২৬ জানুয়ারী ১৯৭২ঃ কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এ বধ্যভূমি আবিস্কার
ছবিঃ কয়েকদিন পরের। মার্কিন সিনেটর স্তিভেন্সন এর সফরকালীন। কুমিল্লার সন্নিকটে ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট এ কয়েকটি বড় গনকবর আবিস্কার হয়েছে। এদের একটিতে ২৪ জনের কংকাল পাওয়া গিয়েছে। বার্তা সংস্থা এপি এর ক্যামেরার সামনে সাংবাদিকের উপস্থিতিতে খনন করে এ লাশ আবিষ্কৃত হয়। ২৪ জনের মধ্যে সামরিক কর্মকর্তার পাশাপাশি বেসামরিক লোকও রয়েছে। জেলা প্রশাসক রফিক উদ্দিন বলেন মাটি খুড়ে প্রথম স্তরেই ২৪টি লাশ পাওয়া গেছে এর নীচে আরও স্তর রয়ে গেছে সেগুলি খনন শেষে এ সংখ্যা বাড়তে পারে। এখানে রেঙ্ক ব্যাজ থেকে জানা যায় এখানে একজন লেঃ কর্নেল কয়েকজন মেজর, ক্যাপ্টেন ও জেসিও এর লাশ আছে। ক্যান্টনমেন্ট এর নাপিত রমণী শীল এ গণকবর আবিস্কার করেন। রমণী শীল গণহত্যা সম্পর্কে বিভিন্ন সাংবাদিক ছাড়াও এপির সাথে কথাও বলেন। রমণীর বিবরন মতে এ গর্তে লেঃকঃ জাহাঙ্গীরের লাশ আছে। তিনি বলেন এ গর্তের কাছেই একজন অফিসারের সেভ করার সময় তিনি এ গর্তে লাশ দাফনের দৃশ্য দেখেছিলেন। তিনি বলেন তারিখ সম্ভবত ২৭ বা ২৮ তারিখ হবে। এ ঘটনার পর তিনিও আটক ছিলেন তার দলের ৩০০ জনের হত্যা শেষে তিনি মুক্তি পান এবং পরে পালিয়ে যান। তিনি মাত্র কয়েকদিন আগে এলাকায় ফিরে আসেন এবং জেলা প্রশাসনকে ঘটনা জানান। রমণী মোহন শীল ১৮ বছর ধরে ক্যান্টনমেন্ট এ নাপিতের কাজ করে আসছেন। রমণী মোহন অবশ্য স্বাধীনতার আগেও এ হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে বিভিন্ন মহলে জানিয়েছিল কিন্তু পাক বাহিনীর দখলাধীন সময়ে করার কিছু ছিল না। রমণী বলেন ২৩ তারিখে ৩০০ বাঙ্গালী সেনা অফিসার জওয়ান সিভিলিয়ানকে লক আপে ঢুকানো হয়। জেলার বাহির থেকেও অনেক লোক ধরে আনা হয়। এদের মধ্যে ধিরেন্দ্র নাথ দত্তও ছিলেন। ২৪ তারিখে একজন পাকিস্তানী সুবেদার আরব খান এবং নায়েব সুবেদার নুর হোসেন এসে লেঃ কঃ জাহাঙ্গীরের শার্ট খুলে তা দিয়ে চোখ বেধে। খালি গায়ে নিয়ে যায় এবং ২৫ গজ দূরে খনন করা এই গর্তের সামনে গুলি করে হত্যা করে। এরপর ১ এপ্রিল তারিখে মেজর হাশিম এবং ক্যাপ্টেন মকবুলকে এখানে গুলী করে হত্যা করা হয়। হত্যার দায়িত্বপ্রাপ্ত মুজাহিদ বাহিনী ক্যাপ্টেন মমতাজ নির্দেশ দেয় ৩০০ লোককে একটা একটা করে মারতে সময় লাগবে তাই এদের গ্রুপ করে মারো। পরে একসাথে ৪ জন করে করে মারা হয়। শেষের দিকে ১৪ জন করে মারা হয়।
সবার শেষে ক্যান্টনমেন্ট মসজিদের ইমামকে হত্যা করা হয়। ৩০০ জন থেকে সিভিল ১২ জন রয়ে যায়। এর মধ্যে রমণী শীল ছিল। এক সময় এক নায়েক এসে রমণীকে জানায় ব্রিগেডিয়ারের নির্দেশ রমণীমোহনসহ এই ১২ জনকে হত্যা করা হবে না। ১২ জনের মধ্যে ছিল ৩ জন নাপিত ৬ জন সুইপার আর ইস্পাহানী স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপ্যালের দুই ছেলে। পরদিন ক্যাপ্টেন মমতাজ তাদের ছেড়ে দেয় এবং চাকুরীজীবীদের কাজে যোগ দিতে বলে। তারা যখন জানতে পারে বাকী দুজন চাকুরীজীবী নয় তখন তাদেরও হত্যা করা হয়। রমণী বলেন ফতেহ মোহাম্মদ স্টেডিয়ামের পাশেও অনেককে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেখানে লাশে পেট্রল দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়ে বুলদজার দিয়ে মাটি চাপা দেয়া হয়। তিনি ধিরেন্দ্র দত্তকে হত্যা করতে দেখেছেন। লেঃ ইমামুজ্জামান একটি পত্রিকাকে বলেছেন তার কক্ষে তার সামনেই তিন জনকে হত্যা করা হয়। তিনি আহত অবস্থায় দোতলা থেকে রাতে লাফ দিয়ে পালিয়ে যান। নিহত অপর সেনা অফিসাররা হলেন লেঃ কঃ আনোয়ারুল ইসলাম, মেজর খা লেক, মেজর মহিদুজ্জামান, ক্যাপ্টেন হুদা, ক্যাপ্টেন বদরুল আলম, ক্যাপ্টেন আইউব আলি, ক্যাপ্টেন নুরুল ইসলাম ক্যাপ্টেন সিদ্দিকী, লেঃ তুর্কী (ডাকনাম) লেঃ ফারুক, লেঃ এনামুল হক, লেঃ সালাহউদ্দিন, সেঃ লেঃ আতিকুর রহমান, সেঃ লেঃ হারুনুর রশিদ।