You dont have javascript enabled! Please enable it! ইত্তেফাক প্রতিষ্ঠা ১৯৪৯-১৯৫৪ - সংগ্রামের নোটবুক

ইত্তেফাক প্রতিষ্ঠা ১৯৪৯-১৯৫৪

ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজাদ, সংবাদ, দি মর্নিং নিউজ, করাচি থেক প্রকাশিত দি ডন প্রভৃতি পত্রিকা মুসলিম সরকারপন্থী ছিল । বিরােধী দলের কোনো পত্রিকা ছিল না। আওয়ামী মুসলিম লীগ একটি পত্রিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯৪৯ সালের জুলাই মাসে ঢাকা বার লাইবেরীতে এক সভায় মওলানা ভাসানী একটি পত্রিকা প্রকাশের প্রস্তাব করলে চার শ’ টাকা চাদা পাওয়া যায়। ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জেলা থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চাদা সংগ্রহ করে। আতাউর রহমান খান, শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ পত্রিকা প্রকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নামে পত্রিকার ডিক্লারেশন নেয়া হয়। পত্রিকার সম্পাদক হলেন খন্দকার আবদুর হামিদ এবং ম্যানেজার হলেন নারায়ণগঞ্জের শামসুদ্দিন আহমদ। কোনাে প্রেস পত্রিকা ছাপাতে রাজী হয়নি। পরিশেষে প্যারামাউন্ট প্রেস ছাপাতে রাজি হয়। ইয়ার মুহাম্মদ খানকে ইত্তেফাকের প্রকাশক ও মুদ্রাকর এবং মওলানা ভাসানীকে প্রতিষ্ঠাতা করা হয়। কলকাতা থেকে এ সময় দৈনিক ইত্তেহাদের সুপারিনটেন্ডেন্ট তফাজ্জল হােসেন মানিক মিয়া হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর নির্দেশে ঢাকা চলে আসেন। তার পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণে তফাজ্জল হােসেন মানিক মিয়াকে সাপ্তাহিক ইত্তেফাকের সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৪৯ সালের ১৫ আগস্ট আসগর হােসেন এমএলএ-এর ঢাকার ৭৭ নম্বর মালিটোলার বাসভবনে অবস্থিত ছাপাখানা থেকে সাপ্তাহিক ইত্তেফাক প্রকাশিত হয়। পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সম্পাদক তফাজ্জল হােসেন মানিক মিয়া এবং প্রকাশক ইয়ার মুহাম্মদ খান। মুসলিম লীগ সরকারের ভয়ে পত্রিকা কোনাে প্রেস ছাপাতে রাজি হয় না। কিছুকাল পরে ঢাকার কলতাবাজার করিম প্রিন্টিং থেকে ছাপা হয়। পরবর্তীতে সাপ্তাহিক ইত্তেফাক ঢাকার ৯ নম্বর হাটখােলা রােডে অবস্থিত প্যারামাউন্ট প্রেস থেকে মুদ্রিত ও ৯৪ নম্বর নবাবপুর আওয়ামী লীগ অফিস থেকে প্রকাশিত হতে থাকে। হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী নিজ অর্থে ইত্তেফাক পত্রিকার জন্য প্রেস ও টিকাটুলির বর্তমান ইত্তেফাক ভবনের জমি ক্রয় করেন। পত্রিকার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায় এবং আওয়ামী লীগের মুখপত্র হিসেবে সাপ্তাহিক ইত্তেফাককে দৈনিক করার সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৫৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর সাপ্তাহিক ইত্তেফাক দৈনিক ইত্তেফাক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পত্রিকার প্রিন্টার্স এবং পাবলিশার্স ছিলেন ইয়ার মুহাম্মদ খান এবং প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মওলানা ভাসানীর নাম ছাপা হত। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের পর মওলানা ভাসানীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হতে থাকে। তফাজ্জল হােসেন মানিক মিয়া এবং এ কে ফজলুল হকের ভাগিনা আজিজুল হক নান্না মিয়ার সহায়তায় দৈনিক ইত্তেফাকের  মালিকানা পরিবর্তন করে নিজে ১৯৫৪ সালের ২০ মার্চ পত্রিকার প্রিন্টার্স ও পাবলিশার্স হন। তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা অলি আহাদ বলেন পূর্ব পাকিস্তানের  মুখ্যমন্ত্রী এ কে ফজলুল হকের নির্দেশে সিলেট নিবাসী  ঢাকা জেলা ম্যাজিস্টেট ইয়াহিয়া চৌধুরী গভীর রাতে ১৯৫৪ সালের ১৪ মে ইয়ার মুহাম্মদ খানের স্থলে তফাজ্জল হােসেন মানিক মিয়াকে দৈনিক ইত্তেফাকের প্রিন্টার্স ও পাবলিশার্স করেন।

ইয়ার মুহাম্মদ খান ও মওলানা ভাসানীর অজ্ঞাতে দৈনিক ইত্তেফাকের প্রিন্টার্স ও পাবলিশার্সের নাম বাতিল করে তফাজ্জল হােসেনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা  হয়। মওলানা ভাসানীর নাম পৃষ্ঠপােষক হিসেবে ছাপা হয়। আওয়ামী লীগের বৃহত্তর স্বার্থে ইয়ার মুহাম্মদ খান ও ভাসানী পত্রিকার মালিকানা নিয়ে মামলা করেননি। তবে দলের মধ্যে এ নিয়ে তীব্র সমলােচনা চলে। তফাজ্জল হােসেন মানিক মিয়া বরিশালের অধিবাসী, তিনি সৈয়দ আজিজুল হক নান্না মিয়া ও এ কে ফলুল হককে দিয়ে মালিকানা পরিবর্তন করেন। উল্লেখ্য, এ কে ফজলুল হক তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এ কাজ করেছেন তার ভাগিনা সৈয়দ আজিজুল হক নান্না মিয়ার চাপে পত্রিকার প্রকৃত মালিক আওয়ামী লীগ। খুব সম্ভব হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী মালিকানা পরিবর্তনে তার সম্মতি ছিল। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ পত্রিকার মালিকানা নিয়ে বিতর্কে যায়নি।

Reference: প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, pp 127-128