দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস , ডিসেম্বর ৯, ১৯৭১
মি: নিক্সন এবং দক্ষিণ এশিয়া
– জন পি. লুইস
প্রিন্সটন, নিউ জার্সি – নিক্সন প্রশাসনের দক্ষিণ এশিয়া নীতি , যা গত আটমাস ধরে সেখানকার পরিস্থিতিকে একটা ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে, সেটা গত সপ্তাহে একেবারে খাদের কিনারায় গিয়ে ঠেকেছে । আশঙ্কা ছিল, অন্তত আপাত সময়ের জন্য এই নীতি থেকে নিক্সন প্রশাসন সরে আসবে না । স্বার্থপরের মত একজন মার্কিন হিসেবে যা আমাকে এখন বিচলিত করছে সেটা হলো, ভারতীয় নেতারা মার্কিন প্রশাসনের এই হঠকারী অবিবেচক অবস্থানকে যা কিনা বিচক্ষণ এবং অভিজ্ঞ মার্কিন জনগণের মতামত থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, সেটা কে অতিরঞ্জিত করে প্রচার করবে। পারিপার্শিক সব সাক্ষ্য প্রমান থেকে মনে হচ্ছে এই হঠকারী অবিবেচক অবস্থানের দায় প্রাথমিকভাবে শুধু প্রেসিডেন্ট নিক্সন এর নিজের উপরে সরাসরি এককভাবে বর্তায়। স্মরণকালের মধ্যে কোন সভ্য মানব সম্প্রদায়ের উপরে চলা বর্বরতম এবং পরিকল্পিত নৃশংসতম গণহত্যা নিয়ে তিনি গত আটমাস ধরে সরকারিভাবে অন্ধ অবস্থান নিয়ে থেকেছেন। তিনি আনুগত্য দেখিয়ে চলেছেন তার বন্ধু ইয়াহিয়া খান এর প্রতি, যিনি কিনা এই গণহত্যার মূলনায়ক। দৃশ্যত, পূর্ব বাংলার কোন রাজনৈতিক সমাধানের জন্য তিনি সরাসরি বা গোপনে পাকিস্তানী জান্তার উপরে কোন রকমের চাপ দেননি।
অপ্রত্যাশিত শরণার্থীর চাপ এবং নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে ভারতীয় সরকারের জন্য একটা নৈতিক এবং মানবিক দায়িত্ব থাকা সত্বেও তারা এই কিছুদিন আগ পর্যন্ত দুর্দান্ত সংযম প্রদর্শন করেছে। কাজের মধ্যে মি: নিক্সন বলতে গেলে শুধু তাদেরকেই সংযম প্রদর্শনের পরামর্শ দিয়ে গেছেন। মাসের পর মাস ধরে তিনি এর সমাধানের জন্য কোন নৈতিক সমর্থন তো দেননি বরং আগুনে ঘি ঢালার মতো অব্যাহতভাবে পাকিস্তানকে অস্ত্রের যোগান দিয়ে গেছেন। পূর্ব বাংলার বিষ্ফোরম্মুখ রাজনৈতিক অবস্থার জন্য ভারতের পশ্চিম বাংলায় সৃষ্ট শরণার্থী সমস্যা এবং যেভাবে পূর্ব বাংলার পরিস্থিতি ভারতের জন্য বিরাট একটা সুযোগ তৈরী করেছে , উভয় সম্পর্কে পাকিস্তান সম্পূর্ণ অবগত।
ক্রমবর্ধমান এই অক্ষমতা এবং কর্মতৎপতা নিয়ে ইতিহাসবিদরা বিস্মিত না হয়ে পারবেন না। বিশ্বের ইতিহাসে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং খুব সাধারণ একটা নৈতিক প্রশ্নে আমাদের একের পর এক পদক্ষেপ আমাদেরকে ভুল পক্ষের সাথে যুক্ত করেছে , যেখানে এক মিলিটারি একনায়ক পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম জাতির বিপক্ষে দাঁড়িয়ে গেছে , যারা কিনা আবার ঘটনাচক্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে আমাদের রাজনৈতিক মূল্যবোধ সবচেয়ে বেশি ধারণ করে। আমরা এমন এক পক্ষের সাথে জোট বেঁধেছি, যারা উপমহাদেশের এই ক্রান্তিকালে নিশ্চিতভাবে পরাজিত হবে এবং এই ভুল অবস্থান ভবিষ্যতের জন্য মজবুত ইন্দো-আমেরিকা সম্পর্ককে অহেতুক ক্ষতিগ্রস্থ করবে।