২১ মার্চ ১৯৭১ঃ আজকের এদিনে পশ্চিম পাকিস্তান
ভুট্টো সদলবলে ঢাকায়
জুলফিকার আলী ভুট্টো বিকেলে ১২ জন সহযোগী সহ করাচী থেকে ঢাকায় আসেন। ভুট্টোর আগমন উপলক্ষে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে সেনা মোতায়েন করা হয়। আধুনিক অস্র শস্র সজ্জিত সিভিল পোষাকে তার জন্য নিরাপত্তারক্ষী দেয়া হয়। সাংবাদিকদের বিমানবন্দরে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়। ভুট্টোকে বিমানবন্দর থেকে হোটেল ইন্টার–কন্টিনেন্টালে নিয়ে আসার সময় রাস্তার দু’পাশের পথচারীরা ভুট্টো বিরোধী স্লোগান দেয়। এ সময়ে তার বহরকে পাহারা দেয় দুটি সেনা জীপ এবং সেনাবাহী দুটি ট্রাক ও পুলিশ বাহী দুটি ট্রাক। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল এর সামনেও তুমুল বিক্ষোভ হয়। তবে বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাতে অনেক পশ্চিম পাকিস্তানী উপস্থিত ছিল। ভুট্টোর উপস্থিতিতে হোটেল কর্মচারীরা বাংলাদেশ মানচিত্র ব্যাজ পড়ে কাজ করছেন। হোটেলে পৌঁছে তিনি সহযোগীদের সাথে একটি বৈঠক করেন। ইয়াহিয়ার সাথে দেখা করার আগে পিপিআই সাংবাদিক তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি দূর থেকেই বলেন সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।
সন্ধ্যায় ভুট্টো কড়া সেনা প্রহরায় প্রেসিডেন্ট ভবনে যান। সেখানে ভুট্টো দু’ঘন্টারও বেশী সময় ইয়াহিয়ার সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হন।
হোটেলে ফিরেই ভুট্টো
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক শেষে হোটেলে ফিরেই ভুট্টো তাঁর উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। এর আগে হোটেল লাউঞ্জে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের ভুট্টো বলেন, এ মুহূর্তে আমি এটুকু বলতে পারি যে, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। ভুট্টো সাংবাদিকদের আর কোন সময় না দিয়ে সরাসরি লিফটে চড়েন। সাংবাদিকরা তাঁর সহগামী হতে চাইলে ভুট্টোর ব্যাক্তিগত প্রহরীরা অস্ত্র উঁচিয়ে বাধা দেয়।
দৌলতানার সন্তোষ প্রকাশ
কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান মিয়া মমতাজ মোহাম্মদ খান দৌলতানা বলেছেন বর্তমান সঙ্কট সমাধানে যারা সাহায্য করতে পারেন তারা সকলেই এক জায়গায় মিলিত হয়েছেন এবং আলাপ আলোচনা চালাচ্ছেন। এতে তিনি সকল নেতৃবৃন্দের প্রতি তার সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন বর্তমান অখণ্ডতা এবং সংহতি বজায় রেখেই সমস্যা সমাধানের তিনি আশাবাদী।
জুলফিকার আলী ভুট্টোও ঢাকা এসেছেন জেনে তিনি সমভাবেই খুশী। ২৫ মার্চ অধিবেশন বসবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন এখন আলোচনা চলছে মুজিবের ৪ দফার উপর। তিনি বলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বলেছেন আলোচনার অগ্রগতি হয়েছে আমরা সেখানে আমরাও স্বাভাবিক ভাবে আশা করতে পারি।
ক্ষমতা হস্তান্তর প্রসঙ্গে ব্রোহী
পাকিস্তানের প্রখ্যাত আইনজীবী একে ব্রোহী আজ তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন সামরিক আইন প্রত্যাহার শাসনতন্ত্র প্রনয়নের পূর্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে আইনগত কোন সমস্যা নেই। তিনি আজ আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবের সাথে সাক্ষাৎ করে একই মতামত লিখিত আকারে শেখ মুজিবকে দিয়েছেন। তিনি বলেন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে ইয়াহিয়া খান সীমাহীন ক্ষমতার অধিকারী। কাজেই সামরিক আইন প্রত্যাহার বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় আইন প্রনয়ন তিনি করতে পারেন। ইয়াহিয়া যদি সামরিক আইন প্রত্যাহারের আগেই জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন প্রকারন্তরে এর পিছনে জনগনের অনুমোদন থাকবে। তা ছাড়া এই সরকারকে পরে জাতীয় পরিষদ অনুমোদন করিয়ে নিতে পারবেন। আজই তিনি করাচীর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন।
ঢাকায় অবস্থানরত পশ্চিম পাকিস্তানী ৫ নেতা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। তারা হলেন ওয়ালী খান, গাউস বক্স বেজেনজো, দৌলতানা। শওকত হায়াত খান, মুফতি মাহমুদ।