You dont have javascript enabled! Please enable it! সা'দত হুসাইন (সিএসপি ১৯৬৯) | মুক্তিযুদ্ধে সিএসপি ও ইপিসিএস অফিসারদের ভূমিকা - সংগ্রামের নোটবুক
মুক্তিযুদ্ধে সিএসপি ও ইপিসিএস অফিসারদের ভূমিকা
সা’দত হুসাইন ৬৪ (সিএসপি ১৯৬৯)
তিনি মূলত মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী এম, মনসুর আলীর একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করেছিলেন। তার তখনকার দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে তিনি নিজেই লিখেছেন: “অর্থমন্ত্রী জনাব মনসুর আলীর একান্ত সচিব হিসাবে তার অফিস কক্ষের সংলগ্ন একটি ছােট কক্ষে আমি বসতাম। জনাব মনসুর আলী ছিলেন সরল, সাদাসিধে মানুষ। তবে অত্যন্ত আত্মপ্রত্যয়ী। সাংগঠনিক কঠোরতা বা আমলাতান্ত্রিক নিয়মবদ্ধতায় তিনি খুব একটা বিশ্বাস করতেন না। স্বাভাবিক প্রবৃত্তি এবং নিজের বুদ্ধি বিবেচনায় যা ভালাে মনে করতেন, সে মতে সিদ্ধান্ত দিতেন এবং সেভাবেই কাজ করতেন। অর্থমন্ত্রী হিসাবে তার কাজ ছিল বাংলাদেশের বিভিন্ন ট্রেজারি থেকে যে অর্থ সম্পদ জেলা প্রশাসক এবং মহকুমা প্রশাসকগণ বা স্থানীয় নেতৃবৃন্দ পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে এসেছে সেগুলাের ব্যবস্থাপনা, বিভিন্ন সংস্থা এবং নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবৃন্দকে আর্থিক সাহায্য প্রদান, ট্রেনিং ক্যাম্প সমূহের জন্য আর্থিক বরাদ্দ প্রদান। এসব ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী ছাড়াও অর্থ-সচিবখােন্দকার আসাদুজ্জামানের সাথে আমাকে কাজ করতে হত।”৬৫
 
        অন্যত্র লিখেছেন: “বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া অর্থ সম্পদ সীমান্ত সংলগ্নজেলা সমূহের ট্রেজারিতে জমা রাখা হয়েছিল। পরবর্তীকালে জেলার ট্রেজারিসমূহ চার্টাড(র্ড) প্লেনে করে বাক্স ভর্তি এসব অর্থ সম্পদ কলকাতায় আনা হত। সীমান্তবর্তী ভারতীয় জেলাসমূহের জেলা প্রশাসকদের সাথে যােগাযােগ করে এসব বাক্সবন্দী অর্থের চালান চাট(ট)ার্ড প্লেনে করে দমদম (কলকাতা) বিমান বন্দরে অর্থসচিবের নিকট বুঝিয়ে দেয়ার দায়িত্ব ছিল আমার। অবশ্য প্লেন চার্টার করার দায়িত্বটা অর্থ মন্ত্রণালয় এবং ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফ-এর উপর ন্যাস্ত (ন্যস্ত) ছিল। আমি এবং আমার সহযােগী দুএকজন কর্মকর্তা মূলত দায়িত্বপ্রাপ্ত। আরােহী হিসাবে প্লেনে বসে থাকতাম। বিএসএফের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাদের বাহনে আমাদেরকে বিমান বন্দরে পৌছে দিতেন এবং বিমান না ছাড়া পর্যন্ত সহায়তা করতেন। প্লেনেও কোনাে কোনাে সময় বিএসএফ-এর প্রতিনিধি উপস্থিত থাকতেন। চার্টাড(ড) প্লেনে করে টাকা আনা এবং বিভিন্ন ট্রেনিং ক্যাম্প পরিদর্শন করে তাদের উপর রিপাের্ট প্রদানের জন্য আমাকে বাংলাদেশ ভারত  সীমান্তের প্রায় সব গুরুত্বপুর্ণ জেলা এবং অঞ্চলে ভ্রমণ করতে হয়েছে। বারাসাত-বনগা থেকে শুরু করে নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, ইসলামপুর, শিলিগুড়ি, নকশালবাড়ি জলপাইগুড়ি, কোচবিহার যেমন গিয়েছি তেমনি শিলং, গৌহাটি, মাইনকার চর,আগরতলাও আমি গিয়েছি। শিলিগুড়ি থেকে তে(তঁ)তুলিয়ার(য়) প্রবেশ করে তে(তঁ)তুলিয়ার ডাকবাংলােতে রাত কাটিয়েছি। মাইনকার চর থেকে ভুরুঙ্গামারী, রাজিবপুর-এর মুক্তাঞ্চলে এসে সময় কাটিয়েছি। তবে সবচেয়ে বেশি গিয়েছিআমি শিলিগুড়ি, নকশালবাড়ি এবং বাগডােগরাতে ।”৬৬
 
        উল্লেখ্য, এসব স্থানে পরিভ্রমণ শেষে এবং বিভিন্ন ট্রেনিং কর্মসূচি সম্পর্কে সম্যক অবহিত হয়ে পরে তিনি অর্থমন্ত্রীকে কর্মসূচি(র) অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করতেন। সা’দত হুসাইন কখনও কখনও অর্থমন্ত্রীর ভাষণও লিখে দিতেন (যেটা সচরাচর একান্ত সচিবেরা করে থাকেন)।৬৮
 
       তিনি আরও লিখেছেন: “কোনাে আনন্দ ভ্রমণের জন্য নয়, ভাগ্য-চক্রে প্রাণ বাঁচাতে দেশত্যাগী হয়ে আমার কলকাতায় আসা। পাক হানাদার বাহিনীর হাতে পর্যুদস্ত হয়ে, নড়াইল-খুলনার গ্রামে গ্রামে লুকিয়ে থেকে, কোনাে কোনাে দিন অভুক্ত অর্ধভুক্ত অবস্থায় নির্ঘুম কাটিয়ে, একাধিকবার সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে ভাগ্য গুণে বেঁচে গিয়ে অবশেষে সীমান্ত পেরিয়ে কলকাতায় এসেছিলাম। এখানে এসে প্রাণে বেঁচেছি, মুক্তিযুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকে স্বাধীনতার লক্ষ্যে কাজ করতে পেরেছি।/..কলকাতায় আমি সাত মাস থেকেছি-মে ‘৭১ থেকে ডিসেম্বর’৭১ পর্যন্ত। এ সাত মাস আমার জীবনের এক মহা গুরুত্বপূর্ণ সময়। মুজিবনগর সরকারের সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আমি মুক্তিযুদ্ধে অর্থবহ অবদান রাখতে পেরেছি। একই সাথে সীমান্ত অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি উল্লেখযােগ্য স্থানে ভ্রমন(ণ) করে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয়ের অভিবাসীদের জীবনযাত্রা, তাদের চিন্তাধারা সম্বন্ধে কিছুটা সম্যকধারণা পেয়েছি।”৬৯
 
Reference: মুক্তিযুদ্ধে সিএসপি ও ইপিসিএস অফিসারদের ভূমিকা