You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.07 | বাঙলাদেশের দল ও মত- ভবানী ঘােষ | সপ্তাহ - সংগ্রামের নোটবুক

বাঙলাদেশের দল ও মত
ভবানী ঘােষ

বাঙলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম যত তীব্রতর এবং দীর্ঘায়ত হবার পথে যাচ্ছে, ততই সেই সংগ্রাম সম্বন্ধে দেশবিদেশের মানুষের বিভিন্নমুখী কৌতূহল দিন দিন বাড়ছে। বাঙলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে যেহেতু সমস্ত বাঙলা-দেশবাসীই একতাবদ্ধ হয়ে লড়াই করছে, তখন একথাও অনস্বীকার্য যে এই যুক্ত মাের্চায় একাধিক দল ও মতের লােক আছেন। অতএব, এই মুক্তিসংগ্রাম ও সংগ্রামীদের সম্বন্ধে সঠিক কোন সিদ্ধান্ত নেবার আগে এই যুক্ত মাের্চার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমীক্ষা করা বিশেষ প্রয়ােজন।
বর্তমানে বাঙলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে যে রাজনৈতিক দলগুলাে পাক ফৌজের মােকাবিলা করছে তাদের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি ছাড়া আর সবকটি দলেই কিন্তু স্বাধীনতা উত্তর কালে বিভিন্ন জাতীয় প্রশ্নের মতানৈক্যের মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন সময়ে স্বতন্ত্র দল হিসাবে গড়ে উঠেছে। তবে এইসব দলের মধ্যে আওয়ামী লীগই সবচাইতে পুরনাে।
১৯৪৯ সালে পূর্ব বাঙলার একদল বামপন্থী মুসলিম নেতাদের নেতৃত্বে মুসলিম লীগ-বিরােধী এবং পশ্চিম পাকিস্তানের সাম্রাজ্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে এক যুক্ত মাের্চা গড়ে ওঠে। এইভাবে পূর্ব বাঙলায় প্রথম মুসলিম লীগ-বিরােধী দল গড়ে উঠল, যার নাম হলাে আওয়ামী মুসলিম লীগ। এই দলের নেতা নির্বাচিত হলেন মৌলানা ভাসানী।
মৌলানা ভাসানীর নেতৃত্বে এই নবগঠিত দল প্রথমেই দেশের মধ্যে গণতন্ত্র প্রবর্তনের দাবি এবং জনসাধারণের মুক্তির দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করলেন। পূর্ব বাঙলার এই আন্দোলনের জোয়ার পশ্চিম পাকিস্তানকেও অনুপ্রাণিত করল, সেখানেও গঠিত হলাে আওয়ামী মুসলিম লীগ। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতৃত্বে থাকলেন কট্টর দক্ষিণপন্থী নেতা হাসান শহীদ সােহরায়ার্দী।
আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হবার পর, ১৯৫০ সালের জানুয়ারি মাসে মিঞা ইফতিকারউদ্দিন এবং শওকত হায়াৎ খানের নেতৃত্বে পাকিস্তানে দ্বিতীয় মুসলিম লীগ-বিরােধী দলের সৃষ্টি হলাে, যার নাম হয়েছিল—আজাদ পাকিস্তান দল। পরবর্তী কালে এই দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সঙ্গে মিশে যায়।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় থেকে পূর্ব বাঙলার এক নতুন জনজাগরণের কাল সূচিত হয়। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পূর্ব বাঙলায় একাধিক গণতান্ত্রিক দলেরও সৃষ্টি হয়েছিল। যাদের মধ্যে ছিলেন—এক ॥ গণতন্ত্রী দল ; দুই ॥ কৃষক-শ্রমিক দল ; তিন ॥ ইউনাইটেড প্রগেসিভ পার্টি ; চার ॥ সিডিউল্ড কাস্ট ফেডারেশন ; পাঁচ ॥ নিমামী ইসলাম প্রভৃতি।
১৯৫৪ সালে পূর্ব বাঙলায় যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা উচ্ছেদ হবার আগে পর্যন্ত, পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি খােলাখুলিভাবেই কাজ করত। এবং ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে কমিউনিস্টরা তাঁদের চারজন প্রতিনিধিকে প্রাদেশিক সভায় পাঠাতে পেরেছিলেন। তবে ১৯৫৪ সালের পর কমিউনিস্ট পার্টিকে বেআইনি ঘােষণা করে সমাজের বিভিন্ন স্তরে তাদের প্রভাব খর্ব করবার চেষ্টা করা হলেও সে চেষ্টা যে ফলবতী হয়নি তার প্রমাণ মেলে বিভিন্ন গণসংগঠন ও বামপন্থী মনােভাবাপন্ন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে তাদের কর্তৃত্ব থেকে।
পশ্চিম পাকিস্তানের সাম্রাজ্যবাদী নীতির প্রতি পূর্ব বাঙলার মানুষের ঘৃণা ও বিদ্বেষ প্রথমবার ধরা পরেছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময়। কিন্তু ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে এই বিদ্বেষ গণজাগরণের আকারে ধরা পড়ল ভােটের মাধ্যমে। মুসলিম লীগ এই নির্বাচনে পূর্ব বাঙলা থেকে প্রায় মুছে যাবার মতাে হলাে।
১৯৫৪ সালে পূর্ব বাঙলার নির্বাচনের ফলাফল দেখে পশ্চিমের প্রতিক্রিয়াশীল গােষ্ঠী অত্যন্ত ভয় পেয়ে গেল, আর এইজন্যই মাত্র পাঁচ মাস পরেই কেন্দ্রীয় মুসলিম লীগ সরকার পূর্ব বাঙলার যুক্তফ্রন্ট সরকারকে ভেঙে দিল ;
১৯৫৪ সালের ৩০ মে তারিখে পূর্ব বাঙলার যুক্তফ্রন্ট সরকারকে খারিজ করবার পর মৌলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের উভয় অংশেই গণআন্দোলন শুরু করল? এই আন্দোলন শুরু করল। এই আন্দোলন ১৯৫৬ সালের শেষ কয়েক মাসে অত্যন্ত তীব্র রূপ ধারণ করল। এই সময় পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে বিরােধ মীমাংসার আশায় পশ্চিম পাকিস্তানের একদল ফন্দিবাজ নেতা শহীদ সােহরাবর্দীকে প্রধানমন্ত্রী করলেন। পূর্ব বাঙলার আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেছিলেন সােহরাবর্দীর মন্ত্রিত্বকালে পূর্ব বাঙলার কিছুটা উন্নতি হবে। এই সময় ভাসানীর নেতৃত্বে জমিদারি ও জাগীরদারি উচ্ছেদ আন্দোলন বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে উঠল। এই পরিপ্রেক্ষিতে ১৫৫৭ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসল ! এই অধিবেশন থেকে সংবিধানের ১৫ নং ধারা সংশােধন করে, জমিদারি উচ্ছেদের জন্য এক প্রস্তাব গৃহীত হলাে। এছাড়াও খাদ্যসমস্যার সমাধানকল্পে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব পাশ হলাে। এই অধিবেশনে আলােচনার অন্যতম প্রধান বিষয় ছিল বৈদেশিক নীতির ব্যাপারে আওয়ামী লীগের অবস্থান সম্বন্ধে। বৈদেশিক নীতির প্রশ্নে মৌলানা ভাসানী অতি তীব্র ভাষায় সােহরাবর্দীকে তার বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদকে তােষাণের জন্য আক্রমণ করলেন, এবং ভাসানী বললেন যে, আওয়ামী লীগ চিরকাল তার প্রস্তাবে সাম্রাজ্যবাদ বিরােধীতার কথা বলেছে, কিন্তু কার্যত সােহরাবর্দী মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দের পথ অনুসরণ করে মার্কিন ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে আগের মতােই সাহায্য করছেন। এমনকি সুয়েজ খাল নিয়ে ব্রিটিশ ও মিশরের গণ্ডগােলে আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী সােহরাবর্দী ব্রিটিশ ও মার্কিন চক্রকেই সমর্থন করেছেন।
ভাসানীর এই বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগের দক্ষিণপন্থী নেতারা সােহরাবর্দীর নেতৃত্বে ভাসানীর তীব্র বিরােধীতা করলেন। এর ফলে আওয়ামী লীগের দক্ষিণ ও বামপন্থীদের মধ্যে তীব্র মতানৈক্যের সৃষ্টি হলাে। এর পর ভাসানী ১৯৫৭ সালের এপ্রিল মাসে পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে সেখানকার আওয়ামী লীগের বামপন্থী নেতাদের এবং ন্যাশনাল পার্টির নেতাদের সঙ্গে দেখা করলেন। সেখানে তারা ঠিক করলেন যে পাকিস্তানের সমস্ত প্রগতিশীল দলগুলােকে নিয়ে এই মুহূর্তে একটি মাের্চা গঠন করা উচিত।
পাকিস্তানের উভয় অংশেরই প্রগতিশীল বামপন্থী অংশ, গণতন্ত্রী দল, ১৯৫৭ সালের ২৫ ও ২৬ জুলাই তারিখে ঢাকায় এক সম্মেলনে মিলিত হলেন এবং এখান থেকে এক নতুন রাজনৈতিক দলের জন্ম নিল । সেটার নাম হলাে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বা ন্যাপ।
ন্যাপের প্রথম অবস্থায় যে যৌথ নেতৃত্বের সৃষ্টি হলাে, তার মধ্যে ছিলেন মৌলানা ভাসানী, খান আবদুল গফফর খান ; জি এম সঙ্গদ ; ইতিকারউদ্দিন প্রভৃতি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরােধী সংগ্রামের প্রথম শ্রেণীর নেতৃবৃন্দ।
১৯৫৪ সালের মে মাসে পাকিস্তান কমিউনিস্ট বিভিন্ন অত্যাচার তুচ্ছ করে গােপনে তাদের দলকে এগিয়ে নিয়ে চলেছিলেন। ১৯৫৭ সাল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি সৃষ্টি হবার পর পাকিস্তানের উভয় অংশের কমিউনিস্টরা এই দলের নেতৃতৃেন্দ কর্তৃক আহূত হলেন এবং ন্যাপের মধ্যে থেকে গণ-আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে শুরু করলেন।
ন্যাপ সৃষ্টি হবার এক বছর কাল পরেই সমস্ত পাকিস্তানের উপর সামরিক শাসন চেপে বসল। আয়ুব খানের নির্দেশে সমস্ত রাজনৈতিক দলের কার্যকলাপ বন্ধ হয়ে গেল অনির্দিষ্ট কালের জন্য।
চার বছর দোর্দণ্ড প্রতাপে ফৌজি শাসন চালিয়ে আয়ুব মনে করেছিলেন যে তিনি পূর্ব বাঙলার গণতান্ত্রিক শক্তিগুলাের মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে পেরেছেন। তাই তিনি নিশ্চিন্ত হয়ে ১৯৬২ সালের জুলাই মাসে রাজনৈতিক দলগুলাের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেন। কিন্তু অচিরেই আয়ুবের সেই দম্ভ স্বপ্নে পরিণত হয়েছিল। পূর্ব বাঙলায় আয়ুবশাহী শাসনের বিরুদ্ধে এক ন্যাশনাল ডেমােক্রেটিক ফ্রন্ট গঠিত হলাে। এই ফ্রন্টে প্রাক্তন মুসলিম লীগ মন্ত্রি জনাব নুরুল আমিন থেকে শুরু করে বামপন্থী ভাসানী পর্যন্ত সবাই একত্র হয়েছিলেন (১৯৬২ সালের ৩ অক্টোবর ভাসানী কারামুক্ত হয়েছিলেন।
১৯৬২ সালের ১৭ সালের সেপ্টেম্বর আয়ুব খান ঢাকায় এক সমাবর্তন উৎসবে ভাষণ দিতে এল। ছাত্ররা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং তার পরবর্তীকালে এই আন্দোলনের রেশ ধরে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রচণ্ড আয়ুব বিরােধী আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। যে ছাত্রসমাজ এই অবিশ্বাস্য গণ-আন্দোলনের জোয়ার সৃষ্টি করেছিলেন তাদের বেশির ভাগ ছাত্রই ছিলেন ন্যাপ-পরিচালিত ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য। ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগ সৃষ্টির সময় আওয়ামী লীগ পরিচালিত ছাত্রলীগের প্রগতিশীল বামপন্থী অংশ ছাত্র ইউনিয়ন গঠন করেন।
১৯৬২-র পর ১৯৬৬তে আওয়ামী লীগ (১৯৬৩তে সােহরাবর্দীর মৃত্যুর পর) তার বিখ্যাত ছয়-দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন শুরু করে এবং আয়ুববিরােধী বামপন্থী আন্দোলনের মধ্যে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে। এই সময় থেকেই এই দলের নেতৃত্ব দেন শেখ মুজিবুর রহমান। অন্যদিকে ১৯৬৪ সালের পর বিশ্বকমিউনিস্ট আন্দোলনের মধ্যে সােভিয়েত-চীন বিরােধে পূর্ব পাকিস্তানে তথা সমগ্র পাকিস্তানে বামপন্থী ন্যাপের মধ্যে ভাঙনের সূত্রপাত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের এই দলের দুই অংশ ক্রমে ১৯৬৬ সালের পর থেকে মস্কোপন্থী ন্যাপ ও চীনপন্থী ন্যাপ নামে পরিচিত হয়। মস্কোপন্থী অংশের সর্ব-পাকিস্তানি নেতা হিসাবে ওয়ালি খানই সর্বত্র পরিচিত এবং পূর্ব পাকিস্তানে মস্কোপন্থী ন্যাপের সভাপতি নির্বাচিত হন অধ্যাপক মুজাফ্ফর আহমেদ। ন্যাপের চীনপন্থী অংশ ক্রমে ভাসানীর নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বর্তমানে ভাসানীপন্থী ন্যাপ নামে পরিচিত। সংক্ষেপে বর্তমান ন্যাপের দুই অংশ ওয়ালি ন্যাপ ও ভাসানী ন্যাপ নামেই পরিচিত।
১৯৬৭ সালের শেষের দিক থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে ভাসানী ন্যাপ আবার তিনটি উপদলে ভাগ হয়ে যায়। এক—পাবনা গ্রুপ ; দুই—গণশক্তি গ্রুপ ; তিন—জাফর-মেনন গ্রুপ।
এখানে বিশেষভাবে স্মরণ করা প্রয়ােজন যে বিশ্ব-কমিউনিস্ট আন্দোলনের ভাঙনকে কেন্দ্র করে ন্যাপের মধ্যে ভাঙন ধরলেও পূর্ব পাকিস্তানের যে গােপন কমিউটিস্ট পার্টি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন, সেই পার্টি নেতৃবৃন্দের মধ্যে কোন ফাটল ধরেনি। তারা কিন্তু এই সমস্ত বিভেদের ঊর্ধ্বে উঠে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টির উপরই সবসময় জোর দিয়ে এসেছেন।
পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি ছাড়া ওয়ালি ন্যাপের অংশও ১৯৬৭ সাল থেকে সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যে বামপন্থী ও গণতান্ত্রিক ঐক্যকে সুদুঢ় করবার কাজে নিজেদেরকে নিয়ােজিত করে রেখেছিলেন। এখানে বলা প্রয়ােজন যে, ন্যাপের মধ্যে গত তিন চার বছরে যে ভাঙন দেখা দিয়েছে সেই ভাঙনের ফলে মূল পার্টি ছাড়া ন্যাপ পরিচালিত গণসংগঠনগুলােতেও কিছু জায়গায় এই ভাঙনের রাজনীতি প্রভাবিত করেছে ঠিকই। কিন্তু বড় বড় শহরগুলাের শ্রমিক-অঞ্চল ও ছাত্র রাজনীতিতে ওয়ালি ন্যাপের প্রভাব শতকরা ৮০ ভাগ। ভাসানী ন্যাপ কৃষকদের মধ্যে প্রথম প্রথম তাদের পূর্ণ কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পেরেছিলেন, কিন্তু ১৯৭০ সালের গােড়ায় ঢাকার ‘হাঙ্গার’ মার্চের পর ওয়ালি ন্যাপ কৃষকদের মধ্যেও সমানভাবে তাদের কর্তৃত্ব স্থাপন করতে পেরেছেন। তবে সাধারণ বুদ্ধিজীবী ও কৃষকদের মধ্যে বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রভাবই সবচাইতে বেশি। শেখ মুজিবুর কৃষকদের কাছে রূপকথার রাজপুত্র। যদিও এই প্রভাবের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা থেকে আবেগের দিকটাই বেশি, তবুও তাকে বাস্তব ক্ষেত্রে অস্বীকার করা যায় না।
এখন ভাসানী ন্যাপ থেকে যারা বেরিয়ে গিয়ে বিভিন্ন উপদল গঠন করেছেন তাদের কথা বলতে গিয়ে প্রথমেই বলতে হয় যে তারা ভারতের ‘নকশালপন্থী দলের মতাে রক্তাক্ত বিপ্লব ছাড়া আর কিছুই বিশ্বাস করেন না। অবশ্য এঁদের মধ্যে ‘গণশক্তি গ্রুপ’ই সবচাইতে শক্তিশালী ; গণশক্তি গ্রুপ ছাড়া, পাবনা গ্রুপ ও জাফর -মেনন গ্রুপ আছেন কেবল নামে মাত্র। গণশক্তি গ্রুপের শক্তিবৃদ্ধি হয় ভাসানীপন্থী ন্যাপের সম্পাদক জনাব তােহা ১৯৭০ সালের প্রথম দিকে এই দলে যােগ দেবার ফলে। তােহা ভাসানীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন। করে বিবৃতিতে বলেন যে ভাসানীর দ্বারা বিপ্লব সম্ভব নয়’-তাই তিনি বিপ্লবের জন্য দলত্যাগ করলেন।
তােহা কী করছেন জানি না, তােহার যাদের প্রতি আনুগত্য সেই চীন প্রকাশ্যেই ইয়াহিয়া খানের সমর্থক-কিন্তু ভাসানী মুক্তিযুদ্ধে সামিল হয়েছেন। আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে কমিউনিস্ট পার্টি পর্যন্ত **** মুক্তিযুদ্ধের শরিক।

সূত্র: সপ্তাহ, ৭ মে ১৯৭১