে আলােচনার দ্বারা।
আমাদের দেশে দুষ্টবুদ্ধি রাজনৈতিক নেতারা এবং বুর্জোয়া সংবাদপত্রগুলাে অসদুদ্দেশ্যে অহরহ এমনভাবে প্রচারকাজ চালাচ্ছে যেন সমাজতান্ত্রিক দুনিয়া ও সাম্রাজ্যবাদীগােষ্ঠীর বাংলাদেশ সম্পর্কে ভূমিকা একই- অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রতি মৌখিক সহানুভূতি যতই দেখানাে হক, ভেতরে ভেতরে ইয়াহিয়ার জঙ্গিশাহীকে চটাতে কেউ নারাজ। কার্যত এ ধরনের মনােভাব ও প্রচার বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের বিরুদ্ধে এবং সাম্রাজ্যবাদ ও তার পােষা পাক জঙ্গিশাহীর পক্ষেই যায়। এ ধরনের প্রচারের দ্বারা মুক্তিসংগ্রামীদের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির যত চেষ্টাই চলুক, বিপদের দিনে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে শত্রু-মিত্র চিনতে তাদের ভুল হবে না। অন্য জাতিকে পদানত রেখে শশাষণ করাই যে সাম্রাজ্যবাদের ধর্ম, তার ভূমিকা ও মাকর্সবাদ- লেনিনবাদের বিশ্বমুক্তি আদর্শে পরিচালিত সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার ভূমিকা যে এক হতে পারে না- দুটি যে পরস্পরবিরােধী, বাংলাদেশের মানুষ এরই মধ্যে তা উপলব্ধি করেছে এবং বাস্তব অবস্থার মধ্য দিয়ে সেই উপলব্ধি ক্রমশই গভীর থেকে গভীরতর হবে।

সূত্র: কালান্তর
১৭.১০.১৯৭১