ভারত সরকারের বাংলাদেশ নীতির ব্যর্থতার বলি
পাক গােলায় ত্রিপুরার বহু লােকের মৃত্যু: জনজীবন বিপর্যস্ত
আগরতলা, ২৮ অক্টোবর: গত এক সপ্তাহে ত্রিপুরার আগরতলা, বিলােনিয়া, ধর্মনগর, কোনাবন ও কমলপুরে পাক ফৌজের নিক্ষিপ্ত গােলায় কমপক্ষে ৩০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। একদিকে গােলাবর্ষণে লােকের মৃত্যু, অপরদিকে নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যের দুপ্রাপ্যতা ত্রিপুরার জনজীবনে নিদারুণ সঙ্কট ডেকে এনেছে। সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন কেন ভারত সরকার বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন না; কেন অস্ত্র দিচ্ছেন না? কোথা থেকে পাক সৈন্যরা ভারতে আক্রমণ করার সাহস পেল? অসামরিক প্রতিরক্ষার কর্মকর্তারা কোথায়?
গত ২৪ অক্টোবর রাত ৮টায় পাক ফৌজের নিক্ষিপ্ত গােলা এসে পড়লাে বনমালিপুরে, মােটর স্ট্যান্ডের নিকটে, বােধজং স্কুলের পাশে এবং মসজিদ রােডের মধ্যে জনবহুল স্থানে। নিহত হলেন ৬ জন, আহত হলেন প্রায় ২০ জন। সারা শহরে ত্রাস, বিদ্যুৎ নেই। ভীত সন্ত্রস্ত সাধারণ মানুষ এদিক ওদিক ছােটাছুটি করছেন। চলন্ত বাস, ট্রাক, জিপগুলাে রাস্তায় পড়ে রইলাে যাত্রী, চালক শূন্য অবস্থায়। জনসাধারণের এই দুঃসময়ে অসামরিক প্রতিরক্ষার কোনাে কর্তা ব্যক্তির খোঁজ নেই।
কমলপুরে ভয়াবহ অবস্থা কমলপুর থেকে আমাদের সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, কমলপুরে গােলাবর্ষণের ফলে ২৩ জন মারা যান এবং ৫০ জনের উপর আহত হন। স্থানীয় লােকেরা আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গেলে দেখা যায় এস.ডি.এস ও এই সময় অন্যত্র সরে পড়েছেন। কর্মচারী ও ছাত্রের মৃত্যু ঘটে। কর্মচারী ও শিক্ষকরা যান মহকুমা শাসকের নিকট নিরাপত্তা ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রােধে ডেপুটেশনে। অপদার্থ এসডিও, রঞ্জিত দীঘল বলেন, ‘সব ঠিক আছে। অথচ হাজার হাজার মানুষের জীবন বিপন্ন।
গতকাল সকালের দিকে গােলা বর্ষিত হয়েছে ধর্মনগরের মােটরস্ট্যান্ড এবং অফিস টিলাতে। জানা গেল দু’জন নিহত হয়েছেন। বিস্তৃত সংবাদ এখনাে পাওয়া যায়নি।
গতকাল মেশিনগান ও মর্টারের গােলা বর্ষিত হয়েছে ত্রিপুরার প্রধান বিমান বন্দর ননসিংনাল, অবশ্য কোনাে বিমান ক্ষগ্রিস্ত হয়নি। গতকাল বিলােনিয়া শহরের উপর পুনরায় প্রবল গােলা বর্ষিত হয়েছে। হতাহতের সংবাদ এখনাে পাওয়া যায়নি।
সারা ত্রিপুরায় বর্তমানে অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। আগরতলায় সন্ধ্যা ৬টার পর জনশূন্য অবস্থা। নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্য বাজার থেকে উধাও।
সূত্র: দেশের ডাক
২৯ অক্টোবর, ১৯৭১
১১ কার্তিক, ১৩৭৮