You dont have javascript enabled! Please enable it! বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে মুজিব-মণি সিংহের গােপন বৈঠক - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে মুজিব-মণি সিংহের গােপন বৈঠক

১৯৭৩ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর থেকে ৯ই ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় দিনব্যাপী ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সিটিউটে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির যে ঐতিহাসিক দ্বিতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়, তার উদ্বোধনী দিবসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ ভাষণ দান করেন। উক্ত কংগ্রেসে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা কমরেড মণি সিংহ। পার্টি কংগ্রেসে বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণটি এইভাবে শুরু করেন। বন্ধু সভাপতি, কমরেড আবদুস সালাম, কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যবৃন্দ, উপস্থিত ভদ্রমহােদয় ও ভদ্রমহিলাগণ, বিদেশ থেকে আগত অতিথিবৃন্দ আপনারা আমার আন্তরিক অভিনন্দন গ্রহণ করেন। আপনারা আমাকে এই কংগ্রেসে ভাষণদানের যে সুযােগ দিয়েছেন তার জন্যে আমি অত্যন্ত আনন্দিত, আমি আবার আপনাদেরকে অভিনন্দন জানাই। আজ স্বাধীন বাংলাদেশের বুকে আপনারা আপনাদের কংগ্রেস করতে পারছেন। বিগত পঁচিশ বছরের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে, এবং আমার সহকর্মীরা, যারা আমার সঙ্গে কাজ করেছেন তাঁরা। আমরা সবাই দেখেছি যে কী দুঃখকষ্টের মধ্য দিয়ে, কী অত্যাচার অবিচার সহ্য করে আপনাদেরকে কাজ করতে হয়েছে। কারাগারে যখন বন্দি ছিলাম দেখেছি কমিউনিস্ট পার্টির শত শত কর্মী বছরের পর বছর কারাগারে বন্দি অবস্থায় রয়েছেন। কোনদিন আপনাদের সুযােগ দেয়া হয় নাই। আপনাদের কাজ করার সুযােগ দেয়া হয় নাই। আপনাদের পার্টিকে বেআইনী ঘােষণা করে পার্টির কর্মীদের উপর অত্যাচার চালানাে হয়েছে।’ বঙ্গবন্ধু তাঁর সুদীর্ঘ ভাষণে আরাে বলেন: ‘আজ আপনারা স্বাধীন বাংলাদেশের বুকে আপনাদের কংগ্রেস করছেন। স্বাধীনতার সংগ্রামে আপনারা দান করেছেন, আপনাদের কর্মীরা ত্যাগ স্বীকার করেছে। বাংলার মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আপনারা সংগ্রাম করেছেন, এ সম্বন্ধে কোন দ্বিমত থাকতে পারে না।’
পৃষ্ঠাঃ ৬৬

‘আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাদেরকে জানি। ১৯৬২-৬৩ সালে, তারও আগে জেল থেকে বেরিয়ে আসার পর, অনেক সময় রাতের অন্ধকারে গােপনে কোন এক জায়গায় আশ্রয় নিয়ে কমরেড মণি সিংহের সাথে আমার দেখা হয়েছে অনেকবার। কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে যখন ছিলাম, তখনও আপনাদের অনেক কমরেডের সাথে আমাকে বছরের পর বছর কাটাতে হয়েছে। আলােচনা করার সুযােগ পেয়েছি। আপনাদের জানবার, বুঝবার সুযােগ পেয়েছি।
…১৯৬২-৬৩ সালে, তারও আগে জেল থেকে বেরিয়ে আসার পর, অনেক সময় রাতের অন্ধকারে গােপনে কোন এক জায়গায় আশ্রয় নিয়ে কমরেড মণি সিংহের সাথে আমার দেখা হয়েছে অনেকবার।… বঙ্গবন্ধুর এই ঘােষণায় আমাদের মুক্তি সংগ্রামের সুদীর্ঘ প্রস্তুতি পর্বের অতীব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সম্পর্কিত একটি অতি গােপনীয় অমূল্য তথ্য ও দলিল উপস্থাপিত হয়েছে। নানান কারণে আরাে কতিপয় মূল্যবান তথ্যের মতাে এই তথ্যও ইতিপূর্বে সযত্নে গােপন রাখা হয়েছিল। কিন্তু হানাদার পাকিস্তানী বাহিনির পরাজয়বরণ ও আত্মসমর্পণ স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়, তার জাতীয় সংবিধান প্রণয়ণ, সংবিধানের উপর গণভােট অনুষ্ঠান, একটি সার্বভৌম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং পৃথিবীব্যাপী বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রতি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিদানের পর আমাদের মুক্তি সংগ্রামের কিছু কিছু গােপন দলিল প্রকাশ করার প্রয়ােজনীয়তা অনুভূত হয়। তার অন্তর্নিহিত কারণ অনেক থাকতে পারে। তবে ভাবীকালের ইতিহাসবিদদের গবেষণার সুযােগদানের উদ্দেশ্যে যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপরােক্ত তথ্য প্রকাশ করতে পারেন, সে অনুমানই মনে হয় সত্য। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট তাকে যেদিন নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তার বেশ কয়েক মাস আগে থেকে তিনি আত্মজীবনী রচনায় মনােনিবেশ করেছিলেন। এ মহতী কাজে দেখেছি তিনি বেশ অগ্রসরও হয়েছেন। তার আত্মজীবনীতে মুজিব-মণি সিংহ গােপন বৈঠকগুলাের ঐতিহাসিক পটভূমি ও উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে খােলামেলা ও বিস্তারিত আলােচনা করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু আত্মজীবনী যদি কখনও প্রকাশিত হয় তাতে দেখা যাবে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের প্রস্তুতি পর্বে মুজিব-মণি সিংহ গােপন বৈঠকগুলাের ফলাফল কী ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করছে। সময়টি পাকিস্তান দস্যুদের পরাধীনতার নাগপাশে পিষ্ট। কমিউনিস্ট পার্টি বেআইনী ঘােষিত, তার শত শত কর্মী কারাগারে নির্যাতিত, তার নেতারাও গ্রেফতারী পরােয়ানা এবং ধরিয়ে দেবার বিনিময়ে মােটা অর্থের প্রলােভনের ঘােষণা সংবলিত হুলিয়া
পৃষ্ঠাঃ ৬৭

মাথায় নিয়ে সন্তর্পণে কাজ করে চলেছিলেন। কাজেই পার্টি ও তার কাজ এবং নেতৃবৃন্দের অবস্থান ও গতিবিধি সবই তখন সযত্নে গােপন রাখা হতাে।
মুজিব-মণি সিংহ গােপন বৈঠকগুলাের পটভূমিতে রয়েছে আমাদের জাতীয় জীবনের সুদীর্ঘকালের নিপীড়ন-নির্যাতন-বঞ্চনার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষর। নতুবা সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই দুই মহান নেতা দিনের আলােয় প্রকাশ্যে মেলামেশা করতে পারতেন। গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে পার্টি নিষিদ্ধ ঘােষিত হতাে না। শ্রমিককৃষকের পার্টি সংগঠন গড়ে তােলা প্রকাশ্য রাজপথেই সম্ভব হতাে, গােপনে গা ঢাকা দিতে হতাে না। গণতন্ত্রের মূল্য কি বিশাল তার সম্যক অনুধাবন তারাই করেছেন যারা অগণতান্ত্রিক এবং ফ্যাসিবাদী পরিবেশে নিপীড়িত জনগণের সেবা করে গেছেন রাতের অন্ধকারে জীবন বাজি রেখে।
যে লাহাের প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তানের জন্ম তাতে ভারতের উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকার জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রিণাধিকার সম্পন্ন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র নিশ্চয় প্রতিষ্ঠার সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি ছিল। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা কায়েদে আজম মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘােষণা করেছিলেন যে, পাকিস্তানে হিন্দু আর হিন্দু থাকবে না, মুসলমানও থাকবে না মুসলমান- সবাই মিলে হবে পাকিস্তানী। স্পষ্টতই দেখা যায় তার। পরিকল্পনা ছিল হিন্দু-মুসলিম দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান। কিন্তু পাকিস্তান প্রস্তাব বাস্তবায়নের পর আর দুই জাতি নয়। এবার এ অঞ্চলের হিন্দু-মুসলিম বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সংবলিত এক বিশাল পাকিস্তানী জাতিরূপে একটি বৃহৎ ও সম্মিলিত জাতিসত্তার উদ্ভব। নিজের রচিত, বলতে গেলে নিজের লালিত সন্তান দ্বিজাতিতত্ত্বেরই শুধু প্রত্যাখ্যান নয়, রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পর তিনি স্বশ্রেণি- নিজের বুর্জোয়া শ্রেণির বিরুদ্ধেও কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন পাকিস্তানে কোন শােষকের ঠাই হবে না। এখানকার জনগণের সর্বাধুনিক মানবিক মূল্যবােধ বিকাশের সুযােগ দান এবং আধুনিক মানুষরূপে তাদের সগৌরবে পরিচয় দিবার মতাে জনকল্যাণকর কিছু মৌলিক কাজ করার গভীর বাসনা তিনি মনে মনে পােষণ করেছিলেন। তার চিন্তা ও চেতনার অবশ্য কিছু কিছু বৈপরীত্যও লক্ষ্য করা গেছে।
সে যা হােক।
মােহাম্মদ আলী জিন্নার স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হতে পারেনি। তার অনেক আগেই ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের স্বদেশীয় সামন্ত-বুর্জোয়া আমলাসমরবাদের ষড়যন্ত্রে তিনি বিষপ্রয়ােগে নিহত হন। ভ্রাতাকে হত্যার অভিযােগ আনেন ভগ্নি মিস ফাতেমা জিন্না। তিনি সে নিষ্ঠুর অভিযুক্তদের তালিকায় অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নবাবজাদা লিয়াকত আলী খান এবং সেনাবাহিনির
পৃষ্ঠাঃ ৬৮

অন্যতম নায়ক মােহাম্মদ আইউব খানের নাম বাদ দেননি। পরবর্তীতে পাকিস্তানের সশস্ত্রবাহিনির উর্ধ্বতন উচ্চাভিলাষী কর্মকর্তাদের শিকার হন লিয়াকত আলী খান স্বয়ং। সেনাবাহিনির হেডকোয়ার্টর রাওয়ারপিন্ডির জনসভায় সামরিক গােয়েন্দাবাহিনির এজেন্ট বলে কথিত সৈয়দ আকবরের গুলিতেই ঘটে তার প্রাণান্ত। লিয়াকত হত্যার তদন্তকারীরা, এমন কি স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড পর্যন্ত উক্ত হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে যেয়ে কোন এক অদৃশ্য শক্তি কর্তৃর্ক নাজেহাল হয়েছেন, বারবার জীবনের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এসবই এসেছে তাদের ধারণায় পাকিস্তানের প্রবল পরাক্রমশালী আমলা ও সশস্ত্র বাহিনির উর্ধ্বতন পান্ডাদের তরফ থেকে। কাজেই লিয়াকত হত্যার তদন্তের রিপাের্ট প্রকাশ তাে দূরের কথা, সে কাজই আর কখনাে সমাপ্ত হতে দেয়া হয়নি। এ ঘটনার সঙ্গে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কেনেডি হত্যা রহস্যের প্রায় হুবহু মিল পাওয়া যায়। যেন একই নীল নকশার অধীনে সংঘটিত হয়েছে। উভয় হত্যাকান্ড। লিয়াকত হত্যার তদন্ত যেমন শেষ হয়নি, তেমনিভাবে শেষ করতে দেয়া হয়নি কেনেডি হত্যার তদন্ত ও বিচারকার্য পরিচালনা। উভয় হত্যাকান্ডের কথিত সাক্ষীদেরকে একে একে রহস্যজনকভাবে উধাও করা হয়েছে। এমনিভাবে পাকিস্তানের গরিব-দুঃখী মানুষের জন্য শােষণমুক্তি ঘটাবার সকল ওয়াদা ভঙ্গ করে ঈঙ্গ-মার্কিন চক্রান্তের ফসলরূপে গড়ে ওঠে আর্মি বুরােক্র্যাটিক অলিগার্কি, সমর-আমলাচক্রের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বুনিয়াদ। তাদের সঙ্গে যােগ দেয় জবরদস্ত ভূস্বামী-সামন্ত-জায়গীরদার ও বৃহৎ পুঁজিপতি গােষ্ঠী। সেই প্রচন্ড ক্ষমতাধরদের সামান্য অঙ্গুলি হেলনে পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতায় ওঠানামা হয়, ভাঙ্গাগড়া চলতে থাকে, চলতে থাকে অবাধ অর্থনৈতিক শােষণ ও জাতিগত নিপীড়ন।
অপরদিকে, পাকিস্তানের শ্রমিক, কৃষক ও মেহনতীদের সংগ্রাম চলতে থাকে প্রধানত তিনটি দাবিকে ঘিরে। এক. একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান- যার মধ্যে থাকবে জনগণের ভাত-কাপড়শিক্ষা-স্বাস্থ্য-আবাস-কর্মসংস্থানের গ্যারান্টি, প্রাপ্তবয়স্ক ও সার্বজনীন। ভােটাধিকারের ভিত্তিতে গঠিত একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম পার্লামেন্ট। দুই. বাঙালি-পাঞ্জাবী-পাঠান-বালুচ-সিন্ধীদের ভাষা-সংস্কৃতি ও ইতিহাসঐতিহ্যের প্রতি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, তাদের নিজস্ব জাতিসত্তার অবাধ বিকাশের পূর্ণ অধিকার দান এবং জাতিগত নিপীড়ন ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের অবসান ঘটাবার সাংবিধানিক গ্যারান্টিসহ পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার।
পৃষ্ঠাঃ ৬৯

তিন, সাম্রাজ্যবাদ উপনিবেশবাদ নয়া-উপনিবেশবাদ ইহুদীবাদ ও বর্ণবাদবিরােধী সক্রিয় জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ, পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তিসহ সকল যুদ্ধজোট বর্জন এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতসহ বিশ্বের সকল দেশের সঙ্গে শান্তি মৈত্রী ও সহযােগিতামূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা।
কিন্তু দেশের প্রগতিশীল সংগ্রামী ও দেশপ্রেমিক জনগণের উপরােক্ত দাবিসমূহের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন না করে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াশীল চক্ৰ কুচক্রী জেনারেল ইসকেন্দার মির্জাকে ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এবং পাশ্চাত্য ঘেঁষা পাঞ্জাবী আমলা চৌধুরী মােহাম্মদ আলীকে প্রধানমন্ত্রিত্বের গদিতে বসিয়ে ১৯৫৬ সালের ২৩শ মার্চ তারিখে জারি করা হয় এমন একটি সংবিধান- যা ইসলামিক রিপাবলিকের ইসলামিকও নয়, রিপাবলিকও নয়, গণতান্ত্রিকও নয় তাে বটেই। সম্পূর্ণরূপে আমলা ও সমরচক্রের অলিগার্কি। সােজা কথায় আমলা ও সরমবাদের যৌথ গণতন্ত্র, যৌথ শাসন ও শােষণ প্রক্রিয়ার অস্ত্র। তার মধ্যে সমগ্র দেশের কৃষক শ্রমিক ও মেহনতী মানুষের দাবি ভারত-কাপড়-শিক্ষা-স্বাস্থ্য কর্মসংস্থান ও বাসস্থানের কোন গ্যরান্টি ছিল না। বাংলা ভাষাকে অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা দান করা হয় বটে, কিন্তু তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানতম দাবি পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনে, চট্টগ্রামে নৌবাহিনির সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠা, জনসংখ্যার ভিত্তিতে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক-বেসামরিক চাকরিবণ্টন, পূর্ব পাকিস্তানের ন্যাশনাল মিলিশিয়া প্রবর্তন, অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রতিকারসহ অর্থনৈতিক শােষণ বন্ধের কোনরূপ কার্যকরী ব্যবস্থা সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়নি। উপরােক্ত দাবিদাওয়া পূরণ না হওয়ায় তার প্রতিবাদে গণপরিষদে আওয়ামী লীগ সদস্যবর্গ দলীয় নেতা হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে সংবিধানে স্বাক্ষরদানে বিরত থাকেন এবং ওয়াক আউট করেন।
এর কিছুদিন পরের কথা।
শহীদ সােহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ ও রিপাবলিকান পার্টির একটি কোয়ালিশন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু মাত্র তের মাস ক্ষমতায় থাকার পর এক অদৃশ্য শক্তির অঙ্গুলি হেলনে তিনি পদচ্যুত হন। তিনি কোনদিন জানতেও পারেননি কী তার কারণ। এবারে ক্ষমতায় এলেন পাকিস্তানের ব্যবসায়ীচক্রের এক প্রধান প্রতিনিধি ও মুসলিম লীগের মােহাজের নেতা আই. আই. চুন্দ্রিগড়। পশ্চিমাদের চোখে শহীদ সােহরাওয়ার্দী একটি অপরাধ করে থাকতে পারেন- তিনি সংবিধানের ধারা অনুসারে এক লােক এক ভােটের ভিত্তিতে সমগ্র পাকিস্তানে প্রথম সাধারণ নির্বাচনের আয়ােজন করেছিলেন। নির্বাচনের সময়ও নির্ধারিত হয়েছিল ১৯৫৯ সালের ফেব্রুয়ারিমার্চ মাসের কোন এক সময়।
পৃষ্ঠাঃ ৭০

আসন্ন নির্বাচন সম্মুখে রেখে ১৯৫৮ সালের মে-জুন মাসে পাকিস্তানের একচেটিয়া পুঁজিবাদ, দোর্দন্ড প্রতাপশালী সামন্তবাদ ও কুচক্রী আমলা সমরতন্ত্রের বিরুদ্ধে নির্বাচনে একটি অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক ঐক্যফ্রন্ট গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির মধ্যে রাজনৈতিক মতবিনিময় হয়। সেই সব আলােচনায় কোন কোন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ কোয়ালিশনের শরিক দল রিপাবলিকান পার্টিকেও রাখা হতাে। সাম্রাজ্যবাদের পক্ষপুটে আশ্রিত পৃথিবীর যে কোন দেশের প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্রব্যবস্থার উদারনৈতিক বুর্জোয়া ও দেশপ্রেমিক সংগ্রামী পেটিবুর্জোয়াদের ঐক্যফ্রন্ট গঠন প্রক্রিয়া খুবই কষ্টকর। এ কাজে বাধাও আসে বিবিধ ধরনের। সেদিনকার পাকিস্তানেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবুও নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসে পাকিস্তানের প্রগতিশীল শক্তি ও প্রতিক্রিয়াশীল গােষ্ঠীর মধ্যকার পােলারাইজেশনও ততই সুস্পষ্ট রূপ ধারণ করতে থাকে। বিশেষ করে জনসাধারণ একটি গণতান্ত্রিক ঐক্যফ্রন্টের সাফল্য ও সম্ভাবনার প্রতি আস্থাবান হয়ে ওঠেন। পূর্ব পাকিস্তানের ন্যাপ ও আওয়ামী লীগ এবং পশ্চিম পাকিস্তানে ন্যাপ, রিপাবলিকান পার্টি ও কাউইম মুসলিম লীগের মধ্যে নির্বাচনী ঐক্যের সম্ভাবনা উজ্জ্বলতর হয়ে ওঠায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদসহ পাকিস্তানের আমলাসমরচক্র দুর্ভাবনায় পড়ে যায়। ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলার যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের ফলাফল স্মরণ করে আমলা-সমর চক্রের দুষ্টগ্রহের মাথায় সেদিন জলাতঙ্কের মতাে ছিল নির্বাচন আতঙ্ক।
এমনি দিনে সোহরাওয়ার্দী মন্ত্রিসভার মতাে আই. আই. চুন্দ্রিগড়ের মুসলিম লীগ মন্ত্রিসভাও হয় বরখাস্ত। এবার ক্ষমতায় আনা হয় রিপাবলিকান পার্টির পাঞ্জাবী নেতা ফিরােজ খান নুনকে।
প্রক্রিয়াটি ছিল ইংরেজিতে প্রােসেস অব এলিমিনেশন নীতি। একে একে সব প্রদেশকে সাময়িকভাবে চান্স দেয়ার নীতি, তুষ্ট করার নীতি। এবার মােহাজের নেতাকে ব্যবহার ও প্রত্যাখ্যান করার পরে তারা ক্ষমতায় আনলেন পাঞ্জাবকে, পাঞ্জাবী নেতা ফিরােজ খান নুনকে। উদ্দেশ্য আমলা ও দেশরক্ষা বাহিনির মালিক-মােক্তার পাঞ্জাব ও তার নেতাকে রাজনৈতিকভাবে ধিকৃত করা গেলে আমলাচক্র ও সেনাবাহিনিকে ক্ষমতায় আনা সহজ হয়। পাকিস্তানের যে অদৃশ্য শক্তি বারবার সরকার পরিবর্তন করে থাকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ পরিচালিত পাকিস্তানের সশস্ত্রবাহিনি ও প্রতিক্রিয়াশীল সেই কুটিলচক্র এবার প্রধানমন্ত্রী ফিরােজ খান নুনের উপর চাপ সৃষ্টি করে নির্বাচন স্থগিত ঘােষণা করার জন্য। তিনি তাতে রাজি হননি। পাকিস্তানের সামাজিক জীবনে গণতন্ত্রায়ন প্রক্রিয়া ধারা অব্যাহত রাখার ব্রত নিয়ে তিনি সাধারণ
পৃষ্ঠাঃ ৭১

নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠানের প্রশ্নে অটল থাকার প্রতিশ্রুতি দান করেন দেশবাসীকে।
প্রথম থেকে গণতান্ত্রিক ঐক্যফ্রন্ট গঠনের প্রশ্নে পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির তরুণ ও প্রবীণ নেতৃবৃন্দের মধ্যে মতবিরােধ ছিল। সেদিন প্রশ্ন উঠেছিল কার সঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট? পূর্ব বাংলার মওলানা ভাসানী, সীমান্ত গান্ধী খান আবদুল গাফফার খান, সিন্ধুর জি. এম. সৈয়দ ও বেলুচ গান্ধী আবদুস সামাদ খান আচকজাই- ন্যাপের এইসব প্রবীণ নেতা শহীদ সােহরাওয়ার্দী ও আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা হারিয়েছিলেন। শহীদ সােহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যালঘু প্রদেশসমূহ যে সীমিত স্বায়ত্তশাসন ভােগ করে আসছিল তাও বাতিল করেন এবং সমগ্র পশ্চিম পাকিস্তানে এক ইউনিট গঠনের নামে পাঞ্জাবী বুর্জোয়া-আমলা ও সমরতন্ত্রের অবাধ লুণ্ঠনের ক্ষেত্র তৈরি করে দেন। তদুপরি ছিল যুক্তজোট থেকে বেরিয়ে এসে জোটনিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করার আওয়ামী লীগের বহুঘােষিত কর্মসূচির বরখেলাপ। পক্ষান্তরে খান আবদুল কাইউম খানের মুসলিম লীগ এক ইউনিটের বিরােধী বলে তারা প্রস্তাবিত ঐক্যফ্রন্টে খান আবদুল কাইউম খানের নেতৃত্বে গঠিত কাইউম মুসলিম লীগকে গ্রহণের প্রস্তাব করেন। কিন্তু ন্যাপের তরুণ নেতৃবৃন্দ, বিশেষ করে পূর্ব বাংলার তরুণ নেতারা চান ন্যাপ-আওয়ামী লীগ ঐক্য। তারা মুসলিম লীগের যে কোন অংশকেই ঐক্যফ্রন্টে গ্রহণ করার ঘােরতর বিরােধী। গণতান্ত্রিক ঐক্যফ্রন্ট গঠনের ব্যাপারে উদ্ভূত জটিল সংকট আলােচনা ও তার সমাধানের পন্থা উদ্ভাবনের ব্যাপারে সাহায্য ও সহযােগিতা লাভের জন্য শহীদ সােহরাওয়ার্দী দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তফাজ্জল হােসেন মানিক মিয়াকে উপদেশ দেন নিষিদ্ধ ঘােষিত কমিউনিস্ট পার্টির আন্ডারগ্রাউন্ড নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিশেষ করে কমরেড মণি সিংহের সঙ্গে জরুরিভাবে গােপন আলাপ-আলােচনার ব্যবস্থা করার। সমগ্র পাকিস্তানে রাজনৈতিক পরিবেশ তখন কারণে-অকারণে উত্তপ্ত এবং বিভ্রান্তিতে ভরপুর। সেই উত্তপ্ত এবং বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পূর্ব বাংলার আইন পরিষদের স্পীকার জনাব শাহেদ আলী খুন হলেন কতিপয় সদস্যের হাতে পরিষদের অভ্যন্তরেই।
যারা এই পরিস্থিতি সৃষ্টির ব্যাপারে প্রত্যক্ষভাবে ইন্ধন যুগিয়েছে, ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দালাল-অনুচর বলে পরিচিত পাকিস্তানের তদানীনন্তন প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইসকেন্দার মির্জা ও জেনারেল আইউন খান সেই সুযােগে ১৯৫৮ সালের ৭ই অক্টোবর তারিখে রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করেন এবং জারি করেন সামরিক আইন, চালু করেন সামরিক
পৃষ্ঠাঃ ৭২

শাসন। জেনারেল ইসকেন্দার মির্জা তাে প্রেসিডেন্ট ছিলেনই। এবার প্রধান সেনাপতি জেনারেল আইউব খান হলেন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। তাঁর সঙ্গে রইলেন এয়ার মার্শাল আজগর খান, জেনারেল আজম খান, জেনারেল ডব্লিউ. এইচ. বাকী, জেনারেল এ. কে. এম. শেখ, রিয়ার এ্যাডমিরাল হাসান প্রমুখ জাদরেল জাদরেল সমরনায়ক- যারা ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পদলেহন করে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছেন অনুগত সেবাদাসরূপে।
ক্ষমতা দখল করে সামরিক জান্তা পাকিস্তানের সংবিধান বাতিল করে, পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেয়। তারা রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ ঘােষণা করে। সারা পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য প্রথম সাধারণ নির্বাচনের ভবিষ্যৎ শিকেয় তুলে রাখা হয় অনির্দিষ্টকালের জন্য। কিন্তু এ ঘটনার ২০ দিনের মধ্যে ২৭শে অক্টোবর তারিখে জেনারেল আইউব খান ইসকেন্দার মির্জাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন এবং তিনি প্রধান সেনাপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ ছাড়াও অলংকৃত করেন প্রেসিডেন্টের আসনটি। এইভাবে জেনারেল আইউব খান ক্ষমতায় আরােহণের লক্ষ্যে প্রােসেস অব এলিমিনেশন চূড়ান্ত করলেন। আইউব খানের ক্ষমতা গ্রহণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও বিশ্ব পুঁজিবাদের প্রচার মাধ্যমগুলােতে এই বলে প্রচারণা শুরু করা হয় যে পাকিস্তানের নাজুক পরিস্থিতি ও কমিউনিস্ট প্রভাব নির্মূল করার উদ্দেশ্যে জেনারেল আইউবের মতাে এখজন লৌহ মানবের শক্ত হাতের প্রয়ােজন ছিল, ছিল অপরিহার্য। তিনি তাদের ভাষায় ছিলেন পাকিস্তানের মেসায়া, পরিত্রাণকারী। যে কোন দেশপ্রেমিক এরূপ জঘন্য প্রচারের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ না হয়ে পারেননি। শুধু বিক্ষুদ্ধ হওয়াই নয়, রাজনৈতিক জীবনে আত্মমর্যাদাশীল নেতৃবৃন্দ ভীষণ অপমানিত বােধ করেছিলেন। সামরিক সরকার কর্তৃক পাকিস্তানের জাতীয় নেতৃবৃন্দ মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সীমান্ত গান্ধী খান আবদুল গাফফার খান, হােসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিবুর রহমানসহ অসংখ্য নেতা ও কর্মীর বিরুদ্ধে কাল্পনিক, মনগড়া ও মিথ্যা অভিযােগ আনয়ন করা হয়। মওলানা ভাসানী ও খান আবদুল গাফফার খানের বিরুদ্ধে প্রচার ছিল তারা নাকি মস্কো ও দিল্লিকে তুষ্ট করার রাজনীতি করছেন। আদব কায়দা ও লজ্জার মাথা খেয়ে সামরিক সরকার এই দুই বর্ষীয়ান ও সর্বজন শ্রদ্ধেয়। সংগ্রামী জননেতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপপ্রচারে একটুও লজ্জিত হতাে না।
ইতিমধ্যে দুর্নীতির অভিযােগে পূর্ব পাকিস্তান থেকে যে ১৮ জন নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করা হয় তাদের মধ্যে সর্বজনাব হামিদুল হক চৌধুরী, আবুল মনসুর আহমদ ও শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ ছিলেন। এই ঘটনায় বিশেষ করে শেখ
পৃষ্ঠাঃ ৭৩

মুজিবের গ্রেফতারের পূর্ব পাকিস্তানের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আরাে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
কিছুদিন পরের ঘটনা।
নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দুনীর্তির অভিযােগের তদন্ত শুরু হয়েছে। পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারির প্রাক্কালে ১৯৫৮ সালে পূর্ব বাংলায় অধিষ্ঠিত ছিল জনাব আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও কংগ্রেস কোয়ালিশন সরকার। তার অর্থমন্ত্রী পূর্ব বাংলা কংগ্রেসের নেতা শ্রী মনােরঞ্জন ধর এবং রাজস্বমন্ত্রী ছিলেন প্রাদেশিক ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক জনাব মাহমুদ আলী। রাজবন্দি ও রাজনৈতিকভাবে নিপীড়িত সর্বস্বহারাদের পুনর্বাসনে সাহায্য করার জন্য অর্থমন্ত্রীর বাজেটে একটা তহবিল প্রাদেশিক আইন পরিষরেদ পাশ করিয়ে নেয়া হয়েছিল। উক্ত পুনর্বাসন তহবিল বণ্টনের জন্য ছিল একটি কমিটি। সদস্য ছিলেন তিনজন অর্থমন্ত্রী শ্রী মনােরঞ্জন ধর, রাজস্বমন্ত্রী জনাব মাহমুদ আলী এবং শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান। তহবিল বণ্টনের জন্য উক্ত কমিটির উপর পূর্ণ দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল। তা সত্ত্বেও শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে আনা হয় দুনীর্তির অভিযােগ। তিনি নাকি উক্ত তহবিল বণ্টনের ব্যাপারে সবাইকে সমান নজরে দেখেননি। নিজ দলের নেতা ও কর্মীদের প্রতি তার পক্ষপাতিত্ব ছিল। তাদেরকে তিনি নাকি রাজনৈতিক নিপীড়নের তুলনায় বেশি বেশি অর্থ বরাদ্দ করেছিলেন। সামরিক আইন জারির কিছুদিন পরের কথা। একদিন আমার শাহজাহানপুরের বাসায় এলেন জাঁদরেল পুলিশ অফিসার এস.পি. বশীর। সৎ, কর্মঠ, তৎপর ও নির্ভীক বলে বশীর সাহেবের খ্যাতি ছিল।
তিনি বললেন: স্যার, ইউরােপে মওলানা ভাসানীর সাথে অবস্থানকালে দেশে আপনার বিরুদ্ধে জারিকৃত গ্রেফতারী পরােয়ানা ও হুলিয়ার দরুণ আপনার পক্ষে পাকিস্তানে প্রবেশ একরূপ নিষিদ্ধ হয়েছিল। ওদিকে যুগের দাবি প্রেস ও পত্রিকাসহ আপনার স্থাবর অস্থাবর যাবতীয় সম্পত্তি হয় বাজেয়াপ্ত। সরকারের পলিটিক্যাল রিহ্যাবিলিটেশন ফান্ড থেকে আপনার মঞ্জুরি মাত্র দশ হাজার টাকা না হয়ে অন্ততঃপক্ষে এক লক্ষ টাকা হওয়া উচিত ছিল। আপনাদের সাফারিংস-এর প্রতি বােধ হয় কারুর নজর ছিল না। শেখ সাহেব কিন্তু উদার হস্তে তার দলীয় নেতা ও কর্মীদের সাহায্য করার ব্যাপারে স্বজনপ্রীতি দেখিয়েছেন। দশ হাজার টাকা গ্রহণ না করায় পরে আপনার নামে বিশ হাজার টাকা মঞ্জুরির প্রস্তাব হয়। কিন্তু উক্ত অর্থ গ্রহণ করেননি, প্রত্যাখ্যান করেছেন।
পৃষ্ঠাঃ ৭৪

শুধু এই কথাগুলাে আপনাকে কোর্টে যেয়ে বলতে হবে দুনীর্তির দায়ে অভিযুক্ত শেখ সাহেবের মামলার দিন। সৎ ও যােগ্য অফিসার হিসাবে বশীর সাহেবের তারিফ শুনেছি যথেষ্ট। কিন্তু তিনি আমাকে নিরাশ করলেন। আমার মনােভাব তাকে জানিয়ে বলেছিলাম: টাকার প্রয়ােজন নেই, এ কথ আমি কেন স্বয়ং আগা খানও বলবেন না। কিন্তু বশীর সাহেব, আমার রাজনীতি তাে আপনার জানা থাকার কথা। আমাদের সংগ্রাম সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে, সমরনায়কদের বিরুদ্ধে, শােষকদের বিরুদ্ধে। এ সংগ্রামে শেখ মুজিব আমাদের একজন যােগ্য নেতা অকৃত্রিম বন্ধু ও সংগ্রামী সাথী। তার বিরুদ্ধে সাক্ষী! বশীর সাহেব মনে বড়ই কষ্ট দিলেন। লজ্জায় অধােবদন এস.পি. বশীর পুনরুক্তি না করে ফিরে গেলেন। পরে শুনলাম তিনি খ্যাতনামা সাংবাদিক অনুজ খােন্দকার গােলাম মুস্তাফার (কে, জি, মুস্তাফা) কাছেও গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকেও প্রায় একই ধরনের জবাব পেয়েছেন।
দুনীর্তির অভিযােগ থেকে মুক্তিলাভের পর শেখ মুজিবুর রহমান একরূপ প্রকাশ্যেই বলতে শুরু করলেন: মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াশীল সমরচক্রের সঙ্গে কিছুতেই আর একত্রে বাস করা যাবে না। তারা আমাদের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে দিয়েছে। এবার স্বাধীন হতে হবে। চাই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। বিষয়টা এতই গুরুত্বপূর্ণ ও বিপজ্জনক ছিল যে কথাবার্তা সংযত করার জন্য ঘনিষ্ঠতম রাজনৈতিক বন্ধুদের অনেকে তাঁকে সাবধান করে দিতেন। কিন্তু তিনি ছিলেন ভয়ানকভাবে বিক্ষুব্ধ। বারবার তার সেই এক কথা: ওদের সঙ্গে আর থাকা যাবে না। স্বাধীনতা চাই। আমাদের সঙ্গে যখন আলাপ করতেন তখন লক্ষ্য করতাম তার মনােবল যেরূপ দৃঢ় তেমনি তিনি ছিলেন তার বিশ্বাসে অটল। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নে বিভাের শেখ মুজিবের সেদিনকার দৃঢ় মনােবল ও অটল বিশ্বাস দেখে নিজের অজান্তে আমাদের স্বস্তির নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসতাে। এমনি সময়ে একদিন আলােচনা প্রসঙ্গে মানিক ভাই আন্ডারগ্রাউন্ড নেতা আবদুস সামাদ, পরে, আবদুস সামাদ আজাদ-এর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং তার ব্যবস্থা করে দিতে আমাকেই ধরলেন। এক রাতে দেখা করার ব্যবস্থা হলাে মানিক ভাইয়ের তৎকালীন দয়াগঞ্জ বাসভবনে। আবদুস সামাদকে সঙ্গে করে নিয়ে যাই। সেদিন মানিক ভাইয়েরও একই কথা, কিছু একটা করতে হবে। পাকিস্তান আন্দোলনে পাকিস্তানের সেনাবাহিনির কোন অবদান ছিল না। তেমনি কোন ত্যাগ ছিল না তাদের
পৃষ্ঠাঃ ৭৫

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে। কাজেই ক্ষমতায় থাকার কোন নৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার তাদের নেই। তাদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
ইতােমধ্যে সামরিক শাসনের অবসান ও জনগণের হাতে ক্ষমতা প্রত্যর্পণের প্রশ্নে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর লেফটেন্যান্ট জেনারেল আযম খানের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট আইউব খানের মতবিরােধ তীব্র আকার ধারণ করেছে। এই বিরােধ দেশ শাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের মধ্যে ফুটে উঠতাে। বিভিন্ন মহলে তখন গুজব, জেনারেল আযম খান দেশের সংগ্রামী ও গণতান্ত্রিক নেতৃবৃন্দের সহযােগিতায় পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘােষণা করেই বসবেন। শহীদ সােহরাওয়ার্দী এরই এক পর্যায়ে মানিক ভাইকে নিষিদ্ধ ঘােষিত কমিউনিস্ট পার্টির আন্ডারগ্রাউন্ড নেতা কমরেড মণি সিংহের সঙ্গে আলাপ-আলােচনার নির্দেশ দেন এবং তার ফলাফল তাঁকে জানাতে বলেন। মানিক ভাই কয়েক দফা বৈঠক করেন কমরেড মণি সিংহের সঙ্গে। কমরেড খােকা রায় মণি সিংহের সঙ্গে এখানেও আলােচনায় থাকতেন। তারা আলােচনায় সামরিক আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের রণনীতি ও রণকৌশল সম্পর্কে একমত হন। সিদ্ধান্ত হয় শহীদ সােহরাওয়ার্দী করাচী ফিরে যেয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ আলােচনা করবেন। তাদেরকে পূর্ব পাকিস্তানের বিক্ষুব্ধ মনােভাব বুঝিয়ে বলবেন এবং একসঙ্গে উভয় পাকিস্তানে সামরিক শাসনের অবসান ও নির্বাচিত গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন শুরু করবেন। কিন্তু করাচী প্রত্যাবর্তনের কয়েকদিন পর ১৯৬২ সালের ৩০শে জানুয়ারি তারিখে শহীদ সােহরাওয়ার্দী অকস্মাৎ গ্রেফতার হওয়ায় পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দের সাথে সামরিক সরকার বিরােধী আন্দোলনের কর্মসূচি বিলম্বিত হলাে। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৫৮ সালে সামরিক সরকারের কারাগার থেকে মুক্তি লাভের পর শেখ মুজিব আর এক মুহূর্ত পাকিস্তানের সঙ্গে বসবাস করতে প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি ইতিমধ্যে একবার আগরতলা ঘুরে আসেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করার জন্য বিদেশে বন্ধু সংগ্রহের চেষ্টা করেন। সে ঘটনা ১৯৬১ সালের। কিন্তু ফিরে আসার কিছু দিনের মধ্যে সােহরাওয়ার্দীর গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে যে আন্দোলন শুরু হয় তাতে তিনি আবার গ্রেফতার হন।
মুক্তি লাভের পর শেখ মুজিব কমিনিউন্ট পার্টির নেতা কমরেড মণি সিংহের সঙ্গে গােপনে কয়েক দফা বৈঠকে মিলিত হন। কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে
পৃষ্ঠাঃ ৭৬

সেই সব বৈঠকে কমরেড মণি সিংহের সঙ্গে প্রধানত থাকতেন কমরেড খােকা রায়। সেইসব বৈঠকে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রস্তাব ছিল একটিই- পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা ঘােষণা করা এভং স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করা। কমরেড মণি সিংহ ও তার সঙ্গী কমরেডগণ স্বাধীনতার প্রশ্নে নীতিগতভাবে একমত ছিলেন, কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু করার সময় নির্বাচন সম্পর্কে তাদের বক্তব্য ছিল ভিন্ন। তারা শেখ মুজিবকে বলেন, আমরা কমিউনিস্টরা হিন্দু-মুসলিম কৃত্রিম দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের অস্তিত্ব মেনে নিতে পারিনি। এ সম্পর্কে গৃহীত দলিলে পার্টির নীতি অতি পরিষ্কার। কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি মনে করে, দেশের সমগ্র জনগােষ্ঠীর বৃহৎ অংশ পাকিস্তান সম্পর্কে তখনও মােহাচ্ছন্ন রয়েছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদপুষ্ট পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াশীল শাসক ও শােষক গােষ্ঠী পাঞ্জাবী-পাঠান, পাঞ্জাবী-বেলুচ এবং সামগ্রিকভাবে বাংলাভাষীদের বিরুদ্ধে উর্দুভাষী বিরােধ সৃষ্টি করে নিজেদের শােষণ অব্যাহত রাখছে। ঐসব ভেদবৈষম্য এবং রাজনৈতিক পীড়ন-নির্যাতন, অর্থনৈতিক শােষণ ও পাঞ্জাবী-পাঠান পাঠান-সিন্ধী-বেলুচ প্রভৃতি জাতিগােষ্ঠীর বিরুদ্ধে নিপীড়নের বিষয় সম্পর্কে সমগ্র পশ্চিম পাকিস্তান ওয়াকিবহাল। কিন্তু যথেষ্ট পরিমাণে প্রতিবাদমুখর নয়। তারা একে অপরের বিরুদ্ধে ভিতরে ভিতরে গুমরে মরতেন। পাঞ্জাব ও পাঠান এবং সিন্ধী ও মােহাজেরদের মধ্যে জাতিগত ভৈদবৈষম্য ছিল সর্বাধিক। তদুপরি পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্নিহিত দুর্বলতা সম্পর্কেও দেশবাসীর মনের বিভ্রান্তি তখনও কাটেনি। আগে সেই মােহ ও বিভ্রান্তি দূর করতে হবে। তদুপরি সাংগঠনিক দুর্বলতার কথাও স্মরণ রাখা প্রয়ােজন। স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রাম আসলে একটি বিপ্লব। তার জন্যে দেশে বৈপ্লবিক পরিস্থিতি সৃষ্টির প্রয়ােজন। বৈপ্লবিক পরিস্থিতি বলতে একদিকে যেমন বুঝায় সমগ্র দেশবাসীর সরকার বিরােধী ঐক্যবদ্ধ চেতনা, তেমনি বুঝায় সে সরকারকে উৎখাত করার মতাে সুংগঠিত সুশৃঙ্খল ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক কর্মীবাহিনি ও সংগঠন। এ জন্যে দ্রুতগতিতে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ অপরিহার্য। গুরুত্বপূর্ণ এই উভয় শর্ত পূরণের আগেই যদি স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামে ডাক দেয়া হয়, তবে তা হবে হঠকারিতা- এ্যাডভেঞ্জারিজম। কঠোর হস্তে দমন করা হবে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সে সংগ্রাম। দেশের সমগ্র জনগােষ্ঠীর এক বিরাট অংশ থেকে আন্দোলনকারীদের হতে হবে বিচ্ছিন্ন। সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের স্তর যেখানে শেষ হয়নি, তখন সশস্ত্র সংগ্রামের ডাক দিয়ে তার প্রতি দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ ও আকৃষ্ট করা কঠিন হবে। পরিণতিতে অদূরেই বিনষ্ট হবে স্বাধীনতার সেই মহান স্বপ্ন, সেই প্রস্তুতি ও সেই সংগঠন। অতএব, আসুন ঐক্যবদ্ধভাবে বিপ্লবের সর্ববিধ ক্ষেত্র প্রস্তুত করি। সঠিক সময়ে কালবিলম্ব না করে জীবনপণ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়লে তার
পৃষ্ঠাঃ ৭৭

সাফল্য অনিবার্য। বিপ্লব এই শিক্ষাই দেয়। বিপ্লব-বিজ্ঞান এরূপ আরাে শিক্ষা দেয় যে, জাতীয় স্বাধীনতা অর্জন অতিশয় কষ্টকর ও ত্যাগের বিষয়। কিন্তু রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশের সে স্বাধীনতা সংহতকরণ এবং অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক তথা সার্বিক মুক্তি অর্জনের সংগ্রামে সাফল্য অর্জন অধিকতর কঠিন। অতএব স্বাধীনতা উত্তরকালে দেশগড়ার সংগ্রামে বৈপ্লবিক চেতনাসমৃদ্ধ প্রগতিশীল ও দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্যের গুরুত্ব সমধিক।
গভীর মনােযােগের সঙ্গে শেখ মুজিব কমরেড মণি সিংহ ও অন্যান্য কমিউনিস্ট নেতার বিপ্লব-বিজ্ঞানের যুক্তি ও বিশ্লেষণ শ্রবণ করেন। তিনি একটু দম ধরে কী যেন চিন্তা করে নিলেন। পরে বললেন আপনারা অভিজ্ঞ, আপনাদের সিদ্ধান্ত ও বিশ্লেষণ আমি আপাতত মেনে নিলাম। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রাম শুরু করার জন্য উপযুক্ত সময়ের প্রত্যাশায় শুধু অপেক্ষাই করবাে না; প্রয়ােজনে সঠিক সময় আমি নিজেই নির্মাণ করবাে। আশা করি মাহেন্দ্রক্ষণ আপনাদেরকে আমার ঘনিষ্ঠ মিত্র ও সাথীরূপে পাশে পাবাে। কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসের উদ্বোধনী দিবসে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে মুজিব-মণি সিংহ ঐতিহাসিক সেই গােপন বৈঠকগুলােরই উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। তার আজীবন লালিত স্বপ্নও আংশিকভাবে সফল হয়েছে। এবার তার দেশ গড়ার সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার কঠিনতম সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধু তার বক্তৃতা এই বলে সমাপ্ত করেন: ‘আজ আমার বাংলার মানুষ দুঃখী, বাংলাদেশের অভাব-অভিযােগের অভাব নাই। আমাদের সবকিছুকেই আজকে নতুন করে গড়তে হবে। সেজন্যে আজকে বাংলার যুবসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলার কৃষক-ছাত্রদেরকে এগিয়ে আসতে হবে, বাংলার মজদুরকে এগিয়ে আসতে হবে, বাংলার বুদ্ধিজীবীকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশ গড়ার নতুন শপথ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। রাস্তা আমাদের পরিষ্কার, আমরা সমাজতন্ত্রে পৌছুতে চাই। কঠিন রাস্তা। যারা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, যারা জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করেন, যারা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করেন, তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ গড়ার কাজে অগ্রসর হােন- এটাই আমি কামনা করি।

রেফারেন্স – প্রসঙ্গ শেখ মুজিব, খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস