You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.01.15 | যুদ্ধাপরাধী হানাদার সেনা ও দালালদের ন্যুরেমবার্গ এর মত বিচার করা হবে| বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের প্রধান থাকবেন না | দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২ - সংগ্রামের নোটবুক

যুদ্ধাপরাধী হানাদার সেনা ও দালালদের ন্যুরেমবার্গ এর মত বিচার করা হবে
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের প্রধান থাকবেন না
অবাঙ্গালীদের বাঙালি হতে হবে

১৫ জানুয়ারি ১৯৭২ | দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২

Unicoded by Afikul Islam Mahe

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে , ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী শীঘ্রই বাংলাদেশ সফরে আসবেন । তবে তার আসায় তারিখ নির্ধারিত হয় নাই ।

যুদ্ধাপরাধীর বিচার :

প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব যুদ্ধাপরাধী হানাদার সেনা ও তাদের দালালদের বিচারের আভাস দেন । পুনরুক্তি করে বলেন যে , তাদের বিরুদ্ধে ‘ন্যুরেমবার্গ’ধরনের বিচার করা হবে । তিনি বলেন যে , যুদ্ধাপরাধীদের’ ন্যুরেমবার্গ ‘ধরনের বিচারের ব্যবস্থা করার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক বিচারক সমিতি ‘ ও ‘ আর্জাতিক ফোরামে’র কাছে আহব্বান জানিয়েছেন । তিনি জোৱেৱ সাথে বলেন যে , যদি তাদের নিকট হতে কোনাে সহযােগিতা না আসে তবে ‘ আমরা আমাদের নিজ পথ বেছে নিৰ’। যনি আন্তর্জাতিক পক্ষ হতে কোনো সাড়া পাওয়া না যায় , তবে তাদের বিচারের জন্য ভারত ও বাংলাদেশ এগিয়ে আসবে কিনা , জনৈক সাংবাদিকের এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন , “ অপেক্ষা করুন এবং দেখুন , সরকার এই ব্যাপারে কি ব্যবস্থা নেয় ” ।

আওয়ামী লীগের প্রধান থাকবেন না :
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুক্রবার স্পষ্টভাবে বলেন যে , তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রধান থাকবেন না । শেখ মুজিব কি পাটি প্রধান থাকবেন , না সরকারের চীফ এক্সিকিউটিভ থাকবেন , জনৈক সাংবাদিকের এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন যে , আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুয়ায়ী তাকে পার্টি প্রধানের পথ ছেড়ে দিতে হবে । তার পার্টি প্রধান থাকার জন্য পার্টির গঠনতন্ত্র , পরিবর্তন করা হতে পারে কিনা , এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন যে , আমি এই ধরনের কোনো সংশােধনী অনুমতি প্রদান করব না ।
এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন , দলীয় গঠনতন্ত্র বিধান অনুসারে যে সমস্ত আওয়ামী লীগ সদস্য সরকারি দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তাদের সকলকে দলীয় নেতৃত্বের পদে ইস্তাফা দান করতে হৰে । প্রধানমন্ত্রী যাতে দলীয় এবং সরকারি উভয় দায়িত্ব পালন করতে পারেন , তার জন্য দলীয় গঠনতন্ত্র সংশোধনের ভাবনার কথা বঙ্গবন্ধু দ্ব্যর্থহীন ভাষায় অস্বীকার করেন ।

অবাঙ্গালীদের বাঙালি হতে হবে :
এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু অবাঙালিদের উপদেশ প্রদান করে বলেন যে , অবাঙালি যারা বাংলাদেশে বাস করছে তাদের অবশ্যই বাঙালি হতে হবে । তিনি বলেন যে , বাংলাদেশের কোথাও অবাঙালিদের ওপর কোনাে অবিচার করা হয়নি এবং তারা স্বাধীনভাবে রাস্তায় চলাফেরা এবং বাজার – হাটে যাচ্ছে । তিনি বলেন যে , অবাঙালিদের বাঙালিদের সাথে ভালােভাবে মিলিয়ে মিশিয়ে চলতে হবে এবং বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির অনুশীলন করতে হবে ।

পররাষ্ট্রনীতির কাঠামাে :
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির রূপরেখা বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন , সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে শত্রুতা নয় , এটাই হবে আমাদের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন , মার্কিন জনগণের বিরুদ্ধে আমার কিছুই বলার নাই । তবে মার্কিন সরকারের কতিপয় কার্যকলাপে আমি নিন্দা না করে পারি না । তিনি মার্কিন সাহায্য গ্রহণ করবেন কি না জানতে চাওয়া হলে , বঙ্গবন্ধু বলেন , দুর্গত মানুষকে আমি বাঁচাতে চাই । যে সাহায্য দিতে চায় , তার সাহায্যই আমি নিব।

এতটুকু বাংলাদেশ :
জনৈক সাংবাদিক জানতে চান , বাংলাদেশকে কতিপয় প্রদেশে বিভক্ত করা হবে কি না ? জবাবে শেখ সাহেব বলেন , না । এতটুকু বাংলাদেশ তার আবার প্রদেশ কিসের ? আরেকজন সাংবাদিক বৃহত্তর বাংলা গঠনের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু তা নাকচ করে দিয়ে বলেন , মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গৃহীত জাতীয় পতাকায় যে মানচিত্র দেওয়া হয়েছে তাই আমার সােনার বাংলা । তিনি বলেন , স্বদেশের পরিধি একটি ইঞ্চি বৃদ্ধির খেয়ালও বাংলার মানুষের নাই । তিনি বলেন , বাংলাদেশ ভারত বিশেষত পশ্চিম বাংলার সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় বিশেষভাবে আগ্রহী ।

নির্বাচন প্রসঙ্গে :
অদূর ভবিষ্যতে আবার দেশে নির্বাচন হবে কি না জানতে চাওয়া হলে শেখ সাহেব বলেন , মাত্র এক বছর আগে নির্বাচন হয়েছে । যদি কোনাে দল আবার নির্বাচন চায় আমার আপত্তি নাই । তারা উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দেখতে পারে । আমার দৃঢ় বিশ্বাস , তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে । একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন , মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৭ মার্চ আপনি ঘােষণা করেছেন যে এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম । আপনি আমাদের মধ্যে ফিরে আসার পর স্বাধীনতার সংগ্রাম শেষ হয়েছে । জনগণ এখন বলছে এবারের সংগ্রাম মুজিববাদ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম । আপনার মন্তব্য কি ? মুজিববাদের পুরােধা বঙ্গবন্ধু সহাস্যে জবাব দেন , আমি এখন কিছুই বলতে চাই না ।

১০/১৫ দিনের মধ্যে কলকাতা যাবেন :
বঙ্গবন্ধু কখন কোলকাতা সফর করবেন , সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন যে , আগামি ১০/১৫ দিনের মধ্যে তিনি কোলকাতা সফর করবেন । এখানে উল্লেখযােগ্য যে পাকিস্তান বর্বরবাহিনী জিন্দাখানা হতে ঢাকা আসার পথে বঙ্গবন্ধুর কলিকাতা অবতরণের কথা ছিল , কিন্তু সময়ের অভাবে তার বিমান কলিকাতায় অবতরণ করে নাই ।

আমি আত্মপক্ষ সমর্থন করতে অস্বীকার করি :
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন যে , ইয়াহিয়া সরকার তাকে ফাঁসিকাষ্টে বুলানাের প্রয়ােজনে একটি সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্যে তার পক্ষ সমর্থনে একজন কৌশলি নিয়ােগ করেছিলেন । জনাব ব্রোহী সত্যি কি তার পক্ষ সমর্থনের জন্য নিযুক্ত হয়েছিলেন এবং তিনি কি সত্যি তার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন- এই মর্মে জিজ্ঞাসিত হয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন যে , জনাব ব্রোহী তার সহিত অবশ্য সাক্ষাৎ করেছেন এবং প্রথম সাক্ষাতে তিনি তাকে জানিয়ে গেছেন যে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করতে চান না । অতঃপর ইয়াহিয়া সরকার সিদ্ধাভ করেন যে , আমি চাই বা না চাই আমার পক্ষ সমর্থনের জন্য তারা একজন কৌশলি নিয়ােগ করবেনই । কিন্তু তার উদ্দেশ্য ছিল আমাকে ফাঁসিকাষ্টে ঝুলানাের প্রয়ােজনে একটি সার্টিফিকেট গ্রহণ করা ।(২৩)

References:
দৈনিক ইত্তেফাক, ১৫ জানুয়ারি ১৯৭২
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, p 32-33