স্বদেশী আন্দোলন ও প্রথম ছাত্র গণসংগঠন
১৯০৫ সালের ৭ আগস্ট থেকে বিদেশী পণ্য বর্জনের স্বদেশী আন্দোলন দানা বেঁধে উঠতে থাকে। সেদিনের ‘সঞ্জীবনী’ ‘বেঙ্গলী’ ইত্যাদি পত্রিকা থেকে জানা যায়—সেদিন ছাত্রনেতা বিপিনচন্দ্র পাল, অশ্বিনীকুমার দত্ত, লিয়াকত হোসেন, আবদুর রসুল প্রমুখের নেতৃত্বে ছাত্রসমাজ কলকাতার বিভিন্ন সড়কে ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড়, মাথায় তুলে নেরে ভাই’ গান গেয়ে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। সে সময় ইংরেজ সরকারের শিক্ষা সচিব ছিলেন কার্লাইল। তিনি ঘোষণা করেন, স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দিলে সরকারি স্কুল-কলেজ থেকে ছাত্রদের বহিষ্কার করা হবে। এর প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে ‘এন্টি সার্কুলার সোসাইটি’ নামে এক নতুন সংগ্রামী ছাত্র সংগঠন গড়ে ওঠে। ইতিহাসকাররা বলেন, প্রকৃতপক্ষে ‘এন্টি সার্কুলার সোসাইটি” এদেশের প্রথম গণ-ছাত্র সংগঠন। অর্থাৎ বিপ্লবাত্মক চেতনায় সমৃদ্ধ ছিল এই সংগঠন। ১৯০৫ সালের ৪ নভেম্বর কলকাতার কলেজ স্কোয়ারে প্রায় তিন হাজারেরও বেশি ছাত্রের সমাবেশে ‘এন্টি সার্কুলার সোসাইটি’ গঠিত হয়।
এই সময় উত্তরবাংলায় বিশেষ করে রংপুরে স্বদেশী আন্দোলন বেশ প্রকট হয়ে দেখা দেয়। এক বিরাট অংশ ছাত্রকে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এন্টি সার্কুলার : নেতৃবৃন্দ রংপুরে যান এবং সেখানে প্রথম জাতীয় বিদ্যালয় গড়ে তোলেন। তবে আন্দোলনের ব্যাপকতা ও সার্থকতা সবচেয়ে বেশি করে লাভ করে বরিশালে। এই সময় নোয়াখালীর স্কুল-কলেজ থেকে বহিষ্কৃত আন্দোলনকারীরা কলকাতায় সমবেত হলে সেখানেও আরেকটি জাতীয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
এন্টি সার্কুলার সোসাইটির জনপ্রিয়তা সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ার আরেকটি বড় কারণ ছিল এর অসাম্প্রদায়িক, চরিত্র। ১৯০৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যশোরে ঈদের সময়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধবার উপক্রম হলে সোসাইটির কর্মীরা তা প্রতিহত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই সময়ে বার্ষিক প্রতিবেদন দিতে গিয়ে সম্পাদক শচীন্দ্রপ্রসাদ বলেনঃ
শিবাজী উৎসবের মতো ব্যাপারে কোনও মতেই সোসাইটির জড়িয়ে পড়া উচিত নয়, কেননা তাতে মুসলমানদের মনে আঘাত লাগতে পারে।২৮
১৯০৬ সালে এ ধরনের অসাম্প্রদায়িক ছাত্র সংগঠনের কার্যকলাপ সত্যি বিস্ময়কর। ১৯০৫ সাল থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত সারাদেশে ছাত্রদের ওপর নির্মম অত্যাচার ও নিপীড়ন চলতে থাকে। ১৯০৬ সালের ১৪ ও ১৫ এপ্রিল বরিশালে ব্যারিস্টার আবদুর রসুলের সভাপতিত্বে এক রাজনৈতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে পুলিশ উসকানি দিলে এক বিরাট ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ হয়। সারা বাংলাদেশে এই সময় প্রায় দশ হাজারের বেশি ছাত্র বিভিন্নভাবে নানারকম শাস্তি পেয়েছিল ।
:::::::::::
Unicoded by Kazi rajib
:::::::::::
Ref: বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস – ১৮৩০ থেকে ১৯৭১, ড মোহাম্মদ হান্নান
ছবি – বিপিনচন্দ্র পাল