শ্লোগান, কবিতা ও সংগীত : মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত
গোলাম মুস্তাফা
বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রকৃত ও কার্যকরী উন্মেষ ঘটে ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের ৬ দফা ঘোষণা ও প্রচারের মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই ৬ দফার প্রবর্তক ও পথপ্রদর্শক হিসেবে সহজেই নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। অপর দিকে গোটা বাঙালি জাতি তাকে তাদের অবিসংবাদিত নেতা এবং প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করে। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর বুদ্ধিদীপ্ত ও দৃঢ় নেতৃত্ব পূর্ব পাকিস্তানের একক শাসনক্ষমতা তার তথা আওয়ামী লীগের হাতে এনে দেয়। পাকিস্তানি কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো কতৃত্বই তখন আর এখানে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি।
জাতীয়তাবাদের বুলন্দ আওয়াজে মুখরিত হয় গ্রাম-শহর, দেশপ্রেমে উজ্জিবীত হয় সব বর্গের মানুষ। শ্লোগান, কবিতা আর সমকালের যে আবহ তা পূর্বে কখনো আসেনি, ভবিষ্যতেও কখনো আসবে না, এটি নিশ্চিত। সে উদ্দীপ্ততা এবং সে জাগরণ আর তৈরি হবার নয়। অগ্নিঝরা সে দিনগুলি যাদের প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়নি তাদের বোধে সে আবেগময় ও ঐক্যের দৃশ্য আসা সম্ভব নয়। ঊনসত্তরের ২৫শে মার্চ (যেদিন জেনারেল ইয়াহিয়া খান সামরিক আইন প্রবর্তন করে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হন) থেকে একাত্তরের ২৫শে মার্চ পর্যন্ত দু’বছর সময়ের স্বাধীকার আন্দোলন রূপ নেয় স্বাধীনতায়- বিবর্তন ও বিল্পব মিশে যায় একই স্রোতে।
সাতচল্লিশের দেশ বিভাগের পর থেকেই বাঙালিদের আত্মপোলব্ধির সূচনা হয়। আন্দোলনে ও সংগ্রামে তীক্ষ্ণ হয়ে উঠে জাতীয়তাবাদের বিবর্তন, মূর্ত হয়ে ওঠে বাঙালির প্রকৃত পরিচয়। শ্লোগানে, কবিতায় ও সংগীতে বিমূর্ত হয়ে ওঠে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত ইতিহাস। নিচের সংগ্রহ ও সংকলন তারই কিছু নমুনা।
- নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবর
- ইনকিলাব জিন্দাবাদ
- লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান
- কানামে বিড়ি মু’মে পান, লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান
- লাখো ইনছান ভূখা হ্যায়, ইয়ে আজাদী ঝুটা হ্যায়
- উর্দু-বাংলা ভাই ভাই, রাষ্ট্র ভাষা দুই-ই-চাই
- রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই, নুরুল আমিনের গর্দান চাই
- রক্তের বদলে রক্ত চাই, মায়ের ভাষা বাংলা চাই
- আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি ?
- পাকিস্তান জিন্দাবাদ
- পাকিস্তান মুৰ্দাবাদ
- পাকিস্তান নিপাত যাক
- যুক্তফ্রন্ট জিন্দাবাদ
- ২১ দফা মানতে হবে
- আইয়ুব শাহী নিপাত যাক
- ৬ দফা ৬ দফা, মানতে হবে মানতে হবে
- পূর্ব বাংলার স্বাধীকার, দিতে হবে দিতে হবে
- শহীদের রক্ত, বৃথা যেতে দেবো না
- আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, মানিনা মানবোনা
- ১১ দফা ১১ দফা, মানতে হবে মেনে নাও
- শেখ মুজিব শেখ মুজিব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ
- জ্বলো জ্বলো আগুন জ্বলো, জাগো জাগো বাঙালি জাগো
- জেলের তালা ভাঙতে হবে, শেখ মুজিবকে আনতে হবে
- জেলের তালা ভাঙবো, শেখ মুজিবকে আনবো
- জেলের তালা ভেঙেছি, শেখ মুজিবকে এনেছি
- মুজিব না ভুট্টো, মুজিব মুজিব
- চাউল না ভূট্টা, চাউল চাউল
- ঢাকা না পিন্ডি, ঢাকা ঢাকা
- তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা
- তোমার আমার ঠিকানা, মক্কা আরব মদিনা,
- জয় বাংলা
- ভোটের আগে ভাত চাই
- আসবে দেশে শুভ দিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন
- বঙ্গবন্ধু এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে
- আপোষ না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম
- সংগ্রাম সংগ্রাম, চলছে চলবে
- ইয়াহিয়ার ঘোষণা, মানিনা মানবোনা
- ভুট্টোর মুখে লাথি মারো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো
- এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম
- বীর বাঙালি অন্ত্র ধর, পূর্ব বাংলা স্বাধীন কর
- জ…য় বা…ং…লা !!!
- স্বাধীনতা এনেছি, স্বাধীনতা রাখবো
- এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ
- লাখো শহীদ ডাক পাঠালো সব সাথীদের খবর দে,
সারা বাংলা ঘেরাও করে রাজাকারদের কবর দে
- একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার
- এই বাংলার শ্যামল প্ৰান্তর আকাশ গিরী ও নদী
বলিছে সবাই বঙ্গবন্ধু আবার আসিতে যদি !!
- যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা গৌরী যমুনা বহমান
ততদিন রবে কীর্ত্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।
গোলাম মুস্তাফা
জন্ম : ২০শে ফেব্রুয়ারি ১৯৫০, ফেনী। শিক্ষা: আলী আজম হাই স্কুল ও ফেনী কলেজ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে সম্মানসহ এমএ। নিবেদিত রোটারিয়ান ও রোটারির গভর্নর গোলাম মুস্তাফা মানুষকে ভালোবেসে সমাজের কম ভাগ্যবানদের ভাগ্য পরিবর্তনে সচেষ্ট।
একাত্তরে গোলাম মুস্তাফা ১০ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট-এর গণযোদ্ধা হিসেবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। কমান্ডিং অফিসারের স্টাফ অফিসার ও পাইওনিয়ার প্লাটুনের একাংশের কমান্ডার হিসেবে রণাঙ্গনে রাখেন বীরত্বের স্বাক্ষর। প্রকাশিত বই: “ফেনী- বিলোনিয়া : রণাঙ্গণের এক প্রান্তর”, “যুদ্ধ করেছি বিজয় এনেছি” ও ‘আমি রোটারির কথা বলিতে ব্যাকুল।’
সূত্র – স্বাধীনতা – মেজর কামরুল হাসান ভুঁইয়া