১৯৭২-৭৫ কালে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিভাগ অধিদপ্তর গঠন ও সম্প্রসারণ
আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠনের ঘােষণা দেওয়া হয়। মেহেরপুরের অন্তর্গত বৈদ্যনাথতলার নাম মুজিবনগর রাখা হয়। বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী হিসেবে ঘােষিত হয় মুজিবনগর। মুজিবনগরে সংক্ষিপ্ত মন্ত্রিসভার সদস্যগণকে নির্বাচিত করেন সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ী পূর্ব। পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের জনপ্রতিনিধিবৃন্দ। জনপ্রতিনিধিবৃন্দ ছিলেন। রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘােষণা প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতম সহকর্মী সর্বজনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, খােন্দকার মােশতাক আহমদ, এ. এইচ, এম, কামারুজ্জামান। প্রমুখ পাকিস্তান সামরিক সরকারকে মােকাবিলায় আত্মনিয়ােগ করেন। তারা বঙ্গবন্ধুর। পরিকল্পিত কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী মুজিবনগরে প্রথম। বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন। বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিসভা, সরকারের গঠনশৈলী এবং কাজকর্ম পরিচালনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এই গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ে দেয়া হয়েছে। তা ছাড়া, প্রথম বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় ভূমিকা এবং দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে গৃহীত ব্যবস্থাবলি সম্বন্ধে বিস্তারিত বিবরণ আমার রচিত “বাংলাদেশ সরকার। ১৯৭১” শীর্ষক গ্রন্থে দেওয়া হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব প্রত্যক্ষভাবে । গ্রহণ করেই দেশ পরিচালনায় তার চিন্তাভাবনাকে কাজে লাগাতে শুরু করেন। বাংলাদেশের তৎকালীন অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক বিপর্যয় সামাল। দিতে তিনি প্রথম বাংলাদেশ সরকারের অবয়বেও পরিবর্তন আনতে শুরু করেছিলেন। তার অবর্তমানে ১৯৭১ সালে তাকে রাষ্ট্রপ্রধান করে যে সরকার গঠিত হয়, তাকে তিনি নবজাত বাংলাদেশের পরিস্থিতি ও প্রয়ােজন অনুযায়ী পরিবর্তন সাধন করতে প্রয়াসী হন। এজন্য সরকার পরিচালনা পদ্ধতিতেও ব্যাপক পরিবর্তনের প্রয়ােজন পড়ে। অধিকন্তু। সরকারের কর্মসূচি ও কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য নতুন নতুন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, বিভাগ সৃষ্টির আবশ্যক হয়। মাত্র সাড়ে তিন বছরে (১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত) বঙ্গবন্ধু পরিকল্পনানুসারে এবং প্রয়ােজনানুযায়ী সরকার পরিচালনার কাজ করেন। বাংলাদেশ সরকারের যাত্রাপথ বিপৎসঙ্কুল চড়াই-উত্রাই পেরিয়ে মসৃণ হয়ে আসার প্রাক্কালে তাঁকে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় অবিশ্বাসী পক্ষ নিশ্চিহ্ন করে দেয়, বঙ্গবন্ধুকে বরণ করতে হয় মর্মান্তিক মৃত্যু। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত পথ ধরেই এখনাে বাংলাদেশ সরকার এগিয়ে যাচ্ছে। পূর্ববর্তী অধ্যায়গুলােতে বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন-সংগ্রাম, বাঙালি জাতির মুক্তি দাবি, সমগ্র পাকিস্তানে সামরিক শাসকবৃন্দের সঙ্গে ক্ষমতা হস্তান্তরপ্রক্রিয়া নিয়ে আলােচনা, পাঞ্জাবি আধিপত্যবাদীদের সঙ্গে মতদ্বৈধতা সৃষ্টি, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগণের ওপর অতর্কিত সশস্ত্র আক্রমণ, বাঙালি জাতির অবিসংবাদী নেতা বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আটক, পাকিস্তানের কারাগারে নীত হওয়ার আগেই আওয়ামী লীগ দলীয় সহকর্মীদের সঙ্গে সলাপরামর্শ-পরিকল্পনা গ্রহণ, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে জনগণকে যেকোনাে পরিস্থিতি মােকাবিলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর অনানুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘােষণার পর আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণা এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ সরকার গঠন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে। বঙ্গবন্ধুকে নির্বাচন, লাখাে প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন ইত্যাদি বিষয়ে বিশদভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, তার অভ্যুদয়, বাঙালি। জাতির স্বাধীন আবাসভূমি লাভের ইতিবৃত্ত ছাড়াও বাংলাদেশ-ভারত উপমহাদেশের ব্রিটিশ নাগপাশ থেকে স্বাধীনতা অর্জন, দ্বিজাতিতত্ত্বের বিষবৃক্ষ উৎপাটন করে পাকিস্তানি পাঞ্জাবি শাসকদের কবলমুক্ত হওয়ার ইতিহাসও সংক্ষেপে এই গ্রহের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছি। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে এবং সােনার বাংলা গড়তে বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা এবং চিন্তাভাবনার বিবরণ বর্তমান অধ্যায়ে বিবৃত হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়ােজন যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় সঙ্কটের আবর্তে থেকেও প্রথম বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্রীয় সব কাজ সম্পন্ন করার জন্য খুবই স্বল্পপরিসরে কয়েকটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা, অঙ্গসংগঠন সৃষ্টি করে। দেশের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়াদি দেখার জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়।
তেমনি, বিদেশে বাংলাদেশের কর্মতৎপরতা সচল রাখতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দেশের অর্থনৈতিক বিষয়, শিল্পকলকারখানা ও বাণিজ্যিক দিকগুলাের দিকে দৃষ্টি রাখতে অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গঠিত হয়। সরকারি আদেশ-নির্দেশ-প্রজ্ঞাপন জারিসহ নিয়ােগ-বদলি-পদায়ন প্রভৃতি কাজসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়সাধনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয় এবং সাধারণ প্রশাসন বিভাগ সৃষ্টি করা হয়। এ ছাড়া সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্যসেবা, হাসপাতাল, শরণার্থী শিবিরের অসুস্থ, আহত মানুষের সেবা ইত্যাদির জন্য স্বাস্থ্য ও কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠাসহ তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়, সংসদ বিষয়ক বিভাগ তৈরি করা হয়।
কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের কৃষি বিষয়ক কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে চলার জন্য সৃষ্টি হয়েছিল কৃষি বিভাগ। মুক্তিযােদ্ধা এবং জনগণের জন্য যাতায়াত ব্যবস্থায় পুল-কালভার্ট, সেতু, রেলওয়ে, নৌপথ ইত্যাদি কোনাে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে সে জন্য এসব বিষয় দেখভাল করতে প্রকৌশল বিভাগও প্রথম বাংলাদেশ সরকারের ছিল। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ছাড়াও মন্ত্রিপরিষদের প্রত্যক্ষ কর্তৃত্বাধীনে কিছু সংস্থা গঠন করা হয়। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদ সরকারের মন্ত্রিসভায় (ক) প্রতিরক্ষা; (খ) তথ্য ও বেতার এবং টেলিযােগাযােগ; (গ) অর্থনৈতিক বিষয়, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন; (ঘ) শিক্ষা, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, শ্রম, সামাজিক উন্নয়ন; (ঙ) সংস্থাপন ও প্রশাসন ইত্যাদি দফতরগুলাে তত্ত্বাবধান করেন। এ ছাড়া অন্য যেসব বিষয় যা কোনাে মন্ত্রীকে বণ্টন করা হয়নি সেগুলােরও তত্ত্বাবধান তিনি করতেন। খন্দকার মােশতাক আহমদ (ক) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও (খ) আইন ও সংসদ বিষয়াবলি, ভূমি রাজস্ব এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ মন্ত্রণালয়ের দেখাশােনা করেন। ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী (ক) অর্থ ও রাজস্ব, (খ) বাণিজ্য ও শিল্প, (গ) যােগাযােগ সম্পর্কিত বিষয় এবং শিল্প ও প্রাকৃতিক সম্পদ, ব্যবসায় ও বাণিজ্যবিষয়ক কার্যাবলি দেখতেন। এ. এইচ. এম. কামারুজ্জামান (ক) স্বরাষ্ট্র, (খ) সরবরাহ, ত্রাণ, সাহায্যে ও পুনর্বাসন, (গ) কৃষি বিষয়াবলি দেখেন।
বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হলে সম্প্রসারিত মন্ত্রিসভায় মন্ত্রীগণের দপ্তর পুনর্বণ্টিত হয়। এবং তাঁরা স্ব-স্ব দপ্তর, অধিদপ্তর, বিভাগ ইত্যাদির দায়িত্ব ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত পালন করেন। বিজয় দিবসের পর ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভায় যুক্ত হন শেখ আবদুল আজিজ, শ্রী ফণী ভূষণ মজুমদার, আবদুস সামাদ আজাদ, জহুর আহমদ চৌধুরী এবং এম. ইউসুফ আলী। শেখ আবদুল আজিজ পেয়েছিলেন যােগাযােগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব, শ্রী ফণী ভূষণ মজুমদার পান খাদ্য, কৃষি, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব, আবদুস সামাদ দায়িত্ব লাভ করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের, জহুর আহমদ চৌধুরী লাভ করেন স্বাস্থ্য, শ্রম, সমাজকল্যাণ ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব, অধ্যাপক এম, ইউসুফ আলী পেয়েছিলেন শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিষয়াবলি, পূর্ত আবাসন এবং বিদ্যুৎ ও সেচ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। প্রত্যক্ষভাবে বঙ্গবন্ধুর দায়িত্ব গ্রহণ বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বভার প্রত্যক্ষভাবে গ্রহণের আগে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় পৌছেই বাংলাদেশের স্থায়ী রাজধানী ঢাকার তদানীন্তন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে) সমবেত লাখাে জনতার উদ্দেশে যে ভাষণ দান করেন তার। বেশির ভাগ জুড়েই ছিল ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের চিত্র। বাংলাদেশের পুনর্গঠনকাজকেই তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সােনার বাংলা হিসেবে গড়ে তােলার জন্য বারবার আহ্বান জানান সমবেত জনতার প্রতি এবং সমগ্র বাঙালি জাতির উদ্দেশে। তিনি তাঁর ভাষণে বলেন বাংলাদেশের পুনর্গঠন কাজ পরিচালিত হবে একটি শােষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে।
ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন :
“…আমি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়, নেতা হিসেবে নয়, আপনাদের ভাই হিসেবে বলছি- যদি দেশবাসী খাবার না পায়, যুবকেরা চাকরি বা কাজ না পায়, তাহলে স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে- পূর্ণ হবে না। তােমরা, আমার ভাইয়েরা, গেরিলা হয়েছিলে দেশমাতার মুক্তির জন্য। তােমরা রক্ত দিয়েছে। তােমাদের রক্ত বৃথা যাবে না। বাংলাদেশ আজ মুক্ত, স্বাধীন। কিন্তু আজ আমাদের সামনে অসংখ্য সমস্যা আছে, যার আশু সমাধান প্রয়ােজন। বিধ্বস্ত বাংলাকে নতুন করে গড়ে তুলুন। নিজেরা সবাই রাস্তা তৈরি করতে শুরু করুন। যার যার কাজ করে যান …”
মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস পাকিস্তানের কারাগারে অন্তরীণ থাকলেও তিনি মুজিবনগরে | গঠিত বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি পদে বহাল ছিলেন। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের চাপে এবং
বাঙালি জাতির দাবির মুখে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি মুক্তি | দেয়। পাকিস্তান থেকে বঙ্গবন্ধু লন্ডন-দিল্লি হয়ে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ফিরেই
সেদিন রেসকোর্স ময়দানে সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। পরের দিন থেকে তিনি | যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করেন তার বর্ণনা পূর্বের অধ্যায়গুলিতে ক্রমান্বয়ে বলা হয়েছে। তবু
প্রাসঙ্গিকভাবে আরাে কিছু বিবরণ এই অধ্যায়ে তুলে ধরা হলাে। বঙ্গবন্ধু যখন সদ্য স্বাধীন | বাংলাদেশের শাসনভার প্রত্যক্ষভাবে গ্রহণ করেন, তখন বাংলাদেশ এক যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূখণ্ড মাত্র। এই দেশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ এবং প্রশাসনিক কাঠামাে বিপর্যস্ত। ব্যবসাবাণিজ্য, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষায়তন সব কিছুরই বেহাল দশা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়ােজিত পুলিশবাহিনী এবং নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল না বললেই চলে। ডাক বিভাগ বন্ধ, তার বিভাগ অচলপ্রায়, রেলওয়ে ও যাতায়াত ব্যবস্থা বিপন্ন ছিল। দেশের অন্যান্য অবকাঠামাে বিধ্বস্ত । নৌবন্দরগুলাে মাইন পুঁতে রাখায় ছিল অচল অবস্থায়। ব্যাংকগুলাে ছিল অর্থশূন্য। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে কৃষিক্ষেত্রে মারাত্মক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছিল । খাদ্য ঘাটতি ছিল প্রায় ৪০ লাখ টন। এমন সঙ্কটময় সময়ে বঙ্গবন্ধুর সরকারকে প্রথমেই ৯০ হাজার পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দী, আটক। প্রায় ৬০ হাজার রাজাকার ও দালাল, খাদ্য সরবরাহের এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখােমুখি হতে হয়েছিল। ধ্বংসপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি ভবন নির্মাণের দায়িত্ব বঙ্গবন্ধু সরকারের ওপর পড়ে। বিপর্যস্ত শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করা নতুন সরকারের জন্য গুরুদায়িত্ব হয়ে দাড়ায় । তেমনি বিধ্বস্ত যােগাযােগব্যবস্থা, টেলিযােগাযােগব্যবস্থা, বিদ্যুত্ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, প্রশাসনিক কাঠামাে ও দক্ষ প্রশাসকের অভাব প্রভৃতি বঙ্গবন্ধুর সরকারকে প্রায় বেসামাল করে ফেলেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির সাময়িক সংবিধান আদেশ ১৯৭২ অনুযায়ী সাংবিধানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেই দেশে সংবিধান ও আইনের শূন্যতা পূরণে সংবিধান প্রণয়নের কাজে হাত দেন। মুক্তিযােদ্ধাদের কাজ থেকে অস্ত্র উদ্ধার, বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায়, জাতিসংঘসহ সব আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক অনুদান লাভ, সীমান্তে চোরাচালান
———
১.দৈনিক বাংলা ১১ জানুয়ারি ১৯৭২।
————
সূত্র : বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১-৭৫ এইচ টি ইমাম