বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর অপারেশান ওমেগার প্রচারপত্র | অপারেশন ওমেগা | ৩০ জুলাই, ১৯৭১ |
অপারেশান ওমেগা
৩ ক্যালেডনিয়ান রোড, লন্ডন এন ১
“কষ্টে জর্জরিত জনগণ ও সাহায্য করতে সক্ষম ব্যাক্তিদের মধ্যেকার দেয়াল কখনই আইন্সিদ্ধ হতে পারেনা। মরণাপন্ন ব্যক্তিকে সাহায্য করায় কোনো বাধা ই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনা।”
প্রেস স্টেটমেন্ট ৩০-০৭-৭১
পশ্চিম পাকিস্তানের হানাদার বাহিণী বাংলাদেশের নিরীহ জনগণের উপর অবিরত নির্যাতন আর নিষ্পেষণ চালাচ্ছে। বাকি বিশ্ব এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে নিশ্চুপ রয়েছে, যা বাংলাদেশের ৭৫ মিলিয়ন জনগণকে কোণ্ঠাসা করে ফেলেছে।
এই যুদ্ধাবস্থা বাংলাদেশে খাদ্য ও ওষুধের তীব্র সংকট সৃষ্টি করেছে।
মানবিক দিক থেকে চিন্তা করলে অপারেশন ওমেগার বাংলাদেশে প্রবেশ করা ব্যাতীত অন্য কোনো উপায় নেই। কারণ প্রথমত, বাংলাদেশের জনগণরা একাকী নয় এ বিশ্বাস তাদের মধ্যে জাগ্রত করা। দ্বিতীয়ত, যাদের সাহায্য প্রয়োজন তাদের সাহায্য করা।
অপারেশন ওমেগার উদ্দেশ্য মুলত নিম্নরূপঃ
আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য বাংলাদেশে বসবাসকারী জনগণের কাছে পর্যাপ্ত খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া।
পাকিস্তান সরকারকে অপারেশন ওমেগার উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে এবং প্রয়োজনে বিশ্বের অন্যান্য দেশকেও করা হবে। তবে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য পাকিস্তানের অনুমতি গ্রহন করা হবেনা কারণ অপারেশন ওমেগা বিশ্বাস করে, বাংলাদেশের উপর পাকিস্তানের কোনো কতৃত্ব নেই।
আমরা সাধারণ মানুষ হিসাবে বিশ্বাস করি যে বিশ্বের মানবিক সাহায্যে বরাদ্দ অনুদান কখনই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়। বরং তার উপর অভাবগ্রস্থ ও সাহায্য প্রার্থী জনগণের অধিকারই সর্বাগ্রে।
অপারেশন ওমেগার পদ্ধতি নিম্নরুপঃ
ওমেগা টিম প্রথমে ভারতে সফর করবে এবং সেখানে অবস্থানরত ওমেগা টিমের অন্যান সদস্যদের সাথে মিলিত হবে। সেখান থেকে সম্পুর্ণ ওমেগা টিম বাংলাদেশের পথে পাড়ি দিবে।
ভারত থেকে ওষুধ এবং অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী কেনা হবে এবং দুটি যানবাহনে করে তা ভারত থেকে বাংলাদেশে নেওয়া হবে। ওমেগা ১ বাহনটি দিল্লীতে পৌঁছানোর পর যথাশীঘ্র সম্ভব কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হবে এবং সেখান থেকে সবচেয়ে উপযোগী উপায়ে ব্যবহৃত হবে।
দুটি যানবাহন একসাথতে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। কোনো কারণে প্রথম বাহনটি নিশ্চিল হয়ে গেলে দ্বিতীয় বাহনটি সাহায্য নিয়ে জনগোনের কাছে পৌঁছুবে এবং ভারতীর সীমান্তে যোগাযোগ রক্ষা করবে। লন্ডনের সাথে জরুরি যোগাযোগ রক্ষার জন্য একজন ওমেগা স্বেচ্ছাসেবক সর্বদা সীমান্তে এবং একজন কলকাতায় অবস্থান করবে।
অপারেশন ওমেগা বাংলাদেশে তথা বিশ্ব ইতিহাসে একটি নতুন দিগন্ত সূচনা করতে পারে যখন প্রতিটি দেশের সরকারকে অবশ্যই মানবিক দিক বিবেচনা করে সকল সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে, যখন কোনো দেশের সরকারই চিঠি দলিল আর রেজলুশ্যনের আড়ালে লুকিয়ে মানবিক দায়িত্ব থেকে এড়িয়ে যেতে পারবেনা।