২১ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২ঃ ছাত্রলীগের জনসভা
শহীদ দিবস ও জাতীয় শহীদ দিবস উপলক্ষে সপ্তাহ ব্যাপী অনুষ্ঠানের শেষ দিনে পল্টন ময়দানে ছাত্রলীগ সমাবেশ করে। সমাবেশে ৪ ছাত্রনেতা বক্তব্য প্রদান করেন। ছাত্র নেতৃবৃন্দ স্বাধীনতা পূর্ব ১১ দফার পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। ছাত্র নেতৃবৃন্দ বলেন দেশের শত্রু দালালদের রক্ষার জন্য একটি মহল উঠে পরে লেগেছে। এদের রেহাই দেয়া হলে বা আইনের মার প্যাঁচে এরা মুক্ত হলেও দেশ বাসী এদের ক্ষমা করবে না। দালাল মুক্ত করার জন্য ছাত্রলীগ শুদ্ধি অভিযান চালাবে।
সভায় আসম রব বলেন আগামীর আন্দোলন হবে সমাজতন্ত্র কায়েমের সংগ্রাম। তিনি বলেন স্বাধীনতার স্বাদ পেতে হলে দেশে শোষণ হিন সমাজ বেবস্থা বা সমাজতন্ত্র কায়েম করতে হবে। আর এ ধরনের সমাজতন্ত্রই মুজিববাদ। তিনি একাধিক বাড়িওয়ালাদের হুশিয়ার করে দিয়ে বলেন কোন নাগরিক কে একাধিক বাড়ী রাখতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন শত্রু সম্পত্তির(পাকিস্তানীদের সম্পত্তি)বাড়িঘরগুলো স্কুল কলেজ হাসপাতালের জন্য ব্যাবহার করতে হবে। তিনি বলেন সারা দেশে অবাধ লুটপাটের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন বঙ্গবন্ধু নির্দেশ দিলে এদের আমরা নির্মূল করতে পারি।
নুরে আলম সিদ্দিকি বলেন আমরা আশা করি বঙ্গবন্ধু ভুল করবেন না। তিনি যেন মোসাহেব পারমিট শিকারিদের সুযোগ না দেন। তিনি দশম শ্রেণী পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা বেবস্থা চালুর সুপারিশ করেন। তিনি মুজিব বাদ ব্যাখ্যা করে বলেন গনতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা বহাল রেখে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই মুজিব বাদ।
শাহজাহান সিরাজ বলেন আমরা নতুন করে কোন দাবী জানাবো না। ২২ বছরে যত দাবী জানিয়েছি আমাদের বিপ্লবী সরকার তা মেনে নিবেন বলে আমরা আশা করি। তিনি বলেন দেশে বাংলা টাইপ রাইটারের অভাবের কারনে সর্বস্তরে বাংলা চালু করা যাচ্ছে না এমন ধারনার প্রতিবাদ করেন। তিনি সকল সাইন বোর্ড থেকে ইংরেজি মুছে ফেলার আহবান জানান।
আব্দুল কুদ্দুস মাখন বলেন ভাষা আন্দোলন ছিল জাতি হিসেবে বাঙ্গালী জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রাম। সে আন্দোলন ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা মাত্র।
সমাবেশ শেষে সেখানে বিশাল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সত্যজিৎ রায় সহ আরও কয়েকজন ভারতীয় সাংস্কৃতিক বেক্তিত্ত উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে সত্যজিৎ রায় বক্তৃতা করেন।