এ. কে, এম, আসাদুল হক
এ. কে. এম. আসাদুল হকের জন্ম ১৯২৮ সালের ১ ডিসেম্বর, চট্টগ্রামের সন্দীপ উপজেলার তােফর আলী হাজী বাড়িতে। তার বাবার নাম মৌলভী সৈয়দ আহমেদ। দুই ভাই ও তিন বােনের মধ্যে আসাদুল হক ছিলেন দ্বিতীয়। আসাদুল হক ১৯৪৪ সালে সন্দীপের কাঠগর হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও ১৯৪৬ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আই. এসসি, পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। তিনি ছিলেন ঢাকা মেডিকেলের প্রথম ব্যাচের ছাত্র। ১৯৫২ সালে তিনি এম, বি. বি. এস. পাস করেন। ভাষা আন্দোলনের সময় আসাদুল হক ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্নি ডাক্তার । ভাষা শহীদদের লাশ যাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে না যেতে পারে সেজন্য তিনি লাশগুলাে লুকানাের চেষ্টা করেন। তাঁদের এ। চেষ্টা পাকিস্তান সরকারের গােয়েন্দাদের কাছে ধরা পড়ে। তাকে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশ তার মেডিকেল কলেজ হােস্টেলে হানা দেয়। সেখান থেকে পালিয়ে তিনি আত্মরক্ষা করেন।
আসাদুল হক ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে যােগ দেন। চাকরি করা অবস্থাতেই তিনি ১৯৬২ সালে ইংল্যান্ডের রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস” থেকে এফ, আর, সি, এস, ডিগ্রি নেন। ডা. আসাদুল হক। পাকিস্তানের কোয়েটা, এফতাবাদ, আজাদ কাশ্মীর ও মূলতানে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি যশাের সি, এম, এইচ.-এ কর্মরত ছিলেন। ১৯৭০ সালে তাঁকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের সি. এম. এইচ.-এ কমান্ডিং অফিসার হিসাবে বদলি করা হয়। এ সময় তিনি মেজর পদে ছিলেন। চট্টগ্রামে এসে দেশের। পরিস্থিতি নিয়ে মেজর জিয়াসহ বেশ কয়েকজন বাঙালি অফিসারের সাথে তার আলােচনা হয়। তারা কয়েকজন মিলে গােপন বৈঠকও করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গভীর রাতে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালিদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। পাকসেনারা চট্টগ্রাম সেনানিবাসে হামলা চালালে বাঙালি সেনাদের অনেকেই তাৎক্ষণিকভাবে মারা যান। এ অবস্থায় লে. কর্নেল এ. আর. চৌধুরী অন্যদের সহযােগিতায় প্রতিরােধ গড়ে তােলার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর। ওই প্রতিরােধও ভেঙে পড়ে। তখন সেনানিবাসের সব বাঙালি অফিসার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আটক করা হয়। আটককৃতদেরকে সি. এম. এইচ.-এর একটি ওয়ার্ডে বন্দি রাখা হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল, বিকাল ৪টার দিকে ডা. আসাদুল হক, ডা. লে. কর্নেল বদিউল আলমসহ বেশ কয়েকজন বাঙালি সেনা কর্মকর্তাকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়। তাদের লাশের কোনাে খোঁজ পাওয়া যায়নি। শহীদ ডা. মেজর এ. কে. এম. আসাদুল হকের স্ত্রীর নাম মােমেনা হক। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। ২০০২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান। তাদের সংসারে তিন ছেলে ও এক মেয়ে ছিল।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ – আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা