You dont have javascript enabled! Please enable it! বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও ভারত সরকার | শশাঙ্ক ব্যানার্জী - সংগ্রামের নোটবুক

বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও ভারত সরকার 

১৯৭১ সালের শরতে বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীকে বাঙলাদেশকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অনুরােধ করেন।

সেটা ছিল ১৯৭১ সালের শরৎকাল। বন্ এবং প্যারিস সফর শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী তখন লন্ডনে। তাঁর লক্ষ্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে হুঁশিয়ার করে দেয়া, যা তিনি আগেই জার্মান চ্যান্সেলর ও ফরাসী প্রেসিডেন্টকে করেছেন যে, পশ্চিমা দেশগুলি পূর্ব পাকিস্তানের গণহত্যা রােধে যদি কোনাে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে ভারতের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ নেয়া ছাড়া ভারতের আর কোন উপায় থাকবে না। তার চিন্তা তখন পূর্ব পাকিস্তানের গণহত্যা থেকে পালিয়ে আসা ১ কোটিরও বেশি। রিফিউজি, যারা ভারতের ওপর এক বিশাল অর্থনৈতিক বােঝা। এই পরিস্থিতি যত দ্রুত সম্ভব বদলানাে খুব জরুরী ছিল।

বিচারপতি চৌধুরী তখন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ইউ এন কংগ্রেসের সিনেটর এবং রিপ্রেজেন্টেটিভদের মাঝে প্রচারনা চালাচ্ছেন এবং নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের মুখপাত্রদের সাথে, বিশেষ করে ইসলামিক রাষ্ট্রগুলির সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে বৈঠক করছেন। তিনি সবে লন্ডনে ফিরেছেন তখন। এটি ছিল নিছক কাকতালীয় বিষয় যে মিসেস গান্ধী ঠিক ঐ মুহূর্তেই লন্ডন ভ্রমণ করছিলেন। লন্ডনের ভারতীয় হাই কমিশনার আপা বি পন্থ এর কাছে ব্যক্তিগত অনুরােধের প্রেক্ষিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিচারপতি চৌধুরীর একটি বৈঠক স্থির করা হয়। বৈঠকটি হয় লন্ডনের একটি অভিজাত হােটেলে যেখানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী তার সফরকালীন সময়ে অবস্থান করছিলেন। বৈঠকটি গােপন রাখার প্রেক্ষিতে মিসেস গান্ধী বিচারপতি চৌধুরীর সাথে সাক্ষাতের সময় বেছে নিয়েছিলেন ভােররাতের ছােট্ট একটি সময়। আলােচনা সভার ২ টায় শুরু হয়ে পরবর্তী ৪৫ মিনিট স্থায়ী ছিলাে।

৮৬

আশ্চর্যের বিষয় হলাে বিচারপতি চৌধুরী যখন তাঁর সাক্ষাতের বিষয় এবং কারণ খুলে বললেন তখন সেটা মিসেস গান্ধীর জন্য কোন চমকের বিষয় ছিলাে না। তিনি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে বললেন যে ওয়াশিংটনে খুব। তাড়াহুড়াে করে ঠিক করা এক মিটিং-এ তিনি ইউ এস অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারী অফ স্টেট জোসেফ সিমকো’র সাথে তার বাসায় দেখা করেন। সিমকো’র। সাথে আরেকজন ভদ্রলােক ছিলেন যিনি তার পরিচয় দেননি। তিনি সম্ভবত সিআইএ প্রধান। সে ঘটনার চমকের বিষয়টি হল কিছু সাধারণ আলাপের পরই জোসেফ সিমকো বেশ গুরুত্বের সাথে তাঁকে বাঙলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন বন্ধ করার অনুরােধ জানান। তার বদলে বিচারপতি চৌধুরীকে অনেক বড় পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। সেটা হলাে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি হবার প্রস্তাব। বিচারপতি চৌধুরী বেশ ধাঁধায় পড়ে গিয়েছিলেন যে ইউ এস স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন মধ্যম সারির অফিসার পাকিস্তানের পক্ষে তাকে এই পরামর্শ দিচ্ছে। কিন্তু তখনকার সময় ছিল স্নায়ুযুদ্ধের সময়, বেপরােয়া। সমাধান খোঁজার সময়। এমন নিশ্চয়তার প্রয়ােজনীয়তা যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তানের মধ্যে দৃঢ় কৌশলগত সম্পর্কের প্রমাণ বহন করে যা তখন থেকে অনেককাল পেরিয়ে আজও টিকে আছে।

স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তার কাছ থেকে বিচারপতি চৌধুরী যা শুনেছিলেন তা যদি তিনি সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করে থাকেন তবে এ বিষয়টি পরিস্কার যে রাজনৈতিক পর্যায়ে পাকিস্তানের বিভক্তি বাঁচাতে ওয়াশিংটন তার শেষ চেষ্টা চালাচ্ছে।

বিচারপতি চৌধুরী বাধার মুখে দমে যাবার পাত্র ছিলেন না। তিনি স্থির রইলেন, নিজের অবস্থানে অনড় থেকে খুব দৃঢ়তার সাথে সেই প্রস্তাব। প্রত্যাখ্যান করলেন। তাঁর সৌজন্যবােধ লােপ পায়নি যখন তিনি ইউ এস অফিসিয়ালকে ধন্যবাদ জানালেন উচ্চ মর্যাদার সাথে তাকে গ্রহণ করার জন্য। তিনি ইউ এস অফিসিয়াল দুজনকেই একটি ক্যাটেগরিকাল বক্তব্য। দিলেন যে তিনি আসলে উচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ের সম্মান কিংবা আরাম খুঁজছেন না, বরং তিনি বাঙলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সংগ্রামে এক সাধারণ কর্মী মাত্র। তার দেশের স্বাধীনতার লক্ষ্য থেকে কোনকিছুই তাকে সরাতে পারবে না।
বিচারপতি চৌধুরী মিসেস গান্ধীকে বলেছিলেন যে ইউ এস স্টেট

৮৭

ডিপার্টমেন্টের অফিসিয়ালরা তাকে আরাে একটি বিষয়ে বলেছে যে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত পূর্ব পাকিস্তানের মতাে বিচ্ছিন্নমুখী ইসলামী রাষ্ট্র স্বাধীন হলেও তাঁর অবস্থা কঠিন করে তুলবে। বিচারপতি চৌধুরী তার আলােচনাকারীকে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে বাঙলাদেশের মানুষ যেখানে শক্তিশালী নিপীড়ক পাকিস্তানী সামরিক একনায়কতন্ত্রের মােকাবেলা করার মনােবল ও দৃঢ়তা রাখে সেখানে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভারতের সাথে তার কোন সমস্যা হবে না।

বাঙলাদেশের এই নেতা এডওয়ার্ড হিথ-এর শাসনামলের ব্রিটিশ ফরেন সেক্রেটারী স্যার আলেক ডগলাস হিউম-এর সাথে পূর্বে সংঘটিত এক গােপন মিটিং এর কথাও বলেছিলেন। পররাষ্ট্র দপ্তর তাকে এই মিটিং-এর বিষয়টি | গােপন রাখতে বলেছিলাে কারণ তখনও পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তানের অংশ যার সাথে যুক্তরাজ্যের দারুণ কূটনৈতিক সম্পর্ক। স্যার এলেক-এর যুক্তির ধারা তার সাথে ইউ এস এ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারী অফ স্টেট জোসেফ সিমকো’র বাদানুবাদের থেকে অন্য রকম কিছু ছিলাে না। ব্রিটিশ ফরেন সেক্রেটারি বিচারপতি চৌধুরীর সামনে একটি বিষয় তুলেছিলেন যে যদি বাঙলাদেশ ভবিষ্যতে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে তবে কি ভবিষ্যতে বাঙলাদেশের নেতারা একটি বিষয় নিয়ে ভেবেছেন যে প্রতিবেশী হিসেবে ভারত কেমন হবে যে তার হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বাংলাদেশের চারটি প্রান্তের তিনটি ঘিরে থাকবে? এসব প্রশ্নের উত্তরে বিচারপতি চৌধুরী ঠিক একই উত্তর দিয়েছিলেন যা তিনি পরবর্তীতে জোসেফ সিমকো’কে বলেছিলেন। পােড় খাওয়া রাজনীতিবিদ স্যার এলেক আলােচনায় একটি বিষয় বােঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে যদিও ব্যক্তিগতভাবে তিনি মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতি সহানুভূতিশীল কিন্তু তার অবস্থানের দিক থেকে তিনি পলিসির হাতে বাঁধা।

যদিও তাঁর কথায় আর যাই হােক এটা বােঝা যায়নি যে তিনি ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে কোন সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তবু মিসেস গান্ধীকে বলা তাঁর কথায় এ বিষয়টি স্পষ্ট যে বিচারপতি চৌধুরী স্যার আলেক ডগলাস হিউম-এর সাথে মিটিংটি খুব উৎসাহব্যঞ্জক হিসেবে নিয়েছিলেন এবং ব্রিটিশ সরকারের সহানুভূতি দেখে কৃতজ্ঞ বােধ করেছিলেন। যদিও বাঙলাদেশের মানুষের সংকটের মুহূর্তে তাঁর বাক্যচয়ন ছিলাে সাবধানী।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ব্রিটিশ সরকারের নেয়া অবস্থানের প্রশংসা

৮৮

করেছিলেন। তিনি বিচারপতি চৌধুরীর অপ্রযােজ্য অনুরােধও গ্রহণ করলেন যে যদি পরিস্থিতি অনুমতি দেয় তবে জোসেফ সিসকো প্রস্তাবিত প্রেসিডেন্ট | নিক্সন ও তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. হেনরি কিসিঞ্জার-এর সাথে কথা বলতে লন্ডন পরবর্তী সফরসূচী হিসেবে ওয়াশিংটন যাবেন।

ড. কিসিঞ্জার তার বইয়ে মিসেস গান্ধী ও রিচার্ড নিক্সনের সাক্ষাতের বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি এই মিটিংটিকে ‘ঝােড়াে’ বলে অভিহিত করেন। মিটিং এর বিষয়বস্তু ছিলা বাংলাদেশ প্রসঙ্গে, যার একপক্ষে ছিলেন ইউ এস প্রেসিডেন্ট ও তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

এসব ছাড়াও মিসেস গান্ধীর সাথে বিচারপতি চৌধুরীর সাক্ষাতের আসল উদ্দেশ্য ছিল তাকে জিজ্ঞেস করা যে বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবার কোন পরিকল্পনা তার আছে কি না। হাতে সময় থাকায় আর দেরী না করে তিনি ভারতের কূটনৈতিক স্বীকৃতি চাইছিলেন। তার বিশ্বাস ছিল একবার যদি এটি পাওয়া যায় তবে অন্যান্য দেশের স্বীকৃতি পাওয়া দ্রুততর হবে।

মিসেস গান্ধী বিচারপতি চৌধুরীকে জবাব দিলেন একটি সম্পূরক প্রশ্নে। তিনি জানতে চাইলেন, যখন বাঙলাদেশ স্বাধীন একটি রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে তখন যদি তিনি ক্ষমতার এমন পর্যায়ে থাকেন যেখানে নীতি নির্ধারণ করতে প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন তবে কি তিনি মিসেস গান্ধীকে ভবিষ্যৎ নীতি কাঠামাে বিষয়ে কিছু নিশ্চয়তা দিতে পারবেন? মিসেস গান্ধী বাঙলাদেশের মানুষের বিপ্লবী চেতনার খুব ভক্ত ছিলেন, যারা সামরিক দমন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। এই প্রশ্নের মাধ্যমে আসলে তিনি নতুন রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজের চিন্তার কথা প্রকাশ করলেন। এটি পড়তে হলাে রাজনৈতিক প্রত্যয়ন এর মতাে। মিসেস গান্ধী বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরীর কাছ থেকে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি চাইছিলেন যে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হবার পর গণতন্ত্রের আদর্শ, বহুজাগতিকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্রের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে; প্রশাসনিক ব্যবস্থা এমন হবে যার ভিত হবে বাঙালী জাতীয়তাবাদের ওপর; এটি এমন একটি রাষ্ট্র যে রাষ্ট্র হবে ধর্মীয় গােড়ামী ও অসহিষ্ণুতা পরিহার করবে, বৈদেশিক নীতিতে থাকবে জোট বহির্ভূর্ত, একজন বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হবে যে সার্বভৌম সমতার প্রেক্ষিতে

৮৯

পারস্পরিক লাভজনক সম্পর্ক বজায় রাখবে।

বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরীর জন্য বিষয়টি ছিল আনন্দময় চমক যে মিসেস গান্ধী বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের আগেই তার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে নিশ্চিত করলেন যে মুক্তিসংগ্রামের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বেশ কয়েকবার জনসম্মুখে নীতি নির্ধারণি বিষয়ে এই সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি অনুভব করলেন যে স্বাধীনতা পরবর্তী বাঙলাদেশে শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা আসলে মিসেস গান্ধীর উত্থাপিত বিষয়গুলি নিয়ে আর কোনাে দুশ্চিন্তা বা ভয়ের অবকাশ নেই। বিচারপতি চৌধুরী তার অন্য একটি দুশ্চিন্তা লুকিয়ে রাখতে পারছিলেন না যে বিচ্ছিন্নতা আন্দোলনের জন্য রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে শেখ মুজিবের শাস্তি হতে পারে। যদি বাঙলাদেশের জন্ম হয় তবে মুজিব ছাড়া সেটা কি একটি এতিম রাষ্ট্র হবে না? মিসেস গান্ধী যেভাবে বাংলাদেশের ভবিষ্যত রাষ্ট্রিক নীতির বিষয়ে নিশ্চয়তা চাইলেন তাতে তার মনে হলাে মিসেস গান্ধীর মনেও কি যেন একটা ভয় কাজ করছে। বিচারপতি চৌধুরীও তার জায়গায় সমান চাপের মধ্যে ছিলেন। সবকিছু মিলিয়ে মিসেস গান্ধীর চিন্তার বিষয়গুলিতে বিচারপতি চৌধুরী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

মিটিং এর শেষ প্রান্তে এসে বিচারপতি চৌধুরী মিসেস গান্ধীর সামনে বিনয়ের সাথে একটি প্রশ্ন তুললেন যে তিনি কি অবগত আছেন যে ধর্ম নিরপেক্ষ’ ও ‘সমাজতন্ত্র’ শব্দ দুটি প্রকৃতপক্ষে ভারতের সংবিধানে নেই! বুদ্ধিতে হার মানতে নারাজ মিসেস গান্ধী উত্তর দিলেন যে তিনি বিষয়টি জানেন এবং পরিস্থিতি অনুকূলে এলেই তিনি ভারতীয় পার্লামেন্টিয়ারি সিস্টেমের মধ্যে থেকেই এটি সংশােধনের চেষ্টা করবেন।

মিসেস গান্ধীর প্রায় ৫ বছর লেগেছিলাে ভারতীয় সংসদের নিম্ন কক্ষ, লােকসভায় ভারতীয় সংবিধানের ৪২ তম সংশােধনী হিসেবে ‘ধর্ম নিরপেক্ষ ও সমাজতন্ত্র’ শব্দ দুটি উপস্থাপন করতে। এই দুটি জটিল শব্দ কার্যকরী হয় ১৯৭৭ সাল থেকে। বিচারপতি চৌধুরীর সেই কথাটা হয়তাে ভারতীয় সংবিধানে ব্যক্তিগত সহায়তার মতােই বিবেচিত হবে। আমাকে যখন ইন্দিরা। গান্ধী এবং আবু সাঈদ চৌধুরীর মিটিং এর রেকর্ডস রাখার জন্য উপস্থিত থাকতে আমন্ত্রণ জানানাে হয়েছিলাে তখন আমি অতটা আঁচ করতে পারিনি যে এটি এমন একটি ঐতিহাসিক মিটিং হবে।

***

৯০

১৯৭২ সালের ১৮ মার্চ। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী তখন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট। সফররত ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সম্মানে বঙ্গভবনে আয়ােজিত এক নৈশভােজে তিনি ঘােষণা করেন- “আমাদের মাঝে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রত্যাবর্তন সব ধরনের দুশ্চিন্তা ও দুঃস্বপ্নের অবসান করেছে। আমরা এখন আরেক সংগ্রামের মাঝে। এই সংগ্রাম বঙ্গবন্ধু কর্তৃক পাওয়া গণতন্ত্রের আদর্শ, সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা ও বাঙালী জাতীয়তাবাদের আসল অর্থ বােঝার সংগ্রাম। তার শক্তিশালী ও যােগ্য নেতৃত্বে এগুলি দিয়েই আমরা আমাদের নতুন রাষ্ট্রের ভিত গড়বাে।”

রেফারেন্স – ভারত, মুজিবুর রহমান, বাঙলাদেশের স্বাধীনতা ও পাকিস্তান – শশাঙ্ক ব্যানার্জী