You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.01.17 | ১৭ জানুয়ারী ১৯৭২ঃ ব্রিটিশ টেলিভিশন সাংবাদিকের সাথে সাক্ষাৎকারে শেখ মুজিব - সংগ্রামের নোটবুক

১৭ জানুয়ারী ১৯৭২ঃ ব্রিটিশ টেলিভিশন সাংবাদিকের সাথে সাক্ষাৎকারে শেখ মুজিব

ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টের কাছে এক সাক্ষাৎকারে শেখ মুজিব বাংলাদেশ ৭১ এর ৯ মাসে ৩০ লাখ মানুষকে নির্দয় ভাবে হত্যার জন্য ইয়াহিয়ার প্রকাশ্য বিচার দাবী করেছেন। তিনি বলেন আন্তজার্তিক আদালত যেভাবে জার্মান ফ্যাসিবাদের যুদ্ধপরাধীদের বিচার করেছে ইয়াহিয়ার বিচার সেভাবেই করার দাবী জানান। ৩০ লাক নিহতের সংখ্যা নিরূপণ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে শেখ মুজিব বলেন আওয়ামী লীগের সকল শাখা থেকে তারা সেখানকার হত্যাকাণ্ডের হিসেব পেয়েছেন এবং এ ব্যাপারে সংখ্যা নিরূপণের ব্যাপারে একটি কমিটি হয়েছে তারা প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন চুরান্ত হিসেবে এ সংখ্যা ত্রিশ লাখের বেশী হতে পারে।
তিনি বলেন বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ তাই দেশটি কারো শত্রু হয়ে থাকতে পারে না। বাংলাদেশ স্বাধীন জোট নিরপেক্ষ নীতি অবলম্বন করবে। ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনো স্বীকৃতি দেয়নি কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন তাদের নিজস্ব অসুবিধা আছে। তবে আমি আশা করি তারা দ্রুত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে।
ডেভিড ফ্রস্টকে তিনি তার আটকের সময়ের কাহিনী বাড়ী ঘুরে ঘুরে বিস্তারিত বলেন। তিনি বলেন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত্রে তাকে গ্রেফতারের সময় পাক বাহিনী তাকে দৈহিক আঘাত করেছিল। তিনি বলেন তারা প্রথমে ৪ দিক দিয়ে আমার বাড়ী ঘিরে ফেলে তারপর দুদিক থেকে বাড়ীতে মেশিন গানের গুলি চালায়। তারা আমার ছোট ছেলের ঘরের জানালা দিয়েও ভিতরে গুলি করে। এক পর্যায়ে আমি ঘর থেকে বের হয়ে আসলে তাদের অফিসার তার অধীনস্থ সৈন্যদের আমাকে হত্যা না করার জন্য আদেশ দেয়। তখন সৈন্যরা আমাকে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে নীচে নামায়। কেউ একজন পিছন থেকে আমার পিঠে ঘুষি দিয়েছে (হাবিলদার মেজর খান ওয়াজির)। আমি আমার স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নেয়ার প্রাক্কালে তাকে বলি আমার মৃত্যু হলে আমার জনগনের লজ্জা পাওয়ার কোন কারন নেই। কিন্তু আমি যদি নতি স্বীকার করি তা হলে বিশ্ব দরবারে তারা মুখ দেখাতে পারবে না। তারা আমার ৩০ বছরের লেখা ডায়েরীসহ বই, কাগজপত্র নিয়ে যায় এবং বাসার প্রায় সকল জিনিশপত্র ভাংচুর করে। আমার স্ত্রী আমাকে একটি ছোট ব্যাগে কাপড় চোপড় দেয়। তারপর তারা আমাকে নিয়ে যায়।
মিয়াওালি জেলে কারা দাঙ্গা সৃষ্টি দেখিয়ে তাকে হত্যার একটি পরিকল্পনা নেয়ার কথা তিনি বলেন। ঢাকার বুদ্ধিজীবী নিধনের বর্ণনা কালে তিনি তাদের হত্যার এবং ঘটনাস্থলের কিছু ছবি ফ্রস্টকে দেন।
নোটঃ ২১ জানুয়ারী ব্রিটেনে এ সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়। সাক্ষাৎকারের ফাকে ফাকে ফ্রস্ট গণহত্যার কিছু স্থির চিত্র এবং ভিডিও দেখিয়েছেন।