ডি আই বি তে দেয়া বঙ্গবন্ধুর বিবৃতি
১ মে ১৯৪৯, ঢাকা
আমার নাম শেখ মুজিবুর রহমান, পিতা- মৌলভি শেখ লুৎফর রহমান, টুঙ্গিপাড়া, থানা- গোপালগঞ্জ, জেলা- ফরিদপুর। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। আমার একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের গোপালগঞ্জের এস এন একাডেমি থেকে এ-ই বছর মেট্রিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। আমার চার বোনের নাম- (১) ফাতেমা বেগম (২) আছিয়া বেগম (৩) আমেনা বেগম এবং (৪) লায়লা বেগম। আমি ১৯৪২ সালে গোপালগঞ্জের মিশন স্কুল থেকে মেট্রিক, ১৯৪৫ সালে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৪৭ সালে বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। বর্তমানে আমার বয়স প্রায় ২৮ বছর।
১৯৩৭-৩৯ সাল পর্যন্ত আমি মুসলিম ছাত্রলীগের গোপালগঞ্জ উপশাখার সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছিলাম। আবার আমি ১৯৩৯-৪২ সাল পর্যন্ত গোপালগঞ্জ শাখার মুসলিম লীগ ও ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও ছিলাম। ১৯৪২-৪৩ সাল পর্যন্ত আমি গোপালগঞ্জ মুসলিম লীগ প্রতিরক্ষা কমিটির ও সম্পাদক ছিলাম৷ ১৯৪০-৪৭ সাল পর্যন্ত আমি ফরিদপুর জেলায় মুসলিম লীগ ও মুসলিম ছাত্রলীগকে সংগঠিত করি। ১৯৪৩-৪৪ সাল পর্যন্ত আমি বাংলা প্রদেশের মুসলিম লীগ রিলিফ কমিটির সেক্রেটারি মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরীর সহকারী হিসেবে কাজ করেছি। নাটোর ও বালুঘাট উপ-নির্বাচনে আমি মুসলিম লীগের পক্ষ হয়ে ফজলুল হক ও শ্যামাপ্রসাদ মিনিস্ট্রির বিরুদ্ধে কাজ করেছি। ১৯৪৩ সালে গোপালগঞ্জ সমাবেশে আমি অভ্যর্থনা কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করি যেখানে পাকিস্তান সংবিধান পরিষদের সভাপতি জনাব তমিজুদ্দিন খান, পাকিস্তান অংশের প্রচার ও অভ্যন্তরীণ কমিশন এর দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্মানিত মন্ত্রী খাজা সাহাবুদ্দীন সহ প্রখ্যাত মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৪৪ সালে কলকাতা করপোরেশন নির্বাচনে আমি মুসলিম লীগের হয়ে কাজ করি। ১৯৪৫-৪৬ সালে আমি বাংলা প্রাদেশিক মুসলিম লীগ পার্লামেন্টারি বোর্ড কর্তৃক ফরিদপুর জেলার মুসলিম লীগের নির্বাচন ও প্রচার অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী হিসেবে কাজ করেছি। সেখানে আমার অধীনে ৬টি নির্বাচনী এলাকা ছিল।
আমি দিল্লীতে অনুষ্ঠিত সর্ব ভারতীয় মুসলিম লীগের সমাবেশে বাংলা প্রদেশের একজন প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিয়েছিলাম যেখানে কায়েদ-ই-আযম সভাপতিত্ব করেছিলেন। একইভাবে ১৯৪৬ সালে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত সর্ব ভারতীয় মুসলিম লীগের বিশেষ সম্মেলনে অংশ নেই যেখানে আমি কায়েদ-ই-আযমের কাছে পাকিস্তান অর্জনে জীবন দিয়ে দেওয়ার শপথ নিয়েছিলাম। বিহারে দাঙ্গার সময় আমি সেখানে বাংলা প্রাদেশিক মুসলিম লীগের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলাম। ১৯৪৬ সালে প্রায় ৩ মাসের মত বিহার শরণার্থী ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে আসানসোল, কান্দুলিয়া, মাদাইগঞ্জ, মায়েরা, নাইগা ইত্যাদি অঞ্চলে কাজ করেছি। কলকাতা দাঙ্গার সময় আমি একইসাথে কলকাতা মুসলিম ছাত্রলীগ, ব্রাভর্ন কলেজের শরণার্থী ক্যাম্প এবং মুসলিম লীগের অফিসে দায়িত্বে ছিলাম। ১৯৪৭ সালে আমি সিলেটের ৩০০ ভলান্টিয়ারের দায়িত্বেও ছিলাম। এছাড়াও আমি ১৯৪৩-৪৮ সাল পর্যন্ত প্রাদেশিক মুসলিম লীগের কাউন্সিলর ছিলাম। ১৯৩৮-৪৭ সাল পর্যন্ত আমি সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের সদস্য ছিলাম। দেশভাগের পর থেকে আমি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগ এর একজন সদস্য হিসেবে কাজ করছি। সি.পি. কিংবা পূর্ব পাকিস্তানের অন্য কোন রাজনৈতিক দলের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ জন শিক্ষার্থীর শাস্তির বিরুদ্ধে হওয়া সাম্প্রতিক হরতালে আমি যোগ দিয়েছিলাম। তবে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ৪র্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিরোধে অংশ নেইনি। ১৯.৪.১৯৪৯ তারিখের ১৬.১০ মিনিট এ আমাকে আরো ৬ জন শিক্ষার্থীর সাথে গ্রেপ্তার করেন ডি.এম., ডি.আই.জি এবং শহরের এস.পি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অফিস থেকে আমাকে জেলে নিয়ে আসা হয়। (অনুবাদ – Ainul Hossain) [1, pp. 146–148]
Reference:
[1] S. Hasina, Secret Documents of Intelligence Branch on Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, Vol I 1948-1950. Hakkany Publisher’s, 2018.