এ. বি. এম. আবদুর রহীম
এ, বি, এম, আবদুর রহীম ১৯৩৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘাটিয়ারায় জন্ম নেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। রাজনৈতিক কারণে তিনি একবার তিনদিন জেল খাটেন। পরবর্তী জীবনে তিনি সরাসরি রাজনীতিতে জড়িত হন এবং শ্রমিক নেতা হিসাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। আবদুর রহীম ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানের পক্ষে একমাত্র বেসরকারি প্রতিনিধি হিসাবে জেনেভায় আই. এল. ও, কনফারেন্সে টাইটুলার হিসাবে যােগ দেন। তিনি শ্রম বিষয়ক মামলা পরিচালনা এবং মুসাবিদায় দক্ষ ছিলেন। সেজন্য তার কাছে প্রচুর শ্রমিক আসত। তিনি বিনা পারিশ্রমিকেই এসব কাজ করতেন। ওই সময় পাকিস্তান সফররত চীন ও রাশিয়ার ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিনিধি দলের জন্য পাকিস্তানের পক্ষ থেকে প্রটোকল অফিসার হিসাবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। শ্রমিকনেতা হিসাবে তিনি বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৩৬টি দেশে গিয়েছেন। এ, বি, এম, আবদুর রহীম ছিলেন লেবার ফেডারেশনের সেক্রেটারি। ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি পাকিস্তানি শাসকরা তাকে নজরবন্দি করে। তার বাসার টেলিফোন লাইন কেটে দেওয়া হয়। প্রায় ১৫ দিন তিনি। নজরবন্দি ছিলেন। ব্যারিস্টার আমীরুল ইসলামের সহায়তায় তিনি মুক্ত হন। ওই সময় তিনি সপরিবারে থাকতেন ডি. আই. টি. রােডে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে তিনি বাসার সামনে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়ে দেন। পরে রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরির কাজেও অংশ নেন।
২৬ মার্চ আবদুর রহীম তার স্ত্রীকে নিয়ে নরসিংদীতে শ্বশুরবাড়ি চলে যান। সেখানে স্ত্রী-সন্তানদের রেখে গ্রামের বাড়ি ঘাটিয়ারা হয়ে তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। ঢাকায় ৩ মে তিনি শ্রমিকদের সাথে একটি বৈঠক করেন। এর দুদিন পর ৫ মে তাকে গ্রেফতার করা হয়। শােনা যায়, তিনি তাঁর গাড়িতে করে শ্রমিকনেতাদের ভারতে পাঠিয়েছেন। এ কারণেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাকে আটক করে। আবদুর রহীমের মা তার সাথে দেখা করতে গেলে দেখা করতে দেয়নি। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। পরিবারের সদস্যরা তার মুক্তির আবেদন জানিয়ে চিঠি লিখলে তাদের জানানাে হয় যে নির্দোষ প্রমাণিত হলে রহীমকে ছেড়ে দেওয়া হবে। এর কিছুদিন পর, ১৯৭১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন লে, কর্নেলের পক্ষ থেকে তাঁর পরিবারকে চিঠি দিয়ে জানানাে হয়, ৮ সেপ্টেম্বর রহীমকে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর থেকে আবদুর রহীমের পরিবারের সদস্যরা তাঁর আর কোনাে খোঁজ পাননি। শহীদ আবদুর রহীমের স্ত্রীর নাম ঝর্ণা রহীম। তাদের সংসারে তিন ছেলে ও এক মেয়ে ছিল।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ – আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা