You dont have javascript enabled! Please enable it! আনােয়ারুল আজীম - সংগ্রামের নোটবুক
আনােয়ারুল আজীম
লেফটেন্যান্ট মাে. আনােয়ারুল আজীম নওগাঁর রাণীনগর গ্রামে ১৯৩১ সালের ১৩ ডিসেম্বর জন্ম নেন। তার বাবার নাম খান সাহেব মাে. আফজাল। আনােয়ারুল আজীম ১৯৪৯ সালে দিনাজপুর স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৫১ সালে দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে আই. এ. ও ১৯৫৩ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে বি. এ. পাস করেন। রাজশাহী কলেজে পড়ার সময় তিনি ভাষা আন্দোলনে জড়িত হন। এ কারণে আনােয়ারুল আজীমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরােয়ানা জারি করা হয়। ফলে তিনি আত্মগােপন করতে বাধ্য হন। তিনি রাজশাহী কলেজে ‘নওগাঁ সমিতি ও দিনাজপুরে ‘শক্তি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন। ফজলুল হক হলের ম্যাগাজিনও সম্পাদনা করেন তিনি। ফুটবল ও টেনিস খেলায় পারদর্শী ছিলেন আনােয়ারুল আজীম, পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন গায়ক, বক্তা ও নাট্যশিল্পী। চাকরিজীবনে আনােয়ারুল আজীম নারায়ণগঞ্জ এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ, ডেমরায় লতিফ বাওয়ানী জুট মিলস ও গােপালপুরে উত্তরবঙ্গ চিনিকলে কাজ করেছেন। আনােয়ারুল আজীম ১৯৬৫ সালে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে ‘ইন্টারন্যাশনাল লেবার ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে আমেরিকার মিশিগান গিয়েছিলেন। আমেরিকা থেকে ফিরে তিনি নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে সিনিয়র অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অফিসার হিসাবে যােগ দেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স বিষয়ে এম, এ. এবং এল, এল. বি. ডিগ্রি লাভ করেন।
নিহত হওয়ার সময় তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যুদ্ধক্ষেত্রের প্যাসরাে বিভাগের লেফটেন্যান্ট পদে বহাল ছিলেন। ১৯৭১ সালে ৫ মে পাকিস্তানি সেনারা আনােয়ারুল আজীমকে হত্যা করে। ওইদিন পাকসেনারা মিলে ঢুকলে আনােয়ারুল আজীম সবার পক্ষ থেকে সামনে এগিয়ে যান। পাকিস্তানি সুবেদার-মেজর মিলের ভেতরে গেস্ট হাউজে সভা করার কথা বলে সবাইকে জড়াে করে। গেস্ট হাউজের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় মিলের পুকুরের ধারে আরও অনেকের সাথে আনােয়ারুল আজীমকেও দাঁড় করায়। উদ্দেশ্য টের পেয়ে নিজের জীবনের বিনিময়ে সবার জীবন রক্ষা করার জন্য জামার বােতাম খুলে দেন আনােয়ারুল আজীম। কিন্তু পুকুরের সিড়িতে সবাইকে পাকবাহিনী হত্যা করে। পরবর্তীকালে মিলের সেই পুকুর ‘শহীদ সাগর’ এবং গােপালপুর রেলস্টেশনের নাম “আজীমনগর’ রাখা হয়। আনােয়ারুল আজীম স্ত্রী, এক মেয়ে ও দুই ছেলে রেখে গেছেন।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ-  আলী মো. আবু নাঈম , ফাহিমা কানিজ লাভা