মুসলিম লীগের জন্ম
১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর যেদিন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ভাগ হয় সেদিন ঢাকায় বঙ্গভঙ্গের সমর্থনে একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। নবাব সলিমুল্লাহর সভাপতিত্বে ঢাকার নর্থব্রুকক হলে আয়োজিত এই সভায় শহরের মুসলমান এবং ইংরেজ নাগরিকরা উপস্থিত ছিলেন।
আর এই সভাতেই বাংলাদেশের মুসলমানদের প্রথম রাজনৈতিক সংগঠন মোহামেডান প্রাদেশিক ইউনিয়নের জন্ম হয়। শায়েস্তাবাদের নবাব মীর মোয়াজ্জেম এতে সভাপতি এবং নবাব মোহাম্মদ ইউসুফ খান বাহাদুর এর সম্পাদক নির্বাচিত হন। নবাব সলিমউল্লাহ দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক মনোনীত হন।
নবাব সলিমউল্লাহ আলিগড়ের স্যার ষৈয়দ আহমদের ধাঁচে মুসলমানদের জন্যে একটা আলাদা শিক্ষা সম্মেলনের আযোজন করেন। ১৯০৬ সালের ১৪ ও ১৫ এপ্রিল ঢাকার শাহবাগে পূর্ববাংলা ও আসাম প্রদেশের প্রথম মোহামেডান শিক্ষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। নতুন লে, গভর্নর স্যার ব্যাসফিল্ড ফুলারের সাথে ঢাকার নবাবদের একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তিনি নবাবের এইসব পরিকল্পনায় সার্বিক সহায়তা প্রদান করতে থাকেন। সম্ভবত এই ইংরেজ প্রশাসকের মাধ্যমেই ব্রিটিশরাজ ভারতের হিন্দুমুসলমানদের দুটি ধর্মীয়জাতে বিভক্ত করে আরো কিছুদিন ক্ষমতায় থাকার সার্থক প্রচেষ্টা চালায়।
তবে মুসলমানদের আলাদা রাজনৈতিক ধারা গড়ে তোলার সর্বভারতীয় প্রচেষ্টাও এরই মধ্যে জোরদার হচ্ছিল। ১৯০১ সালে পাইওনিয়ার’ পত্রিকায় নবাব ফতেহ জং মুসলমান এবং কংগ্রেস’ শীর্ষক প্রবন্ধ লিখে নতুন ধারার আওয়াজ তোলেন। এরপর ১৯০৬ সালের পয়লা অক্টোবর আগা খানের নেতৃত্বে ৩৫ জন মুসলমান রাজনীতিক লর্ড
[২৮ গৌতম চট্টোপাধ্যায় : স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার ছাত্রসমাজ]
মিন্টোর কাছে মুসলমানদের জন্যে পৃথক নির্বাচন দাবি করে স্মারকলিপি প্রদান করেন। এরই আলোকে ১৯০৩ সালের ২৭, ২৮ এবং ২৯ ডিসেম্বর ঢাকার শাহবাগে আয়োজিত হয় নিখিল ভারত মোহামেডান শিক্ষা সম্মেলনের ২০তম অধিবেশন। নবাব সলিমুল্লাহর সাথে খান বাহাদুর নবাব আলী চৌধুরী এই অধিবেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সম্মেলনে সারা ভারত থেকে ১,৪২৩ জন প্রতিনিধি এবং ৫৩২ জন পর্যবেক্ষকসহ সর্বমোট ১,৯৫৫ জন মুসলমান-নেতা যোগদান করেন। বাংলাদেশ থেকে যোগদান করে ১৫৫ জন প্রতিনিধি ও ৫৫ জন পর্যবেক্ষক। | শিক্ষা সম্মেলনে যোগদানকারী মুসলমান-নেতারা ৩০ ডিসেম্বর আর একটি বিশেষ অধিবেশনে মিলিত হন। এই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন নবাব ভিকারুন মূলক। নবাব সলিমুল্লাহ সর্বভারতীয় মুসলমানদের জন্যে একটি আলাদা রাজনৈতিক দল “নিখিল ভারত মুসলিম কনফেডারেসি গঠনের প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবটি পরে সংশোধিত হয়ে ‘নিখিল ভারত মুসলিম লীগ’ নাম ধারণ করে।
মুসলিম লীগ গঠনের পর সম্মেলনে যে প্রস্তাব গৃহীত হয় তা থেকে বোঝা যায়, ইংরেজ শাসকরা এর পেছনে ছিল এবং ১৮৮৫ সালে যে কারণে জাতীয় কংগ্রেস গঠিত হয়েছিল সেই একই উদ্দেশ্যে মুসলিম লীগের জন্ম হয়। মুসলিম লীগের এই সম্মেলনে রাজনৈতিক প্রস্তাবেও উল্লিখিত হয় :
A. To increase the loyalty of the waian Musalmans to the British Government.২৯
এর পরের বছর ১৯০৭ সালে পূর্ববঙ্গে ব্রিটিশ গভর্নর স্যার ব্যাসফিল্ড ফুলারকে হত্যা করার একটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং এই সময়েই বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে ঢাকা যড়যন্ত্র মামলা শুরু হয়।
১৯০৮ সালে ‘সোনার বাংলা’ নামে একটি ইশতেহার প্রকাশ করায় ভূপেন্দ্রনাথ দত্তকে কারাদণ্ড দেওয়া হয় ।
১৯১৩ সালে আমেরিকা প্রবাসী উপমহাদেশের বিপ্লবীরা গদর পার্টি (বিদ্রোহী পার্টি) প্রতিষ্ঠা করে এবং অস্ত্র সংগ্রহ করে ভারতে পাঠানোর চেষ্টা করে ।
১৯১৪ সালে ৪ আগস্ট প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় এবং বাংলাদেশের তরুণ কবি কাজী নজরুল ইসলাম এতে অংশ নিতে ভারত ত্যাগ করেন।
প্রায় একই সময় ১৯১৫ সালে বাংলার তরুণ বিপ্লবী নেতা এম. এন. রায় বৃটিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অস্ত্র আনার জন্যে বিদেশ গমন করেন।
১৯১৬ সালে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের ঐতিহাসিক যৌথ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় এবং ভারতের স্বাধীনতার লক্ষ্যে আন্দোলনের কর্মসূচি ও ঐতিহাসিক লক্ষৌচুক্তি সাক্ষরিত হয়ে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।
[২৯ Al-Haj Md. Serajuddin, Nawab Salinullah (Dhaka : 1992) p. 28]
Source: বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস – ১৮৩০ থেকে ১৯৭১ ড মোহাম্মদ হান্নান, pp 32-33
Unicoded by Kazi Rajib
Photo: Khwaja Salimullah