You dont have javascript enabled! Please enable it! 1948.04.19 | যুক্ত বাংলা প্রতিষ্ঠার চক্রান্তে সোহরাওয়ার্দীর এজেন্ট শেখ মুজিব | গোয়েন্দা নথিতে বঙ্গবন্ধু 1948-1949 - সংগ্রামের নোটবুক

যুক্ত বাংলা প্রতিষ্ঠার চক্রান্তে সোহরাওয়ার্দীর এজেন্ট শেখ মুজিব

১৯ এপ্রিল ১৯৪৮ তারিখের গোয়েন্দা নথিতে জানা যায় (তারিখটা সম্ভবত ভুল দেয়া হয়েছে), ১৬ মে ১৯৪৮ তারিখে নারায়ণগঞ্জে মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মিটিং এ শেখ মুজিবকে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের প্রাদেশিক সাব-কমিটির সদস্য করা হয়।

            অখণ্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষে ভারতের কলিকাতার ধনাঢ্য হিন্দু ব্যক্তিত্ব শরত বোস হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে প্রচুর অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন। এবং সোহরাওয়ার্দীকে এই কাজে যারা সাহায্য করছেন তাদের অন্যতম এজেন্ট ফরিদপুরের শেখ মুজিবুর রহমান।

শেখ মুজিব মনে করেন, মন্ত্রণালয় এখন অনেক শক্তিশালী। এমনকি সোহরাওয়ার্দী নিজেও যদি পূর্ব বাংলার রাজনীতিতে আসেন তাতেও তেমন লাভ হবেনা। শেখ মুজিবের মতে এখন পথ একটাই। আর তা হচ্ছে সন্ত্রাস আরম্ভ করা এবং টপ লেভেলের কিছু নেতাকে হত্যা করা। সে দ্রুত আন্ডারগ্রাউন্ডে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গোয়েন্দা রিপোর্টে আরও জানা যায়, শরত বোসের বাড়ীতে (১, উডবার্ণ পার্ক, কোলকাতা) ৯ জুন ১৯৪৮ তারিখে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে বাংলাকে একীভূত করার ব্যাপারে আলোচনা হবে। এবং সেই মোতাবেক ৩ জুন ১৯৪৮ (এই তারিখটি ভুল আছে) ঢাকায় কাজ শুরু হবে। মিটিং এর আগে শেখ মুজিব মওলানা ভাসানীর সাথে (১৬০, কালীবাড়ি রোড, ময়মনসিংহ) আলোচনা করে নেবেন।

তবে গোয়েন্দা রিপোর্টে জানা যায়, শেখ মুজিব সেই মিটিং এ অংশ নেন নাই। কারণ তিনি সন্দেহ করেছিলেন সেখানে তার বিরুদ্ধে কিছু চক্রান্ত হতে পারে। পরবর্তীতে সোহরাওয়ার্দী সেখানে অংশ নেয়া কিছু লোককে বলেন শেখ মুজিব যেন দ্রুত তার সাথে দেখা করে।

গোয়েন্দা রিপোর্টে ধারণা করা হয়, ৯ ও ১০ এপ্রিল ১৯৪৮ তারিখে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের কার্যক্রম পাকিস্তানবিরোধী। তবে ৪ মে ১৯৪৮ তারিখের রিপোর্টে জানা যায়, সোহরাওয়ার্দী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পাকিস্তান যেহেতু হয়েই গেছে তাই এখন আর তিনি বাংলা একীভূতকরণ নিয়ে কাজ করবেন না। এদিকে শেখ মুজিব দলীয় কাজে বরিশাল গিয়েছেন। উদ্দেশ্য এসেম্বলি শুরুর আগে মন্ত্রীপরিষদের বিরুদ্ধে কাজ করা।

১৯ মে ১৯৪৮ তারিখে ১৫০, মোগলটুলীতে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের বৈঠক হয়। সঠিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সবাই কাজ করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। শেখ মুজিব ১৫০, মোগলটুলীর অফিসের চার্জে থাকবেন।

৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮ এর একটি রিপোর্টে জানা যায়, ২২ আগস্ট ১৫০, মোগলটুলীতে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে শেখ মুজিব ফান্ড কালেকশনের জন্য শীঘ্রই উত্তরবঙ্গ সফর করবেন।

২০ ডিসেম্বর ১৯৪৮ এর রিপোর্টে জানা যায়, ৭ ডিসেম্বর ১৯৪৮ তারিখে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একটি মিটিং হয়। সিদ্ধান্ত হয় যে, রাজশাহী কলেজের ছাত্রদের বহিষ্কার আদেশ বাতিলের জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করা হবে এবং যদি সেটা বাতিল না হয় তাহলে পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন জেলায় হরতাল, বিক্ষোভ মিছিল, মিটিং এবং অনশন করবেন। ফরিদপুর, বরিশাল এবং খুলনার দায়িত্ব শেখ মুজিবকে দেয়া হয়।

শেখ মুজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট মওলানা মোহাম্মদ আকরাম খানের কাছে পৌঁছানো হয়। সেখানে আবেদন করা হয় যে, আগামী ১৯ জানুয়ারি ১৯৪৮ তারিখে তিনি (মওলানা আকরাম খান) যেন একটি মিটিং ডাকেন যেখানে একটি এজেন্ডা রাখতে হবে তার (মওলানা আকরাম খান) উপর অনাস্থার উপর যেন একটি ভোট করা হয়।

বাকেরগঞ্জের মুসলিম ছাত্রলীগের অর্গানাইজিং কমিটির চেয়ারম্যান শামসুল হক চৌধুরী ১০ অক্টোবর ১৯৪৮ তারিখে মোঃ নাইমুদ্দিন, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের আহবায়ক, ১৫০, মোগলটুলী বরাবর একটি চিঠিতে জানান যে, শেখ মুজিবুর রহমান বরিশাল এসেছেন এবং তার সাথে সংগঠনের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ও ছাত্র আন্দোলনে শেখ মুজিব নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি ভিসির বাড়ির সামনে বিক্ষোভের আয়োজন করছেন এবং ছাত্রদের অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান করছেন। [1, pp. 10–12]

References:
[1] S. Hasina, Secret Documents of Intelligence Branch on Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, Vol I 1948-1950. Hakkany Publisher’s, 2018.
[2] গোয়েন্দা নথিতে বঙ্গবন্ধু 1948-1949, সংগ্রামের নোটবুক
Translated by Dr Razibul Bari