বাংলাদেশের চা-শ্রমিকদের প্রতি সিটু প্রতিনিধিদলের একাত্মতা ঘােষণা
আগরতলা, ৪ মে গত ২৮ এপ্রিল মার্কসবাদী কমিউনিস্ট নেতা কমরেড নৃপেন চক্রবর্তী ও কমরেড বিদ্যা দেব বর্মা এম.এল, এর নেতৃত্বে সিটু অনুমােদিত ত্রিপুরা টি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ৭ জনের এক প্রতিনিধিদল খােয়াইয়ের নিকটবর্তী বাংলাদেশের চা বাগানগুলাের সংগ্রামরত শ্রমিকদের সিটুর পক্ষ থেকে সংহতি জ্ঞাপন করেন।
প্রতিনিধি দল ব্ৰহ্মছড়া চা বাগানে পৌছলে শত শত শ্রমিক তাদের সংগ্রামী অভিনন্দন জানান। বাগানের শ্রমিকরা কোন মজুরি না পেয়েও চা-পাতা সংগ্রহ করছেন এবং সেতু ও রাস্তা পাহারা দিচ্ছেন। এবং সংগ্রামরত মুক্তিযােদ্ধাদের সর্ব প্রকার সাহায্য পাঠাচ্ছেন।
প্রতিনিধি দলকে এর পর বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ চা-বাগান রাজঘাট টি স্টেটে নিয়ে যাওয়া হয়। এ বাগানের শ্রমিক সংখ্যা ২০০০। এখানেও শত শত শ্রমিক প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানান। শ্রমিকরা লঙ্কা, লবণ, সরষের তেল, কেরােসিন তেল এ সমস্ত নিত্যপ্রয়ােজনীয় জিনিসের দুস্প্রাপ্যতার কথা জানান। ইতিমধ্যেই তাদের রেশনের মজুদ প্রায় শেষ। এটা অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয়, বাগানের ম্যানেজার এবং বাবুরা শ্রমিকদের কোনাে খবর না দিয়েই পক্ষকাল পূর্বে পরিবারসহ বাগান ত্যাগ করেছেন। তবুও শ্রমিকরা বাগানের কাজ চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। প্রতিনিধি দলকে মৌলভীবাজার থেকে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব ইলিয়াসের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। জনাব ইলিয়াস জানালেন যে, তারা ভারত সরকারের সাথে এক চুক্তি করে চা বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন এবং বাগানের কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বর্তমানে কয়লা, তেল, রেশন ইত্যাদির যােগান বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা জানান। সিটু প্রতিনিধি দল অবিলম্বে এ ব্যাপারে ভারত সরকারের সাথে সাক্ষাৎ করবেন বলে আশ্বাস দেন।
এখানে উল্লেখযােগ্য যে, আশপাশের এলাকায় অনেক লােক গ্রাম ছেড়ে চলে গেলেও এখানকার বাগানগুলাের শ্রমিকদের একটি পরিবারও তাদের বস্তি ছেড়ে চলে যাননি।
প্রতিনিধি দল বাগান থেকে চলে আসার পরই খবর পান যে, মৌলভীবাজার ও শ্রীমঙ্গলে পাক ফৌজ বিমান থেকে নেপাম বােমা নিক্ষেপ করেছে এবং তাতে শত শত শ্রমিকের কুঁড়েঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
সূত্র: দেশের ডাক
৭ মে, ১৯৭১
২৩ বৈশাখ, ১৩৭৮