বিদেশীরাও প্রদেশ ত্যাগ করছেন
গতকাল পশ্চিম জার্মানির বিমানবাহিনীর বোয়িং ৭০৭ যোগে পশ্চিম জার্মানির ১২৮ জন নাগরিক প্রদেশ ছেড়ে ব্যাংকক পৌঁছেছে। আজও বিমানটি ফিরে এসে ঢাকা থেকে আরও নাগরিক নিয়ে ব্যাংকক যাবে। ডাচ নাগরিকদের নেয়ার জন্য কে এল এম এর একটি বিশেষ বিমান এবং ব্রিটিশ নাগরিকদের নেয়ার জন্য বোয়াক এর বিশেষ বিমান ঢাকা এসে পৌঁছেছে। ব্রিটেনের ঢাকাস্থ উপ হাই কমিশনার ফ্রাঙ্ক সার্জেন্ট এর মাধ্যমে ব্রিটেন তাদের নাগরিকদের যাদের ঢাকা অবস্থান জরুরী নয় তাদের ফেরত আসতে বলে দিয়েছে। নির্দেশটি বিবিসি সম্প্রচার করেছে। প্রদেশে ১০০০ ব্রিটিশ নাগরিক রয়েছেন এদের মধ্যে ৪০০ জন ঢাকায় বসবাস করেন। রয়টার জানায় প্রদেশের অস্থিরতায় এখনও কোন ব্রিটিশ নাগরিকের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
ঢাকা বেতার বন্ধ
রেসকোর্সের শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাসন সরাসরি সম্প্রচার না করায় জনগনের বিক্ষোভের মুখে বেতার কর্মচারীরা বেতারের সম্প্রচার কার্যক্রমে দায়িত্বপালন না করায় বিকেল তিনটা থেকে ঢাকা বেতারের প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যা ৭ টার দিকে চলন্ত গাড়ী থেকে বেতার ভবনের আঙ্গিনায় ২টি বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বেতার কতৃপক্ষ আগে ঘোষণা করেছিল তারা ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করবে কিন্তু অজ্ঞাত কারনে পরে তা আর করেনি। বেলা ২টা থেকে বেতারে দেশাত্মবোধক গান সম্প্রচার করা হচ্ছিল। অধিবেশন বন্ধের সময় নিয়ম মোতাবেক পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীতের যন্ত্রসঙ্গীত বাজানো হয়নি।
গভীর রাতে সামরিক কর্তৃপক্ষ ঢাকা বেতারে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পূর্ণ বিবরণ প্রচারের অনুমতি দিলে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দিয়ে ঢাকা বেতার কেন্দ্র পুনরায় চালু হয়।
স্বাধীকারের দাবীতে লন্ডনে বাঙ্গালীদের বিক্ষোভ
লন্ডনে পাকিস্তান হাই কমিশনের সামনে স্বাধীনতার দাবীতে ১০০০০ বাঙ্গালী এক বিক্ষোভ মিছিল করে। পুলিশ এ সময়ে হাই কমিশন ভবন ঘিরে রাখে। বিক্ষোভ কারীরা পিপলস পার্টি চেয়ারম্যান ভুট্টোর বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। তারা হাই কমিশনে একটি স্মারকলিপি প্রদান করে যাতে অবিলম্বে আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবী জানানো হয়। বিক্ষোভকারীদের সাথে কথা বলার জন্য হাই কমিশনার ভবন থেকে বের হয়ে আসলে বিক্ষোভকারীরা তার প্রতি ঢিল ছুড়ে। ঢিলে তিনি সামান্য আহত হন। পুলিশ পরে তাকে ভিতরে নিয়ে যান। এসময়ে পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের ধ্বস্তাধস্তি হলে কয়েকজন বিক্ষোভকারী আহত হন। পুলিশের কিছু হেলমেট খোয়া যায়। এর আগেও ২৮ তারিখে হাইকমিশনের সামনে অনুরূপ বিক্ষোভ মিছিল করে লন্ডন আওয়ামী লীগ।
ঢাকায় অবস্থানরত পশ্চিম পাকিস্তানীদের গনহারে ঢাকা ত্যাগ
যশোরে গত কয়েকদিনের আন্দোলনে ১২ জন কাবুলিওয়ালা নিহত হওয়ায় পশ্চিম পাকিস্তানীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করায় তারা গনহারে প্রদেশ ত্যাগ করছে। অনেকেই তাদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় করে দিয়ে প্রদেশ ত্যাগের জন্য ক্যান্টনমেন্ট এ ভিড় করছে। তেজগাঁও বিমানবন্দরে এরকম ভীড় এখন প্রতিনিয়ত দেখা যাচ্ছে। কারো হাতে টিকেট কারো হাতে বিশেষ স্লিপ। আবার পশ্চিম পাকিস্তান হতে বাঙ্গালীদের জন্য টিকেট নাই। অনেক বাঙ্গালী তাদের পরিবার টিকেটের অভাবে পরিবার দেশে ফেরত পাঠাতে পারছে না। বাঙ্গালীদের টিকেট না দেওয়ার একটি অলিখিত নির্দেশ জারীর কথা বলা হচ্ছে। এমনকি পিআইএর পদস্থ একজন অফিসারও তার পরিবারকে ঢাকা পাঠাতে পারছেন না। গতকালের ফ্লাইটে ১৩টি আসন খালি থাকলেও হাজী ব্যাতিত কোন বাঙ্গালী আসতে পারেনি।
শেখ মুজিবের দাবী ন্যায় সঙ্গত – ন্যাপ (ওয়ালী)
ন্যাপ ওয়ালী পূর্ব পাকিস্তান প্রধান অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ এক বিবৃতিতে বলেছেন শেখ মুজিবের দাবী সমূহ ন্যূনতম এবং ন্যায় সঙ্গত।
নতুন গভর্নর টিক্কা খানের ঢাকা উপস্থিতি
লেঃ জেনারেল ইয়াকুবের স্থলাভিষিক্ত নতুন গভর্নর টিক্কা খান বিকেলে ঢাকা এসেছেন। বিমান বন্দরে তাকে স্বাগত জানান বিদায়ী গভর্নর লেঃ জেনারেল ইয়াকুব খান সহ সিনিয়র আর্মি অফিসার বৃন্দ।
এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান – সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান
বঙ্গবন্ধু ভাষণের পর পরই ঢাকায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান সামরিক শাসন প্রত্যাহার এবং অনতিবিলম্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের দেশ–শাসন করার অধিকার আছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে তাঁর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তিনি বলেন আমি বুঝি না কেন সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে এ বিষয়ে জনমত গড়ে তুলবেন। গত কয়েকদিনে পশ্চিম পাকিস্তানের জনগনের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে জনমত দ্রুত মোড় নিয়েছে। তিনি বলেন সশস্র বাহিনীকে অবশ্যই ব্যারাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। শাসনতন্ত্র তৈরি হয়নি এ অজুহাতে সশস্র বাহিনী দেশের শাসন কার্য চালাবে তা হতে পারে না।
পশ্চিম পাকিস্তানের নেতা বুদ্ধিজীবীদের মুজিবের প্রতি সমর্থন
পশ্চিম পাকিস্তানের কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা, ছাত্র, সমাজসেবী, বুদ্ধিজীবীদের একাংশ শেখ মুজিবের প্রতি সমর্থন দিয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ট্রেড ইউনিয়ন নেতা মীর্জা ইব্রাহিম, সাইয়িদ মুইনুদ্দিন, কবি ও ন্যাপ (ওয়ালি) নেতা হাবিব জালিব, আমিন মোঘল, নাসিম শামিম মালিক, হাফিজ কোরেশী, ছাত্রনেতা মুজতবা হসাইন। তাদের উপস্থিতিতে লাহোরে এক সভায় তারা পূর্ব পাকিস্তানে নিহতদের জন্য ফাতেহা পাঠ করেন। সভায় আওয়ামী লীগ নেতা হামিদ সরফরাজ, এয়ার মার্শাল নুর খানও উপস্থিত ছিলেন। সভায় নুর খান বলেন তিনি বিশ্বাস করেন না শেখ মুজিব পাকিস্তান ভেঙ্গে ফেলবেন।