মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে চিফ অব স্টাফ হতে পারতেন এ কে খন্দকার
তেলিয়াপাড়ার সভায় কর্নেল ওসমানীকে প্রধান সেনাপতি করার সিদ্ধান্ত জুলাইয়ের সম্মেলনেও বহাল রাখা হয়। সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মােহাম্মদ আবদুর রবকে চিফ অব স্টাফ বা প্রধান সেনাপতির মুখ্য সহকারী নির্বাচন করা হয়। চিফ অব স্টাফের কাজ হচ্ছে সেনাবাহিনীর অভিযান, প্রশিক্ষণ, প্রশাসনসহ সব বিষয়ে প্রধান সেনাপতিকে পরামর্শ দেওয়া এবং প্রধান সেনাপতি গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা। জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকেই কর্নেল ওসমানীর নির্দেশে আমি মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলাম। জুলাই মাসের সম্মেলনে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমােদিত হয়। একজন চাকুরিরত জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে একজন অবসরপ্রাপ্ত কনিষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাকে এভাবে চিফ অব স্টাফ নিয়ােগ দেওয়াটা সঠিক ছিল বলে আমি মনে করি না। এটি সামরিক বাহিনীর প্রতিষ্ঠিত চর্চার ব্যতিক্রম ছিল। আমি কর্নেল ওসমানীকে বলেছিলাম, ‘স্যার, পদমর্যাদায় লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রব আমার কনিষ্ঠ, তবু তাকে স্যালুট বা সম্মান প্রদর্শনে আমার কোনাে সমস্যা নেই। আমি সবকিছু ফেলে পদ ও পদবির জন্য এখানে আসিনি। আমি দেশের জন্য যুদ্ধ করতে এসেছি।’ কলকাতার থিয়েটার রােডে আমি তাজউদ্দীন সাহেবের পাশের রুমে থাকতাম। বারান্দায় দেখলে অনেক সময় আমাকে তিনি ডেকে নিয়ে রুমে বসাতেন; যুদ্ধের নানা বিষয় ও সেনাবাহিনীর বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমার সঙ্গে আলােচনা করতেন। তাজউদ্দীন সাহেব নিজেই একদিন আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বলেছিলেন, ‘খন্দকার সাহেব, আমি আপনাকে চিফ অব আর্মি স্টাফ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি তা করতে পারিনি, কারণ আমাকে বলা হয় যে এ বিষয়ে সেনাসদস্যদের কয়েকজন বিরােধিতা করতে পারে।’
Reference:
১৯৭১ ভেতরে বাইরে, এ কে খন্দকার, p 117