স্বীকৃতির আগে পাকিস্তানের সাথে কোন আলােচনা নয়- বঙ্গবন্ধু, পাবনা।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ এখানে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘােষণা করেন যে, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানের সাথে কোনাে আলােচনা হবে না। আজ বিকেলে এখানকার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় ভাষণদানকালে বঙ্গবন্ধু জানান যে, পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে কিনা, তাই নিয়েই নাকি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জনাব ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সাথে আলাপ করার প্রস্তাব রেখেছেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতাকে স্বীকার করে না নেওয়া পর্যন্ত। ভুট্টো সাহেবের সাথে কোনাে কথা নয়। বিশ্বের দেশে দেশে স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় কেতন আজ উড়ছে। অপরদিকে বিশ্বের দরবারে পাকিস্তান কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। যে প্রভুর কথায় ভুট্টো সাহেব নাচছেন সেই প্রভুই বাংলাদেশের বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিয়েছেন। কাজেই আলােচনা হােক না হােক, পাকিস্তান এখন বাধ্য হয়েই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে। প্রধানমন্ত্রী আরাে ঘােষণা করেন, বাংলাদেশের মাটিতেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই। বাংলাদেশে মানবতার বিরুদ্ধে যারা ইতিহাসের জঘন্যতম অপরাধ করেছে, বাংলার মাটিতে তাদের বিচার অবশ্যই হবে। আমার ওপর যতই চাপ সৃষ্টি হােক না কেন, এ বিচার হবেই। বিশ্বের সভ্য দেশগুলােকে উদ্দেশ্য করে বঙ্গবন্ধু বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আপনারা ন্যুরেমবার্গের বিচার করেছিলেন। নূরেমবার্গে যে নাৎসীদের বিচার করা হয়েছিল তার চেয়েও হাজার গুণ বেশি অপরাধে অপরাধী এই পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীরা। কাজেই এই পশুদের সম্পর্কে বাংলাদেশ যে ভূমিকা নিয়েছে তার প্রতি আপনারা সমর্থন দেন। বিচার অপরিহার্য। তবে বিনা বিচারে কাউকে শাস্তি দেয়া হবে না। বঙ্গবন্ধু বলেন, পাকিস্তানে আটক বাঙালিদেরকেও অবশ্যই ফিরিয়ে দিতে হবে। ভুট্টো সাহেবের জেনে রাখা উচিত শেখ মুজিব কখনাে বাজে কথা বলে না।
সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে শতর্ক থাকার আহ্বান : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ এখানে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে নসাৎ করার জন্য সক্রিয় রয়েছে। আপনারা শতর্ক থাকুন। সাম্রাজ্যবাদ নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য আমি হয়ত আপনাদের ড্যাক দিতে পারি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কতিপয় দুষ্কৃতিকারী এখানে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে চলেছে। এই সশস্ত্র দুষ্কৃতকারীরা ডাকাতি আর লুটতরাজে লিপ্ত রয়েছে। এদের ধরে আপনারা পুলিশের হাতে সােপর্দ করুন। প্রয়ােজন হলে পুলিশ অস্ত্র দিয়েই এদের মোকাবিলা করবে। কিন্তু তবুও সাধারণ মানুষকে আর দুর্ভোগ পােহাতে দেয়া হবে না। যুদ্ধোত্তর সংকটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করে এই সংকট এড়ানো সম্ভব। মিল-কারখানা গুলােতে উৎপাদন বাড়ানাের উদ্দেশ্যে কঠোর পরিশ্রম করার জন্য তিনি শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় যােগাযােগ মন্ত্রী মনসুর আলীও ভাষণ।
এর আগে বঙ্গবন্ধু এখানে এসে পৌছালে তাকে বিপুল সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। আগামিকাল তিনি রংপুর যাচ্ছেন। সেখানেও তাকে বিপুল সম্বর্ধনা জানানাের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বিকেল সাড়ে তিনটায় তিনি রংপুর কালেক্টরেট ময়দানে আয়ােজিত এক জনসভায় ভাষণ দেবেন। ৩৪
Reference:
১০ মে ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, p 344-345
(File photo)