You dont have javascript enabled! Please enable it! ১৯৭১ বঙ্গপ্রেমিক ড. ত্রিগুণাকুমার সেন - সংগ্রামের নোটবুক

১৯৭১ বঙ্গপ্রেমিক ড. ত্রিগুণাকুমার সেন

বিভাগ উত্তর ব্রিটিশ সিলেটে জন্ম গ্রহন কারী ভারতবর্ষ তথা সমগ্র বিশ্বে ড. ত্রিগুণা সেন একজন শিক্ষাব্রতী, একজন ব্রিটিশবিরোধী কিংবদন্তি স্রষ্টা সিংহপুরুষ।
ড. ত্রিগুণা সেন যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে অধ্যক্ষ ছিলেন। তারই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে এ কলেজটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। তখন তিনি এর রেকটর এর দায়িত্বে নিয়োজিত হন। অল্পদিনের মধ্যেই কর্তৃপক্ষ তাঁর জ্ঞান ও মেধার পরিচয় পেয়ে তাঁকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (Vice Chancellor) পদে স্থায়ী নিয়োগ প্রদান করে। ১৯৫৮-১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি পরপর দু’বার কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। ইন্দিরা গান্ধী সরকারে তিনি রাজ্যসভা সদস্য হন। পরে ১৯৬৯-১৯৭২ সালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় ‘শিক্ষা, পেট্রোলিয়াম এবং শক্তি’ মন্ত্রকের মন্ত্রী ছিলেন। ত্রিগুণা সেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে খুব কাছে থেকেই তদারকি করেছেন। পূর্ববাংলায় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সূচনা ঘটে ১৯৪৮-এ। পাকিস্তানের জিন্নাহ সরকার বাঙালিদের উপর নানাভাবে দমনপীড়ন চালিয়ে তা সাময়িক দমনে সক্ষম হয়। ড. ত্রিগুণা সেন এতে খুব ব্যথিত হন এবং পূর্ববাংলার সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে কলকাতায় ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে গঠন করেন অসামরিক ‘বাংলাদেশ লিবারেশন সেল’ । তিনি এই সেলের প্রধান হিসেবে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নিরলস ভাবে কাজ করে যান। ১৯৬৪ সাল থেকেই তিনি পূর্ববাংলার মুক্তিসংগ্রামী নেতা শেখ মুজিবকে অনুজ প্রতীম সহোদরের মতো নানাভাবে সহযোগিতাদান শুরু করেন যা ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে সফলতায় পর্যবসিত হয়।
১৯৭০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ড. ত্রিগুণা সেন পূর্ববাংলার স্বাধীনতার জন্য নানাবিধ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তিনি তদানীন্তন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কেবিনেট মিনিস্টার হিসেবে ইন্দিরা সরকারের উপর পূর্ববাংলার মুক্তির জন্য নানাভাবে চাপ সৃষ্টি শুরু করেন। তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টায় ভারত সরকার বাংলাদেশের মুক্তির জন্য আন্তরিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।

১৯৭১-এর ২৬ মার্চ থেকে যখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানি সামরিক সরকার বন্দি করে নিয়ে যায়, তখন ড. ত্রিগুণা সেন অত্যন্ত বিচলিত হন। এ ব্যাপারে তিনি বিধানসভা ও রাজ্যসভায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা ও মুক্তির প্রশ্ন নিয়ে ভারত সরকারের আনুকূল্য লাভের জন্য সুদীর্ঘ আলোচনা করেন। তাঁর আলোচনা যারপরনাই ফলপ্রসূ হয়। অবশেষে একপর্যায়ে ভারত সরকার তাঁকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান নির্বাহী তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করে। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রধান নির্বাহী তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পেয়ে প্রথমাবস্থায় কিছুদিন কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিংয়ে তাঁর দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু করেন। পরবর্তীকালে তা স্টিফেন হাউসে স্থানান্তরিত হয়। বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রাম কে সফল রুপ দেয়ার জন্য তিনি ত্রিপুরা আসাম পশ্চিম বঙ্গে ব্যাপক সফর করেন এবং শরণার্থী শিবির ইয়ুথ ক্যাম্প মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষন শিবির পরিদর্শন করে সকল কে অনুপ্রাণিত করেন।

সিলেটের মুক্তিযোদ্ধা আজিজ আহমদ চৌধুরী পূর্ব পরিচয়ের সুত্রে জুন মাসের শেষের দিকে কলকাতায় ড. ত্রিগুণা সেনের কাছে যান এবং প্রবাসী বিপ্লবী সরকারের নির্দেশে কলকাতায় ড. ত্রিগুণা সেনের অধীনে সহকারী রেশন ও যুদ্ধসরঞ্জাম সরবরাহ কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন।
ড. ত্রিগুণা সেন শুধু ওপার বাংলায়ই নন, বাংলাদেশেও তিনি স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ড. ত্রিগুণা সেনকে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের জন্য বিগত ২০ অক্টোবর ২০১২-তে মরণোত্তর ”বিদেশি বন্ধু সম্মাননা ক্রেস্ট” প্রদান করে। পিতার পক্ষে কনিষ্ঠ কন্যা সুহৃতা ভট্টাচার্য ঢাকায় আমন্ত্রিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এই সম্মাননা ক্রেস্ট গ্রহণ করেন।অতএব আজ গর্বের সাথে বলতে পারি, ড. ত্রিগুণা সেনের কর্মময় জীবন চিরদিন সিলেটবাসী তথা সমগ্র বাঙালি জাতির কাছে গর্ব ও অনুপ্রেরণার উৎস হয়েই থাকবে।