রাম দা নিয়ে আব্দুস সালাম ও শেখ মুজিবের দুই গ্রুপ
চালাকচর সম্মেলনের কয়েক সপ্তাহ পর শেখ মুজিবর রহমান তার শহর গােপালগঞ্জে মুসলিম লীগের এক সম্মেলনের ব্যবস্থা করেন। সম্মেলনটিতে সভাপতিত্ব করেছিলেন হোসেন শহীদ সুহরাওয়ার্দী। আমি এবং সুহরাওয়ার্দী সভার নির্ধারিত দিনের পূর্বদিন সন্ধ্যায় গােপালগঞ্জ পৌছলাম। সুহারাওয়াদী সাহেব তার জনৈক বন্ধুর বাড়িতে উঠলেন। আমাকে থাকতে দেওয়া হলাে গােপালগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠে নদীর ধারে অবস্থিত ডাকবাংলার একটি কামরায়।
ডাকবাংলার ধারে নদীতে গ্রীনবােটে শামসুদ্দাহারকে দেখতে পেলাম। শামসুদ্দাহার ছিলেন কলকাতা পুলিশের অবসর প্রাপ্ত ডেপুটি কমিশনার এবং তিনি বামপন্থীদের দলে ছিলেন। সকালে নদীতে যখন আমি গোসল করছি দেখলাম দ্রুতগামী দেশীয় নৌকায় চড়ে রামদা নিয়ে কতকগুলি যুবক এগিয়ে আসছে। রামদা হলাে লম্বা হাতলওয়ালা, বাঁকা ধারালাে তলােয়ার। জিজ্ঞাসা করায় জানতে পারলাম, এরা গ্রীনবােটের বৃদ্ধ লােকটির দলের লােকজন। অর্থাৎ এরা শামসুদ্দাহার লােকজন। দুপুরের আহার শেষে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে এক বিরাট জনসমাবেশে উপস্থিত হলাম।
ফরিদপুর জেলায় আমি কখনও শান্তিপূর্ণভাবে জনসভায় বক্তৃতা দিতে পারিনি। ফরিদপুরের নেতারা যখন যেমন প্রয়ােজন পড়ত শক্তি ও বল প্রয়ােগে নিজেদের নিয়ােজিত রাখতেন। জনসভায় দেখতে পেলাম বেশ কিছুসংখ্যক লোক রামদা নিয়ে সজ্জিত রয়েছে। মঞ্চে চারটি চেয়ার রাখা ছিলাে। একটি সুহরাওয়ার্দীর জন্যে, অন্য তিনটি আমাদের জন্যে। সুহরাওয়ার্দীর ডানপাশে শামসুদ্দাহার বসেছিলেন। মঞ্চের কাছে সশস্ত্র পুলিশরাও উপস্থিত ছিলাে।
মঞ্চের সম্মুখভাগে দুই সারি বেঞ্চ রাখা ছিলাে। ডানপাশে বসেছিলেন আবদুস সালাম খানের সমর্থক কিছু যুবক এবং বামপাশে ছিলেন শেখ মুজিবর রহমান তার বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে। প্রথমে দুই দলের মধ্যে শুরু হলাে, বচসার পরে তা পর্যবসিত হলাে রামদাসজ্জিত দু’দলের প্রচণ্ড ধস্তাধস্তিতে। শামসুদ্দাহার তার পকেট থেকে একটি টোটাভর্তি রিভলভার বের করলেন। সুহরাওয়ার্দী মঞ্চ থেকে নেমে সােজা জনতার ভিড়ের দিকে অগ্রসর হলেন। গণ্ডগােল থেমে গেলাে এবং লােকজন শান্তভাবে মাঠে উপবেশন করল। অতঃপর সম্মেলন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলাে। শেখ মুজিবর রহমান তার বাড়িতে আমাদের নিয়ে গেলেন এবং বিকেলে সেখানে চা-চক্রে আমাদের আপ্যায়িত করলেন।
Ref: আমার জীবন ও বিভাগপূর্ব বাংলাদেশের রাজনীতি, আবুল হাশিম, pp 83-84