You dont have javascript enabled! Please enable it! মুসলিম ছাত্রলীগের দ্বন্দ্ব - সংগ্রামের নোটবুক

মুসলিম ছাত্রলীগের দ্বন্দ্ব

১৯৪১-৪৩ সালের মধ্যে মুসলিম ছাত্রলীগের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে যায়। দ্বন্দ্বটা ছিল জমিদার নবাবরা মুসলিম লিগের নেতৃত্বে আজীবন থাকবেন, না উঠতি মধ্যবিত্তদের স্থান ছেড়ে দেবেন। মুজিব যেটাকে আত্মজীবনীতে ‘অফিসিয়াল মুসলিম লীগ’ বলেছেন। অর্থাৎ খাজা নাজিমুদ্দীনের নেতৃত্বাধীন যে মুসলিম লিগ ছিল তাঁর প্রধান ছিলেন নাজিমুদ্দীন ও ছাত্রলীগের ওয়াসেক। অন্যদিকে সােহরাওয়ার্দী ও তাঁর নেতৃত্বে ছাত্রলীগে আনােয়ার হােসেন, চট্টগ্রামের ফজলুল কাদের চৌধুরী। মুজিব ছিলেন শেষােক্ত দলে। ১৯৪৩ সালে খাজাদের প্রার্থীকে পরাজিত করে আবুল হাশিম সাধারণ সম্পাদক হন। এর আগে সােহরাওয়ার্দীই ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। আবুল হাশিমও তাঁর আত্মজীবনীতে কলকাতা কেন্দ্রের ছাত্র নেতাদের মধ্যে শেখ মুজিবের নাম উল্লেখ করেছেন।

আবুল হাশিমের মতে, মুসলিম ছাত্রদের দুটি কেন্দ্র ছিল, কলকাতা ও ঢাকা। কলকাতা কেন্দ্রের নেতারা ছিলেন বরিশালের নুরুদ্দীন আহমেদ, সালেহ আহমেদ, আবদুর রহমান, খুলনার মােহাম্মদ ইকরামুল হক ও শেখ আবদুল আজিজ, যশােরের আবদুল হাই, মােশাররফ হােসেন খান, রাজশাহীর আবুল হাসনাত [আবু হেনা] মােহাম্মদ কামরুজ্জামান, মােহাম্মদ আতাউর রহমান, মুজাম্মিল হক, মােহাম্মদ মাহবুবুল হক, আবদুর রশীদ খান, ফরিদপুরের শেখ মুজিবুর রহমান, বগুড়ার বিএম ইলিয়াস ও শাহ আবদুল বারী, রংপুরের আবুল হােসেন ও এম মােহসিন, পাবনার আবদুর রফিক চৌধুরী, দিনাজপুরের দবিরুল ইসলাম, চট্টগ্রামের আনােয়ার, শাহাবুদ্দীন ও জহিরউদ্দীন।

ঢাকায় ছিলেন টাঙ্গাইলের শামছুল হক ও কামরুদ্দীন আহমেদ, কাজী মােহাম্মদ বশীর, ইয়ার মােহাম্মদ, শামসুদ্দীন আহমদ, মােহম্মদ শওকত আলী, রাজা মিয়া, আলমাস আলী, আওয়াল ও তাজউদ্দীন আহমদ, কুমিল্লার মােশতাক আহমেদ ও অলি আহাদ, নােয়াখালীর মােহাম্মদ তােয়াহা ও নাজমুল করিম। [আবুল হাশিম, পৃ. ২৮৮]

এ নামগুলি উদ্ধৃত করলাম একটি কারণে। পরবর্তীকালে দেখব, এদের অধিকাংশ প্রথমে ভাসানী ও সােহরাওয়ার্দী ও পরে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী ও কারাগারের রােজনামচায় এ নামগুলি ঘুরে ফিরে এসেছে। অর্থাৎ, এরা ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করেছেন। এখনকার মতাে বিভিন্ন পেশা থেকে অর্থ বা সম্পর্কের কারণে রাজনীতিতে আসেননি, বিশ্বাস বা আদর্শ থেকে এসেছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে হয়ত আদর্শ বদল করেছেন।

ছাত্র রাজনীতির দ্বন্দ্বের কারণ একটিই। মধ্যবিত্তের উত্থান। রাজনীতি তারা তাদের করায়ত্তে আনতে চাচ্ছিলেন। ক্ষমতায় ছিলেন নবাব, জমিদার প্রভৃতি। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, সােহরাওয়ার্দী যখন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তখন থেকেই এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত।

Ref: বঙ্গবন্ধুর জীবন ছাত্র রাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতি ১৯২০-১৯৪৯, মুনতাসীর মামুন, pp 28-29